কুরআন মজীদ সূরা হাজ্জ্ব আয়াত ৬৭
Qur'an Surah Al-Hajj Verse 67
হাজ্জ্ব [২২]: ৬৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
لِكُلِّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنْسَكًا هُمْ نَاسِكُوْهُ فَلَا يُنَازِعُنَّكَ فِى الْاَمْرِ وَادْعُ اِلٰى رَبِّكَۗ اِنَّكَ لَعَلٰى هُدًى مُّسْتَقِيْمٍ (الحج : ٢٢)
- likulli
- لِّكُلِّ
- For every
- জন্যে প্রত্যেক
- ummatin
- أُمَّةٍ
- nation
- জাতির
- jaʿalnā
- جَعَلْنَا
- We have made
- আমরা নির্ধারণ করেছি
- mansakan
- مَنسَكًا
- rite(s)
- ইবাদাত পদ্ধতি
- hum
- هُمْ
- they
- তারা
- nāsikūhu
- نَاسِكُوهُۖ
- perform it
- সেই প্রথা অনুসরণকারী
- falā
- فَلَا
- So let them not dispute with you
- সুতরাং না (যেন)
- yunāziʿunnaka
- يُنَٰزِعُنَّكَ
- So let them not dispute with you
- তোমার (সাথে) ঝগড়া করে
- fī
- فِى
- in
- নিয়ে
- l-amri
- ٱلْأَمْرِۚ
- the matter
- এই (ব্যাপার)
- wa-ud'ʿu
- وَٱدْعُ
- but invite (them)
- এবং তুমি ডাকো
- ilā
- إِلَىٰ
- to
- দিকে
- rabbika
- رَبِّكَۖ
- your Lord
- তোমার রবের
- innaka
- إِنَّكَ
- Indeed, you
- তুমি নিশ্চয়ই (আছো)
- laʿalā
- لَعَلَىٰ
- (are) surely on
- অবশ্যই উপর
- hudan
- هُدًى
- guidance
- পথের
- mus'taqīmin
- مُّسْتَقِيمٍ
- straight
- সরল সঠিক
Transliteration:
Likulli ummatin ja'alnaa mansakan hum naasikoohu falaa yunaazi 'unnaka fil amr; wad'u ilaa Rabbika innaka la 'alaa hudam mustaqeem(QS. al-Ḥajj:67)
English Sahih International:
For every [religious] community We have appointed rites which they perform. So, [O Muhammad], let them [i.e., the disbelievers] not contend with you over the matter but invite [them] to your Lord. Indeed, you are upon straight guidance. (QS. Al-Hajj, Ayah ৬৭)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি (‘ইবাদাতের) নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি যা তারা অনুসরণ করে। কাজেই তারা যেন এ বিষয়ে তোমার সঙ্গে তর্ক বিতর্ক না করে। তুমি (তাদেরকে) তোমার প্রতিপালকের দিকে ডাক, তুমি অবশ্যই সরল সঠিক পথে আছ। (হাজ্জ্ব, আয়াত ৬৭)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আমি প্রত্যেক জাতির জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছি ইবাদত পদ্ধতি; যা তারা অনুসরণ করে।[১] সুতরাং তারা যেন অবশ্যই এ ব্যাপারে তোমার সাথে বিতর্ক না করে। [২] তুমি তাদেরকে তোমার প্রতিপালকের দিকে আহবান কর। নিশ্চয় তুমি সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।[৩]
[১] অর্থাৎ, প্রত্যেক যুগে আমি মানুষের জন্য পৃথক পৃথক শরীয়ত নির্ধারিত করেছি, যা কিছু বিষয়ে এক অপর হতে আলাদা। যেমন তাওরাত মূসা (আঃ)-এর উম্মতের জন্য, ইঞ্জীল ঈসা (আঃ)-এর উম্মতের জন্য এবং কুরআন হল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মতের জন্য শরীয়ত ও জীবন ব্যবস্থা।
[২] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তোমাকে যে দ্বীন ও শরীয়ত দান করেছেন, তা পূর্ববর্তী দ্বীনসমূহের মূলনীতিরই অনুসারী। সুতরাং পূর্ববর্তী শরীয়তের অনুসারীদের উচিত, এখন শেষ নবী (সাঃ)-এর শরীয়তের উপর ঈমান আনা। আর উচিত নয়, তাঁর সাথে এ ব্যাপারে তর্ক-বিবাদ করা।
[৩] অর্থাৎ, তুমি ওদের তর্ক-বিবাদের কোন পরোয়া করবে না। বরং তাদেরকে নিজ প্রতিপালকের দিকে আহবান করতে থাক। কারণ 'সিরাতে মুস্তাকীম' (সরল পথে) কেবল তুমিই প্রতিষ্ঠিত আছ, বাকী পূর্বের সমস্ত শরীয়ত এখন রহিত।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আমরা প্রত্যেক উম্মতের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছি ‘মানসাক’ [১] (ইবাদাত পদ্ধতি) যা তারা পালন করে। কাজেই তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আর আপনি আপনার রব-এর দিকে ডাকুন, আপনি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।
[১] আয়াতের منسك শব্দটি مصدر ধরে অর্থ করা হবে, শরী‘আত। [কুরতুবী] অর্থাৎ প্রত্যেক নবীর উম্মতের জন্যই আল্লাহ্ তা’আলা সুনির্দিষ্ট শরী‘আত ও ইবাদাত পদ্ধতি নির্ধারণ করেছেন। তারা সে অনুসারে ইবাদাত করবে। যদিও তাদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য ছিল। কিন্তু মূল আদল, হিকমতে কোন পার্থক্য ছিল না। [সা‘দী] সে সব উম্মত তাদের কাছে যে শরী‘আত এসেছে, সেটা অনুসারে আমল করে। সুতরাং তাওরাত ছিল ইবাদাত ও শরী‘আতের পদ্ধতি, কিন্তু তা ছিল মূসা আলাইহিস সালামের সময় হতে ঈসা আলাইহিস সালামের সময় পর্যন্ত। আর ইঞ্জীল ছিল ইবাদাত ও শরী‘আতের পদ্ধতি, তবে তা ছিল ঈসা আলাইহিস সালামের সময় হতে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সময় পর্যন্ত। সে ধারাবাহিকতায় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের জন্যও আল্লাহ্ তা’আলা ইবাদাত ও হজ্জের নিয়মাবলী বিধিবদ্ধ করেছেন। সুতরাং তাদেরকে তা মেনে চলতে হবে। [ফাতহুল কাদীর]
অথবা আয়াতের منسك শব্দটি اسم ظرف বা স্থান নির্দেশক বিশেষ্য। তখন এর অর্থ হবে نسك এর স্থান। হজের স্থান, বা ইবাদাতের স্থান। [ফাতহুল কাদীর] কেননা, অভিধানে نسك এর অর্থ এমন নির্দিষ্ট স্থান, যা কোন বিশেষ ভাল অথবা মন্দ কাজের জন্য নির্ধারিত থাকে। এ কারণেই হজ্জের বিধি-বিধানকে مناسك الحغ বলা হয়। কেননা, এগুলোতে বিশেষ বিশেষ স্থান বিশেষ বিশেষ কাজের জন্য নির্ধারিত আছে। [ইবন কাসীর] সে হিসেবে আয়াতের অর্থ হবে, প্রতিটি উম্মতের জন্যই আমরা শরী‘আত হিসেবে ইবাদতের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করেছি। তারা সেখানে একত্রিত হবে। তাই কাফেররা যেন আপনার সাথে এ ব্যাপারে ঝগড়া না করে। অথবা আয়াতের অর্থ, প্রতিটি উম্মতই একটি স্থানকে তাদের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছে। আর আল্লাহ্ প্রকৃতিগতভাবে তাদের সেটা করতে দেন। (শরী‘আতগতভাবে সেগুলো আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অনুমোদিত নয়) তারা সেটা করবেই। সুতরাং আপনি তাদের সে সমস্ত কর্মকাণ্ড নিয়ে তাদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হবেন না। তাদের সাথে এ সমস্ত বাতিল বিষয় নিয়ে তর্ক করে আপনি আপনার কাছে যে হক এসেছে সেটাকে ছেড়ে দিবেন না। আর এজন্যই আয়াতের পরবর্তী অংশে বলা হয়েছে, “আপনি তাদেরকে আপনার রব-এর দিকে ডাকুন, আপনি তো সরল পথেই প্রতিষ্ঠিত।” অৰ্থাৎ আপনার বিরোধীরাই পথচ্যুত। আপনি স্পষ্ট সরল-সোজা পথে আছেন যা আপনাকে মনজিলে মাকসূদে পোঁছে দিবে। [ইবন কাসীর]
অথবা আয়াতে منسك অর্থ যবেহ করার বিধি-বিধান বা জন্তুর গোশত খাওয়ার পদ্ধতি। [ফাতহুল কাদীর] সে হিসেবে আয়াতে কাফেরদের কোন সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। কোন কোন কাফের মুসলিমদের সাথে তাদের যবেহ করা জন্তু সম্পর্কে অনর্থক তর্ক-বিতর্ক করত। তারা বলত; তোমাদের দ্বীনের এই বিধান আশ্চর্যজনক যে, যে জন্তুকে তোমরা স্বহস্তে হত্যা কর, তা তো হালাল এবং যে জন্তুকে আল্লাহ্ তা'আলা সরাসরি মৃত্যু দান করেন অর্থাৎ সাধারণ মৃত জন্তু তা হারাম। তাদের এই বিতর্কের জবাবে আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়। [কুরতুবী] অতএব, এখানে منسك এর অর্থ হবে যবেহ করার নিয়ম। জবাবের সারমর্ম এই যে, মৃতজন্তু হালাল নয়, এটা এই উম্মত ও শরী‘আতেরই বৈশিষ্ট্য নয়; পূর্ববর্তী শরীআতসমূহেও তা হারাম ছিল। সুতরাং তোমাদের এই উক্তি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এই ভিত্তিহীন কথার উপর ভিত্তি করে নবীগণের সাথে বিতর্কে প্রবৃত্ত হওয়া একেবারেই নির্বুদ্ধিতা।
Tafsir Bayaan Foundation
আমি প্রত্যেক জাতির জন্য ইবাদাতের নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, তারা যার অনুসরণকারী। সুতরাং তারা যেন তোমার সাথে এ ব্যাপারে কোন বিতর্ক করতে না পারে। আর তুমি তোমার রবের দিকে আহবান কর। নিশ্চয় তুমি সরল পথেই রয়েছ।
Muhiuddin Khan
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে এবাদতের একটি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি, যা তারা পালন করে। অতএব তারা যেন এ ব্যাপারে আপনার সাথে বিতর্ক না করে। আপনি তাদেরকে পালনকর্তার দিকে আহবান করুন। নিশ্চয় আপনি সরল পথেই আছেন।
Zohurul Hoque
প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমরা নির্ধারিত করে দিয়েছি নিয়ম-কানুন যা তারা পালন করে, সুতরাং তারা যেন তোমার সঙ্গে এই ব্যাপারে বিতর্ক না করে, আর তোমার প্রভুর দিকে আহ্বান করো। নিঃসন্দেহ তুমিই তো রয়েছ সহজ-সঠিক পথের উপরে।