Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা হাজ্জ্ব আয়াত ৩৩

Qur'an Surah Al-Hajj Verse 33

হাজ্জ্ব [২২]: ৩৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

لَكُمْ فِيْهَا مَنَافِعُ اِلٰٓى اَجَلٍ مُّسَمًّى ثُمَّ مَحِلُّهَآ اِلَى الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ ࣖ (الحج : ٢٢)

lakum
لَكُمْ
For you
জন্যে তোমাদের
fīhā
فِيهَا
therein
মধ্যে এর
manāfiʿu
مَنَٰفِعُ
(are) benefits
নানা উপকার
ilā
إِلَىٰٓ
for
পর্যন্ত
ajalin
أَجَلٍ
a term
সময়
musamman
مُّسَمًّى
appointed;
নির্দিষ্ট
thumma
ثُمَّ
then
এরপর
maḥilluhā
مَحِلُّهَآ
their place of sacrifice
তার (কুরবানির জায়গা)
ilā
إِلَى
(is) at
নিকট (অবস্থিত)
l-bayti
ٱلْبَيْتِ
the House
ঘরের
l-ʿatīqi
ٱلْعَتِيقِ
the Ancient
প্রাচীন

Transliteration:

Lakum feehaa manaafi'u ilaaa ajalim musamman summa mahilluhaaa ilal Baitil 'Ateeq (QS. al-Ḥajj:33)

English Sahih International:

For you therein [i.e., the animals marked for sacrifice] are benefits for a specified term; then their place of sacrifice is at the ancient House. (QS. Al-Hajj, Ayah ৩৩)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

এতে (অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে) তোমাদের জন্য নানান উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত (কুরবানীর জায়গায় পৌঁছা পর্যন্ত তোমরা এই জন্তুগুলোর দ্বারা উপকৃত হতে পার), সর্বশেষে এগুলোর কুরবানীর স্থান হচ্ছে প্রাচীন ঘরের নিকট। (হাজ্জ্ব, আয়াত ৩৩)

Tafsir Ahsanul Bayaan

এ (পশু)গুলোতে তোমাদের জন্য নানাবিধ উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কালের জন্য; [১] অতঃপর ওগুলির কুরবানীর স্থান প্রাচীন গৃহের নিকট। [২]

[১] উক্ত উপকার লাভ হয় সওয়ার হয়ে, তার দুধ পান করে, তার লোম ইত্যাদি সংগ্রহ করে এবং তার বংশ-বিস্তারের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট কাল বলতে যবেহ করার সময়, অর্থাৎ যবেহ না হওয়া পর্যন্ত উক্ত উপকার তোমরা গ্রহণ করে থাকো। এখান হতে বুঝা গেল যে, কুরবানীর জন্তু দ্বারা যবেহ না হওয়া পর্যন্ত উপকার নেওয়া যেতে পারে। সহীহ হাদীসেও এর সমর্থন মিলে। এক ব্যক্তি কুরবানীর জন্তু সাথে নিয়ে যাচ্ছিল। নবী (সাঃ) তাকে বললেন, "ওর উপর সওয়ার হও।" সে বলল, 'এটি কুরবানীর পশু।' নবী (সাঃ) বললেন, "তুমি ওর উপর সওয়ার হও।" (বুখারী, হজ্জ অধ্যায়)

[২] হালাল বা কুরবানী হওয়ার স্থান, অর্থাৎ যেখানে তা যবেহ করে হালাল বা কুরবানী করা হয়। অর্থাৎ, এই পশুগুলো কা'বাগৃহ ও হারামে পৌঁছে যায় অতঃপর হজ্জের কার্যাদি সম্পন্ন করে সেখানে আল্লাহর নামে কুরবানী করে দেওয়া হয়। সুতরাং উপরোক্ত উপকার গ্রহণের পথ বন্ধ হয়ে যায়। আর যদি তা শুধু মাত্র হারামের জন্য 'হাদ্ই' হয়, তাহলে হারামে পৌঁছেই তা যবেহ করে দেওয়া হয় এবং মক্কার গরীবদের মাঝে তার গোশত বিলি করে দেওয়া হয়।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

এ সব চতুষ্পদ জন্তুগুলোতে তোমাদের জন্য নানাবিধ উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত [১]; তারপর তাদের যবাইয়ের স্থান হচ্ছে প্রাচীন ঘরটির কাছে [২]।

[১] পূর্বের আয়াতে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাকে মনের তাকওয়ার আলামত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর যেহেতু হাদঈ তথা হজ্জ অথবা ওমরাহকারী ব্যক্তি যবেহ করার জন্য যে জন্তু সাথে নিয়ে যায়, তাও হজ্জের একটি নিদর্শন। যেমন কুরআন নিজেই পরবর্তী পর্যায়ে বলছেঃ “এবং এ সমস্ত হাদঈর উটকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত করেছি।" [৩৬] অর্থাৎ হাজীদের সাথে আনা হাদঈর পশুও আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তাই বলে কি এ সমস্ত চতুষ্পদ জন্তু থেকে দুধ, সওয়ারী, মাল পরিবহণ ইত্যাদি সর্বপ্রকার উপকার লাভ করা কি হালাল নয়? আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান দেখানোর যে হুকুম ওপরে দেয়া হয়েছে তার দাবী কি এই যে, কুরবানীর পশুগুলোকে যখন আল্লাহর ঘরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাদেরকে কোন ভাবে ব্যবহার করা যাবে না? তাদের পিঠে চড়া অথবা পিঠে জিনিসপত্র চাপিয়ে দেয়া কিংবা তাদের দুধ পান করা কি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর প্রতি সম্মান দেখাবার বিরোধী? আরবের লোকেরা একথাই মনে করতো। তারা এ পশুগুলোকে একেবারেই আরোহীশূন্য অবস্থায় সুসজ্জিত করে নিয়ে যেতো। পথে তাদের থেকে কোন প্রকার লাভবান হওয়া তাদের দৃষ্টিতে ছিল পাপ। এ ভুল ধারণা দূর করার জন্য এখানে বলা হচ্ছে, জবাই করার জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তোমরা এ পশুদের থেকে লাভবান হতে বা উপকার অর্জন করতে পারো। এটা আল্লাহর নিদর্শনালীর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের বিরোধী নয়। এ ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস রয়েছে। [দেখুন- বুখারীঃ ১৬৯০, মুসলিমঃ ২৩;২৩, ১৩২৪]

[২] এখানে الْبَيْتِ الْعَتِيْقِ (প্রাচীন গৃহ) বলতে কা'বা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এর দ্বারা কি শুধু কা'বা উদ্দেশ্য না কি পূর্ণ হারাম উদ্দেশ্য ?

যদি শুধু কা'বা উদ্দেশ্য নেয়া হয় তখন এর অর্থ হবে, হজের কর্মকাণ্ড, আরাফায় অবস্থান, পাথর নিক্ষেপ, সায়ী ইত্যাদি সবই বাইতুল্লাহর তাওয়াফে ইফাদার মাধ্যমে শেষ হবে। আর তখন محل শব্দের অর্থ হবে, মুহরিমের জন্য ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার স্থান। [কুরতুবী] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে এ তাফসীরটি বর্ণিত আছে। তিনি বলেছেন, কেউ বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার সাথে সাথে হালাল হয়ে যাবে। তারপর তিনি এ আয়াতাংশ তেলাওয়াত করলেন। [ইবন কাসীর] ইবনুল আরাবী এখানে এ অর্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। কারণ, আয়াতে স্পষ্টভাবে কা'বার কথা আছে। [আহকামুল কুরআন; কুরতুবী]

আর যদি 'প্রাচীন গৃহ' বলে পূর্ণ হারাম এলাকা বোঝানো হয়ে থাকে, তখন আয়াতের অর্থ হবে, হাদঈ কা'বার কাছে পৌছতে হবে। আর - অর্থ হাদঈর জন্তুর মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার স্থান বা যবেহ করার স্থান বোঝানো হয়েছে। কারণ, হারাম বায়তুল্লাহরই বিশেষ আঙিনা। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ এই যে, হাদঈর জন্তু যবেহ করার স্থান বায়তুল্লাহর সন্নিকট; অর্থাৎ সম্পূর্ণ হারাম এলাকা। এতে বোঝা গেল যে, হারাম এলাকার ভিতরে হাদঙ্গ যবোহ করা জরুরী, হারাম এলাকার বাইরে জায়েয নয়। হারাম এলাকার যে কোন স্থানে হাদঈর প্রাণী যবোহ করা যাবে। সে হিসেবে মক্কার হারাম এলাকা, মিনা, মুযদালফার যেখানেই হাদঈর প্রাণী যবোহ করা হোক, তা শুদ্ধ হবে। শুধু কা'বা ঘরের কাছে হতে হবে এমন কথা নেই। আয়াতের অর্থ এই নয় যে, কাবাঘরে বা মসজিদে হারামে হাদঈ জবাই করতে হবে বরং এর অর্থ হচ্ছে হারামের সীমানার মধ্যে হাদঈ জবাই করতে হবে।

Tafsir Bayaan Foundation

এসব চতুষ্পদ জন্তুতে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে, তারপর এগুলোর কুরবানীর স্থান হবে প্রাচীন ঘরের নিকট।

Muhiuddin Khan

চতুস্পদ জন্তুসমূহের মধ্যে তোমাদের জন্যে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত উপকার রয়েছে। অতঃপর এগুলোকে পৌছাতে হবে মুক্ত গৃহ পর্যন্ত।

Zohurul Hoque

এদের মধ্যে তোমাদের জন্য উপকার রয়েছে এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত, তারপর তাদের কুরবানির স্থান হচ্ছে প্রাচীন গৃহের সন্নিকটে।