কুরআন মজীদ সূরা আন নিসা আয়াত ২
Qur'an Surah An-Nisa Verse 2
আন নিসা [৪]: ২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَاٰتُوا الْيَتٰمٰىٓ اَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوا الْخَبِيْثَ بِالطَّيِّبِ ۖ وَلَا تَأْكُلُوْٓا اَمْوَالَهُمْ اِلٰٓى اَمْوَالِكُمْ ۗ اِنَّهٗ كَانَ حُوْبًا كَبِيْرًا (النساء : ٤)
- waātū
- وَءَاتُوا۟
- And give
- এবং তোমরা (ফেরত) দাও
- l-yatāmā
- ٱلْيَتَٰمَىٰٓ
- (to) the orphans
- ইয়াতীমদেরকে
- amwālahum
- أَمْوَٰلَهُمْۖ
- their wealth
- তাদের মাল সম্পদ সমূহ
- walā
- وَلَا
- and (do) not
- এবং না
- tatabaddalū
- تَتَبَدَّلُوا۟
- exchange
- তোমরা বদল করো
- l-khabītha
- ٱلْخَبِيثَ
- the bad
- খারাপ (মালকে)
- bil-ṭayibi
- بِٱلطَّيِّبِۖ
- with the good
- ভাল (মালের) পরিবর্তে
- walā
- وَلَا
- and (do) not
- এবং না
- takulū
- تَأْكُلُوٓا۟
- consume
- তোমরা খেয়ো
- amwālahum
- أَمْوَٰلَهُمْ
- their wealth
- তাদের মাল সমূহকে
- ilā
- إِلَىٰٓ
- with
- সাথে (মিশিয়ে)
- amwālikum
- أَمْوَٰلِكُمْۚ
- your wealth
- তোমাদের মালসমূহের
- innahu
- إِنَّهُۥ
- Indeed it
- তা নিশ্চয়ই
- kāna
- كَانَ
- is
- হলো
- ḥūban
- حُوبًا
- a sin
- গুনাহর (কাজ)
- kabīran
- كَبِيرًا
- great
- বড়ই
Transliteration:
Wa aatul yataamaaa amwaalahum wa laa tatabad dalul khabeesa bittaiyibi wa laa taakulooo amwaalahum ilaaa amwaalikum; innahoo kaana hooban kabeeraa(QS. an-Nisāʾ:2)
English Sahih International:
And give to the orphans their properties and do not substitute the defective [of your own] for the good [of theirs]. And do not consume their properties into your own. Indeed, that is ever a great sin. (QS. An-Nisa, Ayah ২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
এবং ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ প্রদান কর এবং ভালোর সাথে মন্দের বদল করো না এবং তাদের মাল নিজেদের মালের সঙ্গে মিশিয়ে গ্রাস করো না, নিশ্চয় এটা মহাপাপ। (আন নিসা, আয়াত ২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর পিতৃহীনদেরকে তাদের ধন-সম্পদ সমর্পণ কর এবং উৎকৃষ্টের সাথে নিকৃষ্ট বদল করো না, এবং তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদকে মিশ্রিত করে গ্রাস করো না; নিশ্চয় তা মহাপাপ।[১]
[১] পিতৃহীন, অনাথ বা ইয়াতীম যখন সাবালক হয়ে যাবে এবং ভাল-মন্দ বুঝতে শিখবে, তখন তাকে তার ধন-সম্পদ বুঝিয়ে (ফিরিয়ে) দাও। 'খাবীস' বলতে নিকৃষ্ট জিনিস এবং 'ত্বাইয়্যিব' বলতে উৎকৃষ্ট জিনিসকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, এমন করো না যে, তাদের মাল থেকে উৎকৃষ্ট জিনিসগুলো নিয়ে তার পরিবর্তে নিকৃষ্ট জিনিস দিয়ে গুনতি পূরণ করে দেবে। এই নিকৃষ্ট জিনিসগুলোকে খাবীস (নাপাক) এবং উৎকৃষ্ট জিনিসগুলোকে ত্বাইয়্যিব (পবিত্র) আখ্যা দিয়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, এইভাবে পরিবর্তন করা মাল যদিও প্রকৃতপক্ষে ত্বাইয়্যিব (পবিত্র ও হালাল), তবুও তোমাদের বিশ্বাসঘাতকতা তাকে অপবিত্র করে দিয়েছে। কাজেই এখন তা আর পবিত্র নেই, বরং তোমাদের জন্য তা অপবিত্র ও হারাম হয়ে গেছে। অনুরূপ বেঈমানী করে তাদের মালকে নিজের মালের সাথে মিশ্রিত করে খাওয়াও নিষেধ। তবে যদি তাদের কল্যাণ উদ্দেশ্য হয়, তাহলে তাদের মালকে নিজের মালের সাথে মিশ্রিত করা জায়েয।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর ইয়াতীমদেরকে তোমরা তাদের ধন-সম্পদ সমর্পণ করো [১] এবং ভালোর সাথে মন্দ বদল করো না [২]। আর তোমাদের সম্পদের সাথে তাদের সম্পদ মিশিয়ে গ্রাস করো না; নিশ্চয় এটা মহাপাপ [৩]।
