Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ২৯

Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 29

আল বাকারা [২]: ২৯ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ لَكُمْ مَّا فِى الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ اسْتَوٰٓى اِلَى السَّمَاۤءِ فَسَوّٰىهُنَّ سَبْعَ سَمٰوٰتٍ ۗ وَهُوَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمٌ ࣖ (البقرة : ٢)

huwa
هُوَ
He
তিনিই (আল্লাহ)
alladhī
ٱلَّذِى
(is) the One Who
যিনি
khalaqa
خَلَقَ
created
সৃষ্টি করেছেন
lakum
لَكُم
for you
তোমাদের জন্যে
مَّا
what
যা কিছু
فِى
(is) in
মধ্যে (আছে)
l-arḍi
ٱلْأَرْضِ
the earth
পৃথিবীর,
jamīʿan
جَمِيعًا
all
সবকিছুকেই
thumma
ثُمَّ
Moreover
এরপর
is'tawā
ٱسْتَوَىٰٓ
He turned
লক্ষ্য দিলেন
ilā
إِلَى
to
দিকে
l-samāi
ٱلسَّمَآءِ
the heaven
আকাশের
fasawwāhunna
فَسَوَّىٰهُنَّ
and fashioned them
অতঃপর তাদেরকে সম্পূর্ণ করলেন
sabʿa
سَبْعَ
seven
সাত
samāwātin
سَمَٰوَٰتٍۚ
heavens
আকাশ
wahuwa
وَهُوَ
And He
এবং তিনি
bikulli
بِكُلِّ
of every
সব
shayin
شَىْءٍ
thing
জিনিস সম্পর্কে
ʿalīmun
عَلِيمٌ
(is) All-Knowing
মহাজ্ঞানী

Transliteration:

Huwal lazee khalaqa lakum maa fil ardi jamee'an summas tawaaa ilas samaaa'i fasaw waahunna sab'a samaa waat; wa Huwa bikulli shai'in Aleem (QS. al-Baq̈arah:29)

English Sahih International:

It is He who created for you all of that which is on the earth. Then He directed Himself to the heaven, [His being above all creation], and made them seven heavens, and He is Knowing of all things. (QS. Al-Baqarah, Ayah ২৯)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

পৃথিবীর সবকিছু তিনি তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন এবং তা সপ্তাকাশে বিন্যস্ত করেন, তিনি সকল বিষয়ে বিশেষভাবে অবহিত। (আল বাকারা, আয়াত ২৯)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তিনি পৃথিবীর সব কিছু তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, (১) তারপর তিনি আকাশের দিকে মনোসংযোগ করেন (২) এবং তাকে (আকাশকে) সপ্তাকাশে (৩) বিন্যস্ত করেন, তিনি সকল বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।

(১) এ থেকে সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, যমীনে সৃষ্ট প্রত্যেক জিনিস মূলতঃ হালাল, যতক্ষণ না কোন জিনিসের হারাম হওয়ার কথা দলীল দ্বারা প্রমাণিত হবে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

(২) সালাফদের কেউ কেউ এর তর্জমা করেছেন, "অতঃপর আসমানের দিকে আরোহণ করেন।" (সহীহ বুখারী) মহান আল্লাহর আসমানের উপর আরশে আরোহণ করা এবং বিশেষ বিশেষ সময়ে নিকটের আসমানে অবতরণ করা তাঁর গুণবিশেষ। কোন অপব্যাখ্যা ছাড়াই এর উপর ঐভাবেই ঈমান আনা আমাদের উপর ওয়াজিব, যেভাবে তা ক্বুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

(৩) এ থেকে প্রথমতঃ জানা গেল যে, আসমান (আকাশ) এক অনুভূত বস্তু এবং বাস্তব জিনিস। কেবল উচ্চতা (মহাশূন্য)-কে আসমান বলে আখ্যায়িত করা হয়নি। দ্বিতীয়তঃ জানা গেল যে, আসমানের সংখ্যা হল সাত। আর হাদীস অনুযায়ী দুই আসমানের মধ্যেকার দূরত্ব হল পাঁচ শত বছরের পথ। আর যমীন সম্পর্কে ক্বুরআনে কারীমে এসেছে, {وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ} "এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে।" (ত্বালাক্ব ৬৫;১২ আয়াত) এ থেকে যমীনের সংখ্যাও সাত বলে জানা যায়। নবী (সাঃ)-এর হাদীস দ্বারা এ কথা আরো বলিষ্ঠ হয়। বলা হয়েছে, "যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে এক বিঘত যমীনও আত্মসাৎ করবে, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।" (সহীহ বুখারী ২৯৫৯নং) উক্ত আয়াত থেকে এ কথাও জানা যায় যে, আসমানের পূর্বে যমীন সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সূরা নাযিআত ৭৯;৩০ আয়াতে) আসমানের উল্লেখ ক'রে বলা হয়েছে, {وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهاَ} "যমীনকে এর পর বিস্তৃত করেছেন।" এর ব্যাখ্যা এই করা হয়েছে যে, প্রথমে যমীনই সৃষ্টি হয়েছে, তবে পরিষ্কার ও সমতল করে বিছানো হল সৃষ্টি থেকে ভিন্ন ব্যাপার, যেটা আসমান সৃষ্টির পর সম্পাদিত হয়েছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর [১] তিনি আসমানের প্রতি মনোনিবেশ [২] করে সেটাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করেছেন; আর তিনি সবকিছু সম্পর্কে সবিশেষ অবগত।

