কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ৭৫
Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 75
আল বাকারা [২]: ৭৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
۞ اَفَتَطْمَعُوْنَ اَنْ يُّؤْمِنُوْا لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيْقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُوْنَ كَلَامَ اللّٰهِ ثُمَّ يُحَرِّفُوْنَهٗ مِنْۢ بَعْدِ مَا عَقَلُوْهُ وَهُمْ يَعْلَمُوْنَ (البقرة : ٢)
- afataṭmaʿūna
- أَفَتَطْمَعُونَ
- Do you hope
- তবে কি তোমরা আশা কর
- an
- أَن
- that
- যে
- yu'minū
- يُؤْمِنُوا۟
- they will believe
- তারা ঈমান আনবে
- lakum
- لَكُمْ
- [for] you
- তোমাদের (দাওয়াতে)
- waqad
- وَقَدْ
- while indeed
- অথচ নিশ্চয়ই
- kāna
- كَانَ
- (there) has been
- আছে
- farīqun
- فَرِيقٌ
- a party
- একদল
- min'hum
- مِّنْهُمْ
- of them
- তাদের মধ্যে
- yasmaʿūna
- يَسْمَعُونَ
- (who used to) hear
- (যারা) শুনে
- kalāma
- كَلَٰمَ
- (the) words
- (কালাম) বাণী
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (of) Allah
- আল্লাহ্র
- thumma
- ثُمَّ
- then
- পরে
- yuḥarrifūnahu
- يُحَرِّفُونَهُۥ
- they distort it
- তা তারা বিকৃত করে
- min
- مِنۢ
- from
- থেকে
- baʿdi
- بَعْدِ
- after
- এরপর
- mā
- مَا
- [what]
- যা
- ʿaqalūhu
- عَقَلُوهُ
- they understood it
- তা তারা বুঝেছিল
- wahum
- وَهُمْ
- while they
- অথচ তারা
- yaʿlamūna
- يَعْلَمُونَ
- know?
- (ভালভাবে) জানেও
Transliteration:
Afatatma'oona ai yu'minoo lakum wa qad kaana fareequm minhum yasma'oona Kalaamal laahi summa yuharri foonahoo mim ba'di maa'aqaloohu wa hum ya'lamoon(QS. al-Baq̈arah:75)
English Sahih International:
Do you covet [the hope, O believers], that they would believe for you while a party of them used to hear the words of Allah and then distort it [i.e., the Torah] after they had understood it while they were knowing? (QS. Al-Baqarah, Ayah ৭৫)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমরা কি এই আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? অথচ তাদের একদল আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত ও বুঝার পর জেনে শুনে তা বিকৃত করত। (আল বাকারা, আয়াত ৭৫)
Tafsir Ahsanul Bayaan
(হে বিশ্বাসিগণ) তোমরা কি এখনো আশা কর যে, তোমাদের কথায় তারা বিশ্বাস করবে (ঈমান আনবে)? অথচ তাদের মধ্যে একদল লোক আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত এবং বুঝার পর জেনেশুনে তা বিকৃত করত। (১)
(১) ঈমানদারদেরকে সম্বোধন ক'রে ইয়াহুদীদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, তোমরা কি তাদের ঈমান আনার আশা পোষণ কর, অথচ তাদের পূর্বের লোকেদের মধ্যে একটি দল এমনও ছিল, যারা জেনে-শুনে আল্লাহর কালামের (শাব্দিক ও আর্থিক) হেরফের ঘটাত? এখানে জিজ্ঞাসাটা আসলে অস্বীকৃতিসূচক; অর্থাৎ এমন লোকের ঈমান আনার কোনই আশা নেই। অর্থ হল, দুনিয়ার স্বার্থে এবং জাতিগত পক্ষপাতিত্বের কারণে আল্লাহর বাণী বিকৃত করতে যাদের বাধে না, তারা ভ্রষ্টতার এমন পঙ্কে ফেঁসে গেছে যে সেখান থেকে বের হতে পারে না। উম্মতে মুহাম্মাদীর বহু উলামা ও মাশায়েখও দুর্ভাগ্যবশতঃ ক্বুরআন ও হাদীসের মধ্যে হেরফের ও বিকৃতি সাধনের কাজে জড়িত। আল্লাহ তাআলা এই অন্যায় থেকে আমাদেরকে হিফাযতে রাখুন! (দ্রষ্টব্যঃ সূরা নিসা ৪;৭৭ নং আয়াত)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
