কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ২২
Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 22
আল বাকারা [২]: ২২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْاَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَاۤءَ بِنَاۤءً ۖوَّاَنْزَلَ مِنَ السَّمَاۤءِ مَاۤءً فَاَخْرَجَ بِهٖ مِنَ الثَّمَرٰتِ رِزْقًا لَّكُمْ ۚ فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ اَنْدَادًا وَّاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ (البقرة : ٢)
- alladhī
- ٱلَّذِى
- The One Who
- যিনি
- jaʿala
- جَعَلَ
- made
- করেছেন
- lakumu
- لَكُمُ
- for you
- তোমাদের জন্য
- l-arḍa
- ٱلْأَرْضَ
- the earth
- পৃথিবীকে
- firāshan
- فِرَٰشًا
- a resting place
- শয্যা
- wal-samāa
- وَٱلسَّمَآءَ
- and the sky
- ও আকাশকে
- bināan
- بِنَآءً
- a canopy
- ছাদ স্বরূপ,
- wa-anzala
- وَأَنزَلَ
- and sent down
- এবং বর্ষণ করেছেন
- mina
- مِنَ
- from
- থেকে
- l-samāi
- ٱلسَّمَآءِ
- the sky
- আকাশ
- māan
- مَآءً
- water
- পানি,
- fa-akhraja
- فَأَخْرَجَ
- then brought forth
- এরপর বের করেছেন
- bihi
- بِهِۦ
- therewith
- তা দ্বারা
- mina
- مِنَ
- [of]
- কোনো
- l-thamarāti
- ٱلثَّمَرَٰتِ
- the fruits
- (নানা ধরণের) ফলমূল
- riz'qan
- رِزْقًا
- (as) provision
- রিযক হিসাবে
- lakum
- لَّكُمْۖ
- for you
- তোমাদের জন্য
- falā
- فَلَا
- So (do) not
- অতএব না
- tajʿalū
- تَجْعَلُوا۟
- set up
- দাড় করিও
- lillahi
- لِلَّهِ
- to Allah
- আল্লাহর সাথে
- andādan
- أَندَادًا
- rivals
- সমতুল্য (অন্য কাউকে)
- wa-antum
- وَأَنتُمْ
- while you
- অথচ তোমরা
- taʿlamūna
- تَعْلَمُونَ
- [you] know
- জানো
Transliteration:
Allazee ja'ala lakumul arda firaashanw wassamaaa'a binaaa 'anw wa anzala minassamaaa'i maaa'an fa akhraja bihee minas samaraati rizqal lakum falaa taj'aloo lillaahi andaadanw wa antum ta'lamoon(QS. al-Baq̈arah:22)
English Sahih International:
[He] who made for you the earth a bed [spread out] and the sky a ceiling and sent down from the sky, rain and brought forth thereby fruits as provision for you. So do not attribute to Allah equals while you know [that there is nothing similar to Him]. (QS. Al-Baqarah, Ayah ২২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তদ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেন, কাজেই জেনে বুঝে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না। (আল বাকারা, আয়াত ২২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আকাশকে ছাদ সরূপ সৃষ্টি করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ ক’রে তার দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফল-মূল উৎপাদন করেছেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ স্থির করো না।
হিদায়াত এবং গুমরাহীর দিক দিয়ে মানুষের তিনটি দলের কথা উল্লেখ করার পর মহান আল্লাহর একত্ববাদ এবং তাঁর ইবাদতের প্রতি আহবান প্রত্যেক মানুষকে করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যখন তোমাদের ও সারা বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টা আল্লাহ, তোমাদের সমস্ত প্রয়োজনের ব্যবস্থাপক তিনিই, তখন তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত কেন কর? অন্যকে তাঁর সাথে অংশীদার স্থাপন কেন কর? যদি তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে চাও, তাহলে তার একটাই উপায় এই যে, তোমরা আল্লাহকে একক মেনে নিয়ে কেবল তাঁরই ইবাদত করো এবং জেনে-শুনে শির্ক করো না।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
