Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত ৪৪

Qur'an Surah Al-Isra Verse 44

বনী ইসরাঈল [১৭]: ৪৪ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

تُسَبِّحُ لَهُ السَّمٰوٰتُ السَّبْعُ وَالْاَرْضُ وَمَنْ فِيْهِنَّۗ وَاِنْ مِّنْ شَيْءٍ اِلَّا يُسَبِّحُ بِحَمْدِهٖ وَلٰكِنْ لَّا تَفْقَهُوْنَ تَسْبِيْحَهُمْۗ اِنَّهٗ كَانَ حَلِيْمًا غَفُوْرًا (الإسراء : ١٧)

tusabbiḥu
تُسَبِّحُ
Glorify
পবিত্রতা ঘোষণা করছে
lahu
لَهُ
[to] Him
জন্যে তাঁর
l-samāwātu
ٱلسَّمَٰوَٰتُ
the seven heavens
আকাশমন্ডলী
l-sabʿu
ٱلسَّبْعُ
the seven heavens
সাত
wal-arḍu
وَٱلْأَرْضُ
and the earth
ও পৃথিবী
waman
وَمَن
and whatever
এবং যা কিছু আছে
fīhinna
فِيهِنَّۚ
(is) in them
মধ্যে তাদের
wa-in
وَإِن
And (there is) not
এবং নেই
min
مِّن
any
কোনো
shayin
شَىْءٍ
thing
বস্তু
illā
إِلَّا
except
এছাড়া যে
yusabbiḥu
يُسَبِّحُ
glorifies
পবিত্রতা ঘোষণা করছে
biḥamdihi
بِحَمْدِهِۦ
His Praise
সাথে তাঁর সপ্রশংসার
walākin
وَلَٰكِن
but
কিন্তু
لَّا
not
না
tafqahūna
تَفْقَهُونَ
you understand
তোমরা অনুধাবন করো
tasbīḥahum
تَسْبِيحَهُمْۗ
their glorification
তাদের পবিত্রতা ঘোষণা করা
innahu
إِنَّهُۥ
Indeed, He
নিশ্চয়ই তিনি
kāna
كَانَ
is
হলেন
ḥalīman
حَلِيمًا
Ever-Forbearing
সহনশীল
ghafūran
غَفُورًا
Oft-Forgiving"
ক্ষমা পরায়ণ"

Transliteration:

Tusabbihu lahus samaawaatus sab'u wal ardu wa man feehinn; wa im min shai'in illaa yusabbihu bihamdihee wa laakil laa tafqahoona tasbeehahum; innahoo kaana Haleeman Ghafooraa (QS. al-ʾIsrāʾ:44)

English Sahih International:

The seven heavens and the earth and whatever is in them exalt Him. And there is not a thing except that it exalts [Allah] by His praise, but you do not understand their [way of] exalting. Indeed, He is ever Forbearing and Forgiving. (QS. Al-Isra, Ayah ৪৪)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

সাত আসমান, যমীন আর এগুলোর মাঝে যা আছে সব কিছুই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। এমন কোন জিনিসই নেই যা তাঁর প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না। কিন্তু তোমরা বুঝতে পার না কীভাবে তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। তিনি পরম সহিষ্ণু, বড়ই ক্ষমাপরায়ণ। (বনী ইসরাঈল, আয়াত ৪৪)

Tafsir Ahsanul Bayaan

সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং ওদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু ওদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। [১] নিশ্চয় তিনি অতীব সহনশীল, অত্যন্ত ক্ষমাশীল।

[১] অর্থাৎ, সকলেই তাঁর অনুগত এবং তারা স্ব স্ব নিয়মে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণায় ও প্রশংসায় লিপ্ত আছে। যদিও আমরা তাদের পবিত্রতা ঘোষণা ও প্রশংসা করার কথা বুঝতে পারি না। এর সমর্থন কুরআনের আরো কিছু আয়াত দ্বারাও হয়। যেমন, দাঊদ (আঃ)-এর সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন,﴿إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ﴾ অর্থাৎ, আমি পর্বতসমূহকে তাঁর অনুগামী করে দিয়েছিলাম, তারা সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করত। (সূরা সাদ ৩৮;১৮ আয়াত) কোন কোন পাথরের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَإِنَّ مِنْهَا لَمَا يَهْبِطُ مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ﴾ অর্থাৎ, কোন কোন পাথর আল্লাহর ভয়ে খসে পড়ে। (সূরা বাকারাহ ২;৭৪ আয়াত) কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত যে, তাঁরা রসূল (সাঃ)-এর সাথে খাবার খাওয়ার সময় খাবার থেকে 'তসবীহ' পড়ার ধ্বনি শুনেছেন। (বুখারী, কিতাবুল মানাকিব ৩৫৭৯ নং) অপর একটি হাদীসে এসেছে যে, পিঁপড়েরাও আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। (বুখারী ৩০১৯, মুসলিম ১৭৫৯নং) অনুরূপ খেজুর গাছের যে গুঁড়িতে হেলান দিয়ে রসূল (সাঃ) খুৎবা দিতেন, যখন কাঠের মিম্বর তৈরী হল এবং সেই গুঁড়িকে তিনি ত্যাগ করলেন, তখন তা থেকে শিশুর মত কান্নার শব্দ এসেছিল। (বুখারী ৩৫৮৩ নং) মক্কায় একটি পাথর ছিল, যে রসূল (সাঃ)-কে সালাম দিত। (মুসলিম ১৭৮২ নং) এই আয়াত এবং হাদীসসমূহ হতে স্পষ্ট হয় যে, জড় পদার্থ এবং উদ্ভিদ জিনিসের মধ্যেও এক বিশেষ ধরনের অনুভূতি (জীবন) আছে, যদিও তা আমরা বুঝতে পারি না। তারা কিন্তু এই অনুভূতির ভিত্তিতে আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে। কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ, প্রামাণ্য তসবীহ। অর্থাৎ, এই জিনিসগুলো প্রমাণ করে যে, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা এবং সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান কেবল মহান আল্লাহ। وَفِي كُلِّ شَيْءٍ لَهُ آيَةٌ * تَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ وَاحِدٌ 'প্রত্যেক জিনিসের মধ্যে রয়েছে নিদর্শন, যা প্রমাণ করে যে, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। (শুআবুল ঈমান বাইহাকী) তবে সঠিক কথা এটাই যে, 'তসবীহ' তার প্রকৃত ও মূল অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

