কুরআন মজীদ সূরা আল ইমরান আয়াত ১৫৪
Qur'an Surah Ali 'Imran Verse 154
আল ইমরান [৩]: ১৫৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
ثُمَّ اَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِّنْۢ بَعْدِ الْغَمِّ اَمَنَةً نُّعَاسًا يَّغْشٰى طَۤاىِٕفَةً مِّنْكُمْ ۙ وَطَۤاىِٕفَةٌ قَدْ اَهَمَّتْهُمْ اَنْفُسُهُمْ يَظُنُّوْنَ بِاللّٰهِ غَيْرَ الْحَقِّ ظَنَّ الْجَاهِلِيَّةِ ۗ يَقُوْلُوْنَ هَلْ لَّنَا مِنَ الْاَمْرِ مِنْ شَيْءٍ ۗ قُلْ اِنَّ الْاَمْرَ كُلَّهٗ لِلّٰهِ ۗ يُخْفُوْنَ فِيْٓ اَنْفُسِهِمْ مَّا لَا يُبْدُوْنَ لَكَ ۗ يَقُوْلُوْنَ لَوْ كَانَ لَنَا مِنَ الْاَمْرِ شَيْءٌ مَّا قُتِلْنَا هٰهُنَا ۗ قُلْ لَّوْ كُنْتُمْ فِيْ بُيُوْتِكُمْ لَبَرَزَ الَّذِيْنَ كُتِبَ عَلَيْهِمُ الْقَتْلُ اِلٰى مَضَاجِعِهِمْ ۚ وَلِيَبْتَلِيَ اللّٰهُ مَا فِيْ صُدُوْرِكُمْ وَلِيُمَحِّصَ مَا فِيْ قُلُوْبِكُمْ ۗ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌ ۢبِذَاتِ الصُّدُوْرِ (آل عمران : ٣)
- thumma
- ثُمَّ
- Then
- এরপর
- anzala
- أَنزَلَ
- He sent down
- তিনি অবতীর্ণ করলেন
- ʿalaykum
- عَلَيْكُم
- upon you
- তোমাদের উপর
- min
- مِّنۢ
- from
- (থেকে)
- baʿdi
- بَعْدِ
- after
- পরে
- l-ghami
- ٱلْغَمِّ
- the distress
- দুঃখের
- amanatan
- أَمَنَةً
- security
- প্রশান্তি
- nuʿāsan
- نُّعَاسًا
- slumber
- তন্দ্রারূপে
- yaghshā
- يَغْشَىٰ
- overcoming
- আচ্ছন্ন করে
- ṭāifatan
- طَآئِفَةً
- a group
- একটি দলকে (মুমিনদেরকে)
- minkum
- مِّنكُمْۖ
- of you
- তোমাদের মধ্য হতে
- waṭāifatun
- وَطَآئِفَةٌ
- while a group
- কিন্তু (আর) একটি দল (অর্থাৎ মুনাফিকরা)
- qad
- قَدْ
- certainly
- নিশ্চয়
- ahammathum
- أَهَمَّتْهُمْ
- worried [them]
- তাদেরকে গুরুত্ব দিল
- anfusuhum
- أَنفُسُهُمْ
- (about) themselves
- তারা নিজেরা
- yaẓunnūna
- يَظُنُّونَ
- thinking
- ধারণা করে
- bil-lahi
- بِٱللَّهِ
- about Allah
- আল্লাহর ব্যাপারে
- ghayra
- غَيْرَ
- other than
- বিপরীত
- l-ḥaqi
- ٱلْحَقِّ
- the truth
- সত্যের
- ẓanna
- ظَنَّ
- (the) thought
- ধারণা
- l-jāhiliyati
- ٱلْجَٰهِلِيَّةِۖ
- (of) [the] ignorance
- জাহিলিয়্যাতের
- yaqūlūna
- يَقُولُونَ
- saying
- তারা বলে
- hal
- هَل
- "Is (there)
- ''কি
- lanā
- لَّنَا
- for us
- আমাদের জন্য (আছে)
- mina
- مِنَ
- from
- কোন
- l-amri
- ٱلْأَمْرِ
- the matter
- এখতিয়ার
- min
- مِن
- any
- কোন
- shayin
- شَىْءٍۗ
- thing?"
