কুরআন মজীদ সূরা আল ইমরান আয়াত ১২২
Qur'an Surah Ali 'Imran Verse 122
আল ইমরান [৩]: ১২২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اِذْ هَمَّتْ طَّۤاىِٕفَتٰنِ مِنْكُمْ اَنْ تَفْشَلَاۙ وَاللّٰهُ وَلِيُّهُمَا ۗ وَعَلَى اللّٰهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُوْنَ (آل عمران : ٣)
- idh
- إِذْ
- When
- (স্মরণ কর) যখন
- hammat
- هَمَّت
- inclined
- মনস্থ করেছিলে
- ṭāifatāni
- طَّآئِفَتَانِ
- two parties
- দুইদল
- minkum
- مِنكُمْ
- among you
- তোমাদের মধ্যকার
- an
- أَن
- that
- (যে)
- tafshalā
- تَفْشَلَا
- they lost heart
- দুর্বলতা প্রদর্শনের
- wal-lahu
- وَٱللَّهُ
- but Allah
- অথচ আল্লাহ
- waliyyuhumā
- وَلِيُّهُمَاۗ
- (was) their protector
- তাদের উভয়ের পৃষ্ঠপোষক (ছিলেন)
- waʿalā
- وَعَلَى
- And on
- এবং উপর
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- Allah
- আল্লাহরই
- falyatawakkali
- فَلْيَتَوَكَّلِ
- let put (their) trust
- ভরসা করা উচিত
- l-mu'minūna
- ٱلْمُؤْمِنُونَ
- the believers
- ঈমানদারদের
Transliteration:
Iz hammat taaa'ifataani minkum an tafshalaa wallaahu waliyyuhumaa; wa 'alal laahi falyatawakkalil mu'minoon(QS. ʾĀl ʿImrān:122)
English Sahih International:
When two parties among you were about to lose courage, but Allah was their ally; and upon Allah the believers should rely. (QS. Ali 'Imran, Ayah ১২২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যখন তোমাদের মধ্যকার দু’দল ভীরুতা প্রকাশ করতে মনস্থ করেছিল, কিন্তু আল্লাহ উভয়ের বন্ধু ছিলেন, মু’মিনদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা। (আল ইমরান, আয়াত ১২২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যখন তোমাদের মধ্যে দু’টি দলের মনোবল হারাবার উপক্রম হয়েছিল[১] এবং আল্লাহ ছিলেন উভয়ের সহায়ক।[২] আর বিশ্বাসীদের উচিত, আল্লাহর উপরেই নির্ভর করা।
[১] এরা ছিল আউস ও খাযরাজ নামে দু'টি গোত্র (বানু-হারিসা ও বানু-সালামা)।
[২] এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তাঁদের সাহায্য করেন এবং মনের দুর্বলতাকে দূর করে তাঁদের সাহস বাড়িয়ে দেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
যখন তোমাদের মধ্যে দু’দলের সাহস হারাবার উপক্রম হয়েছিল অথচ আল্লাহ্ উভয়ের অভিভাবক ছিলেন [১], আর আল্লাহ্র উপরই যেন মুমিনগণ নির্ভর করে [২]।
[১] অর্থাৎ তোমাদের দুটি দল ভীরুতা প্রকাশের সংকল্প করেছিল, অথচ আল্লাহ তাদের সহায় ছিলেন। এ দুই দল হলো আউস গোত্রের বনী হারেসা এবং খাযরাজ গোত্রের বনী সালমা। এরা উভয়ই আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের দেখাদেখি দুর্বলতা প্রদর্শন করেছিল। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের মধ্যে দুর্বলতা ছিল না, বরং স্বদলের সংখ্যাল্পতা ও সাজ-সরঞ্জামের অভাব দেখেই তারা এ ধারণার বশবর্তী হয়ে পড়েছিল। তবে আয়াতের (منكم) বাক্যটি তাদের ঈমানের পূর্ণাঙ্গতারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। এ গোত্রদ্বয়ের মধ্য থেকে জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ বলতেন, “এ আয়াত যদিও আমাদের বনু হারেসা ও বনু সালামাকে উদ্দেশ্য করে নাযিল হয়েছিল এবং আয়াতে আমাদের প্রতি কঠোর বাণী উচ্চারিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু (وَاللّٰهُ وَلِيُّهُمَا) ব্যাক্যাংশের সুসংবাদও আমাদের লক্ষ্য করেই উক্ত হয়েছে। এ কারণে এ আয়াত নাযিল না হওয়া আমাদের জন্য সুখকর ছিল না’। [বুখারীঃ ৪০৫১, ৪৫৫৮, মুসলিমঃ ২৫০৫]
[২] আয়াতের শেষে বলা হয়েছেঃ আল্লাহ্র উপর ভরসা করাই মুসলিমদের কর্তব্য। এতে পরিস্কার বলা হয়েছে যে, সংখ্যাধিক্য ও সাজ-সরঞ্জাম ও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্ৰহ করার পর ভরসা একমাত্র আল্লাহ পাকের উপরই করা দরকার। সাজ-সরঞ্জামের অভাব দেখেই বনী-হারেসা ও বনী সালমার মনে দুর্বলতা ও ভীরুতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। আল্লাহ্র প্রতি ভরসা দ্বারা এর প্রতিকার করা হয়েছে। আল্লাহ্র প্রতি যথার্থ ভরসা ও আস্থাই এ জাতীয় কুমন্ত্রণার অমোঘ প্রতিকার। মূলত; ‘তাওয়াক্কুল’ (আল্লাহ্র প্রতি পূর্ণ ভরসা) মানুষের প্রতি অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। ইয়াদ ইবন গানম আল-আশ’আরী বলেন, ইয়ারমূকের যুদ্ধে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু পরপর পাঁচজনকে আমীর বানিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, যুদ্ধ শুরু হলে একমাত্র আমীর হবে আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ। যুদ্ধ শুরু হলে যুদ্ধের ময়দান থেকে আমরা উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে লিখলাম; মৃত্যু আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। আমাদের জন্য সাহায্য পাঠান। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটার উত্তরে লিখলেন, সাহায্য চেয়ে পাঠানো পত্র আমার হস্তগত হয়েছে। আমি তোমাদেরকে এমন একজনের সন্ধান দেব যিনি সবচেয়ে বেশী সাহায্য করতে পারেন, যাঁর সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত, তিনি হচ্ছেন, আল্লাহ তা’আলা। সুতরাং তোমরা তার কাছেই সাহায্য চাও। কেননা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বদরের দিনে তোমাদের চেয়ে কম সংখ্যা ও অস্ত্র-সস্ত্র নিয়েও কাফেরদের উপর জয়লাভ করেছিলেন। অতএব, যখন আমার এ চিঠি আসবে তখন তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, এ ব্যাপারে আর আমার সাথে যোগাযোগ করবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আমরা যুদ্ধ করলাম এবং যুদ্ধে জয়লাভ করলাম। [মুসনাদে আহমাদ ১/৪৯; সহীহ ইবন হিববান; ১১/৮৩-৮৪]
Tafsir Bayaan Foundation
যখন তোমাদের মধ্য থেকে দু’দল* পিছু হটার ইচ্ছা করল, অথচ আল্লাহ তাদের উভয়ের অভিভাবক। আর আল্লাহর উপরই যেন মুমিনগণ তাওয়াক্কুল করে।
*উহুদ যুদ্ধের সময় মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সাথে তিনশত জন সৈন্য যুদ্ধের ময়দান থেকে ফেরৎ চলে যায়। এদের দেখাদেখি বনু সালামা ও বনূ হারেছার লোকেরাও চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা যায়নি।
Muhiuddin Khan
যখন তোমাদের দুটি দল সাহস হারাবার উপক্রম হলো, অথচ আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ছিলেন, আর আল্লাহর উপরই ভরসা করা মুমিনদের উচিত।
Zohurul Hoque
স্মরণ করো! তোমাদের মধ্যে থেকে দুইটি দল ভীরুতা দেখাবার মনস্থ করেছিল, আর আল্লাহ্ ছিলেন তাদের উভয়ের অভিভাবক, আর আল্লাহ্র উপরেই তাহলে বিশ্বাসীদের নির্ভর করা উচিত।