তোমরা কি এ আশা করো যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে ? অথচ তাদের একদল আল্লাহ্র বাণী শ্রবণ করে, তারপর তারা তা অনুধাবন করার পর বিকৃত করে, অথচ তারা জানে [১]।
[১] এখানে আল্লাহ্র বাণী অর্থ তাওরাত। ‘শ্রবণ করা অর্থ নবীদের মাধ্যমে শ্রবণ করা। ‘পরিবর্তন করা’ অর্থ কোন কোন বাক্য অথবা তার অর্থ অথবা উভয়টিকে বিকৃত করে ফেলা। রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমলে যেসব ইয়াহুদী ছিল, তাদের দ্বারা উল্লেখিত কোন কুকর্ম যদি সংঘটিত নাও হয়ে থাকে, তবুও পূর্ববতীদের এসব দুস্কর্মকে তারা অপছন্দ ও ঘৃণা করতো না। এ কারণে তারাও কার্যতঃ পূর্ববর্তীদেরই মত। কিন্তু কারা এবং কিভাবে তাদের কিতাবকে বিকৃত করত, তা এখানে বলা হয়নি। মুফাসসিরগণের মধ্যে মুজাহিদ বলেন, এ বিকৃত করা ও গোপন করার কাজটি তাদের আলেম সমাজই করত। আবুল আলীয়াহ বলেন, তারা তাদের কিতাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের যে সমস্ত গুণাগুণ বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলোকে স্থানচ্যুত করে বিকৃত করত। আত-তাফসীরুস সহীহ কাতাদাহ বলেন, আয়াতে বর্ণিত লোকগুলো হচ্ছে, ইয়াহুদরা। তারা আল্লাহ্র বাণী শুনত; তারপর সেগুলো বুঝে-শুনে বিকৃত করত। তারা আল্লাহ্র বিধানেও পরিবর্তন সাধন করত, হাদীসে এসেছে, ইয়াহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বলল যে, তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী ব্যভিচার করেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে বললেন, তোমরা তাওরাতে “রাজম” বা প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড সম্পর্কে কি কিছু পাও? তারা বলল, আমরা তদেরকে শাস্তি হিসেবে তাদেরকে লজ্জিত করি এবং বেত্ৰাঘাত করা হবে। অর্থাৎ তারা ‘রাজম’ অস্বীকার করল। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বললেন, তোমরা মিথ্যা বলছ। তাওরাতে ‘রাজম’ এর কথা আছে। তখন তারা তাওরাত নিয়ে আসল এবং সেটা মেলে ধরল। তখন তাদের একজন রাজম’ এর আয়াতের উপর হাত রেখে এর আগে এবং পরের অংশ পড়ল। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বললেন, তুমি তোমার হাত উঠাও। সে তার হাত উঠালে দেখা গেল যে, সেখানে ‘রাজম’ এর আয়াত রয়েছে। তখন তারা বলল, মুহাম্মদ সত্য বলেছে। এতে ‘রাজম’ এর আয়াত রয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে রজম করার নির্দেশ দিলেন, অতঃপর রজম করা হলো। আব্দুল্লাহ বলেন, আমি দেখতে পেলাম যে লোকটি মহিলার উপর বাঁকা হয়ে তাকে পাথরের আঘাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। [বুখারী ৩৬৩৫]
Tafsir Bayaan Foundation
তোমরা কি এই আশা করছ যে, তারা তোমাদের প্রতি ঈমান আনবে? অথচ তাদের একটি দল ছিল যারা আল্লাহর বাণী শুনত অতঃপর তা বুঝে নেয়ার পর তা তারা বিকৃত করত জেনে বুঝে।
Muhiuddin Khan
হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রবণ করত; অতঃপর বুঝে-শুনে তা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল।
Zohurul Hoque
এরপর কি তোমরা আশা কর যে তারা তোমাদের প্রতি বিশ্বাস করবে? ইতিপূর্বে তাদের একটি দল আল্লাহ্র বাণী শুনত, তারপর তা পাল্টে দিত উহা বুঝবার পরেও, আর তারা জানে।