কুরআন মজীদ সূরা আল ইমরান আয়াত ৭৭
Qur'an Surah Ali 'Imran Verse 77
আল ইমরান [৩]: ৭৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اِنَّ الَّذِيْنَ يَشْتَرُوْنَ بِعَهْدِ اللّٰهِ وَاَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيْلًا اُولٰۤىِٕكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللّٰهُ وَلَا يَنْظُرُ اِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ وَلَا يُزَكِّيْهِمْ ۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (آل عمران : ٣)
- inna
- إِنَّ
- Indeed
- নিশ্চয়
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- যারা
- yashtarūna
- يَشْتَرُونَ
- exchange
- বিক্রয় করে
- biʿahdi
- بِعَهْدِ
- (the) Covenant
- প্রতিশ্রুতিকে
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (of) Allah
- আল্লাহর (সাথে কৃত)
- wa-aymānihim
- وَأَيْمَٰنِهِمْ
- and their oaths
- ও তাদের শপথসমূহকে
- thamanan
- ثَمَنًا
- (for) a price
- মূল্যে
- qalīlan
- قَلِيلًا
- little
- সামান্য
- ulāika
- أُو۟لَٰٓئِكَ
- those
- ঐসব লোক
- lā
- لَا
- no
- নাই
- khalāqa
- خَلَٰقَ
- share
- কোন অংশ
- lahum
- لَهُمْ
- for them
- তাদের জন্যে
- fī
- فِى
- in
- (মধ্যে)
- l-ākhirati
- ٱلْءَاخِرَةِ
- the Hereafter
- আখেরাতে
- walā
- وَلَا
- and not
- এবং না
- yukallimuhumu
- يُكَلِّمُهُمُ
- will speak to them
- তাদের সাথে কথা বলবেন
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ
- walā
- وَلَا
- and not
- এবং না
- yanẓuru
- يَنظُرُ
- look
- (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকাবেন
- ilayhim
- إِلَيْهِمْ
- at them
- তাদের প্রতি
- yawma
- يَوْمَ
- (on the) Day
- দিনে
- l-qiyāmati
- ٱلْقِيَٰمَةِ
- (of) the Resurrection
- কিয়ামতের
- walā
- وَلَا
- and not
- এবং না
- yuzakkīhim
- يُزَكِّيهِمْ
- purify them
- তাদের পরিশুদ্ধ করবেন
- walahum
- وَلَهُمْ
- and for them
- এবং তাদের জন্যে রয়েছে
- ʿadhābun
- عَذَابٌ
- (is) a punishment
- শাস্তি
- alīmun
- أَلِيمٌ
- painful
- অতি কষ্টদায়ক
Transliteration:
Innal lazeena yashtaroona bi'ahdil laahi wa aymaanihim samanan qaleelan ulaaa'ika laa khalaaqa lahum fil Aakhirati wa laa yukallimuhumul laahu wa laa yanzuru ilaihim Yawmal Qiyaamati wa laa yuzakkeehim wa lahum 'azabun 'aleem(QS. ʾĀl ʿImrān:77)
English Sahih International:
Indeed, those who exchange the covenant of Allah and their [own] oaths for a small price will have no share in the Hereafter, and Allah will not speak to them or look at them on the Day of Resurrection, nor will He purify them; and they will have a painful punishment. (QS. Ali 'Imran, Ayah ৭৭)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
নিশ্চয় যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে, এরা আখেরাতের কোন অংশই পাবে না এবং আল্লাহ ক্বিয়ামাতের দিন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন না, বস্তুতঃ তাদের জন্য আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (আল ইমরান, আয়াত ৭৭)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে স্বল্প মূল্যে বিক্রয় করে, পরকালে তাদের কোন অংশ নেই। কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সঙ্গে কথা বলবেন না, আর তাদের দিকে চেয়ে দেখবেন না এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।[১]
[১] উল্লিখিত লোকদের বিপরীত যারা, তাদের অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে। এরা হল দুই শ্রেণীর লোক। এক শ্রেণীর লোক এমন যারা আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার এবং নিজেদের কসমের কোন পরোয়া না করে দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের খাতিরে নবী করীম (সাঃ)-এর উপর ঈমান আনেনি। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক হল এমন যারা মিথ্যা কসম খেয়ে নিজেদের মাল বিক্রি করে অথবা কারো মাল আত্মসাৎ করে। যেমন, হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কারো সম্পদ আত্মসাৎ করার জন্য মিথ্যা কসম খায়, সে আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তিনি তার উপর ক্রোধান্বিত থাকবেন।" (বুখারী ৭৪৪৫, মুসলিম ১৩৭নং) অনুরূপ তিনি বলেছেন, "তিন ব্যক্তির সাথে মহান আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য হবে কঠিন শাস্তি। তাদের মধ্যে একজন হল এমন ব্যক্তি যে মিথ্যা কসম দ্বারা নিজের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে।" (মুসলিম ১০৬নং) আরো বিভিন্ন হাদীসে এ কথা বর্ণিত হয়েছে। (ইবনে কাসীর-ফাতহুল ক্বাদীর)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