যিনি যমীনকে তোমাদের জন্য বিছানা ও আসমানকে করেছেন ছাদ এবং আকাশ হতে পানি অবতীর্ণ করে তা দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্য ফলমূল উৎপাদন করেছেন। কাজেই তোমরা জেনে শুনে কাউকে আল্লাহ্র সমকক্ষ [১] দাঁড় করিও না।
[১] আয়াতে উল্লেখিত (أنداد) শব্দটি (ند) এর বহুবচন। যার অর্থ সমকক্ষ স্থির করা। এখানে আল্লাহ্র সমকক্ষ স্থির করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ সমকক্ষ স্থির করাটাই শির্ক। আর শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় গোনাহ। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ আল্লাহ্র নিকট সবচেয়ে বড় গোনাহ কোনটি? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্র সাথে কাউকে শরীক করা, অথচ তিনি সৃষ্টি করেছেন...। [বুখারীঃ ৪৪৭৭]
শির্কের প্রকারভেদঃ শির্ক দু'প্রকার, যথা- বড় শির্ক ও ছোট শির্ক। বড় শির্ক আবার দু'প্রকার। আল্লাহ্র রুবুবিয়্যাত তথা প্রভূত্বে শির্ক করা। আল্লাহ্র উলুহিয়াত তথা ইবাদাতে শির্ক করা। আল্লাহ্র রুবুবিয়্যাত বা প্রভূত্বে শির্ক দু’ভাবে হয়ে থাকে –
১) জগতের রব বা পালনকর্তা আল্লাহ্র অস্তিত্বকে স্বীকার না করা যেমন কমু্যনিষ্ট, নাস্তিক, মুলহিদ ইত্যাদি সম্প্রদায়। আল্লাহ্র নাম, গুণ ও কর্মকাণ্ডকে স্বীকার না করা, যেমন- ঈসমাঈলী সম্প্রদায়, বাহাই সম্প্রদায়, বুহরা সম্প্রদায়, জাহমিয়া ও মু'তাজিলা সমপ্রদায়। অনুরূপভাবে আল্লাহ্ ও বান্দার মধ্যে পার্থক্য না করে সৃষ্টি ও স্রষ্টাকে এক করে দেখা যেমন ওয়াহদাতুল অজুদে বিশ্বাসী সম্প্রদায়, যারা মনে করে যে, আল্লাহ্ কোন কিছুর সূরত ইখতিয়ার করে তাতে নিজেকে প্রকাশ করেন যেমন, হুলুলী সম্প্রদায় এবং যারা বিশ্বাস করে যে, কারো পক্ষে আল্লাহ্র সাথে একাকার হয়ে যাওয়া সম্ভব।
২) জগতের রব বা পালনকর্তা আল্লাহ্র সত্তা, নাম, গুণাবলী ও তাঁর কর্মকাণ্ডে কাউকে সমকক্ষ নির্ধারণ করা।
ক) আল্লাহ্র স্বত্ত্বার সমকক্ষ কোন সত্তা নির্ধারণ করার মত কোন শির্ক বনী আদমের মধ্যে বিরল। এ ধরণের দাবী প্রথম নমরূদ করেছিল, কিন্তু ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম-এর সাথে বিতর্কে সে তার সে দাবীর সপক্ষে যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়ে হেরে গিয়েছিল। অনুরূপভাবে ফিরআউনও প্রকাশ্যে এ ধরণের দাবী করেছিল। আল্লাহ্ তাকে স্বপরিবারে দলবলসহ ধ্বংস করে তার দাবীর অসারতা দেখিয়ে দিয়েছিলেন।
খ) আল্লাহ্র নামসমূহের কোন নাম অন্য কারো জন্য সাব্যস্ত করার মত শির্ক বিভিন্ন জাতিতে বিদ্যমান। যারাই তাদের উপাস্যদেরকে আল্লাহ্র নামের মত নাম দেয় তারাই এ ধরণের শির্কে লিপ্ত। যেমন হিন্দুগণ তাদের বিভিন্ন অবতারকে আল্লাহ্র নামসমূহের মত নাম দিয়ে থাকে। অনুরূপভাবে কোন কোন বাতেনী গ্রুপের লোকেরা যেমন, দ্রুজ সম্প্রদায়, নুসাইরী সম্প্রদায়, আগাখানী ঈসমাঈলী সম্প্রদায় তাদের ঈমামদেরকে আল্লাহ্র নামসমূহে অভিহিত করে।
গ) আল্লাহ্র গুণ ও কর্মকাণ্ডকে অন্য কারো জন্য সাব্যস্ত করা। আল্লাহ্র গুণ ও কর্মকাণ্ডের কোন শেষ নেই। সেগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। আল্লাহ্র অপার শক্তির সাথে সম্পৃক্ত, তাঁর জ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত এবং হুকুম ও শরীআতের সাথে সম্পৃক্ত।
১. আল্লাহ্র অপার শক্তির সাথে যারা শির্ক করে তাদের উদাহরণ হলো, ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সৃষ্টি, মৃত্যু, জীবন, বিপদাপদ থেকে উদ্ধার, উদ্দেশ্য হাসিলকারী বলে বিশ্বাস করে। যেমন, অনেক অজ্ঞ মূৰ্খ মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, অনেক সূফীরা তাদের পীর সাহেব সম্পর্কে বিশ্বাস করে থাকে। অনুরূপভাবে অনেকে কবরবাসী কোন লোক সম্পর্কে এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। তদ্রুপ অনেকে যাদুকর জাতীয় লোকদের সম্পর্কেও এ ধরণের বিশ্বাস করে। অনুরূপভাবে শিয়া সম্প্রদায়ও তাদের ইমামদের ব্যাপারে এ ধরণের বিশ্বাস করে।
