Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন নিসা আয়াত ১০৫

Qur'an Surah An-Nisa Verse 105

আন নিসা [৪]: ১০৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اِنَّآ اَنْزَلْنَآ اِلَيْكَ الْكِتٰبَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَآ اَرٰىكَ اللّٰهُ ۗوَلَا تَكُنْ لِّلْخَاۤىِٕنِيْنَ خَصِيْمًا ۙ (النساء : ٤)

innā
إِنَّآ
Indeed
আমরা নিশ্চয়ই
anzalnā
أَنزَلْنَآ
We (have) sent down
আমরা নাযিল করেছি
ilayka
إِلَيْكَ
to you
তোমার প্রতি
l-kitāba
ٱلْكِتَٰبَ
the Book
(এই) গ্রন্থখানি
bil-ḥaqi
بِٱلْحَقِّ
with the truth
সত্য সহকারে
litaḥkuma
لِتَحْكُمَ
so that you may judge
তুমি যাতে বিচার কর
bayna
بَيْنَ
between
মাঝে
l-nāsi
ٱلنَّاسِ
the people
লোকদের
bimā
بِمَآ
with what
তেমনি যা
arāka
أَرَىٰكَ
has shown you
তোমাকে দেখিয়েছেন
l-lahu
ٱللَّهُۚ
Allah
আল্লাহ
walā
وَلَا
And (do) not
এবং না
takun
تَكُن
be
তুমি হয়ো
lil'khāinīna
لِّلْخَآئِنِينَ
for the deceitful
খিয়ানতকারীদের জন্য
khaṣīman
خَصِيمًا
a pleader
বিতর্ককারী

Transliteration:

Innaaa anzalnaaa ilaikal Kitaaba bilhaqqi litahkuma bainan naasi bimaaa araakal laah; wa laa takul lilkhaaa'ineena khaseemaa (QS. an-Nisāʾ:105)

English Sahih International:

Indeed, We have revealed to you, [O Muhammad], the Book in truth so you may judge between the people by that which Allah has shown you. And do not be for the deceitful an advocate. (QS. An-Nisa, Ayah ১০৫)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

অবশ্যই আমি সত্য সহকারে তোমার প্রতি কিতাব নাযিল করেছি, যেন তুমি যা আল্লাহ তোমাকে জানিয়েছেন, সে অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার ফায়সালা কর এবং খিয়ানতকারীদের পক্ষে তর্ক করো না। (আন নিসা, আয়াত ১০৫)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তোমার প্রতি সত্য সহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যা জানিয়েছেন সেই অনুসারে মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা কর। [১] আর তুমি বিশ্বাসঘাতকদের স্বপক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না। [২]

[১] এই (১০৪ থেকে ১১৩ পর্যন্ত) আয়াতগুলোর শানে নুযুল সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আনসারদের যাফার গোত্রের ত্বো'মা অথবা বাশীর ইবনে উবাইরিক নামক এক ব্যক্তি অপর এক আনসারীর বর্ম চুরি করে নেয়। যখন এই চুরির চর্চা হতে লাগল এবং যখন সে অনুভব করল যে, তার চুরির কথা ফাঁস হয়ে যাবে, তখন সে (চুরিকৃত) বর্মটা এক ইয়াহুদীর বাড়িতে ফেলে দিয়ে যাফার গোত্রের কিছু লোককে সাথে নিয়ে রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হল। সকলে মিলে বলল যে, বর্মটা অমুক ইয়াহুদী চুরি করেছিল। সেই ইয়াহুদীও নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে উপস্থিত হয়ে বলল, ইবনে উবাইরিক বর্ম চুরি করে আমার বাড়িতে ফেলে দিয়েছিল। যাফার গোত্রের লোকেরা (ত্বো'মা অথবা বাশীর প্রভৃতি) প্রথম থেকেই সতর্ক ছিল। তারা নবী করীম (সাঃ)-কে বুঝাতে চেষ্টা করছিল যে, চোর ইয়াহুদীই; ত্বো'মার উপর মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে। নবী করীম (সাঃ) তাদের চমৎকার ও চতুরতাপূর্ণ কথাবার্তায় প্রভাবান্বিত হয়ে পড়েন এবং আনসারীকে চুরির অপবাদ থেকে মুক্ত ঘোষণা করে ইয়াহুদীকে চুরির অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত করতে যাবেন, ঠিক এই সময়ই মহান আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন। এ থেকে যে বিষয়গুলো জানা গেল তা হল, প্রথমতঃ নবী করীম (সাঃ) একজন মানুষ বিধায় তিনি ভুল বোঝাবুঝির শিকার হতেন। দ্বিতীয়তঃ তিনি গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞান রাখতেন না। গায়বের খবর জানলে তিনি সত্বর তাদের প্রকৃত ব্যাপার জেনে নিতেন। তৃতীয়তঃ মহান আল্লাহ স্বীয় পয়গম্বরের হিফাযত করেন। তাই কখনোও যদি প্রকৃত ব্যাপার গুপ্ত হয়ে যাওয়ার কারণে নবীর দ্বারা (সত্যের) বিপরীত কিছু হয়ে যাওয়ার পর্যায়ে পৌঁছত, সঙ্গে সঙ্গেই মহান আল্লাহ সে ব্যাপারে নবীকে সতর্ক করে তাঁর সংশোধন করে দিতেন। আর এটাই হল নবীদের নিষ্পাপ হওয়ার দাবী। এ এমন এক উচ্চ মর্যাদা যা আম্বিয়া ব্যতীত আর কেউ লাভ করতে পারে না।

