Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আন-নূর আয়াত ৩৬

Qur'an Surah An-Nur Verse 36

আন-নূর [২৪]: ৩৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

فِيْ بُيُوْتٍ اَذِنَ اللّٰهُ اَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗۙ يُسَبِّحُ لَهٗ فِيْهَا بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ ۙ (النور : ٢٤)

فِى
In
(এসব লোক) মধ্যে (আছে)
buyūtin
بُيُوتٍ
houses
ঘরগুলোর (অর্থাৎ মাসজিদের)
adhina
أَذِنَ
(which) Allah ordered
নির্দেশ দিয়েছেন
l-lahu
ٱللَّهُ
(which) Allah ordered
আল্লাহ্‌
an
أَن
that
যে
tur'faʿa
تُرْفَعَ
they be raised
সমুন্নত করতে (সেগুলোকে)
wayudh'kara
وَيُذْكَرَ
and be mentioned
ও স্মরণ করতে
fīhā
فِيهَا
in them
তার মধ্যে
us'muhu
ٱسْمُهُۥ
His name
তাঁর নাম
yusabbiḥu
يُسَبِّحُ
Glorify
পবিত্র মহিমা ঘোষনা করে (তারা)
lahu
لَهُۥ
[to] Him
জন্যে তাঁরই
fīhā
فِيهَا
in them
তার মধ্যে
bil-ghuduwi
بِٱلْغُدُوِّ
in the mornings
বেলায় সকাল
wal-āṣāli
وَٱلْءَاصَالِ
and (in) the evenings
ও সন্ধ্যাসমূহে

Transliteration:

Fee buyootin azinal laahu an turfa'a wa yuzkara feehasmuhoo yusabbihu lahoo feehaa bilghuduwwi wal aasaal (QS. an-Nūr:36)

English Sahih International:

[Such niches are] in houses [i.e., mosques] which Allah has ordered to be raised and that His name be mentioned [i.e., praised] therein; exalting Him within them in the morning and the evenings (QS. An-Nur, Ayah ৩৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

(এ রকম আলো জ্বালানো হয়) সে সব গৃহে (অর্থাৎ মাসজিদে ও উপাসনালয়ে) যেগুলোকে সমুন্নত রাখতে আর তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ওগুলোতে তাঁর মাহাত্ম্য ঘোষণা করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায় (বার বার) (আন-নূর, আয়াত ৩৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

সে সব গৃহে -- যাকে আল্লাহ সমুন্নত করতে এবং তাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন--[১] সকাল ও সন্ধ্যায় তাতে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে,[২]

[১] (فِي এর সম্পর্ক يُسَبِّحُ এর সাথে, যেমন অনুবাদে প্রকাশ। অথবা তার সম্পর্ক পূর্বোক্ত উপমার সাথে।) যখন মহান আল্লাহ মু'মিনের অন্তরকে এবং তার মধ্যে যে ঈমান, হিদায়াত ও জ্ঞান রয়েছে, তাকে এমন একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করেছেন, যা কাঁচের আবরণে অবস্থিত এবং তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তেল দ্বারা প্রদীপ্ত। এখানে তার স্থান কোথায়, তা বলা হচ্ছে। যে এই দীপাধার এমন গৃহে অবস্থান করছে, যার ব্যাপারে আদেশ দেওয়া হয়েছে যে, তাকে উচ্চ ও সমুন্নত করা হোক, তার মধ্যে আল্লাহর যিকর ও স্মরণ করা হোক। উদ্দেশ্য, মসজিদ; যা পৃথিবীর বুকে আল্লাহর নিকট সব থেকে বেশী পছন্দনীয় জায়গা। উচ্চ করার অর্থ, শুধু ইঁট-পাথর দিয়ে উচ্চ করা নয়। বরং মসজিদকে অপবিত্রতা, অসার ও অবৈধ কথা ও কর্ম হতে পবিত্র রাখাও এর মধ্যে গণ্য। শুধু মসজিদের বিল্ডিংকে আকাশ ছোঁয়া উঁচু করে বানানো উদ্দেশ্য নয়। বরং হাদীসে মসজিদকে সৌন্দর্য ও কারুকার্য-খচিত করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে এমন কাজকে কিয়ামতের নিদর্শন বলে অভিহিত করা হয়েছে। (আবু দাউদ নামায অধ্যায় মসজিদ নির্মাণ পরিচ্ছেদ) এ ছাড়া যেমন মসজিদে ব্যবসা-বণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয়, হৈ-হট্টগোল নিষিদ্ধ। কারণ, এসব মসজিদের আসল লক্ষ্য ইবাদতে বাধা সৃষ্টিকারী। অনুরূপ আল্লাহর যিকর করার মধ্যে এ কথাও শামিল যে, কেবলমাত্র এক আল্লাহর যিকর, কেবল তাঁরই ইবাদত এবং তাকেই সাহায্যের জন্য আহবান করতে হবে। আল্লাহ বলেছেন, {وَأَنَّ الْمَسَاجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدْعُوا مَعَ اللَّهِ أَحَدًا} "নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহর জন্য। অতএব তোমরা আল্লাহর সাথে অন্যকে আহবান করো না।" (সূরা জীন ৭২;১৮ আয়াত)

