Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা হাজ্জ্ব আয়াত ৪১

Qur'an Surah Al-Hajj Verse 41

হাজ্জ্ব [২২]: ৪১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اَلَّذِيْنَ اِنْ مَّكَّنّٰهُمْ فِى الْاَرْضِ اَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتَوُا الزَّكٰوةَ وَاَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِۗ وَلِلّٰهِ عَاقِبَةُ الْاُمُوْرِ (الحج : ٢٢)

alladhīna
ٱلَّذِينَ
Those who
যারা (সেই লোক)
in
إِن
if
যদি
makkannāhum
مَّكَّنَّٰهُمْ
We establish them
তাদেরকে আমরা ক্ষমতা দিই
فِى
in
মধ্যে
l-arḍi
ٱلْأَرْضِ
the land
পৃথিবীর
aqāmū
أَقَامُوا۟
they establish
তারা প্রতিষ্ঠা করে
l-ṣalata
ٱلصَّلَوٰةَ
the prayer
সালাত
waātawū
وَءَاتَوُا۟
and they give
ও তারা দেয়
l-zakata
ٱلزَّكَوٰةَ
zakah
জাকাত
wa-amarū
وَأَمَرُوا۟
and they enjoin
আর তারা নির্দেশ দেয়
bil-maʿrūfi
بِٱلْمَعْرُوفِ
the right
ব্যাপারে সৎকাজের
wanahaw
وَنَهَوْا۟
and forbid
ও তারা নিষেধ করে
ʿani
عَنِ
from
হ'তে
l-munkari
ٱلْمُنكَرِۗ
the wrong
অসৎ কাজ
walillahi
وَلِلَّهِ
And for Allah
আর আল্লাহরই হাতে
ʿāqibatu
عَٰقِبَةُ
(is the) end
পরিণতি (চূড়ান্ত)
l-umūri
ٱلْأُمُورِ
(of) the matters
সব ব্যাপারের

Transliteration:

Allazeena im makkan naahum fil ardi aqaamus Salaata wa aatawuz Zakaata wa amaroo bilma'roofi wa nahaw 'anil munkar; wa lillaahi 'aaqibatul umoor (QS. al-Ḥajj:41)

English Sahih International:

[And they are] those who, if We give them authority in the land, establish prayer and give Zakah and enjoin what is right and forbid what is wrong. And to Allah belongs the outcome of [all] matters. (QS. Al-Hajj, Ayah ৪১)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

(এরা হল) যাদেরকে আমি যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা নামায প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে, সৎ কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজে নিষেধ করে, সকল কাজের শেষ পরিণাম (ও সিদ্ধান্ত) আল্লাহর হাতে নিবদ্ধ। (হাজ্জ্ব, আয়াত ৪১)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আমি তাদেরকে পৃথিবীতে (রাজ)ক্ষমতা দান করলে তারা নামায কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎকার্য হতে নিষেধ করে।[১] আর সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর আয়ত্তে। [২]

[১] আলোচ্য আয়াতে ইসলামী রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। যার বাস্তবায়ন খেলাফতে রাশেদা ও প্রথম শতাব্দীর ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। তাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঐ সমস্ত উদ্দেশ্য সাধন করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর যার কারণে তাঁদের রাজ্যে শান্তি ও নিরাপত্তা বিস্তার লাভ করেছিল, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যও ছিল এবং মুসলিমরা মাথা উঁচু করে জীবন যাপন করতে পেরেছিলেন। আজও সউদী আরবে -- আলহামদুলিল্লাহ -- ঐ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করার প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া হয়। যার বর্কতে পৃথিবীর মধ্যে সউদী আরব শান্তি ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে একটি শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ দেশ বলে পরিচিত। বর্তমানে ইসলামী রাষ্ট্রগুলোতে সফল রাষ্ট্র কায়েম করার জন্য বড় হৈচৈ ও হাঙ্গামা শোনা যায় এবং প্রত্যেক ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রনায়করা সফল রাষ্ট্রের দাবিও করে থাকেন। কিন্তু প্রত্যেক ইসলামী রাষ্ট্রে অশান্তি, বিশৃংখলা, হত্যা, লুঠতরাজ, দুর্নীতি ও অবনতি ব্যাপক হয়ে আছে এবং অর্থনৈতিক কাঠামো দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে চলেছে। এর একমাত্র কারণ এই যে, তাঁরা আল্লাহ প্রদত্ত বিধান না মেনে পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষ (ধর্মহীন) বিধান দ্বারা সাফল্য অর্জন করতে চান। যা আকাশ স্পর্শ করা ও বাতাসকে মুষ্ঠিবদ্ধ করার মত অবাস্তব অপচেষ্টা। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম দেশগুলিতে কুরআনের বর্ণিত নিয়মানুসারে নামায প্রতিষ্ঠা ও যাকাত প্রদান ব্যবস্থা, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে বাধাদানের বিধান বাস্তবায়ন না করা হবে এবং এ লক্ষ্যকে রাজনীতির অন্যান্য কার্যের উপর অগ্রাধিকার না দেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সফল রাষ্ট্র কায়েম করার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

[২] প্রত্যেক ব্যাপার আল্লাহর আজ্ঞাধীন এবং তাঁর তদবীরের মুখাপেক্ষী। তাঁর আজ্ঞা, হুকুম ও অনুমতি বিনা এ বিশ্বের কোন গাছের একটি পাতাও নড়ে না। সুতরাং কে আল্লাহর আজ্ঞা ও নিয়ম-নীতি হতে বিচ্যুত হয়ে সত্যিকার সফলতা ও কৃতকার্যতা অর্জন করতে পারে?

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তারা [১] এমন লোক যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে সালাত কায়েম করবে [২], যাকাত দেবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধ করবে; আর সব কাজের চুড়ান্ত পরিণতি আল্লাহ্‌র ইখতিয়ারে।

[১] এই আয়াতে তাদেরই বিশেষণ উল্লেখ করা হয়েছে, যাদেরকে তাদের ভিটেমাটি থেকে বিনা কারণে উচ্ছেদ করা হয়েছে। এজন্যেই আবুল আলীয়া বলেন, এখানে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর] হাসান বসরী বলেন, তারা হচ্ছে এ উম্মতের সে সমস্ত লোক, যারা কোন জায়গা জয় করলে সেখানে সালাত কায়েম করে। ইবন আবী নাজীহ বলেন, এখানে শাসকদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। দাহহাক বলেন, এটা এমন এক শর্ত যা আল্লাহ্‌ তা'আলা যাদেরকে রাষ্ট্র ক্ষমতা প্ৰদান করেছেন তাদের উপর আরোপ করেছেন। [কুরতুবী] উমর ইবন আবদুল আযীয বলেন, এটি শুধু গভর্ণরের দায়িত্ব নয়, এটা গভর্ণর ও যাদের উপর তাকে গভর্ণর বানানো হয়েছে তাদের সবার দায়িত্ব। আমি কি তোমাদেরকে গভর্ণরের উপর কি দায়িত্ব আর গভর্ণরের জন্য তোমাদের উপর কি দায়িত্ব সেটা জানিয়ে দেব না? গভর্ণরের দায়িত্ব হচ্ছে, তোমাদের উপর আল্লাহ্‌র হকের ব্যাপারে তোমাদেরকে পাকড়াও করা। আর তোমাদের কারও দ্বারা অপর কারও আক্রান্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে তার হক আদায় করা। আর যতটুকু সম্ভব তোমাদেরকে সহজ সরল সঠিক পথে পরিচালিত করা। আর তোমাদের উপর ওয়াজিব হচ্ছে, আনুগত্য করা। তবে জোর করে নয়। অনুরূপভাবে প্রকাশ্য কথার বিপরীতে গোপনে ভিন্ন কথা না বলা। [ইবন কাসীর] আতিয়্যাহ আল-আওফী বলেন, এ আয়াতটি অন্য একটি আয়াতের মত। যেখানে বলা হয়েছে, “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ্‌ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে যমীনে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে”। [সূরা আন-নূরঃ ৫৫]

আয়াতে বলা হয়েছে যে, আমি তাদেরকে যমীনে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা তাদের ক্ষমতাকে সালাত কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, সৎকর্মের আদেশ ও অসৎকর্মে নিষেধের কাজে প্রয়োগ করবে। এই আয়াত মদীনায় হিজরতের অব্যবহিত পরে তখন নাযিল হয়, যখন মুসলিমদের কোথাও পূর্ণ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল না। কিন্তু আল্লাহ্‌ তা'আলা তাদের সম্পর্কে পূর্বেই বলে দিলেন যে, তারা ক্ষমতা লাভ করলে তা দ্বীনের উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ কার্য সম্পাদনে ব্যয় করবে। এ কারণেই ওসমান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ ثَنَاءٌ قَبْلَ بَلاَء অর্থাৎ আল্লাহ্‌ তা'আলার এই এরশাদ কর্ম অস্তিত্ব লাভ করার পূর্বেই কর্মীদের গুণ ও প্রশংসা করার শামিল। [আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর] এরপর আল্লাহ্‌ তা'আলার এই নিশ্চিত সুসংবাদ দুনিয়াতে বাস্তব রূপ লাভ করেছে। চারজন খোলাফায়ে রাশেদীন এ আয়াতের বিশুদ্ধ প্রতিচ্ছবি ছিলেন। [কুরতুবী] আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদেরকেই ক্ষমতা দান করলেন এবং কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণীর অনুরূপ তাদের কর্ম ও কীর্তি বিশ্ববাসীকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, তারা তাদের ক্ষমতা এ কাজেই ব্যয় করেন। তারা সালাত প্রতিষ্ঠিত করেন, যাকাতের ব্যবস্থা সুদৃঢ় করেন, সৎকাজের প্রবর্তন করেন এবং মন্দ কাজের পথ রুদ্ধ করেন।

[২] সালাত কায়েম করার অর্থ হলোঃ সময়মত, সালাতের সীমারেখা, আরকান ও আহকামসহ জামা‘আতের সাথে আদায় করা।

Tafsir Bayaan Foundation

তারা এমন যাদেরকে আমি যমীনে ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে।

Muhiuddin Khan

তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ?2470;ান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভূক্ত।

Zohurul Hoque

এরাই, -- আমরা যদি এদের পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা করি তাহলে এরা নামায কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে ও সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহ্‌রই এখতিয়ারে।