কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ১৫০
Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 150
আল বাকারা [২]: ১৫০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَمِنْ حَيْثُ خَرَجْتَ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۗ وَحَيْثُ مَا كُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهٗ ۙ لِئَلَّا يَكُوْنَ لِلنَّاسِ عَلَيْكُمْ حُجَّةٌ اِلَّا الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مِنْهُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِيْ وَلِاُتِمَّ نِعْمَتِيْ عَلَيْكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَهْتَدُوْنَۙ (البقرة : ٢)
- wamin
- وَمِنْ
- And from
- এবং হতেই
- ḥaythu
- حَيْثُ
- wherever
- যেখান
- kharajta
- خَرَجْتَ
- you start forth
- তুমি বের হও
- fawalli
- فَوَلِّ
- [so] turn
- তুমি তখন ফিরাও
- wajhaka
- وَجْهَكَ
- your face
- তোমার মুখ
- shaṭra
- شَطْرَ
- (in the) direction
- দিকে
- l-masjidi
- ٱلْمَسْجِدِ
- (of) Al-Masjid
- মসজিদে
- l-ḥarāmi
- ٱلْحَرَامِۚ
- Al-Haraam
- হারামের
- waḥaythu
- وَحَيْثُ
- And wherever
- এবং যেখানেই
- mā
- مَا
- that
- (কি)
- kuntum
- كُنتُمْ
- you (all) are
- তোমরা থাক
- fawallū
- فَوَلُّوا۟
- [so] turn
- তোমরা তখন ফিরাবে
- wujūhakum
- وُجُوهَكُمْ
- your faces
- তোমাদের মুখ
- shaṭrahu
- شَطْرَهُۥ
- (in) its direction
- তার দিকে
- li-allā
- لِئَلَّا
- so that not
- না যেন
- yakūna
- يَكُونَ
- will be
- হয়
- lilnnāsi
- لِلنَّاسِ
- for the people
- মানুষের জন্য
- ʿalaykum
- عَلَيْكُمْ
- against you
- তোমাদের বিরুদ্ধে
- ḥujjatun
- حُجَّةٌ
- any argument
- কোন প্রমাণ
- illā
- إِلَّا
- except
- তবে
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- যারা
- ẓalamū
- ظَلَمُوا۟
- wronged
- সীমালঙ্ঘন করেছে
- min'hum
- مِنْهُمْ
- among them
- তাদের মধ্যে থেকে (তাদের কথা ভিন্ন)
- falā
- فَلَا
- so (do) not
- না তাই
- takhshawhum
- تَخْشَوْهُمْ
- fear them
- ভয় কর তাদেরকে
- wa-ikh'shawnī
- وَٱخْشَوْنِى
- but fear Me
- বরং তোমরা আমাকেই ভয় করো
- wali-utimma
- وَلِأُتِمَّ
- And that I complete
- এবং আমি পূর্ণ করি যেন
- niʿ'matī
- نِعْمَتِى
- My favor
- আমার অনুগ্রহ
- ʿalaykum
- عَلَيْكُمْ
- upon you
- তোমাদের উপর
- walaʿallakum
- وَلَعَلَّكُمْ
- [and] so that you may
- ও আশা করা যায় তোমরা
- tahtadūna
- تَهْتَدُونَ
- (be) guided
- সঠিক পথে চলবে
Transliteration:
Wa min haisu kharajta fawalli wajhaka shatral Masjidil Haraam; wa haisu maa kuntum fawalloo wujoohakum shatrahoo li'allaa yakoona linnaasi 'alaikum hujjatun illal lazeena zalamoo minhum falaa takhshawhum wakhshawnee wa liutimma ni'matee 'alaikum wa la'allakum tahtadoon(QS. al-Baq̈arah:150)
English Sahih International:
