Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা নাহল আয়াত ১২৫

Qur'an Surah An-Nahl Verse 125

নাহল [১৬]: ১২৫ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اُدْعُ اِلٰى سَبِيْلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِيَ اَحْسَنُۗ اِنَّ رَبَّكَ هُوَ اَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيْلِهٖ وَهُوَ اَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِيْنَ (النحل : ١٦)

ud'ʿu
ٱدْعُ
Call
তুমি আহবান করো
ilā
إِلَىٰ
to
দিকে
sabīli
سَبِيلِ
(the) way
পথের
rabbika
رَبِّكَ
(of) your Lord
তোমার রবের
bil-ḥik'mati
بِٱلْحِكْمَةِ
with the wisdom
সাথে প্রজ্ঞার
wal-mawʿiẓati
وَٱلْمَوْعِظَةِ
and the instruction
ও উপদেশ
l-ḥasanati
ٱلْحَسَنَةِۖ
the good
উত্তম (দ্বারা)
wajādil'hum
وَجَٰدِلْهُم
and discuss with them
এবং তাদের যুক্তি দাও
bi-allatī
بِٱلَّتِى
in that
উপায়ে এমন
hiya
هِىَ
which
যা
aḥsanu
أَحْسَنُۚ
(is) best
অতি উত্তম
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
rabbaka
رَبَّكَ
your Lord
তোমার রব
huwa
هُوَ
He
তিনি
aʿlamu
أَعْلَمُ
(is) most knowing
খুব জানেন
biman
بِمَن
of who
সম্বন্ধে (তার) যে
ḍalla
ضَلَّ
has strayed
ভ্রষ্ট হয়েছে
ʿan
عَن
from
থেকে
sabīlihi
سَبِيلِهِۦۖ
His way
তাঁর পথ
wahuwa
وَهُوَ
And He
এবং তিনি
aʿlamu
أَعْلَمُ
(is) most knowing
খুব জানেন
bil-muh'tadīna
بِٱلْمُهْتَدِينَ
of the guided ones
সম্পর্কে সৎপথপ্রাপ্তদের

Transliteration:

Ud'u ilaa sabeeli Rabbika bilhikmati walmaw 'izatil hasanati wa jaadilhum billatee hiya ahsan; inna Rabbaka huwa a'almu biman dalla 'an sabeelihee wa Huwa a'lamu bilmuhtadeen (QS. an-Naḥl:125)

English Sahih International:

Invite to the way of your Lord with wisdom and good instruction, and argue with them in a way that is best. Indeed, your Lord is most knowing of who has strayed from His way, and He is most knowing of who is [rightly] guided. (QS. An-Nahl, Ayah ১২৫)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

জ্ঞান-বুদ্ধি আর উত্তম উপদেশের মাধ্যমে তুমি (মানুষকে) তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান জানাও আর লোকেদের সাথে বিতর্ক কর এমন পন্থায় যা অতি উত্তম। তোমার প্রতিপালক ভালভাবেই জানেন কে তাঁর পথ ছেড়ে গুমরাহ হয়ে গেছে। আর কে সঠিক পথে আছে তাও তিনি বেশি জানেন। (নাহল, আয়াত ১২৫)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহবান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে আলোচনা কর সদ্ভাবে।[১] নিশ্চয় তোমার প্রতিপালক, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়, সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কে সৎপথে আছে, তাও সবিশেষ অবহিত। [২]

[১] এখানে ইসলাম প্রচার ও তাবলীগের মূলনীতি বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ, তা হবে হিকমত, সদুপদেশ ও নম্রতার উপর ভিত্তিশীল এবং আলোচনার সময় সদ্ভাব বজায় রাখা, কঠোরতা পরিহার করা ও নম্রতার পথ অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।

[২] অর্থাৎ, তাঁর কাজ উল্লিখিত নীতি অনুসারে উপদেশ ও প্রচার করা। হিদায়াতের রাস্তায় পরিচালিত করা আল্লাহর আয়ত্তাধীন। আর তিনিই জানেন যে, কে হিদায়াত গ্রহণকারী, আর কে তা গ্রহণকারী নয়?

