Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা বনী ইসরাঈল আয়াত ১১০

Qur'an Surah Al-Isra Verse 110

বনী ইসরাঈল [১৭]: ১১০ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

قُلِ ادْعُوا اللّٰهَ اَوِ ادْعُوا الرَّحْمٰنَۗ اَيًّا مَّا تَدْعُوْا فَلَهُ الْاَسْمَاۤءُ الْحُسْنٰىۚ وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا وَابْتَغِ بَيْنَ ذٰلِكَ سَبِيْلًا (الإسراء : ١٧)

quli
قُلِ
Say
বলো
id'ʿū
ٱدْعُوا۟
"Invoke
"তোমরা ডাকো
l-laha
ٱللَّهَ
Allah
আল্লাহ (বলে)
awi
أَوِ
or
বা
id'ʿū
ٱدْعُوا۟
invoke
তোমরা ডাক
l-raḥmāna
ٱلرَّحْمَٰنَۖ
the Most Gracious
রহমান (বলে)
ayyan
أَيًّا
By whatever (name)
যেই (নামেই)
مَّا
By whatever (name)
যেই (নামেই)
tadʿū
تَدْعُوا۟
you invoke
তোমরা ডাকো
falahu
فَلَهُ
to Him (belongs)
অতঃপর তাঁর আছে
l-asmāu
ٱلْأَسْمَآءُ
the Most Beautiful Names
নামসমূহ
l-ḥus'nā
ٱلْحُسْنَىٰۚ
the Most Beautiful Names
সুন্দর
walā
وَلَا
And (do) not
এবং না
tajhar
تَجْهَرْ
be loud
খুব উঁচু স্বর করো
biṣalātika
بِصَلَاتِكَ
in your prayers
তোমার সালাতে
walā
وَلَا
and not
এবং না
tukhāfit
تُخَافِتْ
be silent
খুব নিচু স্বর করো
bihā
بِهَا
therein
তাতে
wa-ib'taghi
وَٱبْتَغِ
but seek
এবং অবলম্বন করো
bayna
بَيْنَ
between
মাঝে
dhālika
ذَٰلِكَ
that
এর
sabīlan
سَبِيلًا
a way"
মধ্য পথ"

Transliteration:

Qulid'ul laaha awid'ur Rahmaana ayyam maa tad'oo falahul asmaaa'ul Husnaa; wa laa tajhar bi Salaatika wa laa tukhaafit bihaa wabtaghi baina zaalika sabeela (QS. al-ʾIsrāʾ:110)

English Sahih International:

Say, "Call upon Allah or call upon the Most Merciful [ar-Rahman]. Whichever [name] you call – to Him belong the best names." And do not recite [too] loudly in your prayer or [too] quietly but seek between that an [intermediate] way. (QS. Al-Isra, Ayah ১১০)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

বল, ‘তোমরা আল্লাহ নামে ডাকো বা রহমান নামে ডাকো, যে নামেই তাঁকে ডাকো না কেন (সবই ভাল) কেননা সকল সুন্দর নামই তো তাঁর।’ তোমার সলাতে স্বর উচ্চ করো না, আর তা খুব নীচুও করো না, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর। (বনী ইসরাঈল, আয়াত ১১০)

Tafsir Ahsanul Bayaan

বল, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর, সকল সুন্দর নামাবলী তাঁরই।[১] আর তুমি নামাযে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এই দুই-এর মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর।[২]

[১] যেমন পূর্বেও অতিবাহিত হয়েছে যে, মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর গুণবাচক নাম 'রাহমান' ও 'রাহীম'এর সাথে পরিচিত ছিল না। আর কোন 'আষার' (সাহাবীর উক্তি)-তে এসেছে যে, মুশরিকদের কেউ কেউ যখন নবী (সাঃ)-এর পবিত্র মুখ থেকে 'ইয়া রাহমান, ইয়া রাহীম' শব্দ শুনল, তখন বলে উঠল যে, এই লোক তো আমাদেরকে বলে যে, কেবল এক আল্লাহকেই ডাক, আর সে নিজে দু'জন উপাস্যকে ডাকছে! তাদের এই কথার জবাবে এই আয়াত নাযিল হয়। (ইবনে কাসীর)

[২] এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, মক্কায় রসূল (সাঃ) আত্মগোপন করে থাকতেন। যখন তিনি তাঁর সাহাবীদের নামায পড়াতেন, তখন শব্দ একটু উঁচু করতেন। মুশকিরা কুরআন শুনে কুরআনকে এবং আল্লাহকে গালি-গালাজ করত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, তোমার আওয়াজ এতটা উঁচু করো না যে, মুশরিকরা তা শুনে কুরআনকে গালি-গালাজ করে। আর এত আস্তেও পড়ো না যে, সাহাবীগণ তা শুনতেই না পায়। (বুখারীঃ তাওহীদ অধ্যায়, মুসলিমঃ নামায অধ্যায়) স্বয়ং নবী (সাঃ)-এর ঘটনা যে, কোন এক রাতে তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন যে, আবূ বাকর (রাঃ) খুব মৃদু আওয়াজে নামায পড়ছেন। অতঃপর উমার (রাঃ)-কেও দেখলেন যে, তিনি উঁচু শব্দে নামায পড়ছেন। তিনি তাঁদের উভয়কে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। আবূ বাকার (রাঃ) বললেন, আমি যাঁর সাথে মুনাজাতে ব্যস্ত ছিলাম, তিনি আমার শব্দ শুনছিলেন। আর উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, আমার উদ্দেশ্য ঘুমন্তদেরকে জাগানো এবং শয়তানকে ভাগানো। তিনি আবূ বাকার (রাঃ)-কে বললেন যে, তুমি তোমার শব্দ একটু উঁচু করে নিও এবং উমর (রাঃ)-কে বললেন যে, তুমি তোমার শব্দ একটু নীচু করে নিও। (আবূ দাউদ ও তিরমিযী) আয়েশা (রাঃ) বলেন, এই আয়াতটি দু'আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম- ফাতহুল কাদীর)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

