কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ৩৪
Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 34
আল বাকারা [২]: ৩৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَاِذْ قُلْنَا لِلْمَلٰۤىِٕكَةِ اسْجُدُوْا لِاٰدَمَ فَسَجَدُوْٓا اِلَّآ اِبْلِيْسَۗ اَبٰى وَاسْتَكْبَرَۖ وَكَانَ مِنَ الْكٰفِرِيْنَ (البقرة : ٢)
- wa-idh
- وَإِذْ
- And when
- এবং যখন
- qul'nā
- قُلْنَا
- We said
- আমরা বলেছিলাম
- lil'malāikati
- لِلْمَلَٰٓئِكَةِ
- to the angels
- ফেরেশতাদেরকে
- us'judū
- ٱسْجُدُوا۟
- "Prostrate
- ''তোমরা সিজদা করো
- liādama
- لِءَادَمَ
- to Adam"
- আদমকে''
- fasajadū
- فَسَجَدُوٓا۟
- [so] they prostrated
- তখন তারা সিজদা করল
- illā
- إِلَّآ
- except
- ব্যতীত
- ib'līsa
- إِبْلِيسَ
- Iblees
- ইবলিস
- abā
- أَبَىٰ
- He refused
- সে অমান্য করল
- wa-is'takbara
- وَٱسْتَكْبَرَ
- and was arrogant
- ও অহংকার করল,
- wakāna
- وَكَانَ
- and became
- এবং সে হল
- mina
- مِنَ
- of
- অন্তর্ভুক্ত
- l-kāfirīna
- ٱلْكَٰفِرِينَ
- the disbelievers
- কাফিরদের
Transliteration:
Wa iz qulnaa lilmalaaa'i katis judoo liAadama fasajadooo illaaa Ibleesa abaa wastakbara wa kaana minal kaafireen(QS. al-Baq̈arah:34)
English Sahih International:
And [mention] when We said to the angels, "Prostrate before Adam"; so they prostrated, except for Iblees. He refused and was arrogant and became of the disbelievers. (QS. Al-Baqarah, Ayah ৩৪)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, আদামকে সাজদাহ কর, তখন ইবলীস ছাড়া সকলেই সাজদাহ করল, সে অমান্য করল ও অহঙ্কার করল, কাজেই সে কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল। (আল বাকারা, আয়াত ৩৪)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যখন ফিরিশতাদেরকে বললাম, ‘আদমকে সিজদাহ কর।’ (১) তখন সকলেই সিজদাহ করল; কিন্তু ইবলীস সিজদাহ করল না; সে অমান্য করল (২) ও অহংকার প্রদর্শন করল। সুতরাং সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হল।(৩)
(১) জ্ঞান দ্বারা সম্মানিত হওয়ার পর আদম (আঃ) এই দ্বিতীয় সম্মান লাভ করেন। সিজদার অর্থঃ নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করা। আর তার সর্বশেষ পর্যায় হল, মাটিতে কপাল ঠেকিয়ে দেওয়া। (ক্বুরতুবী) এই সিজদা ইসলামী শরীয়তে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো জন্য জায়েয নয়। নবী করীম (সাঃ)-এর প্রসিদ্ধ উক্তি হল, "যদি (আল্লাহ ব্যতীত) অন্য কারো জন্য সিজদা করা জায়েয হত, তাহলে আমি মহিলাকে নির্দেশ দিতাম, সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে।" (তিরমিযী ১০৭৯নং) তবে ফিরিশ্তাগণ আল্লাহর নির্দেশে আদম (আঃ)-কে যে সিজদা করেছিলেন এবং যে সিজদা দ্বারা ফিরিশ্তাদের সামনে তাঁর (আদম)এর সম্মান ও ফযীলত প্রকাশ করা হয়েছিল, সে সিজদা ছিল সম্মান ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে; ইবাদতের ভিত্তিতে নয়। এখন এই সম্মান প্রদর্শনের জন্যও কাউকে সিজদা করা যাবে না। (যেহেতু এ ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্দেশ নেই।)
