Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ৩৬

Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 36

আল বাকারা [২]: ৩৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

فَاَزَلَّهُمَا الشَّيْطٰنُ عَنْهَا فَاَخْرَجَهُمَا مِمَّا كَانَا فِيْهِ ۖ وَقُلْنَا اهْبِطُوْا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۚ وَلَكُمْ فِى الْاَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَّمَتَاعٌ اِلٰى حِيْنٍ (البقرة : ٢)

fa-azallahumā
فَأَزَلَّهُمَا
Then made [both of] them slip
তাদেরকে এরপর পদস্থলন ঘটাল
l-shayṭānu
ٱلشَّيْطَٰنُ
the Shaitaan
শয়তান
ʿanhā
عَنْهَا
from it
তা হতে,
fa-akhrajahumā
فَأَخْرَجَهُمَا
and he got [both of] them out
তাদের দুজনকে অতঃপর বের করল
mimmā
مِمَّا
from what
সেখান থেকে
kānā
كَانَا
they [both] were
দুজনে ছিল
fīhi
فِيهِۖ
in [it]
যার মধ্যে
waqul'nā
وَقُلْنَا
And We said
এবং আমরা বললাম,
ih'biṭū
ٱهْبِطُوا۟
"Go down (all of you)
''তোমরা নেমে যাও (এখান থেকে)
baʿḍukum
بَعْضُكُمْ
some of you
তোমাদের একে
libaʿḍin
لِبَعْضٍ
to others
অপরের জন্যে
ʿaduwwun
عَدُوٌّۖ
(as) enemy
শত্রু
walakum
وَلَكُمْ
and for you
এবং তোমাদের জন্যে
فِى
in
মধ্যে (থাকবে)
l-arḍi
ٱلْأَرْضِ
the earth
পৃথিবীর
mus'taqarrun
مُسْتَقَرٌّ
(is) a dwelling place
অবস্থান (কিছু কালের)
wamatāʿun
وَمَتَٰعٌ
and a provision
ও জীবন সামগ্রী
ilā
إِلَىٰ
for
পর্যন্ত
ḥīnin
حِينٍ
a period"
একটা নির্দিষ্ট সময়''

Transliteration:

Fa azallahumash Shaitaanu 'anhaa fa akhrajahumaa mimmaa kaanaa fee wa qulnah bitoo ba'dukum liba'din 'aduwwunw wa lakum fil ardi mustaqarrunw wa mataa'un ilaa heen (QS. al-Baq̈arah:36)

English Sahih International:

But Satan caused them to slip out of it and removed them from that [condition] in which they had been. And We said, "Go down, [all of you], as enemies to one another, and you will have upon the earth a place of settlement and provision for a time." (QS. Al-Baqarah, Ayah ৩৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

কিন্তু শয়ত্বান তাত্থেকে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা দু’জন যেখানে ছিল, তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দিল; আমি বললাম, ‘নেমে যাও, তোমরা পরস্পর পরস্পরের শত্রু, দুনিয়াতে কিছু কালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা আছে’। (আল বাকারা, আয়াত ৩৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

কিন্তু শয়তান তা হতে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান হতে তাদেরকে বহিষ্কার করল। (১) আমি বললাম, ‘তোমরা (এখান হতে) নেমে যাও। তোমরা একে অন্যের শত্রু। (২) পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের অবস্থান ও জীবিকা রইল।

(১) শয়তান জান্নাতে প্রবেশ ক'রে সরাসরি তাঁদেরকে পদস্খলিত করে, নাকি প্ররোচনার মাধ্যমে --এ ব্যাপারে কোন পরিষ্কার বর্ণনা নেই। তবে এ কথা পরিষ্কার যে, যেভাবে সিজদা করার নির্দেশের সময় আল্লাহর আদেশের মোকাবেলায় সে কিয়াস (আমি আদম থেকে উত্তম এই অনুমান) ক'রে সিজদা করতে অস্বীকার করেছিল, অনুরূপ এই সময় আল্লাহর নির্দেশ "তোমরা গাছের কাছে যাবে না"-এর তা'বীল (অপব্যাখ্যা) ক'রে আদম (আঃ)-কে চক্রান্তে ফাঁসাতে সে সফলকাম হয়। এর বিস্তারিত বিবরণ সূরা আ'রাফ ৭;১৯নং আয়াতে আসবে। আল্লাহর নির্দেশের মোকাবেলায় অনুমান এবং ক্বুরআন ও হাদীসের স্পষ্ট উক্তির অপব্যাখ্যা সর্বপ্রথম শয়তানই করেছিল। -নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক-।

(২) অর্থাৎ, আদম (আলাইহিসসালাম) এবং শয়তান। অথবা এর অর্থ হল, আদম-সন্তান আপসে একে অপরের শত্রু।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

অতঃপর শয়তান সেখান থেকে তাদের পদস্থলন ঘটালো [১] এবং তারা যেখানে ছিলো সেখান থেকে তাদের কে বের করলো [২]। আর আমরা বললাম, ‘তোমরা একে অন্যের শ্ত্রু রুপে নেমে যাও; এবং কিছু দিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল যমীনে’।

[১] (زَلَّةٌ) শব্দের অর্থ বিচ্যুতি বা পদস্থলন। অর্থাৎ শয়তান আদম ও হাওয়া ‘আলাইহিমাস সালামকে পদস্খলিত করেছিল বা তাদের বিচ্যুতি ঘটিয়েছিল। কুরআনের এসব শব্দে পরিস্কার এ কথা বোঝা যায় যে, আদম ও হাওয়া ‘আলাইহিস সালাম কর্তৃক আল্লাহ্ তা'আলার হুকুম লংঘন সাধারণ পাপীদের মত ছিল না, বরং শয়তানের প্রতারণায় প্রতারিত হয়েই তারা এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। পরিণামে যে গাছের ফল নিষিদ্ধ ছিল, তা খেয়ে বসলেন। এ বর্ণনার দ্বারা বোঝা গেল যে, আদম '‘আলাইহিস সালামকে বিশেষ গাছ বা তার ফল খেতে নিষেধ করা হয়েছিল এবং এ ব্যাপারেও সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যে, শয়তান তোমাদের শক্র। কাজেই সে যেন তোমাদেরকে পাপে লিপ্ত করে না দেয়। এরপরও আদম '‘আলাইহিস সালাম এর তা খাওয়া বাহ্যিকভাবে পাপ বলে গণ্য। অথচ নবীগণ পাপ থেকে বিমুক্ত ও পবিত্র। সঠিক তথ্য এই যে, এখানে কয়েকটি ব্যাপারে আলেমদের ইজমা তথা ঐক্যমত সংঘটিত হয়েছেঃ

১) নবীগণ উম্মতের নিকট আল্লাহ্‌র নির্দেশ পৌছানোর ব্যাপারে যাবতীয় ভুল-ত্রুটি বা পাপ হতে মুক্ত।

২) অনুরূপভাবে মর্যাদাহানিকর নিম্নমানের কর্মকাণ্ড থেকেও মুক্ত।

৩) তাদের দ্বারা মর্যাদাহানিকর নয় এমন সগীরা গোনাহ হতে পারে। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা তাদেরকে কোন প্রকার গোনাহ বা ভুলের উপর অবস্থান করতে দেননা। অর্থাৎ তাদের দ্বারা কোন ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে তাদেরকে সাবধান করা হয়, যাতে তারা তাওবা করে সংশোধন করে নেন। ফলে তাদের মর্যাদা পূর্বের চেয়ে আরও বেশী বৃদ্ধি পায়।

[২] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সূর্য যে দিনগুলোতে উদিত হয়েছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম দিন হচ্ছে জুম'আর দিন। এতে আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এতেই জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে। আর এ দিনই তাকে জান্নাতে থেকে বের করা হয়েছে "[মুসলিম; ৮৫৪] এখানে এ বিতর্ক অনাবশ্যক যে, শয়তান জান্নাত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর আদম '‘আলাইহিস সালামকে প্রতারিত করার জন্য কিভাবে আবার সেখানে প্রবেশ করলো? কারণ, শয়তানের প্রবঞ্চনার জন্য জান্নাতে প্রবেশের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা শয়তান ও জীন জাতিকে দূর থেকেও প্রবঞ্চনা ও প্রতারণা করার ক্ষমতা দিয়েছেন।

Tafsir Bayaan Foundation

অতঃপর শয়তান তাদেরকে জান্নাত থেকে স্খলিত করল। এবং তারা যাতে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল, আর আমি বললাম, ‘তোমরা নেমে যাও। তোমরা একে অপরের শত্রু। আর তোমাদের জন্য যমীনে রয়েছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবাস ও ভোগ-উপকরণ’।

Muhiuddin Khan

অনন্তর শয়তান তাদের উভয়কে ওখান থেকে পদস্খলিত করেছিল। পরে তারা যে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে ছিল তা থেকে তাদেরকে বের করে দিল এবং আমি বললাম, তোমরা নেমে যাও। তোমরা পরস্পর একে অপরের শক্র হবে এবং তোমাদেরকে সেখানে কিছুকাল অবস্থান করতে হবে ও লাভ সংগ্রহ করতে হবে।

Zohurul Hoque

কিন্তু শয়তান তাদের সেখান থেকে পদস্খলিত করল, আর যেখানে তারা থাকত সেখান থেকে তাদের বের করে দিল। তখন আমরা বললাম -- “তোমরা অধঃপাতে যাও, তোমাদের কেউ কেউ একে অন্যের শত্রু। আর তোমাদের জন্য পৃথিবীতে আছে জিরানোর স্থান ও কিছু সময়ের সংস্থান।”