[২] তাসবীহ (পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা) বলতে নামাযকে বুঝানো হয়েছে। آصَال শব্দটি أَصِيل শব্দের বহুবচন। যার অর্থ সন্ধ্যা। অর্থাৎ, ঈমানদার ব্যক্তিবর্গ; যাদের অন্তর ঈমান ও হিদায়াতের আলোকে উদ্ভাসিত, তারা সকাল-সন্ধ্যায় মসজিদে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য নামায আদায় করে এবং তাঁর ইবাদত করে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

সে সব ঘরে [১] যাকে সমুন্নত করতে [২] এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আল্লাহ্‌ নির্দেশ দিয়েছেন [৩], সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে [৪],

[১] পূর্ববর্তী আয়াতে আল্লাহ্‌ তা‘আলা মানুষের অন্তরে নিজের হেদায়াতের আলো রাখার একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন এবং শেষে বলেছেনঃ এই নূর দ্বারা সে-ই উপকার লাভ করে, যাকে আল্লাহ্‌ চান ও তাওফীক দেন। [ইবন কাসীর] আলোচ্য আয়াতে এমন মুমিনদের আবাসস্থল ও স্থান বর্ণনা করা হয়েছে যে, এরূপ মুমিনদের আসল আবাসস্থল, যেখানে তারা প্রায়ই বিশেষতঃ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় দৃষ্টিগোচর হয়- সেসব গৃহ, যেগুলোকে উচ্চ রাখার জন্য এবং যেগুলোতে আল্লাহ্‌র নাম উচ্চারণ করার জন্য আল্লাহ্‌ তা‘আলা আদেশ করেছেন। এসব গৃহে সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বদা এমন লোকেরা আল্লাহ্‌ তা‘আলার পবিত্ৰতা বর্ণনা করে, যাদের বিশেষ গুণাবলী পরবর্তী আয়াতে বর্ণিত হচ্ছে। অধিকাংশ তাফসীরবিদের মতে এসব গৃহ হচ্ছে মসজিদ। অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এ তাফসীরকেই অগ্ৰাধিকার দিয়েছেন। [দেখুন-কুরতুবী, বাগভী]

[২] কোন কোন মুফাসসির এর অর্থ নিয়েছেন মু‘মিনদের ঘর এবং সেগুলোকে উন্নত করার অর্থ সেগুলোকে নৈতিক দিক দিয়ে উন্নত করা, নৈতিক মান রক্ষার জন্য তাতে মসজিদের ব্যবস্থা করা। এ অর্থের সমর্থনে আমরা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা থেকে একটি হাদীস পাই যাতে তিনি বলেছেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বাসগৃহের মধ্যেও মসজিদ অর্থাৎ সালাত আদায় করার বিশেষ জায়গা তৈরী করার এবং তাকে পবিত্র রাখার জন্য আদেশ করেছেন। [ইবনে মাজহঃ ৭৫৮, ৭৫৯]

তবে অধিকাংশ মুফাসসির এ “ঘরগুলো”কে মসজিদ অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং এগুলোকে উন্নত করার অর্থ নিয়েছেন এগুলো নির্মাণ ও এগুলোকে মর্যাদা প্ৰদান করা। “সেগুলোর মধ্যে নিজের নাম স্মরণ করতে আল্লাহ্‌ নির্দেশ দিয়েছেন।” এ শব্দগুলো বাহ্যত মসজিদ সংক্রান্ত ব্যাখ্যার বেশী সমর্থক দেখা যায়। তখন আয়াতের অর্থ হবে, আল্লাহ্‌ তা‘আলা মসজিদসমূহকে সমুন্নত করার অনুমতি দিয়েছেন। অনুমতি দেয়ার মানে আদেশ করা এবং উচ্চ করা মানে সম্মান করা। উচ্চ করার দু’টি অর্থ করা হয়ে থাকে-

