Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা ত্বোয়া-হা আয়াত ৯৪

Qur'an Surah Taha Verse 94

ত্বোয়া-হা [২০]: ৯৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

قَالَ يَبْنَؤُمَّ لَا تَأْخُذْ بِلِحْيَتِيْ وَلَا بِرَأْسِيْۚ اِنِّيْ خَشِيْتُ اَنْ تَقُوْلَ فَرَّقْتَ بَيْنَ بَنِيْٓ اِسْرَاۤءِيْلَ وَلَمْ تَرْقُبْ قَوْلِيْ (طه : ٢٠)

qāla
قَالَ
He said
সে বললো
yabna-umma
يَبْنَؤُمَّ
"O son of my mother!
"হে আমার মায়ের ছেলে (অর্থাৎ ভাই)
لَا
(Do) not
না
takhudh
تَأْخُذْ
seize (me)
ধরো
biliḥ'yatī
بِلِحْيَتِى
by my beard
আমার দাড়ি
walā
وَلَا
and not
আর না
birasī
بِرَأْسِىٓۖ
by my head
আমার মাথার (চুল)
innī
إِنِّى
Indeed, I
নিশ্চয়ই আমি
khashītu
خَشِيتُ
[I] feared
আশঙ্কা করেছি
an
أَن
that
যে
taqūla
تَقُولَ
you would say
বলবে তুমি
farraqta
فَرَّقْتَ
"You caused division
"তুমি বিভেদ সৃষ্টি করেছো
bayna
بَيْنَ
between
মাঝে
banī
بَنِىٓ
(the) Children of Israel
সন্তানদের
is'rāīla
إِسْرَٰٓءِيلَ
(the) Children of Israel
ইসরাঈলের
walam
وَلَمْ
and not
এবং নি
tarqub
تَرْقُبْ
you respect
তুমি মূল্য দাও
qawlī
قَوْلِى
my word"
আমার কথা"

Transliteration:

Qaala yabna'umma laa taakhuz bilihyatee wa laa biraasee innee khashetu an taqoola farraqta baina Baneee Israaa'eela wa lam tarqub qawlee (QS. Ṭāʾ Hāʾ:94)

English Sahih International:

[Aaron] said, "O son of my mother, do not seize [me] by my beard or by my head. Indeed, I feared that you would say, 'You caused division among the Children of Israel, and you did not observe [or await] my word.'" (QS. Taha, Ayah ৯৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

হারূন বলল, ‘হে আমার মায়ের পুত্র! আমার দাড়ি ধরে টেন না, আর আমার (মাথার) চুল ধরেও টেন না, আমি ভয় করেছিলাম তুমি বলবে যে, বানী ইসরাঈলের মাঝে তুমি বিভেদ সৃষ্টি করেছ আর তুমি আমার কথা পালন করনি।’ (ত্বোয়া-হা, আয়াত ৯৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

হারূন বলল, ‘হে আমার সহোদর! আপনি আমার দাড়ি ও মাথা (চুল) ধরবেন না। আসলে আমি আশঙ্কা করলাম যে, আপনি বলবেন, তুমি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছ[১] এবং তুমি আমার কথার অপেক্ষা করনি।’[২]

[১] মূসা (আঃ) নিজ জাতিকে শিরকের পাপে ভ্রষ্ট হতে দেখে অত্যন্ত ক্রোধান্বিত ছিলেন এবং এই বুঝেছিলেন যে, হয়তো বা তাঁর ভাই হারূন যাঁকে তিনি প্রতিনিধিরূপে রেখে গিয়েছিলেন তাঁরও কিছু অবহেলা ও শৈথিল্য আছে। যার কারণে অত্যন্ত ক্রোধের সাথে হারূন (আঃ)-এর দাড়ি ও চুল ধরে টান মেরে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন। যার ফলে তিনি মূসা (আঃ)-কে এত কঠোরতা প্রদর্শন না করতে আবেদন জানান।

[২] সূরা আ'রাফ (৭;১৪২ আয়াত) এ হারূন (আঃ)-এর উত্তর এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, লোকেরা আমাকে দুর্বল ভেবেছিল এবং আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। যার অর্থ হল, হারূন (আঃ) নিজের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে পালন করেছিলেন এবং তাদেরকে বুঝানো ও বাছুর পূজা হতে বিরত করার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি ও শৈথিল্য প্রদর্শন করেননি। কিন্তু ব্যাপারটিকে তিনি এত বাড়তে দেননি, যাতে গৃহযুদ্ধের পরিবেশ সৃষ্টি না হয়ে যায়। কারণ হারূন (আঃ)-কে হত্যা মানেই তাঁর সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে আপোসে রক্তপাত শুরু হয়ে যেত এবং বানী ইস্রাঈলরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়ত; যারা একে অপরের রক্ত-পিপাসু হত। যেহেতু মূসা (আঃ) সেখানে উপস্থিত ছিলেন না, সেহেতু তিনি এ স্পর্শকাতর পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেননি। আর সেই কারণেই তিনি হারূন (আঃ)-এর প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করেছিলেন। কিন্তু ব্যাপারটি পরিষ্কার হওয়ার পর তিনি আসল অপরাধীর দিকে ফিরলেন। সুতরাং হারূন (আঃ)-এর উক্তি, 'আসলে আমি আশঙ্কা করলাম যে, আপনি বলবেন, তুমি বানী ইস্রাঈলদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করেছ এবং তুমি আমার কথার অপেক্ষা করনি' থেকে এই দলীল নেওয়া ঠিক নয় যে, মুসলিমদের মাঝে একতা ও সংহতি বজায় রাখার স্বার্থে শিরকী কর্মকান্ড ও অন্যায়কে মেনে নেওয়া উচিত। (যেমন কিছু লোক এ ধারণা রেখে থাকে।) কারণ হারূন (আঃ) না এমন করেছিলেন, আর না তাঁর উক্তির উদ্দেশ্য এমন ছিল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

হারুন বললেন, ‘হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি ও চুল ধরবে না [১]। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, ‘আপনি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন ও আমার কথা শুনায় যত্নবান হননি।’

[১] হারুন 'আলাইহিস সালাম এই কঠোর ব্যবহার সত্ত্বেও শিষ্টাচারের প্রতি পুরোপুরি লক্ষ্য রেখে মূসা 'আলাইহিস সালাম-কে নরম করার জন্য 'হে আমার জননী-তনয়’ বলে সম্বোধন করলেন। এতে কঠোর ব্যবহার না করার প্রতি বিশেষ ইঙ্গিত ছিল। অর্থাৎ আমি তো তোমার ভ্ৰাতা বৈ শত্রু নাই। তাই আমার ওযর শুনে নাও। অতঃপর হারূন আলাইহিস সালাম এরূপ ওযর বর্ণনা করলেনঃ

اِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُوْ نِىْ وَكَا دُوْايَقْتُلُوْ نَفِىْ

[আল-আ’রাফঃ ১৫০] অর্থাৎ বনী-ইসরাঈল আমাকে শক্তিহীন ও দুর্বল মনে করেছে। কেননা, অন্যদের মোকাবেলায় আমার সঙ্গীসাথী ছিল নগণ্য সংখ্যক। তাই তারা আমাকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। এ সূরায় আরো বলা হয়েছে যে, হারূন 'আলাইহিস সালাম তাদেরকে গো-বৎস পূজা করতে নিষেধ করেছিলেন এবং বলেছিলেনঃ “হে আমার কওম! তোমরা ফেৎনায় নিপতিত, অবশ্যই তোমাদের একমাত্র মা’বুদ হল রহমান। সুতরাং তোমরা আমার অনুসরণ কর এবং আমার কথা শোন।' কিন্তু তারা তার কথা শুনল না; বরং তাকে হত্যা করতে উদ্যত হল। অন্যত্র হারূন 'আলাইহিস সালাম তার ওযরগুলো বর্ণনা করে বলেনঃ আমি আশংকা করলাম যে, তোমার ফিরে আসার পূর্বে যদি আমি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে অবতীর্ণ হই। অথবা তাদেরকে ত্যাগ করে তোমার কাছে চলে যাই, তবে বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ দেখা দেবে। তুমি রওয়ানা হওয়ার সময়

اخْلُفْنِىْ فِىْ قَوْمِىْ وَاَصْلِحْ

[সূরা আল-আ’রাফঃ ১৪২] -বলে আমাকে সংস্কারের নির্দেশ দিয়েছিলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি তাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হতে দেইনি। কারণ, এরূপ সম্ভাবনা ছিল যে, তুমি ফিরে এলে তারা সবাই সত্য উপলব্ধি করবে এবং ঈমান ও তাওহীদে ফিরে আসবে।

Tafsir Bayaan Foundation

সে বলল, ‘হে আমার সহোদর! আমার দাড়িও ধরো না, মাথার চুলও ধরো না। আমি আশংকা করেছিলাম যে, তুমি বলবে, তুমি বনী ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা রক্ষা করনি’।

Muhiuddin Khan

তিনি বললেনঃ হে আমার জননী-তনয়, আমার শ্মশ্রু ও মাথার চুল ধরে আকর্ষণ করো না; আমি আশঙ্কা করলাম যে, তুমি বলবেঃ তুমি বনী-ইসরাঈলের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছ এবং আমার কথা স্মরণে রাখনি।

Zohurul Hoque

তিনি বললেন -- ''হে আমার সহোদর! আমার দাড়ি পাকড়ো না আর আমার মাথাও না, নিঃসন্দেহ আমি ভয় করেছিলাম পাছে তুমি বলো -- 'ইসরাইলের বংশধরদের মধ্যে তুমি বিভেদ ঘটিয়েছ এবং আমার কথার অপেক্ষা করো নি’।’’