কুরআন মজীদ সূরা মারইয়াম আয়াত ৭১
Qur'an Surah Maryam Verse 71
মারইয়াম [১৯]: ৭১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَا ۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا ۚ (مريم : ١٩)
- wa-in
- وَإِن
- And (there is) not
- এবং নেই
- minkum
- مِّنكُمْ
- (any) of you
- তোমাদের মধ্যে কেউ
- illā
- إِلَّا
- but
- এ ছাড়া
- wāriduhā
- وَارِدُهَاۚ
- (will be) passing over it
- অতিক্রমকারী তা
- kāna
- كَانَ
- (This) is
- (এটা) হলো
- ʿalā
- عَلَىٰ
- upon
- কাছে
- rabbika
- رَبِّكَ
- your Lord
- তোমার রবের
- ḥatman
- حَتْمًا
- an inevitability
- চুড়ান্ত
- maqḍiyyan
- مَّقْضِيًّا
- decreed
- অনিবার্য
Transliteration:
Wa im minkum illaa waa riduhaa; kaana 'alaa Rabbika hatmam maqdiyyaa(QS. Maryam:71)
English Sahih International:
And there is none of you except he will come to it. This is upon your Lord an inevitability decreed. (QS. Maryam, Ayah ৭১)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যাকে জাহান্নাম অতিক্রম করতে হবে না, এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য ফয়সালা। (মারইয়াম, আয়াত ৭১)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তোমাদের প্রত্যেকেই তাতে প্রবেশ করবে; এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার (জাহান্নামের) উপর দিয়েই অতিক্রম করবে [১], এটা আপনার রব এর অনিবার্য সিদ্ধান্ত।
[১] এ আয়াতটি দ্বারা পুলসিরাত সংক্রান্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা'আতের আক্কীদা প্রমাণিত হয়। মূলত; সিরাত শব্দের আভিধানিক অর্থঃ স্পষ্ট রাস্তা। আর শরীআতের পরিভাষায় সিরাত বলতে বুঝায়ঃ এমন এক পুল, যা জাহান্নামের পৃষ্ঠদেশের উপর প্ৰলম্বিত, যার উপর দিয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাই পার হতে হবে, যা হাশরের মাঠের লোকদের জন্য জান্নাতে প্রবেশের রাস্তা। সিরাতের বাস্তবতার স্বপক্ষে কুরআনের এ আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ “আর তোমাদের প্রত্যেকেই তার (জাহান্নামের) উপর দিয়ে অতিক্রম করবে, এটা আপনার প্রতিপালকের অনিবাৰ্য সিদ্ধান্ত। পরে আমরা মুক্তাকীদেরকে উদ্ধার করব এবং যালিমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দেব”। [সূরা মারইয়ামঃ ৭১-৭২] অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে এখানে 'জাহান্নামের উপর দিয়ে অতিক্রম’ দ্বারা তার উপরস্থিত সিরাতের উপর দিয়ে পার হওয়াই উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। আর এটাই ইবনে আব্বাস, ইবনে মাসউদ এবং ক’ব আল-আহবার প্রমূখ মুফাসসিরদের থেকে বর্ণিত। আবু সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বৰ্ণিত দীর্ঘ এক হাদীস যাতে আল্লাহর দীদার তথা আল্লাহকে দেখা এবং শাফা আতের কথা আলোচিত হয়েছে, তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন; “.. ‘তারপর পুল নিয়ে আসা হবে, এবং তা জাহান্নামের উপর স্থাপন করা হবে', আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূলঃ ‘পুল’ কি? তিনি বললেনঃ “তা