কুরআন মজীদ সূরা নমল আয়াত ৮
Qur'an Surah An-Naml Verse 8
নমল [২৭]: ৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
فَلَمَّا جَاۤءَهَا نُوْدِيَ اَنْۢ بُوْرِكَ مَنْ فِى النَّارِ وَمَنْ حَوْلَهَاۗ وَسُبْحٰنَ اللّٰهِ رَبِّ الْعٰلَمِيْنَ (النمل : ٢٧)
- falammā
- فَلَمَّا
- But when
- অতঃপর যখন
- jāahā
- جَآءَهَا
- he came to it
- সেখানে সে আসলো
- nūdiya
- نُودِىَ
- he was called
- ডাক দেয়া হলো
- an
- أَنۢ
- [that]
- যে
- būrika
- بُورِكَ
- "Blessed is
- "সে হয়েছে ধন্য
- man
- مَن
- who
- যে (আছে)
- fī
- فِى
- (is) at
- মধ্যে
- l-nāri
- ٱلنَّارِ
- the fire
- আগুনের (আলোর)
- waman
- وَمَنْ
- and whoever
- এবং যে (আছে)
- ḥawlahā
- حَوْلَهَا
- (is) around it
- তার চারপাশে
- wasub'ḥāna
- وَسُبْحَٰنَ
- And glory be
- এবং পবিত্র মহান
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (to) Allah
- আল্লাহ
- rabbi
- رَبِّ
- (the) Lord
- রব
- l-ʿālamīna
- ٱلْعَٰلَمِينَ
- (of) the worlds
- বিশ্বজগতের
Transliteration:
Falammaa jaaa'ahaa noodiya am boorika man finnnnaari wa man hawlahaa wa Subhaanal laahi Rabbil 'aalameen(QS. an-Naml:8)
English Sahih International:
But when he came to it, he was called, "Blessed is whoever is at the fire and whoever is around it. And exalted is Allah, Lord of the worlds. (QS. An-Naml, Ayah ৮)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
অতঃপর সে যখন আগুনের কাছে আসল তখন আওয়াজ হল- ‘ধন্য, যারা আছে এই আলোর মধ্যে আর তার আশেপাশে, বিশ্বজাহানের প্রতিপালক পবিত্র, মহিমান্বিত। (নমল, আয়াত ৮)
Tafsir Ahsanul Bayaan
অতঃপর সে যখন আগুনের নিকট এল তখন তাকে ডেকে বলা হল, ‘যে (এই) আগুনে এবং যারা ওর চারিপাশে আছে তারা বরকতপ্রাপ্ত, [১] বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ পবিত্র ও মহিমার্নিত।[২]
[১] দূর হতে যেখানে আগুনের শিখা দেখা যাচ্ছিল, সেখানে পৌঁঁছলেন অর্থাৎ, ত্বুর পাহাড়ে এবং দেখলেন এক সবুজ গাছ হতে আগুনের শিখা উপরে উঠছে। এটি বাস্তবে আগুন ছিল না; বরং আল্লাহর নূর ছিল। যার আলো আগুনের মত মনে হচ্ছিল। مَنْ فِي النَّار (যে আগুনে আছে) বলতে মহান আল্লাহ। আর نار (আগুন) বলতে তাঁর নূরকে বুঝানো হয়েছে। আর وَمَنْ حَوْلَهَا (যারা ওর চারিপাশে আছে) বলতে মূসা (আঃ) ও ফিরিশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। হাদীসে মহান আল্লাহর পর্দাকে نور (জ্যোতি) আর এক অন্য বর্ণনায় نار (আগুন) বলে অভিহিত করা হয়েছে। আর বলা হয়েছে যে, তিনি যদি নিজেকে পর্দা থেকে প্রকাশ করে দেন তাহলে তাঁর প্রতাপ সমস্ত সৃষ্টিকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।
(মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়, বিস্তারিত দেখার জন্য দ্রষ্টব্যঃ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়াহ ৫/৪৬৪- ৪৫৯)
[২] এখানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনার অর্থ এই যে, ঐ অদৃশ্য ডাক হতে কেউ যেন এটা মনে না করে যে, আল্লাহ ঐ গাছ বা আগুনে প্রবেশ করে আছেন; যেমন অনেক মুশরিকরা ধারণা করে থাকে। বরং এটি সত্য দর্শনের একটি পদ্ধতি যার দ্বারা প্রত্যেক নবীকে নবুঅতের শুরুতে সম্মানিত করা হয়। কখনো ফিরিশতার মাধ্যমে, আবার কখনো বা স্বয়ং আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করে এবং সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমে; যেমন, এখানে মূসা (আঃ)-এর সাথে ঘটেছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
অতঃপর তিনি যখন সেটার কাছে আসলেন [১], তখন ঘোষিত হল, ‘বরকতময়, যা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যা আছে এর চারপাশে [২], আর সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ্ পবিত্র ও মহিমান্বিত [৩]!
[১] যখন তিনি গাছের কাছে আসলেন, তখন তিনি ভয়ানক ও আশ্চর্যজনক এক দৃশ্য দেখতে পেলেন, তিনি সেখানে দেখতে পেলেন সবুজ গাছে আগুন জ্বলছে। আর সে আগুনে শুধু আলোর তীব্ৰতাই প্রকাশ পাচ্ছে। অপরদিকে গাছটিতেও সবুজতা ও সজীবতা বেড়েই চলেছে। তারপর তিনি তার মাথা উপরের দিকে উঠালেন, দেখলেন সে নূর আকাশ পর্যন্ত ছেয়ে আছে। ইবন আব্বাস বলেন, এটা কোন আগুন ছিল না। বরং জ্বলে উঠার মত আলো ছিল। তখন মূসা আলাইহিস সালাম আশ্চর্যান্বিত ও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আর তখনই বলা হল, যিনি আগুনে আছেন তিনি বরকতময় হোন। ইবন আব্বাস বলেন, বরকতময় হওয়ার অর্থ, পবিত্র ও মহিয়ান হওয়া। আর তার পাশে যারা আছে তারা হচ্ছেন ফিরিশতা। [ইবন কাসীর]
[২] এখানে আল্লাহ্র বাণীঃ “বরকতপূর্ণ হয়েছে, যা আছে এ আলোর মধ্যে এবং যা আছে এর চারপাশে” এর মধ্যে আলোতে কে আছে এবং আলোর চারপাশে কি আছে তা নির্ধারণ করার ব্যাপারে কয়েকটি মত রয়েছে।
এক, এখানে ‘অগ্নিতে যা আছে’ তা দ্বারা মূসা আলাইহিসসালামকে বুঝানো হয়েছে। আর তখন ‘এর চারপাশে যা আছে’ তা বলে আশেপাশে উপস্থিত ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হবে। [বাগভী; কুরতুবী]
দুই, কোন কোন মুফাসসির এখানে ‘অগ্নিতে যা আছে’ বলে ফেরেশতাদেরকে উদ্দেশ্য নিয়েছেন এবং ‘এর চারপাশে যা আছে’ তা বলে মূসা আলাইহিসসালামকে বুঝানো হয়েছে বলে মত প্ৰকাশ করেছেন। [বাগভী]
তিন, ‘এখানে অগ্নিতে যা আছে’ তা বলে আল্লাহ্র নূরকে বুঝানো হয়েছে, আর ‘এর চারপাশে যা আছে’ তা বলে ফেরেশতা [ইবন কাসীর] অথবা মূসা বা সেই পবিত্ৰ উপত্যকা অথবা সে গাছ সবই উদ্দেশ্য হতে পারে। আর এ মতটিই অধিক গ্রহণযোগ্য। তবে কোন অবস্থাতেই এখানে ‘অগ্নিতে যা আছে’ দ্বারা স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলার পবিত্র ও মহান সত্তা বুঝানো হবে না। কেননা স্রষ্টা তাঁর আরশে রয়েছেন। কোন সৃষ্টিবস্তুর মধ্যে স্রষ্টার অনুপ্রবেশ হতে পারে না। এটা তাওহীদের পরিপন্থী কথা। সুতরাং রাব্বুল আলামিনের নূরের আলোর দ্বারাই সে গাছ কোন ভাবে আলোকিত হয়েছিল। তবে সরাসরি কোন আলো কোথায় পতিত হলে তা ভস্ম হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ্ ঘুমান না, ঘুমানো তার জন্য সমীচীনও নয়, ইনসাফের পাল্লা বাড়ান এবং কমান, দিবাভাগের আগেই রাতের আমল তার কাছে উত্থিত হয় অনুরূপভাবে রাত্রি আগমণের আগেই তার কাছে দিবাভাগের আমল উখিত হয়। তাঁর পর্দা হলো নূরের। যদি তিনি তার পর্দাকে অপসারণ করেন তবে তা তার চেহারার আলো দৃষ্টিশক্তি যতদূর যায় ততদুর জ্বালিয়ে ভষ্ম করে দেবে।’’ [সহীহ মুসলিমঃ ১৭৯]
[৩] অর্থাৎ তিনি আরশের উপর থেকেও যমীনে এক গাছের উপরে তাঁর আলো ফেলে সেখান থেকে তাঁর বান্দা মূসার সাথে কথা বলছেন। তিনি অত্যন্ত মহান ও পবিত্ৰ, তিনি যা ইচ্ছে করতে পারেন। তাঁর সত্তা, গুণাগুণ ও কার্যধারা কোন কিছুই কোন সৃষ্টজীবের মত হতে পারে না। তাঁর সৃষ্ট কোন কিছু তাঁকে আয়ত্ব করতে পারে না। আসমান ও যমীন তাঁকে ঘিরে রাখতে পারে না। তিনি সুউচ্চ, সুমহান, সমস্ত সৃষ্টিকুল থেকে পৃথক। [ইবন কাসীর] তিনি এ গাছের উপর থেকে কথা বললেও এটা যেন কেউ মনে না করে বসে যে, তিনি সৃষ্ট কোন কিছুর ভিতরে প্রবেশ করেছেন। এ আয়াতাংশ বলার উদ্দেশ্য সম্ভবত এও হতে পারে যে, দুনিয়াতে অধিকাংশ শির্ক সংঘটিত হয়েছে আল্লাহ্ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে। তাঁর কোন দৃষ্টি কোন কিছুর উপর পতিত হলে মানুষ সেটাকেই ইলাহ মনে করে পুজা করতে আরম্ভ করে। যদি আল্লাহ্কে সঠিকভাবে তাঁর মর্যাদা, সম্মান ও প্রতিপত্তি দেয়া হতো তা হলে কেউ শির্কে লিপ্ত হতো না। তাই এখানে তাঁকে এ ধরণের কাজ থেকে মুক্ত করার জন্য নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
Tafsir Bayaan Foundation
তারপর সে যখন সেখানে এসে পৌঁছল, তখন ডেকে বলা হল, ‘বরকতময় যা এ আলোর মধ্যে ও এর চারপাশে আছে। আর সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ মহাপবিত্র, মহিমান্বিত’।
Muhiuddin Khan
অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।
Zohurul Hoque
অতঃপর যখন তিনি এর কাছে এলেন তখন আওয়াজ হলো এই বলে -- ''ধন্য সেইজন যে আগুনের ভেতরে এবং যে এর আশেপাশে রয়েছে। আর সকল মহিমা বিশ্বজগতের প্রভু আল্লাহ্র!