[২] এ থেকে উবাইরিক গোত্রকেই বুঝানো হয়েছে। যারা চুরি করে নিজেদের বাকপটুতায় ইয়াহুদীকে চোর সাব্যস্ত করার প্রচেষ্টা করেছিল। পরের আয়াতেও তাদের ও তাদের সমর্থকদের ভুল আচরণকে প্রকাশ করে নবী করীম (সাঃ)-কে সতর্ক করা হচ্ছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আমরা [১] তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করতে পারেন। আর আপনি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করবেন না [২]

ষোলতম রুকূ‘

[১] সূরা আন-নিসার ১০৫ থেকে ১১৩ নং আয়াত এক বিশেষ ঘটনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। ঘটনাটি হচ্ছে, হিজরতের প্রাথমিক যুগে সাধারণ মুসলিমদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তাদের সাধারণ খাদ্য ছিল যবের আটা কিংবা খেজুর কিংবা গমের আটা। এগুলো প্রায়ই মদীনায় পাওয়া যেতো না। সিরিয়া থেকে কোন চালান এলে কেউ কেউ তা সংগ্রহ করে রাখত। রিফা’আ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ধরনের কিছু গমের আটা সংগ্রহ করে একটি বস্তায় রেখে দিয়েছিলেন। এ বস্তার মধ্যে কিছু অস্ত্র-শস্ত্রও রেখে একটি ছোট কক্ষে সংরক্ষিত রেখেছিলেন। মদীনাতে তখন বনু উবাইরাক গোত্রের বিশর, বশীর ও মুবাশশির নামীয় তিন লোক বিশেষ কারণে খ্যাতি লাভ করেছিল। তন্মধ্যে বশীর ছিল প্রকৃতই মুনাফিক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে বদনামী করে কবিতা রচনা করে অন্যের নামে চালিয়ে দিত। সেই বশীর সিধ কেটে রিফা'আ ইবন যায়েদের সে বস্তা বের করে নেয়। সকালে রিফা'আ রাদিয়াল্লাহু আনহু ব্যাপারটি তার ভ্রাতুষ্পপুত্র কাতাদার কাছে বিবৃত করলেন। বনু উবায়রাক বললো, সম্ভবত এটা লবীদ ইবন সাহলের কীর্তি। লবীদ ইবন সাহল তা শুনে অত্যন্ত ক্রোধাম্বিত হলেন এবং তরবারী কোষমুক্ত করে বললেন, আমার উপর অপবাদ চাপানো হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত বিভিন্ন পন্থায় কাতাদা ও রিফা’আ রাদিয়াল্লাহু আনহুমার প্রবল ধারণা জন্মেছিল যে, এটি বনী উবাইরাকের কীর্তি। তখন কাতাদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে চুরির ঘটনা এবং তদন্তক্রমে বনু উবাইরাকের প্রতি প্রবল ধারণার কথা আলোচনা করলেন। বনু উবায়রাক সংবাদ পেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে রিফা'আ ও কাতাদার বিরুদ্ধে অভিযোগ করল যে, শরীআতসম্মত প্রমাণ ছাড়াই তারা আমাদের নামে চুরির অপবাদ আরোপ করছে। আপনি তাদেরকে বারণ করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাই করলেন। কিন্তু বেশীদিন অতিবাহিত না হতেই এ ব্যাপারে বেশ কয়েকটি আয়াত নাযিল হয়। যার মাধ্যমে সমস্ত ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে তুলে ধরা হয়। প্রথমে আয়াতে বলা হয়েছে, “আমরা তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার মীমাংসা করতে পারেন এবং বিশ্বাসঘাতকদের অর্থাৎ বনী উবাইরাক এর সমর্থনে তর্ক করবেন না। আর আপনি ধারণার বশবর্তী হয়ে সাহাবী কাতাদা ইবন নুমানকে যা বলা হয়েছে সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থী হোন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আর যারা নিজেদেরকে প্রতারিত করে তাদের পক্ষে বাদ-বিসম্বাদ করবেন না, নিশ্চয় আল্লাহ বিশ্বাস ভংগকারী পাপীকে পছন্দ করেন না। তারা মানুষ থেকে গোপন করতে চায় কিন্তু আল্লাহর থেকে গোপন করে না, অথচ তিনি তাদের সংগেই আছেন রাতে যখন তারা, তিনি যা পছন্দ করেন না- এমন বিষয়ে পরামর্শ করে এবং তারা যা করে তা সর্বতোভাবে আল্লাহর জানা রয়েছে। দেখ, তোমরাই ইহ জীবনে তাদের পক্ষে বিতর্ক করছ; কিন্তু কিয়ামতের দিন আল্লাহর সম্মুখে কে তাদের পক্ষে বিতর্ক করবে অথবা কে তাদের উকিল হবে? কেউ কোন মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি যুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে। অর্থাৎ যদি তারা ক্ষমা প্রার্থী হতো তবে আল্লাহ অবশ্যই তাদের ক্ষমা করে দিতেন। আর কেউ পাপ কাজ করলে সে ওটা তার নিজের ক্ষতির জন্যই করে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। কেউ কোন দোষ বা পাপ করে পরে ওটা কোন নির্দোষ ব্যক্তি অর্থাৎ লবীদ ইবন সাহলের প্রতি আরোপ করলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও স্পষ্ট পাপের বোঝা বহন করে। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা রাসূলকে উদ্দেশ্য করে নাযিল করলেন, আপনার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তাদের একদল আপনাকে পথভ্রষ্ট করতে বদ্ধপরিকর ছিল। কিন্তু তারা নিজেদের ছাড়া আর কাউকেও পথভ্রষ্ট করে না এবং আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ আপনার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং আপনি যা জানতেন না তা আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, আপনার প্রতি আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে। এ আয়াতসমূহ নাযিল হলে মূল ঘটনা স্পষ্ট হয়ে গেল। বনু উবাইরাকের কাছ থেকে অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রিফা’আর কাছে তা ফেরৎ দিলেন। তিনি সে সমুদয় আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিলেন। এদিক বিশর মুনাফেকী অবস্থা ধরা পড়ে যাওয়ার কারণে মক্কায় সুলাফা বিনতে সাদ ইবন সুমাইয়া নামীয় এক মহিলার কাছে গিয়ে সরাসরি মুর্তাদ হয়ে গেল। তখন ১১৫ নং আয়াত নাযিল হলো, যাতে হক প্রকাশিত হওয়ার পরে রাসূলের বিরুদ্ধাচারণের কারণে কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। [তিরমিযী; ৩০৩৬; মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/৩৮৫] ঘটনা যাই হোক, কুরআনের সাধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী এ ব্যাপারে প্রদত্ত নির্দেশাবলী এ ঘটনার সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং বর্তমান ও ভবিষ্যতে আগমনকারী মুসলিমদের জন্য ব্যাপক। এছাড়া এসব নির্দেশের মধ্যে অনেক মৌলিক ও শাখাগত মাস’আলাও রয়েছে।

[২] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহর কসম অবশ্যই আমি দিনে সত্তর বারেরও অধিক আল্লাহর নিকট এস্তেগফার এবং তাওবা করে থাকি। [বুখারীঃ ৬৩০৭]

Tafsir Bayaan Foundation

নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে ফয়সালা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। আর তুমি খিয়ানতকারীদের পক্ষে বিতর্ককারী হয়ো না।

Muhiuddin Khan

নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি মানুষের মধ্যে ফয়সালা করেন, যা আল্লাহ আপনাকে হৃদয়ঙ্গম করান। আপনি বিশ্বাসঘাতকদের পক্ষ থেকে বিতর্ককারী হবেন না।

Zohurul Hoque

আর আল্লাহ্‌র কাছে পরিত্রাণ খোঁজো। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ হচ্ছেন পরিত্রাণকারী, অফুরন্ত ফলদাতা।