পদস্খলনকারী, পিচ্ছিল, যাতে লোহার হুক ও বর্শি এবং চওড়া ও বাঁকা কাটা থাকবে, যা নাজদের সা'দান গাছের কাটার মত। মুমিনগণ তার উপর দিয়ে কেউ চোখের পলকে, কেউ বিদ্যুৎগতিতে, কেউ বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়া ও অন্যান্য বাহনের গতিতে অতিক্রম করবে। কেউ সহীহ সালামতে বেঁচে যাবে, আবার কেউ এমনভাবে পার হয়ে আসবে যে, তার দেহ জাহান্নামের আগুনে জ্বলসে যাবে। এমন কি সর্বশেষ ব্যক্তি টেনে-হেঁচড়ে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে কোনরকম অতিক্রম করবে”। [বুখারী; ৭৪৩৯] এ ছাড়া আরও বহু হাদীসে সিরাতের গুণাগুণ বর্ণিত হয়েছে। সংক্ষেপে তার মূল কথা হলোঃ সিরাত চুলের চেয়েও সরু, তরবারীর চেয়েও ধারাল, পিচ্ছিল, পদস্খলনকারী, আল্লাহ যাকে প্রতিষ্ঠিত রাখতে চান সে ব্যতীত কারো পা তাতে স্থায়ী হবে না। অন্ধকারে তা স্থাপন করা হবে, মানুষকে তাদের ঈমানের পরিমাণ আলো দেয়া হবে, তাদের ঈমান অনুপাতে তারা এর উপর দিয়ে পার হবে। যেমনটি পূর্বে বর্ণিত হাদীসে এসেছে। আয়াত ও হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, মুমিনগণ জাহান্নাম অতিক্রম করবে। মুমিনরা তাতে প্রবেশ করবে। এমন কথা বলা হয়নি। তাছাড়া কুরআনের উল্লেখিত মূল শব্দ ورود এর আভিধানিক অর্থও প্রবেশ করা নয়। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ
وَلَمَّاوَرَدَمَآءَمَدْيَنَ
“আর যখন মূসা মাদইয়ানের কাপের নিকট দিয়ে অতিক্রম করল।” [সূরা আল-কাসাস; ২৩] এখানেও ورود অর্থ প্রবেশ করা নয়। বরং অতিক্রম করা। তাই এটিই এর সঠিক অর্থ যে, সবাইকেই জাহান্নাম অতিক্রম করতে হবে। যেমন পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, মুত্তাকীদেরকে তা থেকে বাঁচিয়ে নেয়া হবে এবং জালেমদেরকে তার মধ্যে ফেলে দেয়া হবে। তদুপরি একথাটি কুরআন মজীদ এবং বিপুল সংখ্যক সহীহ হাদীসেরও বিরোধী, যেগুলোতে সৎকর্মশীল মুমিনদের জাহান্নামে প্রবেশ না করার কথা চূড়ান্তভাবে বলে দেয়া হয়েছে এবং বলে দেয়া হয়েছে যে, তারা জাহান্নামের পরশও পাবে না। যেমন, [সূরা আল-আম্বিয়াঃ ১০১-১০২] অবশ্য কোন কোন বর্ণনায় ورود শব্দ দ্বারা প্ৰবেশ অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে। [যেমন, মুসনাদে আহমাদঃ ৩/৩২৮, মুসনাদে হারেস; ১১২৭ এ আবু সুমাইয়া এবং মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৪/৬৩০ এ মুসসাহ আল-আযদিয়্যাহ কর্তৃক বর্ণিত হাদীস] সে সমস্ত বর্ণনার কোনটিই সনদের দিক থেকে খুব শক্তিশালী নয়। আর যদি وُرُوْدٌ অর্থ প্রবেশ করাই হয়। তবে তা মুমিনদের জন্য ঠাণ্ডা ও শাস্তিদায়ক বিবেচিত হবে যেমনটি উক্ত হাদীসের ভাষ্যেই জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে।
Tafsir Bayaan Foundation
আর তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে, এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
Muhiuddin Khan
তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌছবে না। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফায়সালা।
Zohurul Hoque
আর তোমাদের মধ্যে এমন একজনও নেই যে সেখানে না আসবে, -- এটি তোমার প্রভুর জন্যে এক অনিবার্য সিদ্ধান্ত।