Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আম্বিয়া আয়াত ৪৭

Qur'an Surah Al-Anbya Verse 47

আম্বিয়া [২১]: ৪৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيٰمَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْـًٔاۗ وَاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاۗ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ (الأنبياء : ٢١)

wanaḍaʿu
وَنَضَعُ
And We set
এবং স্থাপন করবো আমরা
l-mawāzīna
ٱلْمَوَٰزِينَ
the scales
মানদন্ডসমূহ
l-qis'ṭa
ٱلْقِسْطَ
(of) the justice
ন্যায়ের
liyawmi
لِيَوْمِ
for (the) Day
জন্য দিনের
l-qiyāmati
ٱلْقِيَٰمَةِ
(of) the Resurrection
ক্বিয়ামাতের
falā
فَلَا
so not
ফলে না
tuẓ'lamu
تُظْلَمُ
will be wronged
অবিচার করা হবে
nafsun
نَفْسٌ
any soul
কাউকে
shayan
شَيْـًٔاۖ
(in) anything
কিছুমাত্রও
wa-in
وَإِن
And if
এবং যদি
kāna
كَانَ
(there) be
হয় (কৃতকর্ম)
mith'qāla
مِثْقَالَ
weight
পরিমাণও
ḥabbatin
حَبَّةٍ
(of) a seed
একদানা
min
مِّنْ
of
থেকে
khardalin
خَرْدَلٍ
a mustard
সরিষার
ataynā
أَتَيْنَا
We will bring
আমরা আসবো
bihā
بِهَاۗ
[with] it
নিয়ে তাকে (সামনে)
wakafā
وَكَفَىٰ
And sufficient
এবং যথেষ্ট
binā
بِنَا
(are) We
আমরাই
ḥāsibīna
حَٰسِبِينَ
(as) Reckoners
হিসাবগ্রহণকারীরূপে

Transliteration:

Wa nada'ul mawaazeenal qista li Yawmil Qiyaamati falaa tuzlamu nafsun shai'aa; wa in kaana misqaala habbatim min khardalin atainaa bihaa; wa kafaa binaa haasibeen (QS. al-ʾAnbiyāʾ:47)

English Sahih International:

And We place the scales of justice for the Day of Resurrection, so no soul will be treated unjustly at all. And if there is [even] the weight of a mustard seed, We will bring it forth. And sufficient are We as accountant. (QS. Al-Anbya, Ayah ৪৭)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

আর কিয়ামাত দিবসে আমি সুবিচারের মানদন্ড স্থাপন করব, অতঃপর কারো প্রতি এতটুকুও অন্যায় করা হবে না। (কর্ম) সরিষার দানা পরিমাণ হলেও তা আমি হাযির করব, হিসাব গ্রহণে আমিই যথেষ্ট। (আম্বিয়া, আয়াত ৪৭)

Tafsir Ahsanul Bayaan

কিয়ামত দিবসে আমি স্থাপন করব ন্যায় বিচারের দাঁড়িপাল্লাসমূহ; সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণ ওজনের হয়, তবুও তা আমি উপস্থিত করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট। [১]

[১] مَوَازِين শব্দটি مِيزان এর বহুবচন। এর অর্থঃ দাঁড়িপাল্লাসমূহ। কিয়ামতের দিন পাপ-পুণ্য ওজন করার জন্য কয়েকটি দাঁড়িপাল্লা হবে, নতুবা দাঁড়িপাল্লা তো একটিই হবে, তবে ওর বিশেষ মহত্তের জন্য বা বিভিন্ন ধরনের আমলের দিকে লক্ষ্য রেখে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। মানুষের আমল ও কর্মসমূহ অতীন্দ্রীয়, তা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ও অনুভূত নয়, তার বাহ্যিক কোন রূপ বা অস্তিতত্ত্ব নেই, তাহলে তার ওজন কিভাবে সম্ভব? আধুনিক যুগে এই প্রশ্নের কোন গুরুত্ব নেই। যেহেতু বর্তমানে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার এ প্রশ্নের উত্তর সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রের সাহায্যে নিরাকার তথা ওজনহীন বস্তুও ওজন করা যাচ্ছে। যখন মানুষের দ্বারা এটা সম্ভব তখন মহান আল্লাহর জন্য আকারহীন বা ওজনহীন অশরীরী জিনিসকে ওজন করা কেমন করে কঠিন হতে পারে? তাঁর মহিমা হল, তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। এ ছাড়া এও হতে পারে যে, (ন্যায়-বিচার করতে) মানুষকে দেখানোর জন্য তিনি নিরাকার বস্তুকে সাকার বানাবেন এবং তা ওজন করবেন। যেমন হাদীসসমূহে কিছু কর্মের সাকার হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। উদাহরণ সবরূপঃ কিয়ামতের দিন কুরআন এক ফ্যাকাসে বর্ণের শীর্ণ পুরুষের বেশে কুরআন তেলাঅতকারীর সামনে উপস্থিত হবে। সে জিজ্ঞেস করবে, 'তুমি কে?' সে বলবে, 'আমি কুরআন যা তুমি রাত্রি জাগরণ করে পাঠ করতে ও দিনে পিপাসার্ত অবস্থায় পাঠ করতে।' (আহমাদ ৫/৩৪৮, ৩৫২, ইবনে মাজাহ) অনুরূপভাবে মুমিনের কবরে তার সৎকর্ম এক সুন্দর সুরভিত যুবকের রূপ ধরে আসবে এবং কাফের ও মুনাফিকদের কাছে এর বিপরীত রূপ নিয়ে। (আহমাদ ৫/২৮৭) এর বিস্তারিত ব্যখ্যা জানার জন্য দেখুন সূরা আ'রাফের ৭;৯ নং আয়াতের টীকা।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর কিয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের পাল্লাসমূহ স্থাপন করব [১], সুতরাং কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না এবং কাজ যদি শস্য দানা পরিমাণ ওজনেরও হয় তবুও তা আমরা উপস্থিত করব; আর হিসেব গ্রহণকারীরূপে আমরাই যথেষ্ট।

[১] লক্ষণীয় যে, এখানে موازين শব্দটি ميزان শব্দের বহুবচন। [কুরতুবী] অর্থ ওজনের যন্ত্র তথা দাঁড়িপাল্লা। আয়াতের অর্থ, দাঁড়িপাল্লাসমূহ স্থাপন করা হবে। এখন প্রশ্ন হলো, মানদন্ড কি একটি না বহু? এখানে আয়াতে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে দেখে কোন কোন তফসীরবিদ বলেন যে, আমল ওজন করার জন্য অনেকগুলো দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। আমলের শ্রেণী অনুসারে অনেক দাঁড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে। অথবা, প্রত্যেকের জন্যে ভিন্ন ভিন্ন দাঁড়িপাল্লা হবে। আবার এটাও হতে পারে যে, একই মীযানকে বহু হিসেবে দেখানো হয়েছে। [কুরতুবী]

কিন্তু অধিকাংশ আলেমগণের মতে, দাঁড়িপাল্লা একটিই হবে। যার থাকবে দু'টি পাল্লা। যে দু'টি পাল্লা সবাই দেখতে পাবে, অনুভব করতে পারবে। তবে বহুবচনে ব্যক্ত করার কারণ হয়ত এটাই যে, মীযানের পাল্লাতে যেমনিভাবে বান্দার আমলনামা ওজন করা হবে তেমনিভাবে বান্দার আমলকেও সরাসরি ওজন করা হবে এমনকি বান্দাকেও ওজন করা হবে। সে হিসেবে বহুবচন ব্যবহার করা হয়েছে। [শারহুত তাহাভীয়্যাহ]

বান্দার আমলনামা ওজন করা হবে তার প্রমাণঃ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ আমার উম্মতের মধ্যে একলোককে কেয়ামতের দিন সমস্ত সৃষ্টির সামনে পৃথক করে একান্তে ডেকে তার জন্য ৯৯ টি দপ্তর বের করবেন যার প্রত্যেকটি চোখ যতদুর যায় তত লম্বা হবে। তারপর তাকে বলবেনঃ “তুমি কি এগুলো অস্বীকার করা? আমার রক্ষণাবেক্ষণকারী লেখক ফেরেশতাগণ কি তোমার উপর অত্যাচার করেছে? সে বলবেঃ না, হে প্ৰভু! তারপর আল্লাহ বলবেনঃ তোমার কি কোন ওজর বা সৎকর্ম আছে? লোকটি তখন হতভম্ব হয়ে গিয়ে বলবেঃ না, হে প্ৰভু! তখন আল্লাহ বলবেনঃ অবশ্যই তোমার একটি সৎকর্ম আছে, তোমার উপর আজ কোন যুলুম করা হবে না। তারপর তার জন্য একটি কার্ড বের করা হবে যাতে আছেঃ

أَشْهَدُأن لَّا إلٰه إلّا اللّٰهٗ، وأَنَّ مُحَمّدًا عَبْدُه وَ رَسُلُه

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন হক্ক ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। ” তারপর আল্লাহ বলবেনঃ সেটা নিয়ে আস। তখন লোকটি বলবেঃ হে প্ৰভু! ঐ সমস্ত দপ্তরের বিপরীতে এ কার্ড কি ভূমিকা রাখতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেনঃ তোমার উপর যুলুম করা হবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তারপর সে সমস্ত দপ্তর এক পাল্লায় এবং কার্ডটি আরেক পাল্লায় রাখা হবে। রাসূল বললেনঃ আর তাতেই সমস্ত দপ্তর উপরে উঠে যাবে এবং কার্ডটি ভারী হয়ে যাবে। আল্লাহর নামের বিপরীতে কোন কিছু ভারী হতে পারে না। ” [তিরমিয়ীঃ ২৬৩৯, ইবনে মাজাহঃ ৪৩০০] এ হাদীস দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে, বান্দার আমলনামা ওজন করা হবে।

বান্দার আমলই সরাসরি ওজন করার প্রমাণঃ হাদীসে এসেছেঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “দুটি বাক্য এমন যা দয়াময়ের কাছে প্রিয়, জিহবার উপর হাল্কা, মীযানের মধ্যে ভারী, আর তা হলোঃ সুবাহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি (আল্লাহর পবিত্ৰতা ঘোষণা করছি তাঁর প্রশংসা সহকারে), "সুবহানাল্লাহিল 'আজীম' (মহান আল্লাহ কতই না পবিত্র)”। [বুখারীঃ ৭৫৬৩, মুসলিমঃ ২৬৯৪]

স্বয়ং আমলকারীকেও ওজন করা হবেঃ তার স্বপক্ষে প্রমাণ আল্লাহর বাণীঃ “সুতরাং আমরা তাদের জন্য কিয়ামতের দিন কোন ওজন স্থির করব না”। [সূরা আল-কাহাফঃ ১০৫] অন্য এক হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু ‘আরাক’ গাছে উঠলেন, তিনি ছিলেন সরু গোড়ালী বিশিষ্ট মানুষ, ফলে বাতাস তাকে নাড়াচ্ছিল তাতে উপস্থিত লোকেরা হেসে উঠল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেনঃ “তোমরা হাসছ কেন?” তারা বললঃ হে আল্লাহর নবী! তার সরু গোড়ালীর কারণে। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, এ দু'টি মীযানের উপর উহুদ পাহাড়ের চেয়েও বেশী ভারী”। [মুসনাদে আহমাদঃ ১/৪২০-৪;২১, মুস্তাদরাক ৩/৩১৭]

Tafsir Bayaan Foundation

আর কিয়ামতের দিন আমি ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারো প্রতি কোন অবিচার করা হবে না। কারো কর্ম যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা হাযির করব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমিই যথেষ্ট।

Muhiuddin Khan

আমি কেয়ামতের দিন ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি জুলুম হবে না। যদি কোন আমল সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্যে আমিই যথেষ্ট।

Zohurul Hoque

আর কিয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব, সেজন্য কারো প্রতি এতটুকুও অন্যায় করা হবে না। আর যদি তা সরসে-বীজের ওজন পরিমাণও হয় আমরা সেটা নিয়ে আসব। আর হিসাব গ্রহণকারীরূপে আমরাই যথেষ্ট।