কুরআন মজীদ সূরা আল ইমরান আয়াত ৫২
Qur'an Surah Ali 'Imran Verse 52
আল ইমরান [৩]: ৫২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
۞ فَلَمَّآ اَحَسَّ عِيْسٰى مِنْهُمُ الْكُفْرَ قَالَ مَنْ اَنْصَارِيْٓ اِلَى اللّٰهِ ۗ قَالَ الْحَوَارِيُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ ۚ اٰمَنَّا بِاللّٰهِ ۚ وَاشْهَدْ بِاَنَّا مُسْلِمُوْنَ (آل عمران : ٣)
- falammā
- فَلَمَّآ
- Then when
- অতঃপর যখন
- aḥassa
- أَحَسَّ
- perceived
- অনুভব করল
- ʿīsā
- عِيسَىٰ
- Isa
- ঈসা
- min'humu
- مِنْهُمُ
- from them
- তাদের হতে
- l-kuf'ra
- ٱلْكُفْرَ
- [the] disbelief
- কুফরীর (প্রতি অবিচলতা)
- qāla
- قَالَ
- he said
- সে বলল
- man
- مَنْ
- "Who
- ''কে (আছ)
- anṣārī
- أَنصَارِىٓ
- (will be) my helpers
- আমার সাহায্যকারী
- ilā
- إِلَى
- to
- দিকে
- l-lahi
- ٱللَّهِۖ
- Allah"
- আল্লাহর (পথে)''
- qāla
- قَالَ
- Said
- বলল
- l-ḥawāriyūna
- ٱلْحَوَارِيُّونَ
- the disciples
- হাওয়ারীরা
- naḥnu
- نَحْنُ
- "We
- ''আমরা
- anṣāru
- أَنصَارُ
- (will be the) helpers
- সাহায্যকারী
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (of) Allah
- আল্লাহর (পথে)
- āmannā
- ءَامَنَّا
- we believe[d]
- আমরা ঈমান আনলাম
- bil-lahi
- بِٱللَّهِ
- in Allah
- আল্লাহর উপর
- wa-ish'had
- وَٱشْهَدْ
- and bear witness
- এবং তুমি সাক্ষী থাক
- bi-annā
- بِأَنَّا
- that we
- যে আমরা
- mus'limūna
- مُسْلِمُونَ
- (are) Muslims
- (আত্মসমর্পণকারী) মুসলমান
Transliteration:
Falammaaa ahassa 'Eesaa minhumul kufra qaala man ansaaree ilal laahi qaalal Hawaariyyoona nahnu ansaarul laahi aamannaa billaahi washhad bi annaa muslimoon(QS. ʾĀl ʿImrān:52)
English Sahih International:
But when Jesus felt [persistence in] disbelief from them, he said, "Who are my supporters for [the cause of] Allah?" The disciples said, "We are supporters for Allah. We have believed in Allah and testify that we are Muslims [submitting to Him]. (QS. Ali 'Imran, Ayah ৫২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতঃপর ‘ঈসা যখন তাদের অবিশ্বাস অনুভব করল, তখন বলল, ‘কেউ আছে কি যে আল্লাহর পথে আমার সহায়ক হবে’। হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরাই আল্লাহর সাহায্যকারী, আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এবং সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী’। (আল ইমরান, আয়াত ৫২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
অনন্তর যখন ঈসা তাদের অবাধ্যতার কথা উপলব্ধি করল,[১] তখন সে বলল, ‘আল্লাহর পথে কারা আমার সাহায্যকারী হবে?’[২] হাওয়ারী (শিষ্য)গণ[৩] বলল, ‘আমরাই আল্লাহর পথে সাহায্যকারী হব। আমরা আল্লাহতে বিশ্বাস করেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)।
[১] অর্থাৎ, এমন গভীর ষড়যন্ত্র এবং সন্দেহজনক আচরণ যার ভিত্তিই ছিল কুফরী তথা মাসীহ (আঃ)-এর রিসালাতকে অস্বীকার করার উপর।
[২] বহু নবী স্বীয় জাতির ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে বাহ্যিক উপায়-উপকরণের ভিত্তিতে তাদেরই মধ্যেকার বিবেকবান ব্যক্তিদের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেছেন। যেমন নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও (ইসলামের) প্রাথমিক পর্যায়ে যখন কুরাইশরা তাঁর দাওয়াতের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তখন তিনি হজ্জের মৌসুমে লোকদেরকে তাঁর সাথী ও সাহায্যকারী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেন। যাতে তিনি তাঁর প্রতিপালকের বাণী মানুষের নিকট পৌঁছাতে পারেন। আর তাঁর এই আহবানে সাড়া দিয়ে আনসারী সাহাবীগণ হিজরতের আগে ও পরে নবী কারীম (সাঃ)-কে সাহায্য করেছিলেন। অনুরূপ এখানে ঈসা (আঃ) সাহায্য চেয়েছেন। তবে এই সাহায্য এমন সাহায্য নয়, যা কোন উপায়-উপকরণ ছাড়াই আসে। (এবং যে সাহায্য করার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নেই।) কারণ এ রকম সাহায্য সৃষ্টির কাছে চাওয়া শিরক। আর প্রত্যেক নবীর আগমন ঘটেছে শিরকের দরজা বন্ধ করার জন্যই, অতএব তাঁরা কিভাবে শির্ককীয় কাজ সম্পাদন করতে পারেন? কিন্তু কবরপূজারীদের ভ্রান্ত মতাদর্শ সত্যিই বড়ই দুঃখজনক যে, তারা মৃতদের নিকট সাহায্য চাওয়া বৈধতার প্রমাণে ঈসা (আঃ)-এর مَنْ أَنْصَارِيْ إِلَى اللهِ উক্তিকে পেশ করে। সুতরাং 'ইন্না লিল্লাহি অইন্না ইলাইহি রা-জিঊন। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দান করুন!
[৩] حَوَارِيُّوْنَ (হাওয়ারিয়্যুন) حَوَارِي (হাওয়ারী) শব্দের বহুবচন। যার অর্থ হল, সাহায্যকারী (শিষ্য)। যেমন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, "প্রত্যেক নবীর একজন বিশেষ সাহায্যকারী ছিল। আমার বিশেষ সাহায্যকারী হল যুবায়ের।" (বুখারী ২৮৪৭, মুসলিম ২৪১৫নং)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
যখন ‘ঈসা তাদের থেকে কুফরী উপলব্ধি করলেন তখন তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্র পথে কারা আমার সাহায্যকারী [১]?’ হাওয়ারীগণ [২] বলল, ‘আমরাই আল্লাহ্র সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহ্তে ঈমান এনেছি। আর আপনি সাক্ষী থাকুন যে নিশ্চয় আমরা মুসলিম।
[১] এ আয়াতের দুটি অর্থ হতে পারে। মুজাহিদ বলেনঃ এর অর্থ হল কে আমার অনুসরণ করবে আল্লাহ্র পথে? সুফিয়ান সাওরী বলেনঃ এর অর্থ কে আল্লাহ্র সাথে আমাকে সহযোগিতা করবে? মুজাহিদের কথা এখানে সবচেয়ে বেশী প্রণিধানযোগ্য। তবে সবচেয়ে স্পষ্ট মত হল, এর অর্থ কে আমাকে সাহায্য করবে আল্লাহ্র পথে আহবানের ক্ষেত্রে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের মৌসুমে ডেকে ডেকে বলতেনঃ ‘এমন কে আছে যে আমাকে আশ্রয় দেবে, যাতে করে আমি আমার প্রভুর বাণী প্রচার করতে পারি। কেননা, কুরাইশরা আমাকে আমার রবের বাণী প্রচারে বাধা দিচ্ছে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৩৩৯-৩৪০]
[২] ঈসা ‘আলাইহিস সালামের খাঁটি ভক্তদের উপাধি ছিল হাওয়ারী- তাদের আন্তরিকতা ও মনের স্বচ্ছতার কারণে অথবা যেহেতু তারা সাদা পোষাক পরিধান করতেন এ জন্য তাদেরকে হাওয়ারী নামে অভিহিত করা হত। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সার্থীদের উপাধি ছিল সাহাবী। কোন কোন তাফসীরবিদ হাওয়ারীদের সংখ্যা দ্বাদশ উল্লেখ করেছেন। ‘হাওয়ারী’ শব্দটি কোন সময় শুধু সাহায্যকারী অর্থেও ব্যবহৃত হয়। এ অর্থেই এক হাদীসে বলা হয়েছেঃ ‘প্রত্যেক রাসূলের একজন হাওয়ারী অর্থাৎ খাঁটি সহচর থাকে আমার হাওয়ারী হলেন যুবায়ের’
[বুখারীঃ ২৬৯১, মুসলিমঃ ২৪১৫]
Tafsir Bayaan Foundation
অতঃপর যখন ঈসা তাদের পক্ষ হতে কুফরী উপলব্ধি করল, তখন বলল, ‘কে আল্লাহর জন্য আমার সাহায্যকারী হবে’? হাওয়ারীগণ বলল, ‘আমরা আল্লাহর সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম’।
Muhiuddin Khan
অতঃপর ঈসা (আঃ) যখন বণী ইসরায়ীলের কুফরী সম্পর্কে উপলব্ধি করতে পারলেন, তখন বললেন, কারা আছে আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য করবে? সঙ্গী-সাথীরা বললো, আমরা রয়েছি আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি। আর তুমি সাক্ষী থাক যে, আমরা হুকুম কবুল করে নিয়েছি।
Zohurul Hoque
কিন্তু যখন ঈসা তাদের মধ্যে অবিশ্বাস বোধ করলেন, তিনি বললেন -- ''কারা আল্লাহ্র পথে আমার সাহায্যকারী হবে?’’ হাওয়ারীরা বললে -- ''আমরা আল্লাহ্র সাহায্যকারী হব, আমরা আল্লাহ্তে বিশ্বাস করি, আর তুমি সাক্ষ্য দাও যে আমরা হচ্ছি আত্মসমর্পণকারী।