Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা আল বাকারা আয়াত ১০৪

Qur'an Surah Al-Baqarah Verse 104

আল বাকারা [২]: ১০৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

يٰٓاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَقُوْلُوْا رَاعِنَا وَقُوْلُوا انْظُرْنَا وَاسْمَعُوْا وَلِلْكٰفِرِيْنَ عَذَابٌ اَلِيْمٌ (البقرة : ٢)

yāayyuhā
يَٰٓأَيُّهَا
O you
হে
alladhīna
ٱلَّذِينَ
who
যারা
āmanū
ءَامَنُوا۟
believe[d]!
ঈমান এনেছ
لَا
"(Do) not
''না
taqūlū
تَقُولُوا۟
say
তোমরা বলো
rāʿinā
رَٰعِنَا
"Raina"
''রায়িনা''
waqūlū
وَقُولُوا۟
and say
বরং তোমরা বলো
unẓur'nā
ٱنظُرْنَا
"Unzurna"
''উনজুরনা''
wa-is'maʿū
وَٱسْمَعُوا۟ۗ
and listen
এবং তোমরা শুনো
walil'kāfirīna
وَلِلْكَٰفِرِينَ
And for the disbelievers
এবং কাফিরদের জন্য (রয়েছে)
ʿadhābun
عَذَابٌ
(is) a punishment
শাস্তি
alīmun
أَلِيمٌ
painful
নিদারুণ

Transliteration:

Yaaa ayyuhal lazeena aamanoo laa taqooloo raa'inaa wa qoolun zurnaa wasma'oo; wa lilkaafireena 'azaabun aleem (QS. al-Baq̈arah:104)

English Sahih International:

O you who have believed, say not [to Allah's Messenger], "Ra’ina" but say, "Unzurna" and listen. And for the disbelievers is a painful punishment. (QS. Al-Baqarah, Ayah ১০৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ‘রা‘এনা’ বলে সম্বোধন করো না, (যার অর্থ আমাদের রাখাল) বরং তোমরা বলবে ‘‘উনযুরনা’’ (অর্থাৎ আমাদের প্রতি নেকদৃষ্টি দিবেন!) এবং শুনে নাও, বস্তুতঃ অবিশ্বাসীদের জন্যই রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। (আল বাকারা, আয়াত ১০৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

হে বিশ্বাসীগণ! (তোমরা মুহাম্মাদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাকে) ‘রায়িনা’ বলো না, বরং ‘উনযুরনা’ (আমাদের খেয়াল করুন) বল[১] এবং (তার নির্দেশ) শুনে নাও। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

[১] رَاعِنَا এর অর্থ আমাদের প্রতি ভ্রূক্ষেপ ও আমাদের দিকে খেয়াল করুন! কোন কথা বুঝা না গেলে এই শব্দ ব্যবহার করে শ্রোতা নিজের প্রতি বক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করত। কিন্তু ইয়াহুদীরা বিদ্বেষ ও অবাধ্যতাবশতঃ এই শব্দের কিছুটা বিকৃতি ঘটিয়ে ব্যবহার করত যাতে তার অর্থের পরিবর্তন ঘটতো এবং তাদের অবাধ্যতার স্পৃহায় মিষ্ট স্বাদ পেত। যেমন তারা বলত, رَاعِيْنَا 'রায়ীনা' (আমাদের রাখাল) অথবা رَاعِنَا 'রায়েনা' (নির্বোধ)। অনুরূপভাবে তারা السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ এর পরিবর্তে السَّامُ عَلَيْكُمْ (আপনার মৃত্যু হোক!) বলত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, তোমরা "اُنْظُرْنَا' বলো। এ থেকে প্রথম একটি বিষয় এই জানা গেল যে, এমন শব্দসমূহ যার মধ্যে দোষ ও অপমানকর অর্থের আভাস পর্যন্ত থাকবে, আদব ও সম্মানার্থে এবং (বেআদবীর) ছিদ্রপথ বন্ধ করতে তার ব্যবহার ঠিক নয়। আর দ্বিতীয় যে বিষয় প্রমাণিত হয় তা হল, কথা ও কাজে কাফেরদের সাদৃশ্য গ্রহণ করা থেকে দূরে থাকা জরুরী। যাতে মুসলিম সেই তিরস্কারে শামিল না হয়, যাতে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, "যে কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই একজন গণ্য হবে।" (আবূ দাউদ, কিতাবুল্লিবাস, আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

হে মুমিনগণ! তোমরা ‘রা'এনা’ [১] বলো না, বরং ‘উনযুরনা" [২] বলো এবং শোন। আর কাফেরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে।

[১] (رَاعِنَا) বা 'রা'এনা' শব্দটি আরবী ভাষায় নির্দেশসূচক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন'। সাহাবাগণ এ শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করত। কিন্তু এ শব্দটি ইয়াহুদীদের ভাষায় এক প্রকার গালি ছিল, যা দ্বারা বুঝা হতো বিবেক বিকৃত লোক। তারা এ শব্দটি রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে উপহাসসুচক ব্যবহার করত মুমিনরা এ ব্যাপারটি উপলব্ধি না করে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে ব্যবহার করা শুরু করে, ফলে আল্লাহ্‌ তা'আলা এ ধরণের কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে আয়াত নাযিল করেন। অন্য আয়াতে এ ব্যাপারটিকে ইয়াহুদীদের কুকর্মের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, “ইয়াহুদীদের মধ্যে কিছু লোক কথাগুলো স্থানচ্যুত করে বিকৃত করে এবং বলে, শুনলাম ও অমান্য করলাম এবং শোনে না শোনার মত; আর নিজেদের জিহবা কুঞ্চিত করে এবং দ্বীনের প্রতি তাচ্ছিল্ল করে বলে, ‘রা'এনা’। কিন্তু তারা যদি বলত, “শুনলাম ও মান্য করলাম এবং শুন ও আমাদের প্রতি লক্ষ্য কর’, তবে তা তাদের জন্য ভাল ও সংগত হত। কিন্তু তাদের কুফরীর জন্য আল্লাহ্‌ তাদেরকে লা'নত করেছেন। তাদের অল্প সংখ্যকই বিশ্বাস করে। ” [সূরা আন-নিসা ৪৬]

[২] এ শব্দটির অর্থ ‘আমাদের প্রতি তাকান'। এ শব্দের মাঝে ইয়াহুদীদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং এ ধরণের শব্দ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মানে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ থেকে আমরা এ শিক্ষা নিতে পারি যে, অমুসলিম তথা বাতিল পন্থীরা যে সমস্ত দ্ব্যর্থমূলক শব্দ এবং সন্দেহমূলক বাক্য ব্যবহার করে থাকে, সেগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।

Tafsir Bayaan Foundation

হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রা‘ইনা’* বলো না; বরং বল, ‘উনজুরনা’ আর শোন, কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব।

*- راعنا রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে কথোপকথন বা তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণের সময় মুমিনগণের বুঝতে সমস্যা হলে তারা বলতেন ‘রা‘ইনা’ অর্থাৎ আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন এবং ধীরে বলুন। শব্দটির আর একটি অর্থ ‘বোকা’। ইয়াহূদিরা তা শোনে সে অর্থে ব্যবহার শুরু করল এবং নিজেরা হাসি-ঠাট্টা করতে লাগল। তখন আল্লাহ তাআলা উক্ত দ্ব্যর্থবোধক শব্দটির পরিবর্তে পরিষ্কার অর্থবোধক শব্দ ‘উনজুরনা’ অর্থাৎ আমাদের প্রতি নজর দিন- শব্দটি ব্যবহার করার নির্দেশ দিলেন।

Muhiuddin Khan

হে মুমিন গণ, তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না-‘উনযুরনা’ বল এবং শুনতে থাক। আর কাফেরদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।

Zohurul Hoque

ওহে যারা ঈমান এনেছো! তোমরা বলো না “রা-'ইনা-”, বরং বলো “উনযুরনা-”, আর শুনুন। আর অবিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে মর্মন্তদ শাস্তি।