- কিছুর''
- qul
- قُلْ
- Say
- বল
- inna
- إِنَّ
- "Indeed
- ''নিশ্চয়
- l-amra
- ٱلْأَمْرَ
- the matter
- এখতিয়ার
- kullahu
- كُلَّهُۥ
- all (of) it
- সবটাই
- lillahi
- لِلَّهِۗ
- (is) for Allah"
- আল্লাহরই জন্য''
- yukh'fūna
- يُخْفُونَ
- They hide
- তারা লুকায়
- fī
- فِىٓ
- in
- মধ্যে
- anfusihim
- أَنفُسِهِم
- themselves
- তাদের মনের
- mā
- مَّا
- what
- যা
- lā
- لَا
- not
- না
- yub'dūna
- يُبْدُونَ
- they reveal
- তারা প্রকাশ করে
- laka
- لَكَۖ
- to you
- তোমার কাছে
- yaqūlūna
- يَقُولُونَ
- They say
- তারা বলে
- law
- لَوْ
- "if
- ''যদি
- kāna
- كَانَ
- was
- থাকত
- lanā
- لَنَا
- for us
- আমাদের জন্য
- mina
- مِنَ
- from
- কোন
- l-amri
- ٱلْأَمْرِ
- the matter
- এখতিয়ার
- shayon
- شَىْءٌ
- anything
- কোন কিছুর
- mā
- مَّا
- not
- না
- qutil'nā
- قُتِلْنَا
- we would have been killed
- আমরা নিহত হতাম
- hāhunā
- هَٰهُنَاۗ
- here"
- এখানে''
- qul
- قُل
- Say
- বল
- law
- لَّوْ
- "if
- ''যদি
- kuntum
- كُنتُمْ
- you were
- তোমরা হতে
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- buyūtikum
- بُيُوتِكُمْ
- your houses
- তোমাদের ঘরের
- labaraza
- لَبَرَزَ
- surely (would have) come out
- অবশ্যই বের হতো
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- (তারা) যাদের
- kutiba
- كُتِبَ
- was decreed
- লেখা হয়েছে
- ʿalayhimu
- عَلَيْهِمُ
- upon them
- তাদের উপর
- l-qatlu
- ٱلْقَتْلُ
- [the] death
- নিহত হওয়া
- ilā
- إِلَىٰ
- towards
- দিকে
- maḍājiʿihim
- مَضَاجِعِهِمْۖ
- their places of death
- তাদের নিহত হওয়ার জায়গাগুলোর
- waliyabtaliya
- وَلِيَبْتَلِىَ
- And that might test
- এবং পরীক্ষা করার জন্য (এটা ঘটিয়েছেন)
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- আল্লাহ্
- mā
- مَا
- what
- যা কিছু
- fī
- فِى
- (is) in
- মধ্যে আছে
- ṣudūrikum
- صُدُورِكُمْ
- your breasts
- তোমাদের বুকে (অর্থাৎ অন্তরে)
- waliyumaḥḥiṣa
- وَلِيُمَحِّصَ
- and that He may purge
- এবং বিশুদ্ধ করার জন্য
- mā
- مَا
- what
- যা
- fī
- فِى
- (is) in
- মধ্যে আছে
- qulūbikum
- قُلُوبِكُمْۗ
- your hearts
- তোমাদের অন্তরগুলোতে
- wal-lahu
- وَٱللَّهُ
- And Allah
- এবং আল্লাহ
- ʿalīmun
- عَلِيمٌۢ
- (is) All-Aware
- খুব অবহিত
- bidhāti
- بِذَاتِ
- of what
- অবস্থা সম্পর্কে
- l-ṣudūri
- ٱلصُّدُورِ
- (is in) the breasts
- অন্তরের
Transliteration:
Summa anzala 'alaikum mim ba'dil ghammi amanatan nu'aasai yaghshaa taaa' ifatam minkum wa taaa'ifatun qad ahammathum anfusuhum yazunnoona billaahi ghairal haqqi zannal jaahiliyyati yaqooloona hal lanaa minal amri min shai'; qul innal amra kullahoo lillaah; yukhfoona fee anfusihim maa laa yubdoona laka yaqooloona law kaana lanaa minal amri shai'ummaa qutilnaa haahunaa; qul law kuntum fee buyootikum labarazal lazeena kutiba 'alaihimul qatlu ilaa madaaji'ihim wa liyabtaliyal laahu maa fee sudoorikum wa liyumah hisa maa fee quloobikum; wallaahu 'aleemum bizaatis sudoor(QS. ʾĀl ʿImrān:154)
