Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ১১৪

Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 114

আল বাকারা [২]: ১১৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ مَّنَعَ مَسٰجِدَ اللّٰهِ اَنْ يُّذْكَرَ فِيْهَا اسْمُهٗ وَسَعٰى فِيْ خَرَابِهَاۗ اُولٰۤىِٕكَ مَا كَانَ لَهُمْ اَنْ يَّدْخُلُوْهَآ اِلَّا خَاۤىِٕفِيْنَ ەۗ لَهُمْ فِى الدُّنْيَا خِزْيٌ وَّلَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيْمٌ (البقرة : ٢)

waman
وَمَنْ
And who
এবং কে (আছে)
aẓlamu
أَظْلَمُ
(is) more unjust
বড় সীমালঙ্ঘনকারী
mimman
مِمَّن
than (one) who
তার চেয়ে যে
manaʿa
مَّنَعَ
prevents
বাধা দেয়
masājida
مَسَٰجِدَ
(the) masajid
মাসজিদে
l-lahi
ٱللَّهِ
(of) Allah
আল্লাহ্‌র
an
أَن
to
যে
yudh'kara
يُذْكَرَ
be mentioned
স্মরণ করা
fīhā
فِيهَا
in them
তার মধ্যে
us'muhu
ٱسْمُهُۥ
His name
তার নাম
wasaʿā
وَسَعَىٰ
and strives
এবং সে চেষ্টা করে
فِى
for
ব্যাপারে
kharābihā
خَرَابِهَآۚ
their destruction?
তার ধ্বংসের
ulāika
أُو۟لَٰٓئِكَ
Those!
ঐসব লোক
مَا
Not
নয়
kāna
كَانَ
it is
(সঙ্গত) ছিল
lahum
لَهُمْ
for them
তাদের জন্য
an
أَن
that
যে
yadkhulūhā
يَدْخُلُوهَآ
they enter them
তাতে প্রবেশ করবে
illā
إِلَّا
except
এছাড়া যে
khāifīna
خَآئِفِينَۚ
(like) those in fear
ভীত হয়ে
lahum
لَهُمْ
For them
তাদের জন্য(রয়েছে)
فِى
in
মধ্যে
l-dun'yā
ٱلدُّنْيَا
the world
পৃথিবীর
khiz'yun
خِزْىٌ
(is) disgrace
লাঞ্ছনা
walahum
وَلَهُمْ
and for them
ও তাদের জন্য(রয়েছে)
فِى
in
মধ্যে
l-ākhirati
ٱلْءَاخِرَةِ
the Hereafter
আখিরাতের
ʿadhābun
عَذَابٌ
(is) a punishment
শাস্তি
ʿaẓīmun
عَظِيمٌ
great
কঠিন

Transliteration:

Wa man azlamu mimmam-mana'a masaajidal laahi ai-yuzkara feehas muhoo wa sa'aa fee kharaabihaaa; ulaaa'ika maa kaana lahum ai yadkhuloohaaa illaa khaaa''feen; lahum fiddunyaa khizyunw wa lahum fil aakhirati 'azaabun 'azeem (QS. al-Baq̈arah:114)

English Sahih International:

And who are more unjust than those who prevent the name of Allah from being mentioned [i.e., praised] in His mosques and strive toward their destruction. It is not for them to enter them except in fear. For them in this world is disgrace, and they will have in the Hereafter a great punishment. (QS. Al-Baqarah, Ayah ১১৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

তার চেয়ে বড় যালেম কে, যে ব্যক্তি আল্লাহর মাসজিদগুলোতে আল্লাহর নাম নিতে বাধা দেয় এবং ওগুলোর ধ্বংস সাধনের চেষ্টা করে? অথচ ভয়ে ভীত না হয়ে তাদের জন্য মাসজিদে প্রবেশ সঙ্গত ছিল না, এদের জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (আল বাকারা, আয়াত ১১৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যে আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয়[১] ও তার ধ্বংস-সাধনে প্রয়াসী হয়, [২] তার থেকে বড় সীমালংঘনকারী আর কে হতে পারে? অথচ ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ছাড়া তাদের জন্য মসজিদে প্রবেশ করা সঙ্গত নয়।[৩] তাদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা ভোগ ও পরকালে মহা শাস্তি রয়েছে।