বলুন, ‘তোমরা ‘আল্লাহ্’ নামে ডাক বা ‘রহমান’ নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। আর আপনি সালাতে স্বর খুব উচ্চ করবেন না আব্র খুব ক্ষীণও করবেন না; বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করুন [১]।

[১] এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে এসেছে যে, মক্কায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে উঁচুস্বরে তেলাওয়াত করতেন, তখন মুশরিকরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত এবং কুরআন, জিবরাঈল ও স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলত এর জওয়াবে আয়াতের শেষাংশ অবতীর্ণ হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২২, মুসলিমঃ ৪৪৬] এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সশব্দ ও নিঃশব্দ উভয়ের মধ্যবতী পন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, মধ্যবতীর্ণ শব্দে পাঠ করলেই প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যেত এবং সশব্দে পাঠ করলে মুশরিকরা নিপীড়নের যে সুযোগ পেত, তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে সালাতে কুরআন তেলাওয়াতের আদব বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, খুব উচ্চঃস্বরে না হওয়া চাই এবং এমন নিঃশব্দেও না হওয়া চাই যে, মুক্তাদীরা শুনতে পায় না। বলাবাহুল্য এ বিধান বিশেষ করে সশব্দে পঠিত সালাতসমূহের জন্যে। যোহর ও আসরের নামাযে নিঃশব্দে পাঠ করা মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত । জাহরী বা উচ্চঃস্বরে পড়তে হয় এমন সালাত বলতে ফজর, মাগরিব ও এশার সালাত বোঝায়। তাহাজ্জুদের সালাতও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন, এক হাদীসে রয়েছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু – এর কাছ দিয়ে গেলে আবু বকরকে নিঃশব্দে এবং ওমরকে উচ্চঃস্বরে তেলাওয়াতরত দেখতে পান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রাদি'আল্লাহু আনহু – কে বললেনঃ আপনি এত নিঃশব্দে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি আরয করলেনঃ যাকে শোনানো উদ্দেশ্য তাকে শুনিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ্ তা'আলা গোপনতম আওয়াযও শ্রবণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সামান্য শব্দ সহকারে পাঠ করুন। অতঃপর ওমরকে বললেনঃ আপনি এত উচ্চঃস্বরে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি আরয করলেনঃ আমি নিদ্রা ও শয়তানকে বিতাড়িত করে দেয়ার জন্যে উচ্চঃস্বরে পাঠ করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ দিলেন, যে একটু অনুচ্চ শব্দে পাঠ করুন। [তিরমিয়ীঃ ৪৪৭] তবে তাহাজুদের সালাতে ইচ্ছা করলে কেরাত উচ্চস্বরে পড়তে পারে আবার ইচ্ছা করলে নিচুস্বরেও পড়তে পারে। এ ব্যাপারে ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। [দেখুনঃ তিরমিয়ীঃ ৪৪৮] তবে এ আয়াতে বর্ণিত “সালাত” শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আরো কিছু মত রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন, এ আয়াতে সালাত বলতে দোআ বুঝানো হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২৩, মুসলিমঃ ৪৪৭] সুতরাং সে অনুসারে দো'আ করতে স্বর খুব উচু করতে নিষেধ করা হয়েছে।

Tafsir Bayaan Foundation

বল, ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর।

Muhiuddin Khan

বলুনঃ আল্লাহ বলে আহবান কর কিংবা রহমান বলে, যে নামেই আহবান কর না কেন, সব সুন্দর নাম তাঁরই। আপনি নিজের নামায আদায়কালে স্বর উচ্চগ্রাসে নিয়ে গিয়ে পড়বেন না এবং নিঃশব্দেও পড়বেন না। এতদুভয়ের মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন।

Zohurul Hoque

বলো -- ''তোমরা 'আল্লাহ্‌’ বলে ডাকো অথবা 'রহমান’ বলে ডাকো। বস্তুতঃ যে নামেই তোমরা ডাক, তাঁরই কিন্তু সকল সুন্দর সুন্দর নাম।’’ আর তোমরা নামাযে আওয়াজ চড়া করো না এবং এতে নিঃশব্ধও হয়ো না, বরং এই উভয়ের মধ্যে পথ অনুসরণ করো।