কুরআন মজীদ সূরা আল ইমরান আয়াত ১৯১
Qur'an Surah Ali 'Imran Verse 191
আল ইমরান [৩]: ১৯১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
الَّذِيْنَ يَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ قِيَامًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰى جُنُوْبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِيْ خَلْقِ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِۚ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلًاۚ سُبْحٰنَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ (آل عمران : ٣)
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- Those who
- যারা
- yadhkurūna
- يَذْكُرُونَ
- remember
- স্মরণ করে
- l-laha
- ٱللَّهَ
- Allah
- আল্লাহ্কে
- qiyāman
- قِيَٰمًا
- standing
- দাঁড়িয়ে
- waquʿūdan
- وَقُعُودًا
- and sitting
- ও বসে
- waʿalā
- وَعَلَىٰ
- and on
- এবং উপর
- junūbihim
- جُنُوبِهِمْ
- their sides
- তাদের পার্শ্ব সমূহের (শুয়ে)
- wayatafakkarūna
- وَيَتَفَكَّرُونَ
- and they reflect
- আর তারা চিন্তা গবেষণা করে
- fī
- فِى
- on
- বিষয়ে
- khalqi
- خَلْقِ
- (the) creation
- সৃষ্টির
- l-samāwāti
- ٱلسَّمَٰوَٰتِ
- (of) the heavens
- আকাশ মন্ডলীর
- wal-arḍi
- وَٱلْأَرْضِ
- and the earth
- ও পৃথিবীর
- rabbanā
- رَبَّنَا
- "Our Lord
- ''(তারা বলে) হে আমাদের রব
- mā
- مَا
- not
- না
- khalaqta
- خَلَقْتَ
- You have created
- তুমি সৃষ্টি করেছ
- hādhā
- هَٰذَا
- this
- এটা
- bāṭilan
- بَٰطِلًا
- (in) vain
- অর্থহীন
- sub'ḥānaka
- سُبْحَٰنَكَ
- Glory be to You
- তুমিই পবিত্র
- faqinā
- فَقِنَا
- so save us
- অতঃপর আমাদেরকে বাঁচাও
- ʿadhāba
- عَذَابَ
- (from the) punishment
- শাস্তি (হতে)
- l-nāri
- ٱلنَّارِ
- (of) the Fire
- আগুনের
Transliteration:
Allazeena yazkuroonal laaha qiyaamaiw-wa qu'oodanw-wa 'alaa juno obihim wa yatafakkaroona fee khalqis samaawaati wal ardi Rabbanaa maa khalaqta haaza baatilan Subhaanak faqinaa 'azaaban Naar(QS. ʾĀl ʿImrān:191)
English Sahih International:
Who remember Allah while standing or sitting or [lying] on their sides and give thought to the creation of the heavens and the earth, [saying], "Our Lord, You did not create this aimlessly; exalted are You [above such a thing]; then protect us from the punishment of the Fire. (QS. Ali 'Imran, Ayah ১৯১)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যারা আল্লাহকে দন্ডায়মান, উপবিষ্ট এবং শায়িত অবস্থায় স্মরণ করে থাকে এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টির ব্যাপারে চিন্তা করে (ও বলে) ; ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, সুতরাং আমাদেরকে অগ্নির শাস্তি হতে রক্ষা কর। (আল ইমরান, আয়াত ১৯১)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে,) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এ নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর। [১]
[১] এই দশটি আয়াতের মধ্যে প্রথম আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর শক্তি-সামর্থ্যের কিছু নিদর্শন বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন যে, এগুলো নির্দশন অবশ্যই, তবে কার জন্যে? জ্ঞানীদের জন্যে। এর অর্থ হল, বিস্ময়কর এই সৃষ্টি এবং আল্লাহর মহা কুদরত দেখেও যে ব্যক্তি মহান স্রষ্টার পরিচয় লাভ করতে পারে না, সে প্রকৃতপক্ষে জ্ঞানীই নয়। কিন্তু বড় আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল যে, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বেও 'জ্ঞানী' (বিজ্ঞানী) তাকেই মনে করা হয়, যে মহান আল্লাহর ব্যাপারে সন্দেহের শিকার।
-فإِنَّا للهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ- ।
দ্বিতীয় আয়াতে জ্ঞানীদের আল্লাহর যিকর করার স্পৃহা এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে তাঁদের চিন্তা ও গবেষণা করার কথা বর্ণিত হয়েছে। হাদীসেও রসূল (সাঃ) বলেছেন, "দাঁড়িয়ে নামায পড়। যদি দাঁড়িয়ে পড়তে না পার, তাহলে বসে বসে পড়। আর যদি বসে বসে পড়তে না পার, তবে পার্শ্বদেশে শুয়ে শুয়ে পড়।" (বুখারী১১১৭নং) এই ধরনের লোক যাঁরা সব সময় আল্লাহর যিকর করেন ও তাঁকে স্মরণে রাখেন এবং আসমান ও যমীনের সৃষ্টি ও তার রহস্য ও যুক্তিসমূহ সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করেন, তাঁরা বিশ্বস্রষ্টার মহত্ত্ব ও মহাশক্তি, তাঁর জ্ঞান ও এখতিয়ার এবং তাঁর রহমত ও প্রতিপালকত্ব সম্পর্কে সঠিক পরিচিতি লাভ করতে সক্ষম হন। ফলে আপনা-আপনিই তাঁদের মুখ ফুটে বেড়িয়ে আসে যে, বিশ্বের প্রতিপালক এই বিশাল পৃথিবীকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি; বরং এর উদ্দেশ্য হল বান্দাদেরকে পরীক্ষা করা। যে বান্দা পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করতে পারবে, সে লাভ করবে চিরস্থায়ী জান্নাতের নিয়ামত। আর যে পরীক্ষায় ব্যর্থ হবে, তার জন্য হবে জাহান্নামের আযাব। এই জন্যই তাঁরা (জ্ঞানীজন) জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার দু'আও করে থাকেন। পরের তিনটি আয়াতে ক্ষমা প্রার্থনা এবং কিয়ামতের দিনের লাঞ্ছনা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার দু'আ রয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহ্র স্মরণ করে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে, আর বলে, ‘হে আমাদের রব! আপনি এগুলো অনর্থক সৃষ্টি করেননি [১], আপনি অত্যন্ত পবিত্র, অতএব আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা করুন।’
[১] সারকথা, আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টি ও সৃষ্টজগতের উপর চিন্তা-গবেষণা করে তাঁর মাহাত্ম্য ও কুদরাত সম্পর্কে অবগত হওয়া একটি মহৎ ও উচ্চ পর্যায়ের ইবাদাত। সেগুলোর মধ্যে গভীর মনোনিবেশ করে তা থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ না করা একান্তই নির্বুদ্ধিতা। উল্লেখিত আয়াতের শেষ বাক্যে আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহে চিন্তা গবেষণা করার ফলাফল বাতলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে
(رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هٰذَا بَاطِلاً)
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলার সীমাহীন সৃষ্টির উপর যে লোক চিন্তা-ভাবনা করে সে লোক সহজেই বুঝে যে, এসব বস্তু-সামগ্রীকে আল্লাহ নিরর্থক সৃষ্টি করেননি; বরং এসবের সৃষ্টির পেছনে হাজারো তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। সে সমস্তকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করে দিয়ে মানুষকে এ চিন্তা-ভাবনা করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে যে, সমগ্র পৃথিবী তাদের কল্যাণের জন্য তৈরী করা হয়েছে এবং তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলার ইবাদাতের উদ্দেশ্যে। এটাই হল তাদের জীবনের লক্ষ্য। সুতরাং গোটা বিশ্ব-সৃষ্টি নিরর্থক নয় বরং এগুলো সবই বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ রাববুল আলামীনের অসীম কুদরাত ও হেকমতেরই প্রকৃষ্ট প্রমাণ। উবাইদ ইবনে উমাইর বলেনঃ আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললাম, রাসূলের সবচেয়ে আশ্চর্য কি কাজ আপনি দেখেছেন, তা আমাদেরকে জানান। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, ‘হে আয়েশা, আমাকে আমার রবের ইবাদাত করতে দাও’। আমি বললাম, হে রাসূল, আমি আপনার পাশে থাকতে ভালবাসি এবং যা আপনাকে খুশি করে তা করতে ভালবাসি। তারপর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং সালাত আদায়ে নিবিষ্ট হলেন ও কাঁদতে থাকলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল, আপনি কাঁদছেন অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি কি কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? এ রাতে আমার উপর একটি আয়াত নাযিল হয়েছে, যে ব্যক্তি তা তেলাওয়াত করল এবং চিন্তা-গবেষণা করল না, তার ধ্বংস অনিবার্য। তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৬২০]
Tafsir Bayaan Foundation
যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে। (বলে) ‘হে আমাদের রব, তুমি এসব অনর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র মহান। সুতরাং তুমি আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা কর’।
Muhiuddin Khan
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব তুমি অনর্থক সৃষ্টি করনি। সকল পবিত্রতা তোমারই, আমাদিগকে তুমি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচাও।
Zohurul Hoque
যারা আল্লাহ্কে স্মরণ করে দাঁড়ানো ও বসা ও তাদের পার্শ্বের উপরে শায়িত অবস্থায় আর গভীর চিন্তা করে মহাকাশমন্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টির বিষয়ে। ''আমাদের প্রভু! এসব তুমি বৃথা সৃষ্টি করো নি, তোমারই সব মহিমা। কাজেই আমাদের রক্ষা করো আগুনের শাস্তি থেকে।