English Sahih International:
Then after distress, He sent down upon you security [in the form of] drowsiness, overcoming a faction of you, while another faction worried about themselves, thinking of Allah other than the truth – the thought of ignorance, saying, "Is there anything for us [to have done] in this matter?" Say, "Indeed, the matter belongs completely to Allah." They conceal within themselves what they will not reveal to you. They say, "If there was anything we could have done in the matter, we [i.e., some of us] would not have been killed right here." Say, "Even if you had been inside your houses, those decreed to be killed would have come out to their death beds." [It was] so that Allah might test what is in your breasts and purify what is in your hearts. And Allah is Knowing of that within the breasts. (QS. Ali 'Imran, Ayah ১৫৪)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতঃপর কষ্টের পর আল্লাহ তোমাদের প্রতি শান্তি-তন্দ্রা প্রেরণ করলেন, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করল এবং অন্যদল মূর্খের মতো আল্লাহর প্রতি কুধারণা পোষণ করতঃ নিজেরাই নিজেদের জীবনকে উদ্বেগাকুল করে বলল, কাজ-কর্মের ব্যাপারে (সিদ্ধান্ত গ্রহণের) আমাদের কিছুমাত্র অধিকার আছে কি? বল, ‘সমস্তই আল্লাহর নিরঙ্কুশ অধিকারভুক্ত’। তারা এমন সব কথা অন্তরে পোষণ করে- যা তোমার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলে, ‘যদি মতামত প্রদানের অধিকার আমাদের কিছুমাত্রও থাকত, তাহলে আমরা এ স্থলে নিহত হতাম না’। বলে দাও, ‘যদি তোমরা তোমাদের ঘরেও থাকতে, তথাপি যাদের ভাগ্যে মৃত্যু লেখা ছিল, তারা তাদের এ মৃত্যুশয্যার পানে বের হয়ে পড়ত’। এবং এজন্যও যে আল্লাহ তোমাদের অন্তরের ভেতরের বিষয়গুলো পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরস্থ বিষয়গুলোকে পরিষ্কার করেন, বস্তুতঃ আল্লাহ সকলের অন্তরের কথা সম্পর্কে বিশেষভাবে অবহিত। (আল ইমরান, আয়াত ১৫৪)
Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর তিনি তোমাদেরকে দুঃখের পর তন্দ্রারূপে নিরাপত্তা (ও শান্তি) প্রদান করলেন, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল। [১] আর একদল ছিল যারা নিজেদের জান নিয়েই ব্যস্ত ছিল। [২] প্রাগ্-ইসলামী অজ্ঞদের ন্যায় আল্লাহ সম্বন্ধে কুধারণা পোষণ করেছিল। [৩] তারা বলেছিল যে, ‘এ বিষয়ে আমাদের কি কোন এখতিয়ার আছে?’[৪] বল, ‘সমস্ত বিষয় আল্লাহরই এখতিয়ারভুক্ত।’