কুরআন মজীদ সূরা ইয়াসীন আয়াত ৬৫
Qur'an Surah Ya-Sin Verse 65
ইয়াসীন [৩৬]: ৬৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اَلْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلٰٓى اَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَآ اَيْدِيْهِمْ وَتَشْهَدُ اَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ (يس : ٣٦)
- al-yawma
- ٱلْيَوْمَ
- This Day
- আজ
- nakhtimu
- نَخْتِمُ
- We will seal
- সীল করে দিবো আমরা
- ʿalā
- عَلَىٰٓ
- [on]
- উপর
- afwāhihim
- أَفْوَٰهِهِمْ
- their mouths
- তাদের মুখগুলোর
- watukallimunā
- وَتُكَلِّمُنَآ
- and will speak to Us
- এবং আমাদের সাথে কথা বলবে
- aydīhim
- أَيْدِيهِمْ
- their hands
- তাদের হাতগুলো
- watashhadu
- وَتَشْهَدُ
- and will bear witness
- এবং সাক্ষ্য দিবে
- arjuluhum
- أَرْجُلُهُم
- their feet
- তাদের পাগুলো
- bimā
- بِمَا
- about what
- ঐ বিষয়ে যা
- kānū
- كَانُوا۟
- they used (to)
- করেছিলো
- yaksibūna
- يَكْسِبُونَ
- earn
- তারা কামাই
Transliteration:
Al-Yawma nakhtimu 'alaaa afwaahihim wa tukallimunaaa aideehim wa tashhadu arjuluhum bimaa kaanoo yaksiboon(QS. Yāʾ Sīn:65)
English Sahih International:
That Day, We will seal over their mouths, and their hands will speak to Us, and their feet will testify about what they used to earn. (QS. Ya-Sin, Ayah ৬৫)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আজ আমি তাদের মুখে সীল মোহর লাগিয়ে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে, আর তারা যা করত সে সম্পর্কে তাদের পাগুলো সাক্ষ্য দেবে। (ইয়াসীন, আয়াত ৬৫)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আমি আজ এদের মুখে মোহর মেরে দেব, এদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং এদের পা এদের কৃতকর্মের সাক্ষী দেবে।[১]
[১] এই মোহর লাগানোর প্রয়োজন এই জন্য হবে যে, কিয়ামতের দিন প্রথম দিকে মুশরিকরা মিথ্যা বলবে এবং বলবে, (واللهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِيْنَ) অর্থাৎ, ঐ আল্লাহর শপথ যিনি আমাদের প্রভু, আমরা মুশরিক ছিলাম না। (সূরা আনআম ৬;২৩ আয়াত) সুতরাং আল্লাহ তাআলা তাদের মুখে মোহর লাগিয়ে দেবেন, ফলে তারা কথা বলার শক্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে। তবে আল্লাহ তাআলা মানুষের শরীরের অন্য অঙ্গকে কথা বলার শক্তি প্রদান করবেন। সুতরাং হাত বলবে, 'আমার দ্বারা সে এই এই কর্ম করেছিল' এবং পা তার সাক্ষী দেবে। ঠিক এইভাবে স্বীকার ও সাক্ষী, উভয় পর্যায় পার হয়ে যাবে। এ ছাড়া কথা বলতে সক্ষম বস্তুর মোকাবেলায় কথা বলতে অক্ষম বস্তুর কথা বলে সাক্ষ্য দেওয়া, দলীল ও প্রমাণ হিসাবে অধিক প্রভাবশালী হয়; যেহেতু তাতে অলৌকিক বিষয় পাওয়া যায়। (ফাতহুল ক্বাদীর) মুখ ছাড়া অন্য অঙ্গের কথা বলার বিষয়টি হাদীসসমূহেও বর্ণিত হয়েছে। (দেখুন সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুয্ যুহদ)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আমরা আজ এদের মুখ মোহর করে দেব, এদের হাত কথা বলবে আমাদের সাথে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এদের কৃতকর্মের [১]।
[১] হাশরে হিসাব-নিকাশের জন্য উপস্থিতির সময় প্রথমে প্রত্যেকেই যা ইচ্ছা ওযর বর্ণনা করার স্বাধীনতা পাবে। মুশরিকরা সেখানে কসম করে কুফার ও শিরক অস্বীকার করবে। তারা বলবে, “আল্লাহর শপথ আমরা মুশরিক ছিলাম না” [সূরা আল-আন’আম; ২৩] তাদের কেউ বলবে, আমাদের আমলনামায় ফেরেশতা যা কিছু লিখেছে, আমরা তা থেকে মুক্ত। তখন আল্লাহ তাআলা তাদের মুখে মোহর এঁটে দেবেন, যাতে তারা কোন কিছুই বলতে না পারে। অতঃপর তাদেরই হাত, পা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে রাজসাক্ষী করে কথা বলার যোগ্যতা দান করা হবে। তারা কাফেরদের যাবতীয় কার্যকলাপের সাক্ষ্য দেবে। আলোচ্য আয়াতে হাত ও পায়ের কথা উল্লিখিত হয়েছে। অন্য আয়াতে মানুষের কর্ণ, চক্ষু ও চার্মের সাক্ষ্য দানের উল্লেখিত রয়েছে। যেমন, [সূরা ফুসসিলাত; ২১-২২, সূরা নূর; ২৪]।