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আপনি মানুষকে দা’ওয়াত [১] দিন আপনার রবের পথে হিকমত [২] ও সদুপদেশ [৩] দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায় [৪]। নিশ্চয় আপনার রব, তাঁর পথ ছেড়ে কে বিপথগামী হয়েছে, সে সম্বন্ধে তিনি বেশি জানেন এবং কারা সৎপথে আছে তাও তিনি ভালভাবেই জানেন।

[১] (دعوة) এর শাব্দিক অর্থ ডাকা, আমন্ত্রণ জানানো, আহবান করা। নবীগণের সর্বপ্রথম কর্তব্য হচ্ছে মানবজাতিকে আল্লাহর দিকে আহবান করা। এরপর নবী ও রাসূলগণের সমস্ত শিক্ষা হচ্ছে এ দাওয়াতেরই ব্যাখ্যা। কুরআনুল কারীমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বিশেষ পদবী হচ্ছে- আল্লাহর দিকে আহবানকারী হওয়া। এক আয়াতে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে-

(وَّدَاعِيًا اِلَى اللّٰهِ بِاِذْنِهٖ وَسِرَاجًا مُّنِيْرًا)

[আল-আহযাবঃ ৪৬] এবং অন্য এক আয়াতে আরো বলা হয়েছে-

(يٰقَوْمَنَآ اَجِيْبُوْا دَاعِيَ اللّٰهِ)

[আল-আহুকাফঃ ৩১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পদাংক অনুসরণ করে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া উম্মতের উপরও ফরয করা হয়েছে। কুরআনুল কারীমে এ সম্বন্ধে বলা

(وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ اُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ اِلَى الْخَيْرِ وَيَاْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ)

অর্থাৎ “তোমাদের মধ্যে একটি দল এমন থাকা উচিত, যারা মানুষকে কল্যাণের প্রতি দাওয়াত দেবে (অর্থাৎ) সৎকাজের আদেশ করবে এবং অসৎকাজের নিষেধ করবে।" [আলে-ইমরানঃ ১০৪] অন্য আয়াতে আছে-

(وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَآ اِلَى اللّٰهِ)

-অর্থাৎ "কথা-বার্তার দিক দিয়ে সে ব্যক্তির চাইতে উত্তম কে হবে, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়?” [ফুসসিলাতঃ ৩৩]

[২] হেকমত’ শব্দটি কুরআনুল কারীমে অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এস্থলে কোন কোন মুফাসসির হেকমতের অর্থ নিয়েছেন কুরআন, কেউ কেউ বলেছেন, কুরআন ও সুন্নাহ। [তাবারী] আবার কেউ কেউ অকাট্য যুক্তি-প্রমাণ স্থির করেছেন। [ফাতহুল কাদীর] আবার কোন কোন মুফাসসিরের মতে বিশুদ্ধ ও মজবুত সহীহ কথাকে হেকমত বলা হয়। [ফাতহুল কাদীর]

[৩]

(وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ) -

موعظة ـ وعظ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন শুভেচ্ছামূলক কথা এমনভাবে বলা, যাতে প্রতিপক্ষের মন তা কবুল করার জন্য নরম হয়ে যায় [ফাতহুল কাদীর] উদাহরণতঃ তার কাছে কবুল করার সওয়াব ও উপকারিতা এবং কবুল না করার শাস্তি ও অপকারিতা বর্ণনা কর। [ইবন কাসীর] (الْحَسَنَةِ) -এর অর্থ বর্ণনা ও শিরোনাম এমন হওয়া যে, প্রতিপক্ষের অন্তর নিশ্চিত হয়ে যায়, সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং অনুভব করে যে, এতে আপনার কোন স্বার্থ নেই- শুধু তার শুভেচ্ছার খাতিরে বলেছেন। (موعظة) -শব্দ দ্বারা শুভেচ্ছামূলক কথা কার্যকর ভঙ্গিতে বলার বিষয়টি ফুটে উঠেছিল। কিন্তু শুভেচ্ছামূলক কথা মাঝে মাঝে মর্মবিদারক ভঙ্গিতে কিংবা এমনভাবে বলা হয় যে, প্রতিপক্ষ অপমান বোধ করে। এ পন্থা পরিত্যাগ করার জন্য (حسنة) শব্দটি সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ দাওয়াত দেবার সময় দুটি জিনিসের প্রতি নজর রাখতে হবে। এক, প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং দুই সদুপদেশ। এ দুটিই মূলত; দাওয়াতের পদ্ধতি। কিন্তু কখনও কখনও দায়ী-র বিপক্ষকে যুক্তি-তর্কে নামাতে হয়। তাই কিভাবে সেটা করতে হবে তাও জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। [ফাতহুল কাদীর]


[৪] (وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِيْ هِىَ اَحْسَنُ)

جادل শব্দটি (مجادلة) ধাতু থেকে উদ্ভুত। (আরবি) তর্ক-বিতর্ক বোঝানো হয়েছে। (بِالَّتِيْ هِىَ اَحْسَنُ) -এর অর্থ এই যে, যদি দাওয়াতের কাজে কোথাও তর্ক-বিতর্কের প্রয়োজন দেখা দেয়, তবে তর্ক-বিতর্কও উত্তম পন্থায় হওয়া দরকার। উত্তম পন্থার মানে এই যে, কথাবার্তায় নম্রতা ও কমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এমন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে হবে, যা প্রতিপক্ষ বুঝতে সক্ষম হয়। কুরআনুল কারীমের অন্যান্য আয়াত সাক্ষ্য দেয় যে, উত্তম পন্থায় তর্ক-বিতর্ক শুধু মুসলিমদের সাথেই সম্পর্কযুক্ত নয়; বরং আহলে কিতাব সম্পর্কে বিশেষভাবে কুরআন বলে যে,

(وَلَا تُجَادِلُوْٓا اَهْلَ الْكِتٰبِ اِلَّا بِالَّتِيْ ھِىَ اَحْسَنُ)

[আল-আনকাবূতঃ ৪৬] -অন্য আয়াতে মূসা ও হারূন আলাইহিস সালাম-কে

(فَقُوْلَا لَهٗ قَوْلًا لَّيِّنًا)

[ত্বাহাঃ ৪৪] নির্দেশ দিয়ে আরো বলা হয়েছে যে, ফিরআওনের মত অবাধ্য কাফেরের সাথেও নম্র আচরণ করা উচিত।

Tafsir Bayaan Foundation

তুমি তোমরা রবের পথে হিকমত ও সুন্দর উপদেশের মাধ্যমে আহবান কর এবং সুন্দরতম পন্থায় তাদের সাথে বিতর্ক কর। নিশ্চয় একমাত্র তোমার রবই জানেন কে তার পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে এবং হিদায়াতপ্রাপ্তদের তিনি খুব ভাল করেই জানেন।

Muhiuddin Khan

আপন পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান করুন জ্ঞানের কথা বুঝিয়ে ও উপদেশ শুনিয়ে উত্তমরূপে এবং তাদের সাথে বিতর্ক করুন পছন্দ যুক্ত পন্থায়। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তাই ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।

Zohurul Hoque

তোমার প্রভুর রাস্তায় আহ্বান করো জ্ঞান ও সুষ্ঠু উপদেশের দ্বারা, আর তাদের সাথে পর্যালোচনা কর এমনভাবে যা শ্রেষ্ঠ। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু স্বয়ং ভাল জানেন তাকে যে তাঁর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়েছে, আর তিনি ভাল জানেন সৎপথাবলন্বীদের।