[৫] তারা তাদের অন্তরে এমন কিছু গোপন রাখে, যা তোমার নিকট প্রকাশ করে না।[৬] তারা বলে, ‘যদি এ ব্যাপারে আমাদের কোন এখতিয়ার থাকত, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না।’[৭] বল, ‘যদি তোমরা তোমাদের গৃহে অবস্থান করতে তবুও নিহত হওয়া যাদের ভাগ্যে অবধারিত ছিল, তারা নিজেদের বধ্যভূমিতে এসে উপস্থিত হত।’[৮] তা এ জন্য যে, যাতে আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা আছে, তা পরীক্ষা করেন ও তোমাদের হৃদয়ে যা (কালিমা) আছে, তা পরিশুদ্ধ করেন।[৯] আর অন্তরে যা আছে, সে সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে অবহিত।[১০]
[১] উল্লিখিত চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির পর আল্লাহ তাআলা মুসলিমদের উপর পুনরায় অনুগ্রহ করলেন এবং তাঁদের মধ্যে যাঁরা যুদ্ধের ময়দানে অবশিষ্ট ছিলেন, তাঁদের উপর তন্দ্রার ভাব সৃষ্টি করে দিলেন। আর এই তন্দ্রা (ঢুল) ছিল আল্লাহর পক্ষ হতে প্রশান্তি এবং সাহায্যের দলীল। আবূ ত্বালহা (রাঃ) বলেন, আমিও তাঁদের একজন, যাঁদের উপর উহুদের দিন তন্দ্রার ভাব সৃষ্টি হয়েছিল। এমন কি আমার তরবারি কয়েকবার আমার হাত থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল, আর আমি ধরে নিয়েছিলাম। (সহীহ বুখারী) نُعَاسًا হল أَمَنَةً শব্দের বদল (পরিবর্ত শব্দ)। طَائِفَةٌ একবচন এবং বহুবচন উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[২] এ থেকে মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে। প্রকাশ থাকে যে, এ রকম কঠিন পরিস্থিতিতে তারা কেবল নিজেদের প্রাণ নিয়েই চিন্তিত ছিল।
[৩] যেমন ভাবত যে, নবী করীম (সাঃ)-এর সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই মিথ্যা। তিনি যে দ্বীনের প্রতি আহবান করেন, তার ভবিষ্যৎ আশঙ্কাজনক। তিনি তো আল্লাহর সহযোগিতা থেকেই বঞ্চিত ইত্যাদি ইত্যাদি।
[৪] অর্থাৎ, আমাদের জন্য কি আল্লাহর পক্ষ হতে আর কোন বিজয় ও সহযোগিতার সম্ভাবনা আছে? অথবা আমাদের কি কোন কথা চলতে পারে এবং মেনে নেওয়া যেতে পারে?
[৫] তোমাদের কিংবা শত্রুদের এখতিয়ারে কিছুই নেই। সাহায্য-সহযোগিতা তাঁর পক্ষ থেকেই আসবে, সফলতা তিনিই দান করবেন এবং আদেশ-নিষেধ কেবল তাঁরই চলবে।
[৬] নিজেদের অন্তরে মুনাফিক্বী গোপন রেখে ভাব এমন দেখাত যে, তারা পথ নির্দেশের মুখাপেক্ষী।
[৭] এটা তারা আপোসে বলাবলি করত অথবা মনে মনে বলত।
[৮] মহান আল্লাহ বললেন, এই ধরনের কথার লাভ কি? যেভাবেই হোক না কেন, মৃত্যু তো আসবেই এবং তা সেই স্থানেই আসবে, যেখানে আল্লাহর পক্ষ হতে লিখে দেওয়া হয়েছে। যদি তোমরা নিজেদের বাড়িতে অবস্থান কর, আর তোমাদের মৃত্যু কোন যুদ্ধের ময়দানে লিখা থাকে, তাহলে আল্লাহ কর্তৃক এই ফায়সালা তোমাদেরকে সেখানেই টেনে নিয়ে যাবে।
[৯] (যুদ্ধের ময়দানে) যা কিছু ঘটেছে তার পিছনে একটি উদ্দেশ্য ছিল, তোমাদের অন্তরে বিদ্যমান ঈমানকে পরীক্ষা করা (যাতে মুনাফিকরা তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যায়) এবং তোমাদের অন্তঃকরণকে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র করা।