[১] যারা মসজিদে আল্লাহর যিকর করতে বাধা দান করেছিল, তারা কারা? তাদের ব্যাপারে মুফাসসিরদের দু'টি মত রয়েছে। একটি মত হল, এ থেকে খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। যারা রোমসম্রাটের সাথে সাথ দিয়ে ইয়াহুদীদেরকে বায়তুল মুক্বাদ্দাসে নামায পড়তে বাধা দিয়েছিল এবং তার বিনাশ সাধনে অংশ নিয়েছিল। ইবনে জারীর ত্বাবারী এই মতকেই পছন্দ করেছেন। কিন্তু হাফেয ইবনে কাসীর এই মতের বিরোধিতা করে বলেন, এ থেকে মক্কার মুশরিকদের বুঝানো হয়েছে। তারা নবী করীম (সাঃ) ও তাঁর সাহাবাদেরকে মক্কা থেকে বের হতে বাধ্য করেছিল এবং কা'বা শরীফে মুসলিমদেরকে ইবাদত করতে বাধা দিয়েছিল। আবার হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় একই আচরণের পুনরাবৃত্তি করে বলেছিল যে, আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের হত্যাকারীদেরকে মক্কায় প্রবেশ করতে দেবো না, অথচ কা'বা শরীফে ইবাদত করতে বাধা দেওয়ার অনুমতি ও তার প্রচলন ছিল না।

[২] বিনাশ ও ধ্বংস সাধনের অর্থ শুধু এই নয় যে, তা ভেঙ্গে দেওয়া হোক বা ইমারতের অনিষ্ট করা হোক, বরং সেখানে আল্লাহর ইবাদত ও যিকর করতে না দেওয়া, শরীয়ত প্রতিষ্ঠা করতে এবং শিরকীয় কার্যকলাপ থেকে পবিত্র করতে না দেওয়াও আল্লাহর ঘরের বিনাশ ও ধ্বংস সাধন করার শামিল।

[৩] এখানে শব্দগুলো ঘোষণামূলক হলেও এর অর্থ হবে বাঞ্ছনার। অর্থাৎ, যখন মহান আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠা ও বিজয় দান করবেন, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে সেখানে সন্ধি ও জিযিয়াকর ব্যতীত সেখানে (প্রবেশ বা) অবস্থান করার অনুমতি না দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তাই যখন ৮ম হিজরীতে মক্কা বিজয় হল, তখন নবী করীম (সাঃ) ঘোষণা করলেন যে, আগামী বছর কোন মুশরিক কা'বায় এসে হজ্জ করার এবং উলঙ্গ তওয়াফ করার অনুমতি পাবে না এবং যার সাথে যে চুক্তি আছে, সে চুক্তির (নির্ধারিত) সময় পর্যন্ত সে এখানে থাকার অনুমতি পাবে। কেউ বলেছেন, এটা একটা সুসংবাদ ও ভবিষ্যদ্বাণী যে, অতি সত্বর মুসলিমরা জয়লাভ করবে এবং মুশরিকরা এই ভেবে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করবে যে, আমরা মুসলিমদের উপর যে যুলুম-অত্যাচার করেছি তার বদলায় হয়তো আমাদেরকে শাস্তি ও হত্যারও শিকার হতে হবে। বলা বাহুল্য, অতি সত্বর এই সুসংবাদ বাস্তবে রূপান্তরিত হয়।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর তার চেয়ে অধিক যালিম আর কে হতে পারে, যে আল্লাহ্‌র মসজিদগুলোতে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাঁধা দেয় এবং এগুলো বিরাণ করার চেষ্টা করে? অথচ ভীত-সন্ত্রস্ত না হয়ে তাদের জন্য সেগুলোতে প্রবেশ করা সঙ্গত ছিল না। দুনিয়াতে তাদের জন্য লাঞ্ছনা ও আখেরাতে রয়েছে মহাশাস্তি [১]।

[১] ইসলাম-পূর্বকালে ইয়াহুদীরা ইয়াহইয়া ‘আলাইহিস সালাম-কে হত্যা করলে নাসারারা তার প্রতিশোধ গ্রহণে বদ্ধপরিকর হয়। তারা ইরাকের একজন অগ্নি-উপাসক সম্রাটের সাথে মিলিত হয়ে ইয়াহুদীদের উপর আক্রমণ চালায় - তাদের হত্যা ও লুন্ঠন করে, তাওরাতের কপিসমূহ জ্বালিয়ে ফেলে, বায়তুল মুকাদাসে আবর্জনা ও শুকর নিক্ষেপ করে, মসজিদের প্রাচীর ক্ষত-বিক্ষত করে সমগ্র শহরটিকে জন-মানবহীন করে দেয়। এতে ইয়াহুদীদের শক্তি পদদলিত ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আমল পর্যন্ত বায়তুল মুকাদাস এমনিভাবে পরিত্যক্ত ও বিধ্বস্ত অবস্থায় ছিল। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর খেলাফত আমলে যখন সিরিয়া ও ইরাক বিজিত হয়, তখন তারই নির্দেশক্রমে বায়তুল মুকাদ্দাস পুনঃনির্মিত হয়। এরপর দীর্ঘকাল পর্যন্ত সমস্ত সিরিয়া ও বায়তুল-মুকাদাস মুসলিমদের অধিকারে ছিল। অতঃপর বায়তুল-মুকাদাস মুসলিমদের হস্তচ্যুত হয় এবং প্রায় অর্ধশতাব্দীকাল পর্যন্ত ইউরোপীয় নাসারাদের অধিকারে থাকে। অবশেষে হিজরী ষষ্ট শতকে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবী বায়তুল-মুকাদাস পুনরুদ্ধার করেন। এ আয়াত থেকে কতিপয় প্রয়োজনীয় মাসআলা ও বিধানও প্রমাণিত হয়।

