কুরআন মজীদ সূরা আল আহযাব আয়াত ৫৩
Qur'an Surah Al-Ahzab Verse 53
আল আহযাব [৩৩]: ৫৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَدْخُلُوْا بُيُوْتَ النَّبِيِّ اِلَّآ اَنْ يُّؤْذَنَ لَكُمْ اِلٰى طَعَامٍ غَيْرَ نٰظِرِيْنَ اِنٰىهُ وَلٰكِنْ اِذَا دُعِيْتُمْ فَادْخُلُوْا فَاِذَا طَعِمْتُمْ فَانْتَشِرُوْا وَلَا مُسْتَأْنِسِيْنَ لِحَدِيْثٍۗ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ يُؤْذِى النَّبِيَّ فَيَسْتَحْيٖ مِنْكُمْ ۖوَاللّٰهُ لَا يَسْتَحْيٖ مِنَ الْحَقِّۗ وَاِذَا سَاَلْتُمُوْهُنَّ مَتَاعًا فَاسْـَٔلُوْهُنَّ مِنْ وَّرَاۤءِ حِجَابٍۗ ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَقُلُوْبِهِنَّۗ وَمَا كَانَ لَكُمْ اَنْ تُؤْذُوْا رَسُوْلَ اللّٰهِ وَلَآ اَنْ تَنْكِحُوْٓا اَزْوَاجَهٗ مِنْۢ بَعْدِهٖٓ اَبَدًاۗ اِنَّ ذٰلِكُمْ كَانَ عِنْدَ اللّٰهِ عَظِيْمًا (الأحزاب : ٣٣)
- yāayyuhā
- يَٰٓأَيُّهَا
- O you who believe!
- হে
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- O you who believe!
- যারা
- āmanū
- ءَامَنُوا۟
- O you who believe!
- ঈমান এনেছো
- lā
- لَا
- (Do) not
- না
- tadkhulū
- تَدْخُلُوا۟
- enter
- তোমরা প্রবেশ করো
- buyūta
- بُيُوتَ
- (the) houses
- ঘরগুলোতে
- l-nabiyi
- ٱلنَّبِىِّ
- (of) the Prophet
- নাবীর
- illā
- إِلَّآ
- except
- কিন্তু
- an
- أَن
- when
- যদি
- yu'dhana
- يُؤْذَنَ
- permission is given
- অনুমতি দেওয়া হয়
- lakum
- لَكُمْ
- to you
- জন্যে তোমাদের
- ilā
- إِلَىٰ
- for
- প্রতি
- ṭaʿāmin
- طَعَامٍ
- a meal
- খাওয়ার (দাওয়াতে)
- ghayra
- غَيْرَ
- without
- (তবে এসো না)ছাড়া
- nāẓirīna
- نَٰظِرِينَ
- awaiting
- অপেক্ষাকারী
- ināhu
- إِنَىٰهُ
- its preparation
- প্রস্তুতির তা
- walākin
- وَلَٰكِنْ
- But
- কিন্তু
- idhā
- إِذَا
- when
- যখন
- duʿītum
- دُعِيتُمْ
- you are invited
- ডাকা হয় তোমাদের
- fa-ud'khulū
- فَٱدْخُلُوا۟
- then enter
- তখন তোমরা প্রবেশ করো
- fa-idhā
- فَإِذَا
- and when
- অতঃপর যখন
- ṭaʿim'tum
- طَعِمْتُمْ
- you have eaten
- তোমরা খাওয়া শেষ করো
- fa-intashirū
- فَٱنتَشِرُوا۟
- then disperse
- তখন তোমরা চলে যাও
- walā
- وَلَا
- and not
- এবং না
- mus'tanisīna
- مُسْتَـْٔنِسِينَ
- seeking to remain
- তোমরা মেতে যেয়ো
- liḥadīthin
- لِحَدِيثٍۚ
- for a conversation
- মধ্যে কথা-বার্তার
- inna
- إِنَّ
- Indeed
- নিশ্চয়ই
- dhālikum
- ذَٰلِكُمْ
- that
- সেটা
- kāna
- كَانَ
- was
- হলো (এমন যে)
- yu'dhī
- يُؤْذِى
- troubling
- কষ্ট দেয়
- l-nabiya
- ٱلنَّبِىَّ
- the Prophet
- নাবীকে
- fayastaḥyī
- فَيَسْتَحْىِۦ
- and he is shy
- কিন্তু সে সংকোচ বোধ করে (বলতে)
- minkum
- مِنكُمْۖ
- of (dismissing) you
- হ'তে তোমাদের
- wal-lahu
- وَٱللَّهُ
- But Allah
- অথচ আল্লাহ
- lā
- لَا
- is not shy
- না
- yastaḥyī
- يَسْتَحْىِۦ
- is not shy
- সংকোচ বোধ করেন
- mina
- مِنَ
- of
- হ'তে
- l-ḥaqi
- ٱلْحَقِّۚ
- the truth
- সত্য (বলা)
- wa-idhā
- وَإِذَا
- And when
- এবং যখন
- sa-altumūhunna
- سَأَلْتُمُوهُنَّ
- you ask them
- তাদের (অর্থাৎ নাবী স্ত্রীদের) হ'তে তোমরা চাও
- matāʿan
- مَتَٰعًا