[১০] অর্থাৎ, খাঁটি মুসলিম কে এবং মুনাফিক হয়ে বাহ্যিকভাবে ইসলামের পোশাক কে পরে আছে, তা তো তিনি জানেন। জিহাদের বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে এটাও একটি কৌশল যে, এতে মু'মিন ও মুনাফিকের প্রকৃত রূপ বিকশিত হয়ে সামনে চলে আসে; ফলে সাধারণ মানুষও তাদেরকে দেখে ও চিনে নিতে পারে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
তারপর দুঃখের পর তিনি তোমাদেরকে প্রদান করলেন তন্দ্রারূপে প্রশান্তি, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল [১] এবং একদল জাহিলী যুগের অজ্ঞের ন্যায় আল্লাহ সম্বন্ধে অবাস্তব ধারণা করে নিজেরাই নিজেদেরকে উদ্বিগ্ন করেছিল এ বলে যে, ‘আমাদের কি কোন কিছু করার আছে?’ বলুন, ‘সব বিষয় আল্লাহ্রই ইখতিয়ারে’। যা তারা আপনার কাছে প্রকাশ করে না, তারা তাদের অন্তরে সেগুলো গোপন রাখে। তারা বলে, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কোন কিছু করার থাকলে আমরা এখানে নিহত হতাম না’ [২]। বলুন, ‘যদি তোমরা তোমাদের ঘরে অবস্থান করতে তবুও নিহত হওয়া যাদের জন্য অবধারিত ছিল তারা নিজেদের মৃত্যুস্থানে বের হত। এটা এজন্যে যে, আল্লাহ তোমাদের অন্তরে যা আছে তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের মনে যা আছে তা পরিশোধণ করেন। আর অন্তরে যা আছে সে সম্পর্কে আল্লাহ বিশেষভাবে অবগত।
[১] অর্থাৎ এ কঠিন বিপদের সময় তাদের উপর তন্দ্রা নেমে এসে তাদেরকে প্রশান্ত করে দিচ্ছিল। আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমরা ওহুদের দিন কাতারবন্দী অবস্থাতেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিলাম। এমনকি আমাদের হাত থেকে তরবারী পড়ে যাচ্ছিল আর আমি বারবার তা উঠিয়ে নিচ্ছিলাম। [বুখারী ৪৫৬২]
আর এটাই আল্লাহ্র বাণী “তারপর দুঃখের পর তিনি তোমাদেরকে প্রদান করলেন তন্দ্রারূপে প্রশান্তি, যা তোমাদের একদলকে আচ্ছন্ন করেছিল, এবং একদল জাহিলী যুগের অজ্ঞের ন্যায় আল্লাহ সম্বন্ধে অবাস্তব ধারণা করে নিজেরাই নিজেদেরকে উদ্বিগ্ন করেছিল” এর তাৎপর্য। আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, যুদ্ধের মধ্যে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়া আল্লাহ্র পক্ষ থেকে, আর সালাতের মধ্যে শয়তানের পক্ষ থেকে হয়। [ইবন আবী হাতেম; আত-তাফসীরুস সহীহ]
[২] এখানে আরেক দল বলে মুনাফিকদের বুঝানো হয়েছে। তারা নিজেদের নিয়েই ব্যস্ত ছিল। তারা সবচেয়ে ভীতু ও কাপুরুষ ও হকের বিপরীতে অবস্থানকারী সম্প্রদায় ছিল। [তাবারী] আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন; উহুদের যুদ্ধের দিন আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম, আল্লাহ আমাদের উপর ঘুম পাঠালেন, আমাদের প্রত্যেকের থুতনি বুকে লেগে যাচ্ছিল। আল্লাহ্র শপথ আমি যেন মু’আত্তাব ইবনে কুসাইরের কথা স্বপ্নের মাঝে শুনছিলাম। সে বলছিলঃ ‘এ ব্যাপারে আমাদের কোন কিছু করার থাকলে আমরা এখানে নিহত হতাম না’ এ ব্যাপারেই আল্লাহ্র উপরোক্ত বাণী নাযিল হয়। [আল-আহাদিসুল মুখতারাহঃ ৩/৬০, ৮৬৪]