প্রথমতঃ শিষ্টতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সকল মসজিদ একই পর্যায়ভুক্ত। বায়তুল-মুকাদ্দাস, মসজিদে হারাম ও মসজিদে-নববীর অবমাননা, যেমনি বড় যুলুম, তেমনি অন্যান্য মসজিদের বেলায়ও তা সমভাবে প্রযোজ্য। তবে এই তিনটি মসজিদের বিশেষ মাহাত্ম্য ও সম্মান স্বতন্ত্রভাবে স্বীকৃত। এক সালাতের সওয়াব মসজিদে হারামে একলক্ষ সালাতের সমান এবং মসজিদে নববীতে এক হাজার সালাতের সমান। আর বায়তুল-মুকাদ্দাস মসজিদে পাঁচশত সালাতের সমান। এই তিন মসজিদে সালাত আদায় করার উদ্দেশ্যে দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে সেখানে পৌছা বিরাট সওয়াব ও বরকতের বিষয়। কিন্তু অন্য কোন মসজিদে সালাত আদায় করা উত্তম মনে করে দূর-দূরান্ত থেকে সফর করে আসা জায়েয নেই।

দ্বিতীয়তঃ মসজিদে যিক্‌র ও সালাতে বাধা দেয়ার যত পন্থা হতে পারে সে সবগুলোই হারাম। তন্মধ্যে একটি প্রকাশ্য পন্থা এই যে, মসজিদে গমন করতে অথবা সেখানে সালাত আদায় ও তিলাওয়াত করতে পরিস্কার ভাষায় নিষেধাজ্ঞা প্রদান। দ্বিতীয় পন্থা এই যে, মসজিদে হট্টগোল করে অথবা আশে-পাশে গান-বাজনা করে মুসল্লীদের সালাত আদায় ও যিকরে বিঘ্ন সৃষ্টি করা।

তৃতীয়তঃ মসজিদ জনশূন্য করার জন্য সম্ভবপর যত পন্থা হতে পারে সবই হারাম। খোলাখুলিভাবে মসজিদকে বিধ্বস্ত করা ও জনশূন্য করা যেমনি এর অন্তর্ভুক্ত তেমনিভাবে এমন কারণ সৃষ্টি করাও এর অন্তর্ভুক্ত, যার ফলে মসজিদ জনশূন্য হয়ে পড়ে। মসজিদ জনশূন্য হওয়ার অর্থ এই যে, সেখানে সালাত আদায় করার জন্য কেউ আসে না কিংবা সালাত আদায়কারীর সংখ্যা হ্রাস পায়।

Tafsir Bayaan Foundation

আর তার চেয়ে অধিক যালেম কে, যে আল্লাহর মাসজিদসমূহে তাঁর নাম স্মরণ করা থেকে বাধা প্রদান করে এবং তা বিরাণ করতে চেষ্টা করে? তাদের তো উচিৎ ছিল ভীত হয়ে তাতে প্রবেশ করা। তাদের জন্য দুনিয়ায় রয়েছে লাঞ্ছনা আর আখিরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাআযাব।

Muhiuddin Khan

যে ব্যাক্তি আল্লাহর মসজিদসমূহে তাঁর নাম উচ্চারণ করতে বাধা দেয় এবং সেগুলোকে উজাড় করতে চেষ্টা করে, তার চাইতে বড় যালেম আর কে? এদের পক্ষে মসজিদসমূহে প্রবেশ করা বিধেয় নয়, অবশ্য ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায়। ওদের জন্য ইহকালে লাঞ্ছনা এবং পরকালে কঠিন শাস্তি রয়েছে।

Zohurul Hoque

আর তার চাইতে কে বেশী অন্যায়কারী যে আল্লাহ্‌র মসজিদসমূহে বাধা দেয় এইজন্য যে সে-সবে তাঁর নাম স্মরণ করা হবে, আর চেষ্টা করে সে-সবের অনিষ্ট সাধনে? এদের ক্ষেত্রে, তাদের জন্য নয় যে তারা এ-সবে দাখিল হয় ভয়াতুর না হয়ে। তাদের জন্য এই দুনিয়াতে আছে অপমান, আর পরকালে তাদের জন্য কঠোর শাস্তি।