নিশ্চয় যারা আল্লাহ্র সাথে করা প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য খরিদ করে, আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই [১]। আর আল্লাহ্ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং তাদের দিকে তাকাবেন না কেয়ামতের দিন। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না; এবং তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি [২]।
[১] আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ এক ব্যক্তি তার পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে বাজারে দাঁড়িয়ে শপথ করে বলল, ‘আল্লাহ্র শপথ! আমাকে এর চেয়ে বেশী মূল্য দিতে চেয়েছিল’ অথচ তা সত্য ছিল না, তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোন মুসলিমকে বিভ্রান্ত করে তার পণ্য গ্রহণ করতে উদ্ধুদ্ধ করা। তখন এ আয়াত নাযিল হল। [বুখারীঃ ২০৮৮]
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি আওফা বলেন, দালালমাত্রই সুদখোর ও খেয়ানতকারী। [বুখারী] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন শ্রেণীর লোকের প্রতি আল্লাহ্ কিয়ামতের দিন তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে মর্মম্ভদ শাস্তি। এক. কোন লোকের অতিরিক্ত পানি থাকা সত্বেও কোন মুসাফিরকে দিতে নিষেধ করেছে। দুই. কোন লোক রাষ্ট্রপ্রধানের হাতে কেবলমাত্র দুনিয়ালাভের জন্যই আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছে। ফলে তাকে দুনিয়ার কোন সম্পদ দেয়া হলে সে সন্তুষ্ট থাকে, না দেয়া হলে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে। তিন. ঐ ব্যক্তি যে আসরের পরে তার পণ্য বিক্রির জন্য বিছিয়ে নিয়েছে, তারপর বলতে থাকে যে, আল্লাহ্র শপথ! আমাকে (পূর্বে) এ পণ্যের জন্য এত এত দেয়ার কথা বলেছে (অর্থাৎ লোকেরা এর দাম এত এত বলেছে)। আর এটা শুনে কোন লোক তাকে সত্যবাদী মনে করে নিয়েছে (এবং তা ক্রয় করে নিয়েছে)। তারপর তিনি আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [বুখারী; ২৩৫৮; মুসলিম; ১০৮]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কেউ যদি জেনে-বুঝে কোন মুসলিমের সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসে মিথ্যা শপথ করে, সে আল্লাহ্র সাথে ক্রোধাম্বিত অবস্থায় সাক্ষাত করবে।” তখন আল্লাহ্ তাঁর নবীর সত্যায়নের জন্য উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। [বুখারী; ৪৫৪৯, ৪৫৫০; মুসলিম; ১৩৩৮]
[২] আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দু পক্ষের মধ্যে যা সাব্যস্ত হয় এবং যা পূর্ণ করা উভয় পক্ষের জন্য জরুরী, এমন বিষয়কে অঙ্গীকার বলা হয়। ওয়াদা শুধু এক পক্ষ থেকৈ হয়। অতএব, অঙ্গীকার ব্যাপক এবং ওয়াদা সীমিত। কুরআন ও সুন্নায় অঙ্গীকার পূর্ণ করার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। উপরোল্লেখিত আয়াতে অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে পাঁচটি সতর্ক বাণী উচ্চারিত হয়েছেঃ (এক) জান্নাতের নেয়ামতসমূহে তার কোন অংশ নেই। (দুই) আল্লাহ্ তা’আলা তার সাথে অনুকম্পাসূচক কথা বলবেন না। (তিন) কেয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তাকে রহমতের দৃষ্টিতে দেখবেন না। (চার) আল্লাহ্ তা’আলা তার পাপ মার্জনা করবেন না। কেননা, অঙ্গীকার ভঙ্গের কারণে বান্দার হক নষ্ট হয়েছে। বান্দার হক নষ্ট করলে আল্লাহ্ মার্জনা করেন না। (পাঁচ) তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেয়া হবে।
Tafsir Bayaan Foundation
নিশ্চয় যারা আল্লাহর অঙ্গীকার ও তাদের শপথের বিনিময়ে খরিদ করে তুচ্ছ মূল্য, পরকালে এদের জন্য কোন অংশ নেই। আর আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না এবং কিয়ামতের দিন তাদের দিকে তাকাবেন না, আর তাদেরকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যই রয়েছে মর্মন্তুদ আযাব।
Muhiuddin Khan
যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মুল্যে বিক্রয় করে, আখেরাতে তাদের কেন অংশ নেই। আর তাদের সাথে কেয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি (করুণার) দৃষ্টিও দেবেন না। আর তাদেরকে পরিশুদ্ধও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।
Zohurul Hoque
নিঃসন্দেহ যারা আল্লাহ্র অঙ্গীকার ও তাদের প্রতিশ্রুতি স্বল্পমূল্যে বিক্রী করে দেয়, তারা -- পরকালে তাদের জন্য কোনো ভাগ থাকবে না, আর আল্লাহ্ তাদের সঙ্গে কথাও বলবেন না বা তাদের দিকে তাকাবেন না কিয়ামতের দিনে, আর তিনি তাদের শুদ্ধও করবেন না, আর তাদের জন্য থাকছে কঠোর যাতনা।