- for something
- কোনো সামগ্রী
- fasalūhunna
- فَسْـَٔلُوهُنَّ
- then ask them
- তবে তোমরা তাদের কাছে চাও
- min
- مِن
- from
- হ'তে
- warāi
- وَرَآءِ
- behind
- পিছন
- ḥijābin
- حِجَابٍۚ
- a screen
- পর্দার
- dhālikum
- ذَٰلِكُمْ
- That
- সেটাই
- aṭharu
- أَطْهَرُ
- (is) purer
- পবিত্রতর
- liqulūbikum
- لِقُلُوبِكُمْ
- for your hearts
- জন্যে অন্তরসমূহের তোমাদের
- waqulūbihinna
- وَقُلُوبِهِنَّۚ
- and their hearts
- এবং অন্তরসমূহের তাদের (জন্যও)
- wamā
- وَمَا
- And not
- এবং না
- kāna
- كَانَ
- is
- ছিলো (সঙ্গত)
- lakum
- لَكُمْ
- for you
- জন্যে তোমাদের
- an
- أَن
- that
- যে
- tu'dhū
- تُؤْذُوا۟
- you trouble
- তোমরা কষ্ট দিবে
- rasūla
- رَسُولَ
- (the) Messenger
- রাসূলকে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (of) Allah
- আল্লাহর
- walā
- وَلَآ
- and not
- আর না
- an
- أَن
- that
- (সঙ্গত) যে
- tankiḥū
- تَنكِحُوٓا۟
- you should marry
- তোমরা বিয়ে করবে
- azwājahu
- أَزْوَٰجَهُۥ
- his wives
- স্ত্রীদেরকে তার
- min
- مِنۢ
- after him
- থেকে
- baʿdihi
- بَعْدِهِۦٓ
- after him
- পর তার
- abadan
- أَبَدًاۚ
- ever
- কখনও
- inna
- إِنَّ
- Indeed
- নিশ্চয়ই
- dhālikum
- ذَٰلِكُمْ
- that
- সেটা
- kāna
- كَانَ
- is
- হলো
- ʿinda
- عِندَ
- near
- কাছে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- Allah
- আল্লাহর
- ʿaẓīman
- عَظِيمًا
- an enormity
- গুরুতর (অপরাধ)
Transliteration:
Yaaa aiyuhal lazeena aamanoo laa tadkhuloo bu yootan Nabiyyi ilaaa ai yu'zana lakum ilaa ta'aamin ghaira naazireena inaahu wa laakin izaa du'eetum fadkhuloo fa izaa ta'imtum fantashiroo wa laa mustaaniseena lihadees; inna zaalikum kaana yu'zin Nabiyya fa yastahyee minkum wallaahu laa yastahyee minal haqq; wa izaa sa altumoohunna mataa'an fas'aloohunna minw waraaa'i hijaab; zaalikum atharu liquloobikum wa quloobihinn; wa maa kaana lakum an tu'zoo Rasoolal laahi wa laaa an tankihooo azwaajahoo mim ba'diheee abadaa; inna zaalikum kaana 'indal laahi 'azeema(QS. al-ʾAḥzāb:53)
English Sahih International:
O you who have believed, do not enter the houses of the Prophet except when you are permitted for a meal, without awaiting its readiness. But when you are invited, then enter; and when you have eaten, disperse without seeking to remain for conversation. Indeed, that [behavior] was troubling the Prophet, and he is shy of [dismissing] you. But Allah is not shy of the truth. And when you ask [his wives] for something, ask them from behind a partition. That is purer for your hearts and their hearts. And it is not [conceivable or lawful] for you to harm the Messenger of Allah or to marry his wives after him, ever. Indeed, that would be in the sight of Allah an enormity. (QS. Al-Ahzab, Ayah ৫৩)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! নবীগৃহে প্রবেশ কর না যতক্ষণ না তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া হয় খাদ্য গ্রহণের