And from wherever you go out [for prayer], turn your face toward al-Masjid al-Haram. And wherever you [believers] may be, turn your faces toward it in order that the people will not have any argument against you, except for those of them who commit wrong; so fear them not but fear Me. And [it is] so I may complete My favor upon you and that you may be guided, (QS. Al-Baqarah, Ayah ১৫০)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তুমি যেখান থেকেই বের হও, নিজের মুখ মাসজিদে হারামের দিকে ফিরাও, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, নিজেদের মুখগুলো ওর দিকে করিও, যাতে তাদের মধ্যেকার যালিম লোক ছাড়া অন্যান্য লোকেদের তোমাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলার না থাকে, কাজেই তাদেরকে ভয় করো না, আমাকেই ভয় কর, যাতে আমি তোমাদের প্রতি আমার নি‘মাত পূর্ণ করতে পারি, যাতে তোমরা সত্য পথে পরিচালিত হতে পার। (আল বাকারা, আয়াত ১৫০)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর তুমি যেখান হতেই বের হও না কেন, মাসজিদুল হারামের (কা’বা শরীফের) দিকে মুখ ফেরাও এবং যেখানেই থাক না কেন, সেই (কা’বার) দিকেই মুখ ফেরাও।[১] যাতে তাদের মধ্যে সীমালঘংনকারিগণ[২] ছাড়া অন্য কোন লোক তোমাদের সাথে বিতর্ক না করতে পারে।[৩] সুতরাং তোমরা তাদের ভয় করো না,[৪] বরং একমাত্র আমাকেই ভয় কর, যাতে আমি আমার অনুগ্রহ তোমাদেরকে পরিপূর্ণরূপে দান করতে পারি এবং যাতে তোমরা সৎপথ পেতে পার।
[১] ক্বিবলার দিকে মুখ ফিরানোর নির্দেশের তিনবার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। হয় এর উপর তাকীদ ও এর গুরুত্ব বর্ণনা করার জন্য অথবা এই জন্য যে, এটা কোন বিধানকে রহিত ঘোষণা করার প্রথম পরীক্ষা ছিল। তাই মনের মধ্যেকার সন্দেহ-সংশয় ও খুঁতখুঁতে ভাবকে দূর করার জন্য জরুরী ছিল যে, তার বারবার পুনরাবৃত্তি করে মানুষের অন্তরে সুদৃঢ় করে দেওয়া হোক। আবার এও হতে পারে যে, একাধিক কারণের জন্য এ রকম করা হয়েছে। এক কারণ তো এই ছিল যে, নবী করীম (সাঃ)-এর এটা আন্তরিক ইচ্ছা ও আশা ছিল। তা বর্ণনা করার জন্য এ কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় কারণ, প্রত্যেক ধর্মাবলম্বি ও দাওয়াতদাতার নিজস্ব পৃথক কেন্দ্র (ক্বিবলা) ছিল, তা বর্ণনা করে এ কথার পুনরাবৃত্তি হয়। তৃতীয় কারণ, বিরোধীপক্ষের অভিযোগসমূহের খন্ডনের জন্য তৃতীয়বার তা পুনরুক্ত হয়। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[২] এখানে {ظَلَمُوْا} (সীমালংঘনকারী যালেম) থেকে বিদ্বেষ পোষণকারীদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ, আহলে-কিতাবদের মধ্যে যারা কট্টর বিদ্বেষী, তারা জানে যে, শেষ নবীর ক্বিবলা কা'বাগৃহ হবে, তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র শত্রুতাবশতঃ বলবে যে, 'বায়তুল মুক্বাদ্দাসের পরিবর্তে কা'বাকে ক্বিবলা বানিয়ে মুহাম্মাদ শেষ পর্যন্ত স্বীয় বাপ-দাদার ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে।' আবার কারো কাছে সীমালংঘনকারী বলে উদ্দেশ্য হল মক্কার মুশরিকগণ।
[৩] অর্থাৎ, যাতে আহলে-কিতাব বলতে না পারে যে, আমাদের কিতাবে তো ওদের ক্বিবলা কা'বা শরীফ বলা হয়েছে, অথচ ওরা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায পড়ছে।