[১] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ উচ্চ করার অর্থ আল্লাহ্‌ তা‘আলা মসজিদসমূহে অনৰ্থক কাজ ও কথাবার্তা বলতে নিষেধ করেছেন।
হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ رِفْعُ مَسَا جِدَ বলে মসজিদসমূহের সম্মান, ইযযত ও সেগুলোকে নাপাকী ও নোংরা বস্তু থেকে পবিত্র রাখা বুঝানো হয়েছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “মসজিদে থুথু ফেলা গোনাহ আর তার কাফফারা হলো তা দাফন করা, মিটিয়ে দেয়া”। [বুখারীঃ ৪১৫, মুসলিমঃ ৫৫২]

[২] ইকরিমা ও মুজাহিদ বলেনঃ رفع বলে মসজিদ নির্মাণ বুঝানো হয়েছে; যেমন কা‘বা নির্মাণ সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছেঃ

وَ اِذْ يَرْ فَعُ اِبْرٰحٖمُ الْقًو اعِدَمِنَ الْبَيْتِ

এখানে رفع قو اعد বলে ভিত্তি নির্মাণ বুঝানো হয়েছে। উসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, “যে আল্লাহ্‌র জন্য মসজিদ বানায়, আল্লাহ্‌ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানাবেন”। [বুখারীঃ ৪৫০, মুসলিমঃ ৫৩৩]

প্রকৃত কথা এই যে, تُرْفَعَ শব্দের অর্থ মসজিদ নির্মাণ করা, পাক-পবিত্র রাখা এবং মসজিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা ইত্যাদি সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। [দেখুন-তাবারী, ইবন কাসীর, কুরতুবী] এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসুন ও পেঁয়াজ খেয়ে মুখ না ধুয়ে মসজিদে গমন করতে নিষেধ করেছেন। উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ “আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে ব্যাক্তির মুখে রসুন বা পেঁয়াজের দুৰ্গন্ধ অনুভব করতেন, তাকে মসজিদ থেকে বের করে ‘বাকী’ নামক স্থানে পাঠিয়ে দিতেন এবং বলতেনঃ যে ব্যাক্তি রসুন-পেঁয়াজ খেতে চায়, সে যেন উত্তম রূপে পাকিয়ে খায় যাতে দুৰ্গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়।” [মুসলিমঃ ৫৬৭]

[৩] আবু উমামাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “যে ব্যাক্তি গৃহে অযু করে ফরয সালাত আদায়ের জন্য মসজিদের দিকে যায়, তার সওয়াব সেই ব্যক্তির সমান, যে ইহরাম বেঁধে গৃহ থেকে হজ্জের জন্য যায়। যে ব্যাক্তি এশরাকের সালাত আদায়ের জন্য গৃহ থেকে অযু করে মসজিদের দিকে যায়, তার সওয়াব উমরাকারীর অনুরূপ। এক সালাতের পর অন্য সালাত ইল্লিয়্যীনে লিখিত হয় যদি উভয়ের মাঝখানে কোন অপ্রয়োজনীয় কাজ না করে।” [আবু দাউদঃ ৫৫৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ “যারা অন্ধকারে মসজিদে গমন করে, তাদেরকে কেয়ামতের দিন পরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ শুনিয়ে দাও।” [আবু দাউদঃ ৫৬১, তিরমিযীঃ ২২৩]

[৪] আল্লাহ্‌র নাম স্মরণ করা দ্বারা এখানে তাসবীহ (পবিত্রতা বর্ণনা), তাহমীদ (প্ৰশংসা বর্ণনা), নফল সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, ওয়াজ-নসীহত, দ্বীনী শিক্ষা ইত্যাদি সর্বপ্রকার যিকর বুঝানো হয়েছে। [তাবারী, সা‘দী, মুয়াসসার]

Tafsir Bayaan Foundation

সেসব ঘরে যাকে সমুন্নত করতে এবং যেখানে আল্লাহর নাম যিক্র করতে আল্লাহই অনুমতি দিয়েছেন। সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবীহ পাঠ করে-

Muhiuddin Khan

আল্লাহ যেসব গৃহকে মর্যাদায় উন্নীত করার এবং সেগুলোতে তাঁর নাম উচ্চারণ করার আদেশ দিয়েছেন, সেখানে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে;

Zohurul Hoque

সেইসব ঘরে যাকে আল্লাহ্ অনুমতি দিয়েছেন উন্নীত হতে এবং তাঁর নামে সে-সবে গুণ-কীর্তন হতে, সে-সবে তাঁর জপতপ করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায়, --