জন্য, (আগেভাগেই এসে পড় না) খাদ্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা করে যেন বসে থাকতে না হয়। তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ কর। অতঃপর তোমাদের খাওয়া হলে তোমরা চলে যাও। কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। তোমাদের এ কাজ নবীকে কষ্ট দেয়। সে তোমাদেরকে (উঠে যাওয়ার জন্য বলতে) লজ্জাবোধ করে, আল্লাহ সত্য কথা বলতে লজ্জাবোধ করেন না। তোমরা যখন তার স্ত্রীগণের নিকট কোন কিছু চাও, তখন পর্দার আড়াল হতে তাদের কাছে চাও। এটাই তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য পবিত্রতর। তোমাদের জন্য আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া সঙ্গত নয়। আর তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীগণকে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য কক্ষনো বৈধ নয়। আল্লাহর দৃষ্টিতে এটা মহা অপরাধ। (আল আহযাব, আয়াত ৫৩)
Tafsir Ahsanul Bayaan
হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের অনুমতি না দেওয়া হলে তোমরা আহার্য প্রস্তুতির জন্য অপেক্ষা না করে ভোজনের জন্য নবী-গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমাদেরকে আহবান করা হলে তোমরা প্রবেশ কর এবং ভোজন-শেষে তোমরা চলে যাও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। কারণ এ নবীর জন্য কষ্টদায়ক; সে তোমাদেরকে উঠে যাবার জন্য বলতে সংকোচ বোধ করে। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না।[১] তোমরা তার পত্নীদের নিকট হতে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল হতে চাও।[২] এ বিধান তোমাদের এবং তাদের হৃদয়ের জন্য অধিকতর পবিত্র।[৩] তোমাদের কারও পক্ষে আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেওয়া[৪] অথবা তার মৃত্যুর পর তার পত্নীদেরকে বিবাহ করা কখনও সংগত নয়। নিশ্চয় আল্লাহর দৃষ্টিতে এ ঘোরতর অপরাধ। [৫]
[১] এই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ এই যে, নবী (সাঃ) যয়নাবের ওলীমাতে সাহাবায়ে কিরামগণকে দাওয়াত করেছিলেন। খাওয়ার পরেও কিছু লোক সেখানেই বসে আপোসে কথাবার্তায় লিপ্ত ছিল। যাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বিশেষ কষ্ট অনুভব হচ্ছিল। তিনি লজ্জা-সংকোচবশতঃ তাদেরকে চলে যাওয়ার জন্য কিছুই বলতে পারেননি। (বুখারীঃ তাফসীর সূরা আহযাব) এই আয়াতে দাওয়াতের কিছু রীতি-নীতি বর্ণনা করা হয়েছে; প্রথম রীতি এই যে, আহার্য প্রস্তুত হওয়ার পর দাওয়াতে যাবে, সময়ের পূর্বে উপস্থিত হয়ে ধরনা দিয়ে বসে থাকবে না। দ্বিতীয় রীতি এই যে, খাওয়া শেষ হওয়া মাত্র নিজ নিজ গৃহে ফিরে যাবে। সেখানে বসে বসে পরস্পর কথাবার্তা বলতে থাকবে না। খাওয়ার উল্লেখ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে করা হয়েছে। নচেৎ আসল উদ্দেশ্য এই যে, তোমাদেরকে যখনই ডাকা হবে -- খাওয়ার জন্য হোক বা অন্য কোন কাজের জন্য -- অনুমতি ছাড়া গৃহে প্রবেশ করবে না।
[২] এই বিধান উমার (রাঃ)-এর বাসনার পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনার নিকট সৎ-অসৎ হরেক রকমের লোক আসা যাওয়া করে, আপনি আপনার পত্নীগণকে পর্দা করার আদেশ দিলে খুবই ভাল হত। এর পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা এই পর্দার হুকুম নাযিল করেন।