[১] আয়াতে বলা হয়েছে, ইয়াতীমের সম্পদ তাদেরকে যথার্থভাবে বুঝিয়ে দাও। আরবী ‘ইয়াতীম’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে- নিঃসঙ্গ। একটি ঝিনুকের মধ্যে যদি একটিমাত্র মুক্তা জন্ম নেয়, তখন একে ‘দুররাতুন-ইয়াতীমাতুন’ বা ‘নিঃসঙ্গ মুক্তা’ বলা হয়ে থাকে। ইসলামী পরিভাষায় যে শিশু-সন্তানের পিতা ইন্তেকাল করে, তাকে ইয়াতীম বলা হয়। ছেলে-মেয়ে বালেগ হয়ে গেলে তাদেরকে ইসলামী পরিভাষায় ইয়াতীম বলা হয় না। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘বালেগ হওয়ার পর আর কেউ ইয়াতীম থাকে না ।’ [আবু দাউদঃ ২৮৭৩]
ইয়াতীম যদি পারিতোষিক অথবা উপঢৌকন হিসেবে কিছু সম্পদপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইয়াতীমের অভিভাবকের দায়িত্ব হচ্ছে সেসব মালেরও হেফাজত করা। ইয়াতীমের মৃত পিতা অথবা দেশের সরকার যে-ই উক্ত অভিভাবককে মনোনীত করুক না কেন; তার উপরই ইয়াতীমের সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বর্তায়। উক্ত অভিভাবকের উচিত, ইয়াতীমের যাবতীয় প্রয়োজন তার গচ্ছিত ধন-সম্পদ থেকে নির্বাহ করা। এ আয়াতে ইয়াতিমের সম্পদ তার হাতে বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোন শর্তারোপ করা হয়নি। পক্ষান্তরে পরবর্তী ৬ নং আয়াতে এ সম্পদ তাদের কাছে প্রত্যার্পণ করার জন্য দু’টি শর্ত দিয়েছে। এক, ইয়াতীম বালেগ হতে হবে, দুই, ভাল-মন্দ বিবেচনা করার ক্ষমতা থাকতে হবে। কারণ, বালেগ হওয়ার পূর্বে তার জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা সম্পত্তি সংরক্ষণের মত না হওয়াই স্বাভাবিক। দুটো বিষয় তাদের মধ্যে পাওয়া গেলে তাদের সম্পদ তাদের কাছে ফেরৎ দেয়া উচিত। [আদওয়াউল বায়ান]
[২] মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ তোমরা হালালকে হারামের সাথে মিশিয়ে ফেলো না। [তাবারী]
[৩] এ আয়াতে ইয়াতিমের সম্পদ গ্রাস করাকে বড় গুনাহ্ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু গোনাহের পরিণাম সম্পর্কে এখানে কিছু বলা হয়নি। এ সূরারই ১০ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা সেটা ঘোষণা করে বলেছেন, “যারা ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে তারা তো তাদের পেটে আগুনই খাচ্ছে; তারা অচিরেই জ্বলন্ত আগুনে জুলবে”। [আদওয়াউল বায়ান]
Tafsir Bayaan Foundation
আর তোমরা ইয়াতীমদেরকে তাদের ধন-সম্পদ দিয়ে দাও এবং তোমরা অপবিত্র বস্ত্তকে পবিত্র বস্ত্ত দ্বারা পরিবর্তন করো না এবং তাদের ধন-সম্পদকে তোমাদের ধন-সম্পদের সাথে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ।
Muhiuddin Khan
এতীমদেরকে তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালামালের সাথে ভালো মালামালের অদল-বদল করো না। আর তাদের ধন-সম্পদ নিজেদের ধন-সম্পদের সাথে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস করো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।
Zohurul Hoque
আর তাদের ধন-সম্পত্তি এতীমদের দিয়ে দাও, আর উৎকৃষ্ট বস্তুর সঙ্গে নিকৃষ্ট বস্তু বদলে নিও না। আর তাদের সম্পত্তি তোমাদের সম্পত্তির সঙ্গে গ্রাস করো না। নিঃসন্দেহ এটি গুরুতর অপরাধ।