কুরআন মজীদ সূরা ইয়াসীন আয়াত ১২
Qur'an Surah Ya-Sin Verse 12
ইয়াসীন [৩৬]: ১২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اِنَّا نَحْنُ نُحْيِ الْمَوْتٰى وَنَكْتُبُ مَا قَدَّمُوْا وَاٰثَارَهُمْۗ وَكُلَّ شَيْءٍ اَحْصَيْنٰهُ فِيْٓ اِمَامٍ مُّبِيْنٍ ࣖ (يس : ٣٦)
- innā
- إِنَّا
- Indeed We
- নিশ্চয়ই
- naḥnu
- نَحْنُ
- We
- আমরা
- nuḥ'yī
- نُحْىِ
- [We] give life
- জীবিত করবো (একদিন)
- l-mawtā
- ٱلْمَوْتَىٰ
- (to) the dead
- মৃতদেরকে
- wanaktubu
- وَنَكْتُبُ
- and We record
- এবং আমরা লিখে রাখি
- mā
- مَا
- what
- যা
- qaddamū
- قَدَّمُوا۟
- they have sent before
- তারা আগে পাঠিয়েছে
- waāthārahum
- وَءَاثَٰرَهُمْۚ
- and their footprints
- ও তাদের কীর্তিসমূহ (যা পিছনে রেখেছে)
- wakulla
- وَكُلَّ
- and every
- এবং প্রত্যেক
- shayin
- شَىْءٍ
- thing
- জিনিস
- aḥṣaynāhu
- أَحْصَيْنَٰهُ
- We have enumerated it
- তা আমরা সংরক্ষণ করেছি
- fī
- فِىٓ
- in
- মধ্যে
- imāmin
- إِمَامٍ
- a Register
- একটি কিতাবের
- mubīnin
- مُّبِينٍ
- clear
- সুস্পষ্ট
Transliteration:
Innaa Nahnu nuhyil mawtaa wa naktubu maa qaddamoo wa aasaarahum; wa kulla shai'in ahsainaahu feee Imaamim Mubeen(QS. Yāʾ Sīn:12)
English Sahih International:
Indeed, it is We who bring the dead to life and record what they have put forth and what they left behind, and all things We have enumerated in a clear register. (QS. Ya-Sin, Ayah ১২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আমিই মৃতকে জীবিত করি, আর লিখে রাখি যা তারা আগে পাঠিয়ে দেয় আর যা পেছনে ছেড়ে যায়। সব কিছুই আমি স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত করে রেখেছি। (ইয়াসীন, আয়াত ১২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
নিশ্চয় আমি মৃতকে জীবিত করি[১] এবং লিখে রাখি ওদের কৃতকর্ম ও যা ওরা পশ্চাতে রেখে যায়, [২] আমি প্রত্যেক জিনিস স্পষ্ট গ্রন্থে সংরক্ষিত রেখেছি। [৩]
[১] অর্থাৎ, কিয়ামত দিবসে। এখানে মৃতকে জীবিত করার বর্ণনায় উদ্দেশ্য এই ইঙ্গিত করা যে, আল্লাহ তাআলা কাফেরদের মধ্য হতে যার অন্তরকে চান জীবিত করে দেন; যা কুফর ও ভ্রষ্টতার কারণে মৃত হয়ে গিয়েছিল। ফলে সে হিদায়াত ও ঈমান গ্রহণ করে নেয়।
[২] مَا قَدَّمُوْا দ্বারা ঐ সকল আমল বা কৃতকর্মকে বুঝানো হয়েছে, যা মানুষ নিজের জীবনে করে থাকে। এবং 'آثَارَهُمْ দ্বারা ঐ সকল ভাল ও মন্দ আমলের নমুনাকে বুঝানো হয়েছে, যা সে পৃথিবীতে ছেড়ে যায় এবং তার মৃত্যুর পর তার অনুসরণে মানুষ সেই আমল করতে থাকে। যেমন হাদীসে আছে, "যে ব্যক্তি ইসলামে কোন ভালো রীতি (বা কর্ম) প্রবর্তিত করে, তার জন্য রয়েছে তার সওয়াব (প্রতিদান) এবং তাদের সমপরিমাণ সওয়াব যারা ঐ রীতির অনুকরণে আমল (কর্ম) করে। এতে তাদের কারো সওয়াব এতটুকু পরিমাণও হ্রাস করা হয় না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ রীতি (বা কর্মের) সূচনা করে, তার জন্য রয়েছে তার পাপ এবং তাদের সমপরিমাণ পাপও যারা ঐ রীতির অনুকরণে আমল (বা কর্ম) করে। এতে তাদের কারো পাপ এতটুকু পরিমাণ হ্রাস করা হয় না।" (মুসলিম১০১৭নং, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী) অনুরূপ একটি হাদীস "যখন মানুষ মারা যায়, তখন তার তিন প্রকার আমল ছাড়া সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। (ক) এমন ইলম, যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়। (খ) নেক সন্তান, যে মৃত ব্যক্তির জন্য দু'আ করে। (গ) অথবা সাদকায়ে জারিয়া (প্রবহমান দান), যার দ্বারা তার মৃত্যুর পরেও মানুষ উপকৃত হতে থাকে। (মুসলিম) (آثارهم) এর দ্বিতীয় অর্থ হল, পদচিহ্ন। অর্থাৎ মানুষ পুণ্য ও পাপকর্মের জন্য যে সফর করে বা এক স্থান থেকে অন্য স্থান চলাচল করে, তার পদচিহ্ন লিপিবদ্ধ করা হয়। যেমন নবী (সাঃ)-এর যুগে মসজিদে নববীর নিকটে কিছু খালি জায়গা ছিল। বানু সালমাহ (গোত্র) সেখানে ঘর তৈরীর ইচ্ছা করল। যখন নবী (সাঃ) এই কথা অবগত হলেন, তখন তিনি তাঁদেরকে মসজিদের নিকটে ঘর তৈরী করতে নিষেধ করলেন এবং বললেন, (دِيَارَكُمْ تُكْتَبُ آثَارُكُمْ) অর্থাৎ তোমাদের ঘর যদিও দূরে, তবুও তোমরা ঐখানেই থাক। তোমরা যত পা হেঁটে আসবে তা লিপিবদ্ধ করা হবে। (মুসলিমঃ কিতাবুল মাসাজিদ) ইমাম ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেন, দুই অর্থই স্ব-স্ব স্থানে সঠিক। পরস্পরের মাঝে কোন বিরোধ নেই। বরং দ্বিতীয় অর্থে অধিক সতর্কীকরণ রয়েছে যে, যখন মানুষের পদচিহ্ন পর্যন্ত লেখা হয়, তখন মানুষ যে ভাল ও মন্দ কর্মের নমুনা ছেড়ে যায় এবং তার মৃত্যুর পর মানুষ যার অনুসরণ করে, তা তো অধিকরূপেই লেখা হবে।
[৩] 'স্পষ্ট গ্রন্থ' বলে উদ্দেশ্য হল 'লাওহে মাহফুয' এবং অনেকে আমলনামাও উদ্দেশ্য নিয়েছেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
নিশ্চয় আমরা মৃতকে জীবিত করি এবং লিখে রাখি যা তারা আগে পাঠায় ও যা তারা পিছনে রেখে যায় [১]। আর আমরা প্রত্যেক জিনিস স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি [২]।
[১] যা তারা পিছনে রেখে যায় তাও লিপিবদ্ধ করার ঘোষণা আয়াতে এসেছে। অর্থাৎ তাদের সম্পাদিত কৰ্মসমূহের ন্যায় কর্মসমূহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াও লিপিবদ্ধ করা হয়। আয়াতে বর্ণিত آثار শব্দের দু'ধরনের অর্থ করা হয়ে থাকে। এক. এর অর্থ, কর্মের ক্রিয়া তথা ফলাফল, যা পরবর্তীকালে প্রকাশ পায় ও টিকে থাকে। উদাহরণত; কেউ মানুষকে দ্বীনী শিক্ষা দিল, বিধি-বিধান বর্ণনা করল অথবা কোন পুস্তক রচনা করল, যদ্দারা মানুষের দ্বীনী উপকারিতা লাভ করা যায় অথবা ওয়াকফ ইত্যাদি ধরনের কোন জনহিতকর কাজ করল-তার এই সৎকর্মের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যতদূর পৌছবে এবং যতদিন পর্যন্ত পৌঁছতে থাকবে, সবই তার আমলনামায় লিখিত হতে থাকবে। অনুরূপভাবে কোন রকম মন্দকার্য যার মন্দ ফলাফল ও ক্রিয়া পৃথিবীতে থেকে যায় কেউ যদি নিপীড়নমূলক আইন-কানুন প্রবর্তন করে কিংবা এমন কোন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে যা মানুষের আমল-আখলাককে ধ্বংস করে দেয় কিংবা মানুষকে কোন মন্দ পথে পরিচালিত করে, তবে তার এ মন্দকর্মের ফলাফল ও প্রভাব যে পর্যন্ত থাকবে এবং যতদিন পর্যন্ত তা দুনিয়াতে কায়েম থাকবে, ততদিন তার আমলনামায় সব লিখিত হতে থাকবে। [দেখুন, ইবন কাসীর]। যেমন, এ আয়াতের তাফসীর প্রসংগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন উত্তম পস্থা প্রবর্তন করে, তার জন্যে রয়েছে এর সওয়াব এবং যত মানুষ এই পন্থার উপর আমল করবে, তাদের সওয়াব-অথচ পালনকারীদের সওয়াব মোটেও হ্রাস করা হবে না। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন কু-প্ৰথা প্রবর্তন করে, সে তার গোনাহ ভোগ করবে এবং যত মানুষ এই কুপ্ৰথা পালন করতে থাকবে, তাদের গোনাহও তার আমলনামায় লিখিত হবে। অথচ আমলকারীর গোনাহ হ্রাস করা হবে না’ [মুসলিম; ১০১৭]
দুই. آثار শব্দের অর্থ পদাংকও হয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে, ‘কেউ সালাতের জন্যে মাসজিদে গমন করলে তার প্রতি পদক্ষেপে সওয়াব লেখা হয়’ [মুসলিম; ১০৭০] কোন কোন বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, এখানে آثار বলে এ পদাংকই বোঝানো হয়েছে। সালাতের সাওয়াব যেমন লেখা হয় তেমনি সালাতে যাওয়ার সময় যত পদক্ষেপ হতে থাকে তাও প্রতি পদক্ষেপে একটি করে পুণ্য লেখা হয়। মদীনা তাইয়্যেবায় যাদের বাসগৃহ মসজিদে নববী থেকে দূরে অবস্থিত ছিল, তারা মসজিদের কাছাকাছি বাসগৃহ নির্মান করতে চাইলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে তা থেকে বিরত করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা যেখানে আছ, সেখানেই থাক। দূর থেকে হেঁটে মসজিদে এলে পদক্ষেপ যত বেশী হবে তোমাদের সওয়াব তত বেশী হবে।’ [মুসলিম; ৬৬৫]
[২] বলা হয়েছে, আমরা প্রত্যেকটি বস্তু সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি। অর্থাৎ লাওহে মাহফুজে। কেননা যা হয়েছে এবং যা হবে সব কিছুই সেখানে লিপিবদ্ধ রয়েছে। আর তা অনুসারেই তাদের ভাল-মন্দ নির্ধারিত হবে। [ইবন কাসীর, মুয়াসসার] সূরা আল-ইসরা এর ১৭ নং আয়াতেরও একই অর্থ। অনুরূপভাবে সূরা আল-কাহফের ৪৯ নং আয়াতেও একই কথা বলা হয়েছে।
Tafsir Bayaan Foundation
আমিই তো মৃতকে জীবিত করি আর লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে এবং যা পিছনে রেখে যায়। আর প্রতিটি বস্তুকেই আমি সুস্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষণ করে রেখেছি।
Muhiuddin Khan
আমিই মৃতদেরকে জীবিত করি এবং তাদের কর্ম ও কীর্তিসমূহ লিপিবদ্ধ করি। আমি প্রত্যেক বস্তু স্পষ্ট কিতাবে সংরক্ষিত রেখেছি।
Zohurul Hoque
নিঃসন্দেহ আমরা -- আমরা নিজেরাই মৃতকে জীবন্ত করি, আর আমরা লিখে রাখি যা তারা আগবাড়ায় আর তাদের পদচিহ্নসমূহ। আর সমস্ত ব্যাপার-স্যাপার -- আমরা তা সংরক্ষিত রেখেছি এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে।