Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা হাজ্জ্ব আয়াত ৫২

Qur'an Surah Al-Hajj Verse 52

হাজ্জ্ব [২২]: ৫২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَمَآ اَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ مِنْ رَّسُوْلٍ وَّلَا نَبِيٍّ اِلَّآ اِذَا تَمَنّٰىٓ اَلْقَى الشَّيْطٰنُ فِيْٓ اُمْنِيَّتِهٖۚ فَيَنْسَخُ اللّٰهُ مَا يُلْقِى الشَّيْطٰنُ ثُمَّ يُحْكِمُ اللّٰهُ اٰيٰتِهٖۗ وَاللّٰهُ عَلِيْمٌ حَكِيْمٌ ۙ (الحج : ٢٢)

wamā
وَمَآ
And not
এবং না
arsalnā
أَرْسَلْنَا
We sent
আমরা পাঠিয়েছি
min
مِن
before you
থেকে
qablika
قَبْلِكَ
before you
তোমার পূর্ব
min
مِن
any
কোন
rasūlin
رَّسُولٍ
Messenger
রাসূলকে
walā
وَلَا
and not
আর না
nabiyyin
نَبِىٍّ
a Prophet
কোন নাবীকে
illā
إِلَّآ
but
এ ছাড়া যে
idhā
إِذَا
when
যখন
tamannā
تَمَنَّىٰٓ
he recited
আকাঙ্ক্ষা করেছে (তিলাওয়াত করেছে)
alqā
أَلْقَى
threw
ছুঁড়ে দিয়েছে
l-shayṭānu
ٱلشَّيْطَٰنُ
the Shaitaan
শয়তান (প্রতিবন্ধকতা)
فِىٓ
in
মধ্যে
um'niyyatihi
أُمْنِيَّتِهِۦ
his recitation
তার আকাঙ্ক্ষার (তিলাওয়াতে)
fayansakhu
فَيَنسَخُ
But Allah abolishes
তখন দূর করেছেন
l-lahu
ٱللَّهُ
But Allah abolishes
আল্লাহ
مَا
what
যা
yul'qī
يُلْقِى
throws
ছুঁড়ে দেয়
l-shayṭānu
ٱلشَّيْطَٰنُ
the Shaitaan
শয়তান
thumma
ثُمَّ
then
এরপর
yuḥ'kimu
يُحْكِمُ
Allah will establish
সুদৃঢ় করেন
l-lahu
ٱللَّهُ
Allah will establish
আল্লাহ
āyātihi
ءَايَٰتِهِۦۗ
His Verses
তাঁর আয়াতকে
wal-lahu
وَٱللَّهُ
And Allah
আর আল্লাহ
ʿalīmun
عَلِيمٌ
(is) All-Knower
জ্ঞানময়
ḥakīmun
حَكِيمٌ
All-Wise
প্রজ্ঞাময়

Transliteration:

Wa maaa arsalnaa min qablika mir Rasoolinnw wa laa Nabiyyin illaaa izaaa tamannaaa alqash Shaitaanu feee umniy yatihee fa yansakhul laahu maa yulqish Shaitaanu summa yuhkimul laahu aayaatih; wallaahu 'Aleemun Hakeem (QS. al-Ḥajj:52)

English Sahih International:

And We did not send before you any messenger or prophet except that when he spoke [or recited], Satan threw into it [some misunderstanding]. But Allah abolishes that which Satan throws in; then Allah makes precise His verses. And Allah is Knowing and Wise. (QS. Al-Hajj, Ayah ৫২)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