(২) ইবলীস সিজদা করতে অস্বীকার করে এবং আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত হয়। ইবলীস ক্বুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী জ্বিন (জাতিভুক্ত বড় আবেদ) ছিল। মহান আল্লাহ তার সম্মানার্থে ফিরিশ্তাদের মধ্যে তাকে শামিল করে রেখেছিলেন। এই জন্য আল্লাহর ব্যাপক নির্দেশে তার পক্ষেও সিজদা করা অত্যাবশ্যক ছিল। কিন্তু সে হিংসা ও অহংকারবশতঃ সিজদা করতে অস্বীকার করল। বলা বাহুল্য, এই হিংসা ও অহংকার এমন পাপ যা মানবতার দুনিয়ায় সর্বপ্রথম সম্পাদিত হয়েছে এবং এর সম্পাদনকারী ছিল ইবলীস।
(৩) অর্থাৎ, আল্লাহর ইলম ও তকদীর নির্ধারণে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর স্মরণ করুন, যখন আমরা ফেরেশতাদের বললাম, আমাকে সিজদা করো [১], তখন ইবলিশ [২] ছাড়া সকলেই সিজদা করলো ; সে অস্বীকার করলো ও অহংকার করলো [৩]। আর সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হলো [৪]।
[১] এ আয়াতে বাহ্যতঃ যে কথা বর্ণনা করা হয়েছে তা এই যে, আদম '‘আলাইহিস সালামকে সিজদা করার হুকুম ফেরেশতাদেরকে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে যখন এ কথা বলা হলো যে, ইবলীস ব্যতীত সব ফেরেশতাই সিজদা করলেন, তখন তাতে প্রমাণিত হলো যে, সিজদার নির্দেশ ইবলিসের প্রতিও ছিল। কিন্তু নির্দেশ প্রদান করতে গিয়ে শুধু ফেরেশতাগণের উল্লেখ এ জন্য করা হলো যে, তারাই ছিল সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ। যখন তাদেরকে আদম '‘আলাইহিস সালাম-এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হলো, তাতে ইবলিস অতি উত্তম রূপে এ নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত বলে জানা গেল। অথবা সে যেহেতু ফেরেশতাদের দলের মধ্যেই অবস্থান করছিল তখন তাকে অবশ্যই নির্দেশ পালন করতে হত। সে নিজেকে নির্দেশের বাইরে মনে করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। শুধুমাত্র তার গর্ব ও অহঙ্কারই তাকে তা করতে বাধা দিচ্ছিল। [ইবনে কাসীর]
এ আয়াতে আদম ‘‘আলাইহিস সালামকে সেজদা করতে ফেরেশতাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূরা ইউসুফ-এ ইউসুফ ‘আলাইহিস সালাম-এর পিতা-মাতা ও ভাইগণ মিশর পৌছার পর ইউসুফকে সিজদা করেছিলেন বলে উল্লেখ রয়েছে। এটা সুস্পষ্ট যে, এ সিজদা ‘ইবাদাতের উদ্দেশ্যে হতে পারে না। কেননা, আল্লাহ্ ব্যতীত অপরের ইবাদাত শির্ক ও কুফরী। কোন কালে কোন শরীআতে এরূপ কাজের বৈধতার কোন সম্ভাবনাই থাকতে পারে না। সুতরাং এর অর্থ এছাড়া অন্য কোন কিছুই হতে পারে না যে, প্রাচীনকালের সিজদা আমাদের কালের সালাম, মুসাফাহা, মু'আনাকা, হাতে চুমো খাওয়া এবং সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়ার সমার্থক ও সমতুল্য ছিল। ইমাম জাসসাস আহকামুল কুরআন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন যে, পূর্ববতী নবীগণের শরীআতে বড়দের প্রতি সম্মানসূচক সিজদা করা বৈধ ছিল। শরীআতে মুহাম্মদীতে তা রহিত হয়ে গেছে। বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতি হিসেবে এখন শুধু সালাম ও মুসাফাহার অনুমতি রয়েছে। রুকূ’-সিজদা এবং সালাতের মত করে হাত বেঁধে কারো সম্মানার্থে দাড়ানোকে অবৈধ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। [আহকামুল কুরআন লিল জাসসাস]
এখানে প্রশ্ন থেকে যায়, সিজদায়ে তা’জিমী বা সম্মানসূচক সিজদার বৈধতার প্রমাণ তো কুরআনুল কারীমের উল্লেখিত আয়াতসমূহে পাওয়া যায়, কিন্তু তা রহিত হওয়ার দলীল কি? উত্তর এই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামএর অনেক হাদীস দ্বারা সিজদায়ে তা’জিমী হারাম বলে প্রমাণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যদি আমি আল্লাহ্ তা'আলা ব্যতীত অন্য কারো প্রতি সিজদা করা জায়েয মনে করতাম, তবে স্বামীকে তাঁর বৃহৎ অধিকারের কারণে সিজদা করার জন্য স্ত্রীকে নির্দেশ দিতাম, কিন্তু এই শরীআতে সিজদায়ে- তা’জিমী সম্পূর্ণ হারাম বলে কাউকে সিজদা করা কারো পক্ষে জায়েয নয়’। [মুসনাদে আহমাদঃ ৩/১৫৮]
[২] ‘ইবলিস’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘চরম হতাশ’। আর পারিভাষিক অর্থে এমন একটি জিনকে ইবলিস বলা হয় যে আল্লাহ্র হুকুমের নাফরমানী করে আদম ও আদম-সন্তানদের অনুগত ও তাদের জন্য বিজিত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। মানব জাতিকে পথভ্রষ্ট করার ও কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে ভুল পথে চলার প্রেরণা দান করার জন্য সে আল্লাহ্র কাছে সময় ও সুযোগ প্রার্থনা করেছিল। আসলে শয়তান ও ইবলিস মানুষের মত একটি কায়াসম্পন্ন প্রাণীসত্তা। তাছাড়া সে ফেরেশতাদের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এ ভুল ধারণাও কারো না থাকা উচিত। কারণ পরবর্তী আলোচনাগুলোতে কুরআন নিজেই তার জীনদের অন্তর্ভুক্ত থাকার এবং ফেরেশতাদের থেকে আলাদা একটি স্বতন্ত্র শ্রেণীর সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য পরিবেশন করেছে।
[৩] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহঙ্কারও অবশিষ্ট থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না। ” [আবুদাউদ; ৪০৯১] আর ইবলীসের মন ছিল গর্ব ও অহঙ্কারে পরিপূর্ণ। সুতরাং আল্লাহ্র সমীপ থেকে দূরিভূত হওয়াই ছিল তার জন্য যুক্তিযুক্ত শাস্তি।
[৪] সুদ্দী বলেন, সে ঐ সমস্ত কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হল যাদেরকে আল্লাহ্ তখনও সৃষ্টি করেননি। যারা তার পরে কাফের হবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হল। মুহাম্মাদ ইবনে কাব আল-কুরায়ী বলেন, আল্লাহ্ ইবলীসকে কুফর ও পথভ্রষ্টতার উপরই সৃষ্টি করেছেন, তারপর সে ফেরেশতাদের আমল করলেও পরবর্তীতে যে কুফরির উপর তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সে তার দিকেই ফিরে গেল। [ইবনে কাসীর]
Tafsir Bayaan Foundation
আর যখন আমি ফেরেশতাদেরকে বললাম, ‘তোমরা আদমকে সিজদা কর’। তখন তারা সিজদা করল, ইবলীস ছাড়া। সে অস্বীকার করল এবং অহঙ্কার করল। আর সে হল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।
Muhiuddin Khan
এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।
Zohurul Hoque
আর স্মরণ করো! আমরা ফিরিশ্তাদের বললাম -- “আদমের প্রতি সিজদা করো।” সুতরাং তারা সিজদা করল, কিন্তু ইবলিস করলনা, কারণ সে ছিল কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত।