Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল মু'মিনূন আয়াত ১০০

Qur'an Surah Al-Mu'minun Verse 100

আল মু'মিনূন [২৩]: ১০০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

لَعَلِّيْٓ اَعْمَلُ صَالِحًا فِيْمَا تَرَكْتُ كَلَّاۗ اِنَّهَا كَلِمَةٌ هُوَ قَاۤىِٕلُهَاۗ وَمِنْ وَّرَاۤىِٕهِمْ بَرْزَخٌ اِلٰى يَوْمِ يُبْعَثُوْنَ (المؤمنون : ٢٣)

laʿallī
لَعَلِّىٓ
That I may
যাতে আমি
aʿmalu
أَعْمَلُ
do
কাজ করি
ṣāliḥan
صَٰلِحًا
righteous (deeds)
সৎ
fīmā
فِيمَا
in what
(তার) মধ্যে যা
taraktu
تَرَكْتُۚ
I left behind"
আমি ছেড়ে এসেছি"
kallā
كَلَّآۚ
No!
কখনও না
innahā
إِنَّهَا
Indeed, it
নিশ্চয়ই তা
kalimatun
كَلِمَةٌ
(is) a word
একটি কথা (মাত্র)
huwa
هُوَ
he
সে
qāiluhā
قَآئِلُهَاۖ
speaks it
যার উক্তিকারী
wamin
وَمِن
and before them
এবং থেকে
warāihim
وَرَآئِهِم
and before them
তাদের পিছনে (আছে)
barzakhun
بَرْزَخٌ
(is) a barrier
অন্তরায়
ilā
إِلَىٰ
till
পর্যন্ত
yawmi
يَوْمِ
(the) Day
সেদিন (যেদিন)
yub'ʿathūna
يُبْعَثُونَ
they are resurrected
তারা উত্থিত হবে

Transliteration:

La'alleee a'malu saalihan feemaa taraktu kallaa; innahaa kalimatun huwa qaaa'iluhaa wa minw waraaa'him barzakhun ilaa Yawmi yub'asoon (QS. al-Muʾminūn:100)

English Sahih International:

That I might do righteousness in that which I left behind." No! It is only a word he is saying; and behind them is a barrier until the Day they are resurrected. (QS. Al-Mu'minun, Ayah ১০০)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যাতে আমি সৎ কাজ করতে পারি যা আমি করিনি। কক্ষনো না, এটা তো তার একটা কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা থাকবে পুনরুত্থানের দিন পর্যন্ত। (আল মু'মিনূন, আয়াত ১০০)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যাতে আমি আমার ছেড়ে আসা জীবনে সৎকর্ম করতে পারি।’[১] না, এটা হবার নয়;[২] এটা তো তার একটা উক্তি মাত্র;[৩] তাদের সামনে ‘বারযাখ’ (যবনিকা) থাকবে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।[৪]

[১] এই কামনা প্রতিটি কাফের মৃত্যুর সময়, পুনর্জীবিত হওয়ার সময়, আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হওয়ার সময় এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ হওয়ার সময় করে থাকে ও করবে। কিন্তু এতে কোন লাভ হবে না। কুরআন কারীমে এ বিষয়টিকে বিভিন্ন জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। যেমনঃ সূরা মুনাফিকূন ৬৩;১০-১১, ইবরাহীম ১৪;৪৪, আ'রাফ ৭;৫৩, সাজদাহ ৩২;১২, আনআম ৬;২৭-২৮, শূরা ৪২;৪৪, মু'মিন ৪০;১১-১২, ফাত্বির ৩৫;৩৭ আয়াত ইত্যাদি।

[২] كَلا শব্দটি ধমকরূপে প্রয়োগ করা হয়েছে। অর্থাৎ এ রকম কখনই হবে না যে, তাদেরকে পৃথিবীতে পুনর্বার পাঠিয়ে দেয়া হবে।

[৩] এর একটি অর্থ এই যে, এ রকম কথা তো প্রত্যেক কাফের তার মৃত্যুর সময় বলে থাকে। দ্বিতীয় অর্থ হল, এটা শুধু তাদের মুখের কথা; যা কাজে পরিণত হওয়ার নয়। অর্থাৎ, তাদেরকে পৃথিবীতে পুনর্বার পাঠিয়ে দেওয়া হলেও তাদের এ কথা কথাই থেকে যাবে; সৎকাজের সুমতি তাদের হবে না। যেমন, এক জায়গায় বলা হয়েছে "যদি তাদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তাহলেও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল তারা তাই করবে।" (সূরা আনআম ৬;২৮) ক্বাতাদাহ (রহঃ) বলেন, কাফেরদের এই কামনায় আমাদের জন্য বড় শিক্ষা রয়েছে। কাফের নিজ বংশে ও গোত্রে ফিরে যাওয়ার কামনা করবে না। বরং পৃথিবীতে সৎকর্ম করার কামনা করবে। সেই জন্য জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান মনে করে অধিকাধিক সৎকর্ম করা উচিত। যাতে কাল কিয়ামত দিবসে এ রকম কামনা করার প্রয়োজন না হয়। (ইবনে কাসীর)

[৪] দুই জিনিসের মধ্যেকার পর্দা ও আড়ালকে 'বারযাখ' বলে। ইহকাল ও পরকাল জীবনের মধ্যকার যে একটি জীবন রয়েছে, তাকেই 'বারযাখ' বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কারণ, মৃত্যুর পরপরই পৃথিবীর সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। আর আখেরাতের জীবন তখন শুরু হবে, যখন সমস্ত মানুষকে পুনর্বার জীবিত করা হবে। এর মধ্যকার জীবন যা কবরে বা পশু-পক্ষীর পেটে কিংবা পুড়িয়ে ছাই করে দিলে শেষ পর্যন্ত মাটির ধূলিকণা আকারে অতিবাহিত হয়, তাকে 'বারযাখী জীবন' বলে। মানুষের এই অস্তিত্ব যেখানেই থাক আর যেভাবেই থাক, শেষ পর্যন্ত মাটিতে মিশে মাটিতে পরিণত হবে অথবা ছাই হয়ে হাওয়ায় উড়ে যাবে, অথবা সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হবে অথবা কোন জন্তুর খাদ্যে পরিণত হবে। পরিশেষে মহান আল্লাহ সকলকে এক নতুন অস্তিত্ব দান করে হাশরের মাঠে জমা করবেন।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

‘যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি [১]।’ না, এটা হবার নয়। এটা তো তার একটি বাক্য মাত্র যা সে বলবেই [২]। তাদের সামনে বার্‌যাখ [৩] থাকবে উত্থান দিন পর্যন্ত।

[১] অর্থাৎ মৃত্যুর সময় যখন কাফের ব্যক্তি আখেরাতের আযাব অবলোকন করতে থাকে, তখন এরূপ বাসনা প্রকাশ করে, আফসোস, আমি যদি পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে যেতাম এবং সৎকর্ম করে এই আযাব থেকে রেহাই পেতাম। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও এসেছে, “আর আমরা তোমাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তোমরা তা থেকে ব্যয় করবে তোমাদের কারও মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে, 'হে আমার রব! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য অবকাশ দিলে আমি সাদাকাহ দিতাম ও সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!’ আর যখন কারো নির্ধারিত কাল উপস্থিত হবে, তখন আল্লাহ্‌ তাকে কিছুতেই অবকাশ দেবেন না। তোমরা যা আমল কর আল্লাহ্‌ সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত।’’ [সূরা আল-মুনাফিকূনঃ ১০-১১] আরও এসেছে, “আর সেখানে তারা আর্তনাদ করে বলবে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে বের করুন, আমরা যা করতাম তার পরিবর্তে সৎকাজ করব।’ আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘আমরা কি তোমাদেরকে এতো দীর্ঘ জীবন দান করিনি যে, তখন কেউ উপদেশ গ্ৰহণ করতে চাইলে উপদেশ গ্ৰহণ করতে পারতো? আর তোমাদের কাছে সতর্ককারীও এসেছিল। কাজেই শাস্তি আস্বাদন কর; আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা ফাতিরঃ ৩৭] কিন্তু তাদের সে চাওয়া পূরণ করা হবে না। [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ ফেরত পাঠানো হবে না। নতুন করে কাজ শুরু করার জন্য তাকে আর দ্বিতীয় কোন সুযোগ দেয়া যেতে পারে না। তাছাড়া যদি তাদের কথামত তাদেরকে পাঠানোও হতো তারপরও তারা আবার অন্যায় করত। যেমন অন্য আয়াতে এসেছে, “আর তারা আবার ফিরে গেলেও তাদেরকে যা করতে নিষেধ করা হয়েছিল আবার তারা তাই করত” [সূরা আল-আন‘আমঃ ২৮] [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

[৩] ‘বারযাখ’ এর শাব্দিক অর্থ অন্তরায় ও পৃথককারী বস্তু। দুই অবস্থা অথবা দুই বস্তুর মাঝখানে যে বস্তু আড়াল হয় তাকে বারযাখ বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর] এ কারণেই মৃত্যুর পর কেয়ামত ও হাশার পর্যন্ত কালকে বারযাখ বলা হয়। কারণ এটা দুনিয়ার জীবন ও আখেরাতের জীবনের মাঝখানে সীমা প্রাচীর। আয়াতের অর্থ এই যে, মরণোম্মুখ ব্যক্তির ফেরেশতাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানোর কথা বলা শুধু একটি কথা মাত্র, যা সে বলতে বাধ্য। কেননা, এখন আযাব সামনে এসে গেছে। কিন্তু এখন এই কথার ফায়দা নেই। কারণ, সে বারযাখে পৌঁছে গেছে। বারযাখ থেকে দুনিয়াতে ফিরে আসে না এবং কেয়ামত ও হাশর-নশরের পূর্বে পুনর্জীবন পায় না, এটাই নিয়ম।

Tafsir Bayaan Foundation

যেন আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি ছেড়ে দিয়েছিলাম।’ কখনো নয়, এটি একটি বাক্য যা সে বলবে। যেদিন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে সেদিন পর্যন্ত তাদের সামনে থাকবে বরযখ।

Muhiuddin Khan

যাতে আমি সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি। কখনই নয়, এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।

Zohurul Hoque

''যেন আমি সৎকর্ম করতে পারি সেইখানে যা আমি ছেড়ে এসেছি।’’ কখনোই না! এ তো শুধু একটি মুখের কথা যা সে বলছে। আর তার সামনে রয়েছে 'বরযখ’ সেইদিন পর্যন্ত যখন তাদের পুনরুত্থান করা হবে।