Tafsir Bayaan Foundation
তারপর তিনি তোমাদের উপর দুশ্চিন্তার পর নাযিল করলেন প্রশান্ত তন্দ্রা, যা তোমাদের মধ্য থেকে একদলকে ঢেকে ফেলেছিল, আর অপরদল নিজরাই নিজদেরকে চিন্তাগ্রস্ত করেছিল। তারা আল্লাহ সম্পর্কে জাহিলী ধারণার ন্যায় অসত্য ধারণা পোষণ করছিল। তারা বলছিল, ‘আমাদের কি কোন বিষয়ে অধিকার আছে’? বল, ‘নিশ্চয় সব বিষয় আল্লাহর’। তারা তাদের অন্তরে লুকিয়ে রাখে এমন বিষয় যা তোমার কাছে প্রকাশ করে না। তারা বলে, ‘যদি কোন বিষয়ে আমাদের অধিকার থাকত, তাহলে আমাদেরকে এখানে হত্যা করা হত না’। বল, ‘তোমরা যদি তোমাদের ঘরে থাকতে তাহলেও যাদের ব্যাপারে নিহত হওয়া অবধারিত রয়েছে, অবশ্যই তারা তাদের নিহত হওয়ার স্থলের দিকে বের হয়ে যেত। আর যাতে তোমাদের মনে যা আছে আল্লাহ তা পরীক্ষা করেন এবং তোমাদের অন্তরসমূহে যা আছে তা পরিষ্কার করেন। আর আল্লাহ তোমাদের অন্তরের বিষয় সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞাত’।
Muhiuddin Khan
অতঃপর তোমাদের উপর শোকের পর শান্তি অবতীর্ণ করলেন, যা ছিল তন্দ্রার মত। সে তন্দ্রায় তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঝিমোচ্ছিল আর কেউ কেউ প্রাণের ভয়ে ভাবছিল। আল্লাহ সম্পর্কে তাদের মিথ্যা ধারণা হচ্ছিল মুর্খদের মত। তারা বলছিল আমাদের হাতে কি কিছুই করার নেই? তুমি বল, সবকিছুই আল্লাহর হাতে। তারা যা কিছু মনে লুকিয়ে রাখে-তোমার নিকট প্রকাশ করে না সে সবও। তারা বলে আমাদের হাতে যদি কিছু করার থাকতো, তাহলে আমরা এখানে নিহত হতাম না। তুমি বল, তোমরা যদি নিজেদের ঘরেও থাকতে তবুও তারা অবশ্যই বেরিয়ে আসত নিজেদের অবস্থান থেকে যাদের মৃত্যু লিখে দেয়া হয়েছে। তোমাদের বুকে যা রয়েছে তার পরীক্ষা করা ছিল আল্লাহর ইচ্ছা, আর তোমাদের অন্তরে যা কিছু রয়েছে তা পরিষ্কার করা ছিল তাঁর কাম্য। আল্লাহ মনের গোপন বিষয় জানেন।
Zohurul Hoque
তারপর বিষাদের পরে তিনি তোমাদের উপরে বর্ষণ করলেন নিরাপত্তা, তোমাদের একদলের উপরে নেমে এল প্রশান্তি, আর অন্য এক দলের নিজেদের মন তাদের উৎকতি করেছিল, তারা আল্লাহ্ সন্বন্ধে অজ্ঞানতাকালীন সন্দেহপ্রবণতায় সন্দিহান হয়েছিল অসঙ্গতভাবে। তারা বলছিল -- ''এই ব্যাপারে আমাদের কি কোনো কিছু আছে?’’ বলো -- ''নিঃসন্দেহ ব্যাপারটি সর্বতোভাবে আল্লাহ্র।’’ তারা তাদের নিজেদের মধ্যে যা লুকিয়ে রেখেছে তা তোমার কাছে প্রকাশ করছে না, তারা বলছিল -- ''এই ব্যাপারে যদি আমাদের কিছু থাকতো তবে এখানে আমাদের কাতল করা হতো না।’’ তুমি বলো -- ''তোমরা যদি তোমাদের বাড়ির ভিতরেও থাকতে তথাপি যাদের জন্য প্রাণঘাত লিখিত হয়েছে তারা নিশ্চয়ই তাদের নির্ধারিত-স্থলে গিয়ে হাজির হতো।’’ আর আল্লাহ্ যেন যাচাই করতে পারেন কি আছে তোমাদের বুকের ভেতরে, আর যেন নিংড়ে বের করে দিতে পারেন যা আছে তোমাদের অন্তরে। আর বুকের ভেতরে যা আছে সে-সন্বন্ধে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা।