কুরআন মজীদ সূরা আম্বিয়া আয়াত ১০৫
Qur'an Surah Al-Anbya Verse 105
আম্বিয়া [২১]: ১০৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَلَقَدْ كَتَبْنَا فِى الزَّبُوْرِ مِنْۢ بَعْدِ الذِّكْرِ اَنَّ الْاَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصّٰلِحُوْنَ (الأنبياء : ٢١)
- walaqad
- وَلَقَدْ
- And verily
- এবং নিশ্চয়ই
- katabnā
- كَتَبْنَا
- We have written
- আমরা লিখেছিলাম
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- l-zabūri
- ٱلزَّبُورِ
- the Scripture
- যাবুর গ্রন্থে
- min
- مِنۢ
- after
- থেকে
- baʿdi
- بَعْدِ
- after
- পর
- l-dhik'ri
- ٱلذِّكْرِ
- the mention
- উপদেশের
- anna
- أَنَّ
- that
- যে
- l-arḍa
- ٱلْأَرْضَ
- the earth
- পৃথিবীর
- yarithuhā
- يَرِثُهَا
- will inherit it
- তার উত্তরাধিকারী হবে
- ʿibādiya
- عِبَادِىَ
- My slaves
- (যারা) আমার দাস
- l-ṣāliḥūna
- ٱلصَّٰلِحُونَ
- the righteous
- সৎকর্মশীল
Transliteration:
Wa laqad katabnaa fiz Zaboori mim ba'diz zikri annal arda yarisuhaa 'ibaadi yas saalihoon(QS. al-ʾAnbiyāʾ:105)
English Sahih International:
And We have already written in the book [of Psalms] after the [previous] mention that the land [of Paradise] is inherited by My righteous servants. (QS. Al-Anbya, Ayah ১০৫)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
(এর আগে মূসাকে) বাণী দেয়ার পর আমি যুবূরে লিখে দিয়েছিলাম যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাহ্গণই পৃথিবীর উত্তরাধিকার লাভ করবে। (আম্বিয়া, আয়াত ১০৫)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আমি (যাবূর) কিতাবে উপদেশের পর লিখে দিয়েছি যে, ‘নিশ্চয় আমার সৎকর্মশীল বান্দারা[১] পৃথিবীর অধিকারী হবে।’
[১] الزَبور বলতে যাবূর কিতাবকেই বুঝানো হয়েছে, আর الذِّكر বলতে উপদেশ, যেমন অনুবাদে প্রকাশ। বা যাবূর বলতে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবসমূহ, আর যিকর বলতে লাওহে মাহফূয। অর্থাৎ, প্রথমে লাওহে মাহফূযে লিপিবদ্ধ ছিল এবং পরে আসমানী কিতাবসমূহেও লেখা হয়েছে যে, নিশ্চয় আমার সৎকর্মশীল বান্দারা পৃথিবীর অধিকারী হবে। কোন কোন মুফাস্সির الأرض (পৃথিবী) বলতে জান্নাত অর্থ নিয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন, তার অর্থঃ কাফেরদের দেশ ও জমি-জায়গা। আয়াতের অর্থ হল, আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দারাই পৃথিবীর অধিকারী হবে। আর এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুসলিমরা যতদিন সৎকর্মশীল ছিল, ততদিন তারাই পৃথিবীর উপর ক্ষমতাসীন হয়ে উন্নতশির ছিল এবং ভবিষ্যতেও যখনই তারা এই গুণের অধিকারী হবে, আল্লাহর এই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতা তাদের হাতেই আসবে। বলা বাহুল্য, মুসলিমদের পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতা হতে বঞ্চিত থাকার বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে যেন কোন প্রকার সংশয় ও প্রশ্ন উদিত না হয়। যেহেতু এ প্রতিশ্রুতি মুসলিমদের সৎকর্মশীলতার সাথে শর্ত-সাপেক্ষ। আর إذا فات الشرط فات المشروط নীতি অনুসারে যখন মুসলিমরা ঐ শর্ত পালনে অক্ষম হল, তখন তারা পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতা ও আধিপত্য থেকে বঞ্চিত হল। সুতরাং এখানে শাসন-ক্ষমতা পাওয়ার উপায় ও পথ বলে দেওয়া হয়েছে, আর তা হল সৎকর্ম। অর্থাৎ, আল্লাহ ও রসূলের বিধি-বিধান অনুসারে জীবন অতিবাহিত করা এবং শরীয়তের নিয়ম-কানুন ও সীমা মেনে চলা। (মুসলিমরা যেদিন নিজেদের জীবন ও পরিবারে ইসলামী সংবিধানকে বাস্তবায়িত করতে পারবে, সেদিনই ফিরে পাবে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতা।)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর অবশ্যই আমরা ‘যিকর’ এর পর যাবূরে [১] লিখে দিয়েছি যে, যমীনের [২] অধিকারী হবে আমার যোগ্য বান্দাগণই।
[১] زبور শব্দটি একবচন, এর বহুবচন হলো زُبُر। এর অর্থ কিতাব। [কুরতুবী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] দাউদ আলাইহিস সালাম-এর প্রতি নাযিলকৃত বিশেষ কিতাবের নামও যাবুর। এখানে 'যাবুর' বলে কি বোঝানো হয়েছে, এ সম্পর্কে বিভিন্ন উক্তি আছে। কারো কারো মতে ذكر বলে তাওরাত আর زبور বলে তওরাতের পর নাযিলকৃত আল্লাহর অন্যান্য গ্ৰন্থসমূহ বোঝানো হয়েছে; যথা ইঞ্জিল, যাবুর ও কুরআন। আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে ذكر বলে লওহে মাহফুয زبور বলে নবীদের উপর নাযিলকৃত সকল ঐশী গ্ৰন্থই বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর]
[২] অধিক সংখ্যক তফসীরবিদের মতে এখানে যমীন বলে জান্নাতের যমীন বোঝানো হয়েছে। কুরআনের অন্য আয়াতও এর সমর্থন করে। তাতে বলা হয়েছে “তারা প্রবেশ করে বলবে, প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন এবং আমাদেরকে অধিকারী করেছেন এ যমীনের; আমরা জান্নাতে যেখানে ইচ্ছে বসবাস করব।” সদাচারীদের পুরস্কার কত উত্তম!” [সূরা আয-যুমারঃ ৭৪] এটাও ইঙ্গিত যে, যমীন বলে জান্নাতের যমীন বোঝানো হয়েছে। কারণ দুনিয়ার যমীনের মালিক তো মুমিন-কাফের সবাই হয়ে যায়। এছাড়া এখানে সৎকর্মপরায়ণদের যমীনের মালিক হওয়ার কথাটি কেয়ামতের আলোচনার পর উল্লেখ করা হয়েছে। কেয়ামতের পর জান্নাতের যমীনই তো বাকী থাকবে।
তবে কোন কোন মুফাসসির বলেন, এখানে যমীন বলে বর্তমান সাধারণ দুনিয়ার যমীন ও জান্নাতের যমীন উভয়টিই বোঝানো হবে। জান্নাতের যমীনের মালিক যে এককভাবে সৎকর্মপরায়ণগন হবে, তা বর্ণনা সাপেক্ষ নয়। তবে এক সময় তারা এককভাবে দুনিয়ার যমীনের মালিক হবে বলেও প্রতিশ্রুতি আছে। কুরআনের একাধিক আয়াতে এই সংবাদ দেয়া হয়েছে। এক আয়াতে আছেঃ “যমীন তো আল্লাহরই। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছে সেটার উত্তরাধিকারী করেন এবং শুভ পরিণাম তো মুত্তাকীদের জন্য। ” [সূরা আল-আরাফঃ ১২৮] অন্য আয়াতে এসেছেঃ “তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন” [সূরা আন-নূরঃ ৫৫] আরও এক আয়াতে আছেঃ “নিশ্চয় আমরা আমার রাসূলগণকে এবং মুমিনগণকে পার্থিব জীবনে এবং কেয়ামতের দিন সাহায্য করব। ” [সূরা গাফেরঃ ৫১] ঈমানদার সৎকর্মপরায়ণেরা একবার পৃথিবীর বৃহদংশ অধিকারভুক্ত করেছিল। জগদ্বাসী তা প্রত্যক্ষ করেছে। দীর্ঘকাল পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অটল ছিল। [ইবন কাসীর]
Tafsir Bayaan Foundation
আর উপদেশ দেয়ার পর আমি কিতাবে লিখে দিয়েছি যে, ‘আমার যোগ্যতর বান্দাগণই পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবে’।
Muhiuddin Khan
আমি উপদেশের পর যবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দাগণ অবশেষে পৃথিবীর অধিকারী হবে।
Zohurul Hoque
আর স্মারক-গ্রন্থের পরে আমরা যবূর-গ্রন্থে লিখে দিয়েছি যে, দেশটা -- এটাকে উত্তরাধিকার করবে আমার সৎকর্মী বান্দারা।