কুরআন মজীদ সূরা আর-রূম আয়াত ৫৪
Qur'an Surah Ar-Rum Verse 54
আর-রূম [৩০]: ৫৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
۞ اَللّٰهُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنْۢ بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً ثُمَّ جَعَلَ مِنْۢ بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَّشَيْبَةً ۗيَخْلُقُ مَا يَشَاۤءُۚ وَهُوَ الْعَلِيْمُ الْقَدِيْرُ (الروم : ٣٠)
- al-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- ( তিনিই ) আল্লাহ
- alladhī
- ٱلَّذِى
- (is) the One Who
- যিনি
- khalaqakum
- خَلَقَكُم
- created you
- সৃষ্টি করেছেন তোমাদের
- min
- مِّن
- from
- হ'তে
- ḍaʿfin
- ضَعْفٍ
- weakness
- দুর্বল অবস্থা
- thumma
- ثُمَّ
- then
- এরপর
- jaʿala
- جَعَلَ
- made
- দান করেছেন
- min
- مِنۢ
- after
- থেকে
- baʿdi
- بَعْدِ
- after
- পর
- ḍaʿfin
- ضَعْفٍ
- weakness
- দুর্বল অবস্থার
- quwwatan
- قُوَّةً
- strength
- শক্তি
- thumma
- ثُمَّ
- then
- এরপর
- jaʿala
- جَعَلَ
- made
- করে দিয়েছেন
- min
- مِنۢ
- after
- থেকে
- baʿdi
- بَعْدِ
- after
- পর
- quwwatin
- قُوَّةٍ
- strength
- শক্তির
- ḍaʿfan
- ضَعْفًا
- weakness
- দুর্বল
- washaybatan
- وَشَيْبَةًۚ
- and gray hair
- ও বৃদ্ধ
- yakhluqu
- يَخْلُقُ
- He creates
- তিনি সৃষ্টি করেন
- mā
- مَا
- what
- যা
- yashāu
- يَشَآءُۖ
- He wills
- তিনি চান
- wahuwa
- وَهُوَ
- and He
- এবং তিনি
- l-ʿalīmu
- ٱلْعَلِيمُ
- (is) the All-Knower
- সর্বজ্ঞ
- l-qadīru
- ٱلْقَدِيرُ
- the All-Powerful
- সর্বশক্তিমান
Transliteration:
Allahul lazee khalaqa kum min du'fin summa ja'ala mim ba'di du'fin quwwatan summa ja'ala mim ba'di quwwatin du'fanw wa shaibah; yakhluqu maa yashaaa'u wa Huwal 'Aleemul Qadeer(QS. ar-Rūm:54)
English Sahih International:
Allah is the one who created you from weakness, then made after weakness strength, then made after strength weakness and white hair. He creates what He wills, and He is the Knowing, the Competent. (QS. Ar-Rum, Ayah ৫৪)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তিনি আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে (অসহায়) দুর্বল অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন, দুর্বলতার পর দিয়েছেন শক্তি, শক্তির পর আবার দিয়েছেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছে করেন সৃষ্টি করেন। তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, সবচেয়ে শক্তিধর। (আর-রূম, আয়াত ৫৪)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আল্লাহ তিনি তোমাদেরকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি করেন,[১] অতঃপর দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন,[২] শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য।[৩] তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন[৪] এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান ।
[১] এখানে আল্লাহ তাআলা স্বীয় অসীম ক্ষমতার আরো একটি পরিপূর্ণতার কথা বর্ণনা করছেন। আর তা হল, মানুষ সৃষ্টির বিভিন্ন স্তর। দুর্বলতার অর্থ হল, পানির ফোঁটা (বীর্যবিন্দু) অথবা শিশু অবস্থা।
[২] অর্থাৎ, যৌবনকাল, যাতে দৈহিক ও জ্ঞান-বুদ্ধির শক্তি পরিপূর্ণতা লাভ করে।
[৩] দুর্বলতা বলতে বার্ধক্যকালকে বুঝানো হয়েছে, যে কালে জ্ঞান-বুদ্ধি ও শারীরিক শক্তি কম হতে শুরু করে। আর বার্ধক্য বলতে বৃদ্ধ বয়সের ঐ অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে, যখন মানুষ অতি দুর্বল হয়ে পড়ে, মনোবল ক্ষীণ হয়ে যায়, অস্থি ও হাত-পায়ের সঞ্চালন ও ধারণ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়, চুল সাদা হয় এবং বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিক সকল হুলিয়ার পরিবর্তন ঘটে। কুরআন মনুষ্য-জীবনের এই চারটি বড় বড় স্তরের কথা উল্লেখ করেছে। কিছু আলেমগণ তার অন্যান্য ছোট ছোট স্তরের কথাও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন; যা কুরআনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনার ব্যাখ্যা। যেমন ইবনে কাসীর বলেন, মানুষ একের পর এক ঐ সকল অবস্থা ও স্তরে উপনীত হয়। তার মূল উপাদান হল মাটি -- অর্থাৎ, তার পিতা আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি মাটি থেকে হয়েছে অথবা মানুষ যে খাবার খায় এবং তাতে যে বীর্য তৈরী হয়, যে বীর্য মায়ের গর্ভাশয়ে স্থান পেয়ে মানুষের জন্ম হয়, তা আসলে মাটি থেকেই উৎপাদিত। তারপর তা বীর্য, বীর্য থেকে রক্তপিন্ড, অতঃপর গোশতপিন্ড, অতঃপর গোশতপিন্ডকে পরিণত করা হয় অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থি-পঞ্জরকে ঢেকে দেওয়া হয় গোশত দ্বারা, অতঃপর তাতে 'রূহ' সঞ্চার করা হয়। তারপর মাতৃগর্ভ থেকে অতি ছোট, দুর্বল ও কোমল অবস্থায় জন্ম গ্রহণ করে। তারপর ধীরে ধীরে সে বাড়তে থাকে, শৈশব, কৈশোর ও যৌবনকালে পদার্পণ করে, তারপর শুরু হয় দুর্বলতার দিকে ফিরে যাওয়ার পালা। তারপর বার্ধক্যের আরম্ভ, অতঃপর স্থবিরতা এবং পরিশেষে মৃত্যু তাকে নিজের কোলে টেনে নেয়।
[৪] অর্থাৎ, সকল প্রকার সৃষ্টি তিনি করতে পারেন। তার মধ্যে দুর্বলতা ও সবলতাও; যা মানুষের জীবনে অতিবাহিত হয়ে থাকে এবং যার বিস্তারিত আলোচনা বর্ণনা করা হল।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আল্লাহ্ তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেন দুর্বলতা থেকে, দুর্বলতার পর তিনি দেন শক্তি; শক্তির পর আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য [১]। তিনি যা ইচ্ছে সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বক্ষম।
[১] কাতাদাহ বলেন, প্রথম দুর্বলতা হচ্ছে শুক্র। আর শেষ দুর্বলতা হচ্ছে বৃদ্ধ বয়স যখন তার চুল সাদা হয়ে যেতে থাকে। [তাবারী] আল্লামা শানকীতী বলেন, আল্লাহ তা'আলা প্রথম দুর্বলতা ও শেষ দুর্বলতা উভয়টির কথাই কুরআনের অন্যত্র বর্ণনা করেছেন। যেমন প্রথম দুর্বলতা সম্পর্কে বলেন, “আমরা কি তোমাদেরকে তুচ্ছ পানি হতে সৃষ্টি করিনি?” [সূরা আল-মুরসালাত; ২০] “মানুষ কি দেখে না যে, আমরা তাকে সৃষ্টি করেছি শুক্রবিন্দু থেকে? অথচ পরে সে হয়ে পড়ে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী।” [সূরা ইয়াসীন; ৭৭] “অতএব মানুষ যেন চিন্তা করে দেখে তাকে কী থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে! তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সবেগে স্থলিত পানি হতে” |সূরা আত-তারেক; ৫-৬] “কখনো নয়, আমরা তাদেরকে যা থেকে সৃষ্টি করেছি তা তারা জানে।” [সূরা আল-মা'আরেজঃ ৩৯] “তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখুন, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!" |সূরা আন-নাহল; ৪] আর দ্বিতীয় দুর্বলতা সম্পর্কে বলেন, “আর আল্লাহই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন; তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে প্রত্যাবর্তিত করা হবে নিকৃষ্টতম বয়সে; যাতে জ্ঞান লাভের পরেও তার সবকিছু অজানা হয়ে যায়।” [সূরা আন-নাহল; ৭০] “আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হীনতম বয়সে প্রত্যাবর্তিত করা হয়, যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না।” [সূরা আল-হাজ; ৫] “আর আমরা যাকে দীর্ঘ জীবন দান করি, সৃষ্টি অবয়বে তার অবনতি ঘটাই। তবুও কি তারা বুঝে না?” [সূরা ইয়াসীন; ৬৮]
Tafsir Bayaan Foundation
আল্লাহ, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন দুর্বল বস্তু থেকে এবং দুর্বলতার পর তিনি শক্তি দান করেন। আর শক্তির পর তিনি আবার দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনিই সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।
Muhiuddin Khan
আল্লাহ তিনি দূর্বল অবস্থায় তোমাদের সৃষ্টি করেন অতঃপর দূর্বলতার পর শক্তিদান করেন, অতঃপর শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য। তিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।
Zohurul Hoque
আল্লাহ্ই তিনি যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন শক্তিহীন দশা থেকে, তার পরে তিনি শক্তিহীনতার পরে দিয়েছেন শক্তি, তার পর শক্তিলাভের পরে তিনি দিয়েছেন শক্তিহীনতা ও পাকাচুল। তিনি যা চান তাই সৃষ্টি করেন, আর তিনিই সর্বজ্ঞাতা, পরম ক্ষমতাবান।