কুরআন মজীদ সূরা আল কাসাস আয়াত ৫৭
Qur'an Surah Al-Qasas Verse 57
আল কাসাস [২৮]: ৫৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَقَالُوْٓا اِنْ نَّتَّبِعِ الْهُدٰى مَعَكَ نُتَخَطَّفْ مِنْ اَرْضِنَاۗ اَوَلَمْ نُمَكِّنْ لَّهُمْ حَرَمًا اٰمِنًا يُّجْبٰٓى اِلَيْهِ ثَمَرٰتُ كُلِّ شَيْءٍ رِّزْقًا مِّنْ لَّدُنَّا وَلٰكِنَّ اَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُوْنَ (القصص : ٢٨)
- waqālū
- وَقَالُوٓا۟
- And they say
- এবং তারা বলে
- in
- إِن
- "If
- "যদি
- nattabiʿi
- نَّتَّبِعِ
- we follow
- আমরা অনুসরণ করি
- l-hudā
- ٱلْهُدَىٰ
- the guidance
- সৎপথের
- maʿaka
- مَعَكَ
- with you
- তোমার সাথে
- nutakhaṭṭaf
- نُتَخَطَّفْ
- we would be swept
- আমাদেরকে উৎখাত করা হবে
- min
- مِنْ
- from
- হ'তে
- arḍinā
- أَرْضِنَآۚ
- our land"
- আমাদের দেশ"
- awalam
- أَوَلَمْ
- Have not
- করি নি কি
- numakkin
- نُمَكِّن
- We established
- আমরা প্রতিষ্ঠা
- lahum
- لَّهُمْ
- for them
- জন্যে তাদের
- ḥaraman
- حَرَمًا
- a sanctuary
- হারাম
- āminan
- ءَامِنًا
- secure
- শান্তিপূর্ণ
- yuj'bā
- يُجْبَىٰٓ
- are brought
- আনা হয়
- ilayhi
- إِلَيْهِ
- to it
- দিকে তার
- thamarātu
- ثَمَرَٰتُ
- fruits
- ফল-মূলসমূহ
- kulli
- كُلِّ
- (of) all
- প্রত্যেক
- shayin
- شَىْءٍ
- things
- রকমের
- riz'qan
- رِّزْقًا
- a provision
- জীবনের উপকরণ হিসেবে
- min
- مِّن
- from
- হ'তে
- ladunnā
- لَّدُنَّا
- Us?
- আমাদের পক্ষ
- walākinna
- وَلَٰكِنَّ
- But
- কিন্তু
- aktharahum
- أَكْثَرَهُمْ
- most of them
- অধিকাংশই তাদের
- lā
- لَا
- (do) not
- না
- yaʿlamūna
- يَعْلَمُونَ
- know
- জানে
Transliteration:
Wa qaalooo in nattabi'il hudaa ma'aka nutakhattaf min ardinaa; awalam numakkkil lahum haraman aaminany yujbaaa ilaihi samaraatu kulli shai'ir rizqam mil ladunnaa wa laakinna aksarahum laa ya'lamoon(QS. al-Q̈aṣaṣ:57)
English Sahih International:
And they [i.e., the Quraysh] say, "If we were to follow the guidance with you, we would be swept from our land." Have We not established for them a safe sanctuary to which are brought the fruits of all things as provision from Us? But most of them do not know. (QS. Al-Qasas, Ayah ৫৭)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তারা বলে- ‘আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথের অনুসরণ করি তাহলে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হব।’ আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘হারাম’ প্রতিষ্ঠিত করিনি যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূলের নজরানা আসে আমার পক্ষ থেকে রিযক স্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না। (আল কাসাস, আয়াত ৫৭)
Tafsir Ahsanul Bayaan
ওরা বলে, ‘আমরা যদি তোমার পথ ধরি, তবে আমাদের দেশ হতে আমাদেরকে উৎখাত করা হবে।’[১] আমি কি ওদেরকে (মক্কায়) এক নিরাপদ হারামে (পবিত্র স্থানে) প্রতিষ্ঠিত করিনি;[২] যেখানে আহারের জন্য আমার নিকট থেকে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয়?[৩] কিন্তু ওদের অধিকাংশই তা জানে না।
[১] অর্থাৎ, আমরা যেখানে বসবাস করছি সেখানে আমাদেরকে বসবাস করতে দেওয়া হবে না এবং আমাদেরকে নানা দুঃখ-কষ্ট অথবা বিরোধীদের সঙ্গে যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে। এ ছিল কিছু কাফেরদের ঈমান না আনার খোঁড়া ওজর। আল্লাহ তাদের উত্তরে বললেন, "আমি কি---।"
[২] অর্থাৎ, তাদের এই ওজর যুক্তিগ্রাহ্য নয়। কারণ, যে শহরে তারা বাস করে, সে শহরকে আল্লাহ নিরাপত্তা ও শান্তির শহর বানিয়েছেন। যদি এই শহর তাদের কুফরী ও শিরক সত্ত্বেও শান্তির হয়ে থাকে, তাহলে ঈমান আনার পর কি এই শহর শান্তির থাকবে না?
[৩] এটি মক্কার এমন এক বৈশিষ্ট্য; যা লক্ষ লক্ষ হজ্জ ও উমরাহ আদায়কারীগণ প্রত্যক্ষ করে থাকেন। মক্কায় উৎপাদন না হওয়া সত্ত্বেও সমস্ত রকমের ফলমূল ও পৃথিবীর নানান আসবাব-পত্র সেখানে পাওয়া যায়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তারা বলে, ‘আমরা যদি তোমার সাথে সৎপথ অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে দেশ থেকে উৎখাত করা হবে [১]।’ আমরা কি তাদের জন্য এক নিরাপদ হারাম প্রতিষ্ঠা করিনি, যেখানে সর্বপ্রকার ফলমূল আমদানী হয় আমাদের দেয়া রিযিকস্বরূপ [২]? কিন্তু তাদের বেশীর ভাগই এটা জানে না।
[১] মক্কার কাফেররা তাদের ঈমান কবুল না করার এক কারণ এই বর্ণনা করল যে, আপনার শিক্ষাকে সত্য মনে করি, কিন্তু আমাদের আশংকা এই যে, আপনার পথনির্দেশ মেনে আমরা আপনার সাথে একাত্মা হয়ে গেলে সমগ্র আরব আমাদের শক্র হয়ে যাবে এবং আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করে দেয়া হবে। আরবের সমস্ত উপজাতি মিলে আমাদের মক্কা ত্যাগ করতে বাধ্য করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, তাদের এই অজুহাত বাতিল। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা বিশেষভাবে মক্কাবাসীদের হেফাযতের জন্যে একটি স্বাভাবিক ব্যবস্থা পূর্ব থেকেই করে রেখেছেন। তা এই যে, তিনি মক্কার ভূখণ্ডকে নিরাপদ হারাম করে দিয়েছেন। তাছাড়া জগতের অন্যান্য কাফির সম্প্রদায়ের অবস্থার দিকে দৃষ্টিপাত কর। কুফর ও শিরকের কারণে তারা কীভাবে নিপাত হয়েছে। তাদের বসত-বাড়ি, সুদৃঢ় দুর্গ ও প্রতিরক্ষামূলক সাজসরঞ্জাম মাটিতে মিশে গেছে। অতএব কুফর ও শির্কই হচ্ছে প্রকৃত আশঙ্কার বিষয়। এটা ধ্বংসের কারণ হয়ে থাকে। তাওহীদ অনুসরণের মাধ্যমে ধ্বংসের ভয় নেই। [দেখুন, ইবন কাসীর]
[২] মক্কা মোকাররামা, যাকে আল্লাহ্ তা‘আলা নিজ গৃহের জন্যে সারা বিশ্বের মধ্য থেকে মনোনীত করেছেন, এটা এমন একটি স্থান যে, এখানে পার্থিব জীবনোপকরণের কোন বস্তু সহজে পাওয়া যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু মক্কার এসব বস্তুর প্রাচুর্য দেখে বিবেক-বুদ্ধি বিমুঢ় হয়ে পড়ে। প্রতি বছর হজ্জের মওসুমে মক্কায় লাখ লাখ লোক একত্রিত হয়। কিন্তু কখনও শোনা যায়নি যে, সেখানে কোন প্রকার অভাব হয়েছে। এ হচ্ছে মক্কার কাফেরদের অজুহাতের জওয়াব যে, যিনি তোমাদের কুফর ও শির্ক সত্ত্বেও তোমাদের প্রতি এতসব অনুগ্রহ করেছেন, তোমাদের দেশকে যাবতীয় বিপদাশঙ্কা থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন এবং এদেশে কোন কিছুই উৎপন্ন না হওয়া সত্ত্বেও সারা বিশ্বের উৎপাদিত দ্ৰব্য-সামগ্ৰী এখানে এনে সমাবেশ করেছেন, সেই বিশ্বস্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলে এসব নেয়ামত হাতছাড়া হয়ে যাবে-এরূপ আশংকা করা চূড়ান্ত নিৰ্বুদ্ধিতা বৈ নয়। [দেখুন, ইবন কাসীর]
Tafsir Bayaan Foundation
আর তারা বলে, ‘আমরা যদি তোমার সাথে হিদায়াতের অনুসরণ করি তবে আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে উৎখাত করা হবে’। আমি কি তাদের জন্য এক নিরাপদ ‘হারাম’ এর সুব্যবস্থা করিনি? সেখানে সব ধরনের ফলমূল আমদানী করা হয়, আমার পক্ষ থেকে রিয্কস্বরূপ? কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
Muhiuddin Khan
তারা বলে, যদি আমরা আপনার সাথে সুপথে আসি, তবে আমরা আমাদের দেশ থেকে উৎখাত হব। আমি কি তাদের জন্যে একটি নিরাপদ হরম প্রতিষ্ঠিত করিনি? এখানে সর্বপ্রকার ফল-মূল আমদানী হয় আমার দেয়া রিযিকস্বরূপ। কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।
Zohurul Hoque
আর তারা বলে -- ''আমরা যদি তোমার সঙ্গে ধর্মপথ অনুসরণ করি তাহলে আমাদের দেশ থেকে আমাদের উৎখাত করা হবে।’’ আমরা কি তাদের জন্য এক নিরাপদ পুণ্যস্থান প্রতিষ্ঠিত করি নি যেখানে আনা হয় হরেক রকমের ফল-ফসল, আমাদের তরফ থেকে রিযেকস্বরূপে? কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।