Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ৫১

Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 51

আল বাকারা [২]: ৫১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَاِذْ وٰعَدْنَا مُوْسٰىٓ اَرْبَعِيْنَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْۢ بَعْدِهٖ وَاَنْتُمْ ظٰلِمُوْنَ (البقرة : ٢)

wa-idh
وَإِذْ
And when
এবং যখন
wāʿadnā
وَٰعَدْنَا
We appointed
নির্ধারিত করেছিলাম
mūsā
مُوسَىٰٓ
(for) Musa
মূসার জন্যে
arbaʿīna
أَرْبَعِينَ
forty
চল্লিশ
laylatan
لَيْلَةً
nights
রাত
thumma
ثُمَّ
Then
এরপর
ittakhadhtumu
ٱتَّخَذْتُمُ
you took
তোমরা গ্রহণ করেছিলে
l-ʿij'la
ٱلْعِجْلَ
the calf
গরুর বাছুরকে (উপাস্যরূপে)
min
مِنۢ
from
তার
baʿdihi
بَعْدِهِۦ
after him
পরে
wa-antum
وَأَنتُمْ
and you
যখন তোমরা
ẓālimūna
ظَٰلِمُونَ
(were) wrongdoers
সীমালঙ্ঘঙ্কারী (ছিলে)

Transliteration:

Wa iz waa'adnaa Moosaaa arba'eena lailatan summattakhaztumul 'ijla mim ba'dihee wa antum zaalimoon (QS. al-Baq̈arah:51)

English Sahih International:

And [recall] when We made an appointment with Moses for forty nights. Then you took [for worship] the calf after him [i.e., his departure], while you were wrongdoers. (QS. Al-Baqarah, Ayah ৫১)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যখন মূসার উপর চল্লিশ রজনীর ওয়া‘দা করেছিলাম (কিতাব প্রদানের জন্য), তার (প্রস্থানের) পর তোমরা তখন বাছুরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছিলে, বস্তুতঃ তোমরা তো ছিলে যালিম। (আল বাকারা, আয়াত ৫১)

Tafsir Ahsanul Bayaan

(স্মরণ কর,) যখন মূসার জন্য চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করেছিলাম, তখন তার প্রস্থানের পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে; বাস্তবে তোমরা ছিলে অনাচারী। (১)

(১) এই গোবৎস পূজার ঘটনা সেই সময় ঘটেছিল, যখন ফিরআউন-সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বানী-ইস্রাঈলেরা 'সীনা' (সিনাই) নামক উপদ্বীপে পৌঁছে ছিল। সেখানে মহান আল্লাহ মূসা (আঃ)-কে তাওরাত দেওয়ার লক্ষ্যে চল্লিশ রাতের জন্য ত্বূর পাহাড়ে ডেকেছিলেন। মূসা (আঃ)-এর যাওয়ার পর বানী-ইস্রাঈলেরা সামেরীর চক্রান্তে গোবৎস পূজা শুরু করে দিয়েছিল। মানুষ কতই না বাস্তববাদী যে, মহান আল্লাহর মহিমার কত বৃহৎ বৃহৎ নিদর্শনাবলী দেখা সত্ত্বেও এবং তাঁর নবী (মূসা এবং হারুন আলাইহিমাসসালাম) তাদের মাঝে বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও গোবৎসকে নিজেদের উপাস্য মনে করে নিলো! বর্তমানে মুসলমানরাও শির্কী আক্বীদা-বিশ্বাস ও কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে। কিন্তু তারা মনে মনে ভাবে, মুসলিম মুশরিক কিভাবে হয়? এই মুসলিম মুশরিকরা শির্ককে কেবল পাথরের মূর্তি পূজার সাথে নির্দিষ্ট করে দিয়েছে। তারাই নাকি শুধু মুশরিক। অথচ এই নামমাত্র মুসলিম কবরের গম্বুজের সাথে তা-ই করে, যা প্রতিমা-পূজারী নিজের মূর্তির সাথে করে থাকে -أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهُ-।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর স্মরণ কর, যখন আমরা মূসার সাথে চল্লিশ রাতের অঙ্গীকার করেছিলাম [১], তার (চলে যাওয়ার) পর তোমরা গো-বৎসকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে [২] ; আর তোমরা হয়ে গেলে যালিম [৩]।

[১] এখানে চল্লিশ রাতের ব্যাপারে এটা বলেন নি যে, এ চল্লিশ রাতের ওয়াদা প্রথমেই নিয়েছিলেন কি না? কিন্তু অন্যত্র বলে দিয়েছেন যে, তাকে প্রথমে ত্রিশ রাতের ওয়াদা করেছিলেন তারপর আরও দশ রাত বাড়িয়ে দিয়ে তা চল্লিশে পূর্ণ করে দিলেন। [সূরা আল-আরাফ; ১৪২]

[২] এখানে গো বৎসের উৎস ও কারিগর সম্পর্কে কিছু বলেন নি। অন্যত্র সেটা বিস্তারিত এসেছে। আল্লাহ্‌ বলেন, "মূসার সম্প্রদায় তার অনুপস্থিতিতে নিজেদের অলংকার দিয়ে একটি বাছুর তৈরী করল, একটা দেহ, যা 'হাম্বা’ শব্দ করত। তারা কি দেখল না যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলে না ও তাদেরকে পথও দেখায় না? তারা ওটাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করল এবং তারা ছিল যালেম " [সূরা আল-আরাফ; ১৪৮]

আরও বলেন, “তারা বলল, আমরা আপনাকে দেয়া অংগীকার স্বেচ্ছায় ভংগ করিনি ; তবে আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল লোকের অলংকারের বোঝা এবং আমরা তা আগুনে নিক্ষেপ করি, অনুরূপভাবে সামিরীও (সেখানে কিছু মাটি) নিক্ষেপ করে। তারপর সে তাদের জন্য গড়লো এক বাছুর, এক অবয়ব, যা হাম্বা রব করত। তারা বলল, "এ তোমাদের ইলাহ এবং মূসারও ইলাহ, কিন্তু মূসা ভুলে গেছে। " [সূরা ত্বা-হাঃ ৮৭-৮৮]

[৩] এ ঘটনা ঐ সময়ের যখন ফিরআউন সমুদ্রে নিমজ্জিত হওয়ার পর ইসরাঈল-বংশধররা কারো কারো মতে মিশরে ফিরে এসেছিল, আবার কারো কারো মতে অন্য কোথাও বসবাস করছিল। তখন মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর খেদমতে ইসরাঈল-বংশধররা আরয করলো যে, আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত। যদি আমাদের জন্য কোন শরীআত নির্ধারিত হয়, তবে আমাদের জীবন বিধান হিসেবে আমরা তা গ্রহণ ও বরণ করে নেবো। মূসা ‘আলাইহিস সালাম-এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ্ তাআলা অংগীকার প্রদান করলেন যে, আপনি তুর পর্বতে অবস্থান করে একমাস পর্যন্ত আমার ইবাদাতে নিমগ্ন থাকার পর আপনাকে এক কিতাব দান করবো। মূসা ‘আলাইহিস্ সালাম তাই করলেন। এরপর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা ‘আলাইহিস সালাম-কে অতিরিক্ত আরও দশদিন ইবাদাত করতে নির্দেশ দিলেন। এভাবে চল্লিশ দিন পূর্ণ হলো আর আল্লাহ্ তা'আলা মূসা ‘আলাইহিস সালাম-কে তাওরাত দিলেন। মূসা ‘আলাইহিস্ সালাম তো ওদিকে তুর-পর্বতে রইলেন, এদিকে সামেরী নামক এক ব্যক্তি সোনা-রূপা দিয়ে গোবৎসের একটি প্রতিমূর্তি তৈরী করলো এবং তার কাছে পূর্ব থেকে সংরক্ষিত জিবরাঈল ‘আলাইহিস সালাম-এর ঘোড়ার খুরের তলার কিছু মাটি প্রতিমূর্তির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়ায় সেটি শব্দ করতে থাকলো। আর ইসরাঈল-বংশধররা তারই পূজা করতে শুরু করে দিল। [তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন]

Tafsir Bayaan Foundation

আর যখন আমি মূসাকে চল্লিশ রাতের ওয়াদা দিয়েছিলাম অতঃপর তোমরা তার যাওয়ার পর বাছুরকে (উপাস্যরূপে) গ্রহণ করেছিলে, আর তোমরা ছিলে যালিম।

Muhiuddin Khan

আর যখন আমি মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা ছিলে যালেম।

Zohurul Hoque

আর স্মরণ করো! আমরা মূসার সঙ্গে চল্লিশ রাত্রি নির্ধারিত করেছিলাম, তখন তোমরা বাছুরকে তাঁর অনুপস্থিতিতে গ্রহণ করলে, আর তোমরা হলে অন্যায়কারী।