(বুখারীঃ কিতাবুস স্বালাহ ও তাফসীর সুরা বাক্বারাহ, মুসলিমঃ বাবু ফাযায়েলে ওমর বিন খাত্তাব)
[৩] পর্দা বিধিবদ্ধ হওয়ার হিকমত, যুক্তি ও কারণ এই যে, তার মাধ্যমে পুরুষ ও নারী উভয়েই আন্তরিক কুবাসনা থেকে এবং একে অপরের দ্বারা ফিতনাতে পড়া থেকে পবিত্র থাকবে ও রক্ষা পাবে।
[৪] তা যে কোন প্রকারে হতে পারে। নবী (সাঃ)-এর গৃহে অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করা, তাঁর ইচ্ছা ছাড়া তাঁর ঘরে বসে থাকা এবং পর্দা ছাড়া সরাসরি পবিত্র নবী-পত্নীগণের সঙ্গে কথা বলা, এ সকল কর্মও তাঁর কষ্টের কারণ। তাই এ সব থেকে দূরে থাকবে।
[৫] এই নির্দেশ ঐ সকল পবিত্র নবী-পত্নীগণের জন্য যাঁরা নবী (সাঃ)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। পক্ষান্তরে নবী (সাঃ) যে স্ত্রীকে সঙ্গমের পর তালাক দিয়ে বিদায় করে দিয়েছেন, তিনি এই সাধারণ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবেন কি না? উক্ত বিষয়ে দ্বিমত আছে। অনেকে তাঁকেও আদেশের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন। আবার অনেকে অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না। কিন্তু নবী (সাঃ)-এর এই রকম কোন স্ত্রীই ছিলেন না। অতএব এটা একটা শুধু কল্পিত মাসআলা মাত্র। পক্ষান্তরে ঐ সকল নারীদের এক তৃতীয় শ্রেণী; যাদের সাথে নবী (সাঃ)-এর বিবাহ হয়েছিল; কিন্তু সঙ্গমের পূর্বে তালাক দিয়ে দিয়েছেন, তাদেরকে অন্য লোক বিবাহ করতে পারে -- এতে কোন মতভেদ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাবার- দাবার তৈরীর জন্য অপেক্ষা না করে খাওয়ার জন্য নবীর ঘরে প্রবেশ করো না। তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্ৰবেশ করো তারপর খাওয়া শেষে তোমরা চলে যেও; তোমরা কথাবার্তায় মশগুল হয়ে পড়ো না। নিশ্চয় তোমাদের এ আচরণ নবীকে কষ্ট দেয়, কারণ তিনি তোমাদের ব্যাপারে (উঠিয়ে দিতে) সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচ বোধ করেন না [১]। তোমরা তার পত্নীদের কাছ থেকে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এ বিধান তোমাদের ও তাদের হৃদয়ের জন্য বেশী পবিত্ৰ [২]। আর তোমাদের কারো পক্ষে আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া সংগত নয় এবং তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করাও তোমাদের জন্য কখনো বৈধ নয়। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
[১] কোন কোন লোক খাওয়ার দাওয়াতে এসে খাওয়া দাওয়া সেরে এমনভাবে ধর্ণা দিয়ে বসে চুটিয়ে আলাপ জুড়ে দেয় যে, আর উঠবার নামটি নেয় না, মনে হয় এ আলাপ আর শেষ হবে না। গৃহকর্তা ও গৃহবাসীদের এতে কি অসুবিধা হচ্ছে তার কোন পরোয়াই তারা করে না। ভদ্রতাজ্ঞান বিবর্জিত লোকেরা তাদের এ আচরণের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও কষ্ট দিতে থাকতো এবং তিনি নিজের ভদ্র ও উদার স্বভাবের কারণে এসব বরদাশত করতেন। শেষে যয়নবের ওলিমার দিন এ কষ্টদায়ক আচরণ সীমা ছাড়িয়ে যায়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিশেষ খাদেম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, “রাতের বেলা ছিল ওলিমার দাওয়াত ৷ সাধারণ লোকেরা খাওয়া শেষ করে বিদায় নিয়েছিল। কিন্তু দু'তিনজন লোক বসে কথাবার্তায় মশগুল হয়ে গিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিরক্ত হয়ে উঠলেন এবং পবিত্ৰ স্ত্রীদের ওখান থেকে এক চক্কর দিয়ে এলেন। ফিরে এসে দেখলেন তারা যথারীতি বসেই আছেন। তিনি আবার ফিরে গেলেন এবং আয়েশার কামরায় বসলেন। অনেকটা রাত অতিবাহিত হয়ে যাবার পর যখন তিনি জানলেন তারা চলে গেছেন। তখন তিনি যায়নবের কক্ষে গেলেন। এরপর এ বদ অভ্যাসগুলো সম্পর্কে লোকদেরকে সতর্ক করে দেয়ার ব্যাপারটি স্বয়ং আল্লাহ নিজেই গ্ৰহণ করলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বর্ণনা অনুযায়ী এ আয়াত সে সময়ই নাযিল হয় ৷ [বুখারী; ৫১৬৩, মুসলিম; ১৪২৮] [দেখুন, তাবারী, ফাতহুল কাদীর]
[২] এ আয়াতে বর্ণিত পর্দার হুকুমটি শুধু নবী-স্ত্রীদের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বরং প্রতিটি ঈমানদার নারীই পর্দার হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। [আদওয়াউল-বায়ান; কুরতুবী]
Tafsir Bayaan Foundation
হে মুমিনগণ, তোমরা নবীর ঘরসমূহে প্রবেশ করো না; অবশ্য যদি তোমাদেরকে খাবারের অনুমতি দেয়া হয় তাহলে (প্রবেশ কর) খাবারের প্রস্ত্ততির জন্য অপেক্ষা না করে। আর যখন তোমাদেরকে ডাকা হবে তখন তোমরা প্রবেশ কর এবং খাবার শেষ হলে চলে যাও আর কথাবার্তায় লিপ্ত হয়ো না; কারণ তা নবীকে কষ্ট দেয়, সে তোমাদের বিষয়ে সঙ্কোচ বোধ করে; কিন্তু আল্লাহ সত্য প্রকাশে সঙ্কোচ বোধ করেন না। আর যখন নবীপত্নীদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে; এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র। আর আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তার (মৃত্যুর) পর তার স্ত্রীদেরকে বিয়ে করা কখনো তোমাদের জন্য সঙ্গত নয়। নিশ্চয় এটি আল্লাহর কাছে গুরুতর পাপ।
Muhiuddin Khan
হে মুমিনগণ! তোমাদেরকে অনুমতি দেয়া না হলে তোমরা খাওয়ার জন্য আহার্য রন্ধনের অপেক্ষা না করে নবীর গৃহে প্রবেশ করো না। তবে তোমরা আহুত হলে প্রবেশ করো, তবে অতঃপর খাওয়া শেষে আপনা আপনি চলে যেয়ো, কথাবার্তায় মশগুল হয়ে যেয়ো না। নিশ্চয় এটা নবীর জন্য কষ্টদায়ক। তিনি তোমাদের কাছে সংকোচ বোধ করেন; কিন্তু আল্লাহ সত্যকথা বলতে সংকোচ করেন না। তোমরা তাঁর পত্নীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্যে এবং তাঁদের অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ। আল্লাহর রাসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর ওফাতের পর তাঁর পত্নীগণকে বিবাহ করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। আল্লাহর কাছে এটা গুরুতর অপরাধ।
Zohurul Hoque
ওহে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা নবীর ঘরগুলোয় প্রবেশ করো না তোমাদের খানাপিনার জন্য অনুমতি না দেওয়া হলে -- রান্নাবান্না শেষ হবার অপেক্ষা না করে, বরং যখন তোমাদের ডাকা হয় তখন তোমরা প্রবেশ করো, তারপর যখন তোমরা খেয়ে নিয়েছ তখন চলে যেও, এবং গড়িমসি করো না বাক্যালাপের জন্য। নিঃসন্দেহ এইসব নবীকে কষ্ট দিয়ে থাকে, অথচ তিনি সংকোচ বোধ করেন তোমাদের জন্য, কিন্তু আল্লাহ্ সত্য সন্বন্ধে সংকোচ করেন না। আর যখন তোমরা তাদের কাছে কোনো-কিছু চাও তখন পর্দার আড়াল থেকে তাদের কাছে চাইবে। এটিই অধিকতর পবিত্র তোমাদের হৃদয়ের জন্য এবং তাদের হৃদয়ের জন্যেও। এটি তোমাদের জন্য নয় যে তোমার নবীকে উত্ত্যক্ত করবে, আর এটিও নয় যে তার পরে তোমরা কখনো তাঁর পত্নীদের বিবাহ করবে। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ্র কাছে গুরুতর ব্যাপার!