২. আল্লাহ্র পরিপূর্ণ জ্ঞানের সাথে যারা শির্ক করে থাকে তাদের উদাহরণ হলো, ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে গায়েব জানে বলে বিশ্বাস করে। যেমন, অনেক অজ্ঞ মূৰ্খ মানুষ রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে, অনেক সুফীরা তাদের পীর সাহেব সম্পর্কে বিশ্বাস করে যে তারা গায়েব জানে। আবার অনেকে কবরবাসী কোন কোন লোক সম্পর্কে এ ধরণের বিশ্বাস পোষণ করে থাকে। তদ্রুপ অনেকে গণক, জ্যোতিষ, জ্বিন, প্রেতাত্মা, ইত্যাদীতে বিশ্বাস করে যে, তারাও গায়েব জানে। অনুরূপভাবে শিয়া সম্প্রদায়ও তাদের ইমামদের ব্যাপারে বিশ্বাস করে যে, তারা গায়েব জানতো।
৩. আল্লাহ্র শরীআত ও হুকুমের সাথে যারা শির্ক করে থাকে তাদের উদাহরণ হলো, ঐ সমস্ত লোকেরা যারা আল্লাহ্র মত শরীআত প্রবর্তনের অধিকার তাদের আলেম ও শাসকদের দিয়ে থাকে। যেমন, ঐ সমস্ত জাতি যারা সরকার বা পার্লামেন্টকে আল্লাহ্র আইন বিরোধী আইন রচনার অনুমতি দিয়েছে। অনুরুপ যারা আল্লাহ্র আইন পরিবর্তন করে তদস্থলে অন্য আইনে বিচার করা শ্রেয় বা জায়েয বা আল্লাহ্র আইন ও অন্যান্য আইন সমমানের মনে করে থাকে। শির্কের এ সমস্ত প্রকার আল্লাহ্র রুবুবিয়্যাত তথা প্রভূত্বের সাথে সম্পৃক্ত।
আল্লাহ্র ইবাদাতে শির্কঃ আল্লাহ্র ইবাদাতে শির্ক বলতে বুঝায়, আল্লাহ্ যা কিছু ভালবাসেন সন্তুষ্ট হন বান্দার এমন সব কথা ও কাজ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো জন্য করা। যেমন আল্লাহ্ তাঁর কাছে দোআ করা ভালবাসেন, তাঁর কাছে সাহায্য চাওয়া ভালবাসেন, তাঁর কাছে উদ্ধার কামনা ভালবাসেন, তাঁর কাছে পরিপূর্ণভাবে বিনয়ী হওয়া ভালবাসেন, তাঁর জন্যই সিজদা, রুকু, সালাত, যবেহ,মানত ইত্যাদী ভালবাসেন। এর কোনকিছু যদি কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে করে তবে তা হবে আল্লাহ্র ইবাদাতে শির্ক। অনুরুপভাবে কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ্র মত ভালবাসলে , অন্য কারো কাছে পরিপূর্ণ আশা করলে, অন্য কাউকে গোপন ভয় করলেও তা শির্ক হিসাবে গণ্য হবে। যেহেতু বান্দার ইবাদাতসমূহ বিশ্বাস, কথা ও কাজের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে, সে হিসাবে ইবাদতের মধ্যেও এ তিন ধরণের শির্ক পাওয়া যায়। অর্থাৎ কখনো কখনো ইবাদত হয় মনের ইচ্ছার মাধ্যমে, আন্তরিক আনুগত্যের মাধ্যমে, আবার কখনো কখনো তা সংঘটিত হয় বাহ্যিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। আবার কখনো কখনো তা সংঘটিত হয়ে থাকে কথাবার্তার মাধ্যমে।
দ্বিতীয় প্রকার শির্ক হলোঃ ছোট শির্ক, কিন্তু তাও কবীরাগুনাহ হতে মারাত্মক। ছোট শির্কের উদাহরণ হলো, এ প্রকার বলা যে, কুকুর না ডাকলে চোর আসত, আপনি ও আল্লাহ্ যা চান, আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করা, সামান্য লোক দেখানোর জন্য কোন কাজ করা। ইত্যাদি। [ইবনুল কাইয়্যেম, আল-জাওয়াবুল কাফী লিমান সাআলা আনিদ দাওয়ায়িশ শাফী'; শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সুলাইমান আত-তামীমী, আল-ওয়াজিবুল মুতাহাত্তিমাতুল মারিফাহ'; আশ-শির্ক ফিল কাদীম ওয়াল হাদীস গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত]
Tafsir Bayaan Foundation
যিনি তোমাদের জন্য যমীনকে করেছেন বিছানা, আসমানকে ছাদ এবং আসমান থেকে নাযিল করেছেন বৃষ্টি। অতঃপর তাঁর মাধ্যমে উৎপন্ন করেছেন ফল-ফলাদি, তোমাদের জন্য রিয্কস্বরূপ। সুতরাং তোমরা জেনে-বুঝে আল্লাহর জন্য সমকক্ষ নির্ধারণ করো না।
Muhiuddin Khan
যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।
Zohurul Hoque
যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীকে ফরাশ বানিয়েছেন, আর আকাশকে চাঁদোয়া, আর তিনি আকাশ থেকে পাঠান বৃষ্টি, তা’ দিয়ে তারপর ফলফসল উৎপাদন করেন তোমাদের জন্য রিযেক হিসেবে। অতএব আল্লাহ্র সাথে প্রতিদ্বন্ধী খাড়া করো না, অধিকন্তু তোমরা জানো।