সাত আসমান এবং যমীন এবং এগুলোর অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে [১] এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাঁদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা বুঝতে পার না; নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

[১] ইচ্ছাগত তাসবীহ তো শুধু ফেরেশতা এবং ঈমানদার জিন ও মানবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ্ তাআলা জগতের প্রত্যেকটি অণু-পরমাণুকে তাসবীহ পাঠ্যকারী বানিয়ে রেখেছেন। [ইবন কাসীর] কিন্তু তাদের এই সৃষ্টিগত ও বাধ্যতামূলক তাসবীহ সাধারণ মানুষের শ্রুতিগোচর হয়না। এ আয়াতেই বলা হয়েছে

, وَلَٰكِن لَّا تَفْقَهُونَ تَسْبِيحَهُمْ ۗ

এ উক্তি এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রত্যেক বস্তুর সৃষ্টিগত তাসবীহ এমন জিনিস, যা সাধারণ মানুষ বুঝতে সক্ষম নয়। অবস্থগত তাসবীহ তো বিবেকবান ও বুদ্ধিমানরা বুঝতে পারে। এ থেকে জানা গেল যে, এই তাসবীহ পাঠ শুধু অবস্থাগত নয়, সত্যিকারের; কিন্তু আমাদের বোধশক্তি ও অনুভূতির উর্ধের্ব। তাছাড়া মু'জেযা ও কারামত হিসেবে কখনও কখনও অচেতন বস্তু সমূহের তাসবীহও আল্লাহ তা'আলা মাঝে মধ্যে শুনিয়ে থাকেন। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাবার খেতাম, এমতাবস্থায় আমরা খাবারের তাসবীহও শুনতাম” [বুখারীঃ ৩৫৭৯]

অনুরূপভাবে মরা খেজুরগাছের কাঠের কান্না। [বুখারী; ৩৫৮৩]

মক্কার এক পাথর কর্তৃক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম দেয়া। [মুসলিম; ২২৭৭]

উদাহরণতঃ সূরা ছোয়াদে দাউদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “আমি পাহাড়সমূহকে আজ্ঞাবহ করে দিয়েছি। তারা দাউদের সাথে সকাল-বিকাল তাসবীহ পাঠ করে”। [১৮] সূরা আল-বাক্কারায় পাহাড়ের পাথর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ “কতক পাথর আল্লাহর ভয়ে নীচে পড়ে যায়” [৭৪]। এতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পাথরের মধ্যেও চেতনা, অনুভূতি ও আল্লাহর ভয় রয়েছে। সূরা মারইয়ামে নাসারা সম্প্রদায় কর্তৃক ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র আখ্যায়িত করার প্রতিবাদে বলা হয়েছেঃ “তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্ৰহণ করেছেন। তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ; যাতে আকাশমণ্ডলী বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খণ্ড-বিখণ্ড হবে ও পর্বতমণ্ডলী চূৰ্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে, যেহেতু তারা দয়াময়ের প্রতি সন্তান আরোপ করে। অথচ সন্তান গ্ৰহণ করা দয়াময়ের শোভন নয়!”। [৮৮-৯২] বলাবাহুল্য, এই ভয়-ভীতি তাদের চেতনা ও অনুভূতির পরিচায়ক। চেতনা ও অনুভূতি থাকলে তসবীহ পাঠ করা অসম্ভব নয়।

Tafsir Bayaan Foundation

সাত আসমান ও যমীন এবং এগুলোর মধ্যে যা কিছু আছে সব কিছু তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রসংশায় তাসবীহ পাঠ করে না; কিন্তু তাদের তাসবীহ তোমরা বুঝ না। নিশ্চয় তিনি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

Muhiuddin Khan

সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং এগুলোর মধ্যে যাকিছু আছে সমস্ত কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। এবং এমন কিছু নেই যা তার সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা করে না। কিন্তু তাদের পবিত্রতা, মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না। নিশ্চয় তিনি অতি সহনশীল, ক্ষমাপরায়ণ।

Zohurul Hoque

সাত আসমান ও জমিন এবং তাদের মধ্যে যারা রয়েছে তারা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে। আর এমন কিছু নেই যা তাঁর প্রশংসার সাথে মহিমা ঘোষণা করে না, কিন্তু তোমরা তাদের মহিমাকীর্তন অনুধাবন করতে পার না। নিঃসন্দেহ তিনি হচ্ছেন অতি অমায়িক, পরিত্রাণকারী।