আমি তোমার পূর্বে যে সব রসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি তাদের কেউ যখনই কোন আকাঙ্ক্ষা করেছে তখনই শয়ত্বান তার আকাঙ্ক্ষায় (প্রতিবন্ধকতা, সন্দেহ-সংশয়) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়ত্বান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁর নিদর্শনসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। কারণ আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রেষ্ঠ হিকমতওয়ালা। (হাজ্জ্ব, আয়াত ৫২)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আমি তোমার পূর্বে যে সব রসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি তাদের কেউ যখনই আকাঙ্ক্ষা করেছে, তখনই শয়তান তার আকাঙ্ক্ষায় কিছু প্রক্ষিপ্ত করেছে। কিন্তু শয়তান যা প্রক্ষিপ্ত করে, আল্লাহ তা বিদূরিত করেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুদৃঢ় করেন।[১] আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[১] تَمَنى শব্দের একটি অর্থ আকাঙ্ক্ষা করেছে বা অন্তরে কল্পনা করেছে। দ্বিতীয় অর্থঃ পড়েছে বা আবৃত্তি করেছে। এই হিসাবে أُمنِية এর অর্থ হবে আকাঙ্ক্ষা, কল্পনা বা পাঠ। প্রথম অর্থ অনুযায়ী এর তাৎপর্য হবে, তার আকাঙ্ক্ষায় শয়তান বাধা সৃষ্টি করল; যাতে তা পূর্ণ না হয়। আর রসূল ও নবীদের আকাঙ্ক্ষা এটাই হয় যে, বেশি সংখ্যক মানুষ ঈমান আনয়ন করুক। কিন্তু শয়তান বাধা সৃষ্টি করে বেশি সংখ্যক মানুষকে ঈমান গ্রহণ করা হতে দূরে রাখতে চায়। দ্বিতীয় অর্থ অনুযায়ী এর তাৎপর্য দাঁড়াবে যে, যখনই আল্লাহর রসূল ও নবীগণ অহীলব্ধ কথা পড়ে শুনান, তখনই শয়তান উক্ত অহীর কথার সাথে নিজের কিছু কথা মিলিয়ে দিতে চেষ্টা করে বা লোকেদের মনে সংশয় সৃষ্টি করে। মহান আল্লাহ শয়তানের সমস্ত বাধা দূর করে অথবা তেলাঅতে তার কিছু মিলিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টাকে অকৃতকার্য করে অথবা শয়তানের প্রক্ষিপ্ত সন্দেহ ও সংশয় নিরসন করে নিজের কথা বা আয়াতকে সুদৃঢ় করেন। এর মাধ্যমে রসূল (সাঃ)-কে সান্ত্বনা দেওয়া হচ্ছে যে, এই শ্রেণীর কর্মকান্ড শয়তান শুধুমাত্র তোমার সাথেই করেনি; বরং তোমার পূর্ববর্তী সকল নবীদের সাথেই করেছে। সুতরাং তুমি কিছুমাত্র বিচলিত হবে না। শয়তানের ঐ সমস্ত চক্রান্ত ও দুরভিসন্ধি হতে যেমন আমি পূর্বের নবীদেরকে রক্ষা করেছি, তেমনি তুমিও সুরক্ষিত থাকবে এবং শয়তানের অনিচ্ছা সত্ত্বেও মহান আল্লাহ নিজের বাণীকে পাকাপোক্ত ও সুদৃঢ় করবেন। কোন কোন মুফাসসির এখানে غرانيق এর কেচ্ছা উল্লেখ করেন; কিন্তু সত্যানুসন্ধানী উলামাগণের নিকট তার কোন অস্তিত্ব নেই। আর সেই কারণে তা এখানে উল্লেখ করার কোন প্রয়োজন নেই।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর আমরা আপনার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী প্রেরণ করেছি [১], তাদের কেউ যখনই (ওহীর কিছু) তিলাওয়াত করেছে [২], তখনই শয়তান তাদের তিলাওয়াতে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে, কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ্‌ তা বিদূরিত করেন [৩]। তারপর আল্লাহ্‌ তাঁর আয়াতসমূহকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ্‌ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।

[১] এ থেকে জানা যায় যে, রাসূল ও নবী এক নয়; পৃথক পৃথক অর্থ রাখে। তবে এ পার্থক্য নির্ধারণে আলেমগণের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছেঃ

(এক) রাসূল বলা হয়- যার কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে এবং প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর নবী বলা হয়- যার কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে কিন্তু প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়নি। (দুই) রাসূল হলেন যাকে নতুন শরী‘আত দিয়ে পাঠানো হয়েছে এবং প্রচারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, আর নবী হলেন যাকে পূর্ববর্তী শরীয়াতের অনুসারী সংস্কারক হিসেবে পাঠানো হয়েছে। (তিন) রাসূল হলেন যাকে দ্বীনের বিরোধী কাছে জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে, আর নবী হলেন যাকে দ্বীনের স্বপক্ষীয় জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে সবচেয়ে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হল- রাসূল হলেনঃ যাকে দ্বীন-বিরোধী জাতি অর্থাৎ কাফের সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি মানুষকে তার কাছে যে শরী‘আত আছে সে শরী‘আতের দিকে আহ্বান করবেন। তাকে সে জাতির কেউ কেউ মিথ্যা প্ৰতিপন্ন করবে এবং তার সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে। তিনি প্রচার ও ভীতি প্রদর্শনের জন্য নির্দেশিত হবেন। কখনো কখনো তার সাথে কিতাব থাকবে আর এটাই স্বাভাবিক, আবার কখনো কখনো রাসূলের সাথে কিতাব থাকবে না। কখনো তার শরী‘আত হবে সম্পূর্ণ নতুন, আবার কখনো তার শরী‘আত হবে পূর্ববতী শরী‘আতের পরিপূরক হিসেবে। অর্থাৎ সেখানে বাড়তি বা কমতি থাকবে। আর নবী হলেনঃ যার কাছে ওহী প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি মুমিন সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হবেন। পূর্ব শরী‘আত অনুযায়ী হুকুম দেবেন। পূর্ব শরী‘আতকে পুনর্জীবিত করবেন এবং সেদিকে মানুষকে আহ্বান করবেন। তাকে প্রচার ও ভীতি প্রদর্শনের নির্দেশও দেয়া হবে। তার জন্য নতুন কিতাব থাকাও অসম্ভব নয়। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন, ইবন তাইমিয়্যাহ, আন-নুবুওয়াতঃ ২/৭১৮; ইবনুল কাইয়্যেম, তরীকুল হিজরাতাইন, ৩৪৯; ইবন আবিল ইযয, শারহুত তাহাভীয়্যাঃ ১৫৮; ড. উমর সুলাইমান আল-আশকার, আর-রুসুল ওয়ার রিসালাতঃ ১৪-১৫]

[২] মূল শব্দটি হচ্ছে, تمني (তামান্না)। আরবী ভাষায় এ শব্দটি দু’টি অর্থে ব্যবহৃত হয়। একটি অর্থ হচ্ছে কোন জিনিসের আশা-আকাংখা করা। [ফাতহুল কাদীর] দ্বিতীয় অর্থ হচ্ছে তিলাওয়াত অর্থাৎ কিছু পাঠ করা। তবে আয়াতে تمني শব্দের অর্থ قرأ অর্থাৎ আবৃত্তি করে এবং أمنية শব্দের অর্থ قراءة অর্থাৎ আবৃত্তি করা। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আরবী অভিধানে এ অর্থ প্রসিদ্ধ ও সুবিদিত। আয়াতের অর্থ হল- আল্লাহ্‌ তা'আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পূর্বে যখনই কোন নবী বা রাসূল পাঠিয়েছেন, তিনি যখন মানুষকে উপদেশ দেয়ার জন্য আদেশ-নিষেধ প্রদান করতেন, তখনি সেখানে শয়তান মানুষের কানে তার ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তমূলক এমন কথাবার্তা প্রবিষ্ট করত যা নবীর কথা ও পড়ার সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়। আর আল্লাহ্‌ যেহেতু নবী-রাসূলদেরকে উম্মতের জন্য প্রচার করা বিষয়সমূহ এবং তাঁর ওহীর হেফাযত ও সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান করেছেন, সেহেতু তিনি শয়তানের সে সমস্ত কারসাজি ও ষড়যন্ত্রকে স্থায়িত্ব দেন না; বরং অন্ধুরেই বিনষ্ট করে দেন। ফলে কোনটা আল্লাহ্‌র আয়াত আর কোনটা তাঁর আয়াত নয়, তা সুস্পষ্ট হয়ে পড়ে। এভাবেই আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর আয়াতসমূহের হেফাযত করে থাকেন। মূলতঃ আল্লাহ্‌ প্রবল পরাক্রান্ত মহাশক্তিধর। তিনি একদিকে তাঁর সুনির্দিষ্ট হেকমত ও প্রজ্ঞার কারণে শয়তানের পক্ষ থেকে তা হতে দেন। অপরদিকে তাঁর শক্তিতে তাঁর ওহীর হেফাযত করেন। যাতে করে যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে এবং কঠোর হৃদয়ের অধিকারী মানুষদের মনে শয়তানের এ বাক্যগুলো ফেৎনা সৃষ্টি করতে পারে। এর বিপরীতে যাদের কাছে রয়েছে ইলম বা জ্ঞান, তারা এ দু’য়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে এবং শয়তানের প্রক্ষিপ্ত বিষয় ত্যাগ করে একমাত্র আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। বরং এতে তাদের অন্তরে ঈমান বর্ধিত হয় এবং তারা আল্লাহ্‌র জন্য বিনম্র ও বিনয়ী হয়ে পড়ে। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর; সা‘দী থেকে সংক্ষেপিত]

[৩] অর্থাৎ তিনি জানেন শয়তান কোথায় কি বিঘ্ন সৃষ্টি করেছে এবং তার কি প্রভাব পড়েছে। তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞা শয়তানী ফিতনার প্রতিবিধান করে থাকে। তিনি শয়তানী চক্রান্তকে কখনো সফল হতে দেন না। প্রক্ষিপ্ত অংশ বাতিল করে দেন। [দেখুন, ইবন কাসীর]

Tafsir Bayaan Foundation

আর আমি তোমার পূর্বে যে রাসূল কিংবা নবী পাঠিয়েছি, সে যখনই (ওহীকৃত বাণী) পাঠ করেছে, শয়তান তার পাঠে (কিছু) নিক্ষেপ করেছে। কিন্তু শয়তান যা নিক্ষেপ করে আল্লাহ তা মুছে দেন। অতঃপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সুদৃঢ় করে দেন। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, অতি প্রজ্ঞাময়।

Muhiuddin Khan

আমি আপনার পূর্বে যে সমস্ত রাসূল ও নবী প্রেরণ করেছি, তারা যখনই কিছু কল্পনা করেছে, তখনই শয়তান তাদের কল্পনায় কিছু মিশ্রণ করে দিয়েছে। অতঃপর আল্লাহ দূর করে দেন শয়তান যা মিশ্রণ করে। এরপর আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহকে সু-প্রতিষ্ঠিত করেন এবং আল্লাহ জ্ঞানময়, প্রজ্ঞাময়।

Zohurul Hoque

আর তোমার আগে আমরা কোনো রসূল পাঠাই নি আর কোনো নবীও নয় এ ভিন্ন যে যখনি তিনি আকাঙ্খা করেছেন তখন শয়তান তাঁর আকাঙ্খা সম্পর্কে কুমন্ত্রণা দিয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্ বাতিল করে দেন শয়তান যেসব কুমন্ত্রণা দেয়, তখন আল্লাহ্ তাঁর নির্দেশাবলী প্রতিষ্ঠিত করেন। আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাতা, পরমজ্ঞানী,