[৪] 'তাদেরকে ভয় করো না' অর্থাৎ, মুশরিকদের কথার পরোয়া করো না। তারা বলেছিল যে, মুহাম্মাদ তো আমাদের ক্বিবলা গ্রহণ করে নিয়েছে, এবার অতি সত্বর দেখবে সে আমাদের দ্বীনও গ্রহণ করে নেবে। 'আমাকেই ভয় কর' অর্থাৎ, যে নির্দেশ আমি দিতে থাকব, তার উপর নির্ভয়ে আমল করতে থাকো। ক্বিবলার পরিবর্তনকে অনুগ্রহ পরিপূর্ণতা ও পথপ্রাপ্তি বলে আখ্যায়িত করে এ কথা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে যে, অবশ্যই আল্লাহর নির্দেশের উপর আমল মানুষকে অনুগ্রহ, পুরস্কার ও সম্মানের অধিকারী বানায় এবং সে সুপথপ্রাপ্তি তথা হিদায়াতের তওফীক লাভ করে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর আপনি যেখান থেকেই বের হন না কেন মসজিদুল হারামের দিকে আপনার চেহারা ফিরান এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন এর দিকে তোমাদের চেহারা ফিরাও [১], যাতে তাদের মধ্যে যালিম ছাড়া অন্যদের তোমাদের বিরুদ্ধে বিতর্কের কিছু না থাকে। কাজেই তাদেরকে ভয় করো না এবং আমাকেই ভয় কর। আর যাতে আমি তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করি এবং যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ কর।
[১] আলোচ্য আয়াতে কেবলা পরিবর্তনের বিষয়টি বলতে গিয়ে
(فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ)
বাক্যটি তিনবার এবং
(وَحَيْثُ مَاكُنْتُمْ فَوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ شَطْرَهٗ)
বাক্যটি দু’বার করে পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এর একটা সাধারণ কারণ এই যে, কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশটি বিরোধীদের জন্য তো এক হৈ-চৈএর ব্যাপার ছিলই, স্বয়ং মুসলিমদের জন্যও তাদের ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে ছিল একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কাজেই এ নির্দেশটি যদি যথার্থ তাকীদ ও গুরুত্ব সহকারে ব্যক্ত করা না হত, তাহলে মনের প্রশান্তি অর্জন হয়ত যথেষ্ট সহজ হত না। আর সেজন্যই নির্দেশটিকে বার বার পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। তদুপরি এতে এরূপ ইংগিতও রয়েছে যে, কেবলার এই যে পরিবর্তন, এটাই সর্বশেষ পরিবর্তন। এরপর পুনঃপরিবর্তনের আর কোন সম্ভাবনা নেই।
Tafsir Bayaan Foundation
আর তুমি যেখান থেকেই বের হও, তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকে তোমাদের চেহারা ফিরাও, যাতে তোমাদের বিপক্ষে মানুষের বিতর্ক করার কিছু না থাকে। তবে তাদের মধ্য থেকে যারা যুলম করেছে, তারা ছাড়া। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না, আমাকে ভয় কর। আর যাতে আমি আমার নিআমত তোমাদের উপর পূর্ণ করতে পারি এবং যাতে তোমরা হিদায়াতপ্রাপ্ত হও।
Muhiuddin Khan
আর তোমরা যেখান থেকেই বেরিয়ে আস এবং যেখানেই অবস্থান কর, সেদিকেই মুখ ফেরাও, যাতে করে মানুষের জন্য তোমাদের সাথে ঝগড়া করার অবকাশ না থাকে। অবশ্য যারা অবিবেচক, তাদের কথা আলাদা। কাজেই তাদের আপত্তিতে ভীত হয়ো না। আমাকেই ভয় কর। যাতে আমি তোমাদের জন্যে আমার অনুগ্রহ সমূহ পূর্ণ করে দেই এবং তাতে যেন তোমরা সরলপথ প্রাপ্ত হও।
Zohurul Hoque
আর যেখান থেকেই তুমি আস, তোমার মুখ পবিত্র মসজিদের দিকে ফেরাবে। আর যেখানেই তোমরা থাকো, তোমাদের মুখ সেই দিকেই ফেরাবে। যাতে তোমাদের বিরুদ্ধে লোকজনদের কোনো হুজ্জত না থাকে -- তাদের মাঝে যারা অন্যায় করে তারা ব্যতীত। অতএব তাদের ভয় করো না, বরং ভয় করো আমাকে। আর যাতে আমি তোমাদের উপরে আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করতে পারি, আর যাতে তোমরা সুপথগামী হতে পারো, --