[১] এখানে যমীন সৃষ্টির পরে আসমান সৃষ্টি করা হয়েছে বলে বর্ণিত হয়েছে। অথচ সূরা আন-নাযিআতের ৩০ নং আয়াত বাহ্যতঃ এর বিপরীত মনে হয়। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সূরা ফুসসিলাতের ১০ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এখানে শুধু এটা জানাই যথেষ্ট যে, সহীহ সনদে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, "আল্লাহ্ তা'আলা যমীনকে আসমানের আগেই সৃষ্টি করেছিলেন এবং তার মধ্যে খাবার জাতীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করেছিলেন। কিন্তু সেটাকে আসমান সৃষ্টির পূর্বে প্রসারিত ও সামঞ্জস্য বিধান করেন নি। তারপর তিনি আকাশের প্রতি মনোযোগী হয়ে সেটাকে সাত আসমানে বিন্যস্ত করেন। তারপর তিনি যমীনকে সুন্দরভাবে প্রসারিত ও বিস্তৃত করেছেন। এটাই এ আয়াত এবং সূরা আন-নাযিআতের ৩০ নং আয়াতের মধ্যে বাহ্যতঃ উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর। আত-তাফসীরুস সহীহ মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহ্ তা'আলা আসমান সৃষ্টি করার আগেই যমীন সৃষ্টি করেন। যমীন সৃষ্টির পর তা থেকে এক ধোঁয়া বা বাষ্প উপরের দিকে উঠতে থাকে। আর সেটাই আল্লাহ্‌র বাণী; “তারপর তিনি আসমান সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করলেন এমতাবস্থায় যে, সেটা ছিল ধুম্রাকার" [সূরা ফুসসিলাত; ১১] [ইবনে কাসীর]

[২] পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে (اسْتَوٰى) শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, স্থান বিশেষে বিভিন্ন প্রকার অর্থে। সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায় তা তিনভাবে ব্যবহৃত হয়েছে;

১) (اسْتَوٰى) শব্দটি যেখানে পূর্ণ ক্রিয়া হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে অর্থাৎ তার পরে (عَلٰى) বা (اِلٰى) কিছুই না আসে তখন তার অর্থ হবে, সম্পূর্ণ হওয়া বা পূর্ণতা লাভ করা। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা মূসা ‘আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলেনঃ

(وَلَمَّا بَلَغَ اَشُدَّهٗ وَاسْتَوٰى)

অর্থাৎ আর যখন মূসা যৌবনে পদার্পণ করলেন এবং পূর্ণতা লাভ করলেন। [সূরা আল-কাসাসঃ ১৪]

২) (اسْتَوٰى) শব্দটির সাথে যদি (عَلٰى) আসে তখন তার অর্থ হবে - উপরে উঠা, আরোহণ করা। যেমন আল্লাহ্‌ তা'আলা তার নিজের সম্পর্কে বলেনঃ

(ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ)

অর্থাৎ তারপর তিনি আরশের উপর উঠলেন। অনুরূপভাবে সূরা (طه) তে এসেছেঃ

(اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى)

অর্থাৎ দয়াময় (রহমান) আরশের উপর উঠলেন।

(اسْتَوٰى) শব্দটির সাথে যদি (إلٰى) আসে তখন তার অর্থ হবে – ইচ্ছা করা, সংকল্প করা, মনোনিবেশ করা। আর সে অর্থই এ আয়াতে ব্যবহৃত , (ثُمَّ اسْتَوٰى اِلَى السَّمَآءِ)–এর অর্থ করা হবে- আকাশ সৃষ্টির ইচ্ছা করলেন। তবে মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এখানেও উপরে উঠার অর্থ হবে।
শেষোক্ত দু'অবস্থায় (اسْتَوٰى) শব্দটি যখন আল্লাহ্ তা'আলার সাথে সম্পৃক্ত হবে তখন তা তাঁর একটি সিফাত বা গুণ হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহ্‌র জন্য সে সিফাত বা গুণ কোন প্রকার অপব্যাখ্যা, পরিবর্তন, সদৃশ নির্ধারণ ছাড়াই সাব্যস্ত করা ওয়াজিব।

Tafsir Bayaan Foundation

তিনিই যমীনে যা আছে সব তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তারপর আসমানের প্রতি খেয়াল করলেন এবং তাকে সাত আসমানে সুবিন্যস্ত করলেন। আর সব কিছু সম্পর্কে তিনি সম্যক জ্ঞাত।

Muhiuddin Khan

তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত। তারপর তিনি মনোসংযোগ করেছেন আকাশের প্রতি। বস্তুতঃ তিনি তৈরী করেছেন সাত আসমান। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবহিত।

Zohurul Hoque

তিনিই সেইজন যিনি ঘূর্ণায়মান-পৃথিবীতে যা-কিছু আছে সবই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাছাড়া তিনি মহাকাশের প্রতি খেয়াল করলেন, তাই তাদের তিনি সাত আসমানে পরিপূর্ণ করলেন। আর তিনি সব-কিছু সন্বন্ধে সর্বজ্ঞাতা।