এখানে এ প্রশ্ন দেখা দেয় যে, একদিকে আল্লাহ বলেন, আমি এদের কণ্ঠ রুদ্ধ করে দেব এবং অন্যদিকে সূরা নূরের আয়াতে বলেন, এদের কণ্ঠ সাক্ষ্য দেবে এ দু'টি বক্তব্যের মধ্যে কিভাবে সামঞ্জস্য বিধান করা যাবে ? এর জবাব হচ্ছে, কণ্ঠ রুদ্ধ করার অর্থ হলো, তাদের কথা বলার ক্ষমতা কেড়ে নেয়া। এরপর তারা স্বেচ্ছায় নিজেদের মর্জি মাফিক কথা বলতে পারবে না। আর কণ্ঠের সাক্ষ্যদানের অর্থ হচ্ছে, পাপিষ্ঠ লোকেরা তাদেরকে কোন কোন কাজে লাগিয়েছিল, তাদের মাধ্যমে কেমন সব কুফরী কথা বলেছিল, কোন ধরনের মিথ্যা উচ্চারণ করেছিল, কতপ্রকার ফিতনা সৃষ্টি করেছিল এবং কোন কোন সময় তাদের মাধ্যমে কোন কোন কথা বলেছিল সেসব বিবরণ তাদের কণ্ঠ স্বতস্ফূৰ্তভাবে দিয়ে যেতে থাকবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বিভিন্ন হাদীসে এ ভয়াবহ অবস্থার বর্ণনা এসেছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে ছিলাম। এমন সময় তিনি এমনভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁত দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জানো আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম; আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন; কিয়ামতের দিন বান্দা তার প্রভুর সাথে যে ঝগড়া করবে তা নিয়ে হাসছি। সে বলবে, হে রব, আমাকে কি আপনি যুলুম থেকে নিরাপত্তা দেননি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ, তখন সে বলবে, আমি আমার বিরুদ্ধে নিজের ছাড়া অন্য কারও সাক্ষ্য গ্ৰহণ করবো না। তখন আল্লাহ্ বলবেন, তুমি নিজেই তোমার হিসেবের জন্য যথেষ্ঠ। আর সম্মানিত লেখকবৃন্দকে সাক্ষ্য বানাব। তারপর তার মুখের উপর মোহর মেরে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কথা বলার নির্দেশ দেয়া হবে। ফলে সেগুলো তাদের কাজের বিবরণ দিবে। তারপর তাদেরকে কথা বলার অনুমতি দেয়া হবে তখন তারা বলবে, তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমাদের জন্যই তো আমি প্রতিরোধ করছিলাম। [মুসলিম; ২৯৬৯] অন্য হাদীসে এসেছে, তোমাদেরকে মূক করে ডাকা হবে। তারপর প্রথম তোমাদের উরু এবং দু’হাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। [মুসনাদে আহমাদ; ৪/৪৪৬, ৪৪৭, ৫/৪-৫] অন্য হাদীসে এসেছে ... তারপর তৃতীয় জনকে ডাকা হবে। আর তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে, তুমি কে? সে বলবে; আমি আপনার বান্দা, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার নবী ও কিতাবাদির প্রতিও। আর আপনার জন্য সালাত, সাওম, সাদাকাহ ইত্যাদি ভাল কাজের প্রশংসা করে তা আদায় করার দাবী করবে। তখন তাকে বলা হবে, আমরা কি তোমার জন্য আমাদের সাক্ষীকে উপস্থাপন করব না? তখন সে চিন্তা করবে যে, এমন কে আছে যে, তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়? আর তখনই তার মুখের উপর মোহর এঁটে দেয়া হবে এবং তার উরুকে বলা হবে, কথা বল। তখন তার উরু, গোস্ত, হাঁড় যা করেছে তার সাক্ষ্য দিবে। আর এটাই হলো মুনাফিক। এটা এজন্যই যাতে তিনি (আল্লাহ) নিজের ওজর পেশ করতে পারেন এবং তার উপরই আল্লাহ অসন্তুষ্ট। [মুসলিম; ২৯৬৮]
Tafsir Bayaan Foundation
আজ আমি তাদের মুখে মোহর মেরে দেব এবং তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে ও তাদের পা সে সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত।
Muhiuddin Khan
আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব তাদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।
Zohurul Hoque
সেইদিন আমরা তাদের মুখের উপর মোহর মেরে দেব, বরং তাদের হাত আমাদের সাথে কথা বলবে, আর তাদের পা সাক্ষ্য দেবে যা তারা অর্জন করত সে-সন্বন্ধে।