কুরআন মজীদ সূরা নাহল আয়াত ১
Qur'an Surah An-Nahl Verse 1
নাহল [১৬]: ১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اَتٰىٓ اَمْرُ اللّٰهِ فَلَا تَسْتَعْجِلُوْهُ ۗسُبْحٰنَهٗ وَتَعٰلٰى عَمَّا يُشْرِكُوْنَ (النحل : ١٦)
- atā
- أَتَىٰٓ
- Will come
- এসেছে
- amru
- أَمْرُ
- (the) command of Allah
- আদেশ
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- (the) command of Allah
- আল্লাহ্র
- falā
- فَلَا
- so (do) not
- সুতরাং না
- tastaʿjilūhu
- تَسْتَعْجِلُوهُۚ
- (be) impatient for it
- তা তোমরা তাড়াহুড়া করতে চেয়ো
- sub'ḥānahu
- سُبْحَٰنَهُۥ
- Glorified is He
- তিনি পবিত্র
- wataʿālā
- وَتَعَٰلَىٰ
- and Exalted (is) He
- ও বহু ঊর্দ্ধে
- ʿammā
- عَمَّا
- above what
- তা থেকে যা
- yush'rikūna
- يُشْرِكُونَ
- they associate
- তারা শরীক করে
Transliteration:
Ataaa amrullaahi falaa tasta'jilooh; Subhaanahoo wa Ta'aalaa 'ammaa yushrikoon(QS. an-Naḥl:1)
English Sahih International:
The command of Allah is coming, so be not impatient for it. Exalted is He and high above what they associate with Him. (QS. An-Nahl, Ayah ১)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে, অতএব এর জন্য তাড়াহুড়ো করো না। তিনি মহান পবিত্র, তারা যাকে শরীক সাব্যস্ত করে তাত্থেকে তিনি বহু ঊর্ধ্বে। (নাহল, আয়াত ১)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আল্লাহর আদেশ আসবেই;[১] সুতরাং তোমরা তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। তিনি মহিমার্নিত এবং ওরা যাকে অংশী করে তিনি তার উর্ধে।
[১] আদেশ বলতে কিয়ামতকে বুঝানো হয়েছে, অর্থ কিয়ামত নিকটবর্তী যাকে তোমরা দূর মনে কর। অতএব তোমরা এ ব্যাপারে তাড়াহুড়ো করো না। অথবা সেই আযাবকে বুঝানো হয়েছে যা মুশরিকরা চাইত। এ কথাটি ভবিষ্যৎকালের ক্রিয়ার পরিবর্তে অতীতকালের ক্রিয়া দিয়ে বর্ণনা করা হয়েছে, যেহেতু তার আগমনে কোন সন্দেহ নেই।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আল্লাহ্র [১] আদেশ আসবেই [২]; কাজেই তা [৩] তাড়াতাড়ি পেতে চেয়ো না। তিনি মহিমান্বিত এবং তারা যা শরীক করে তিনি তা থেকে উর্ধ্বে [৪]।
১২৮ আয়াত, মক্কী
---------------
[১] এ সূরা নাহলকে বিশেষ কোন ভূমিকা ছাড়াই কঠোর শাস্তির সতর্কবাণী ও ভয়াবহ বিষয়বস্তু দ্বারা শুরু করা হয়েছে। এর কারণ ছিল মুশরিকদের এই উক্তি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে কেয়ামত ও আযাবের ভয় দেখায় এবং বলে যে, আল্লাহ্ তা'আলা তাকে জয়ী করা এবং বিরোধীদেরকে শাস্তি দেয়ার ওয়াদা করেছেন। আমাদের তো এরূপ কিছু ঘটবে বলে মনে হয় না। এর উত্তরে বলা হয়েছেঃ আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। তোমরা তাড়াহুড়া করো না। [দেখুন, আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
[২] অর্থাৎ তা একেবারে আসন্ন হয়ে উঠেছে। তার প্রকাশ ও প্রয়োগের সময় নিকটবর্তী হয়েছে। ব্যাপারটা একেবারেই অবধারিত ও সুনিশ্চিত অথবা একান্ত নিকটবতী এ ধারণা দেবার জন্য ব্যাক্যটি অতীতকালের ক্রিয়াপদের সাহায্যে বর্ণনা করা হয়েছে। [আদওয়াউল বায়ান; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তবে এ “আদেশ বা ফায়সালা” কি ছিল এবং কোন আকৃতিতে এসেছে? এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত আছেঃ
কোন কোন মুফাসসির বলেন যে, এখানে আল্লাহর নির্দেশ’বলে কেয়ামত বোঝানো হয়েছে। এর এসে যাওয়ার অর্থও এই যে, আসা অতি নিকটবতী। সমগ্র জগতের বয়সের দিক দিয়ে দেখলে কেয়ামতের নিকটবতী হওয়া কিংবা এসে পৌছাও দূরবর্তী কোন বিষয় নয়। অথবা, তা অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণে অতীতকালের পদ ব্যবহার করা হয়েছে।
অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “মানুষের হিসেব-নিকেশের সময় আসন্ন, কিন্তু তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে রয়েছে” [ সূরা আল-আম্বিয়া; ১]
আরও এসেছে, “কিয়ামত কাছাকাছি হয়েছে, আর চাদ বিদীর্ণ হয়েছে" [সূরা আল-কামারঃ ১] [ইবন কাসীর]
কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ আল্লাহর নির্দেশ’ বলে এখানে আল্লাহর আদেশ নিষেধ সম্পর্কিত, হালাল হারাম সম্বলিত বিধানাবলী বোঝানো হয়েছে। [কুরতুবী]
কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে “আল্লাহর নির্দেশ" বলে তাদের উপর যে শাস্তি আসার কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করাতেন তা বুঝানো হয়েছে। আযাবের ব্যাপারে কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের সবরের পেয়ালা কানায় ভরে উঠেছিল এবং শেষ ও চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসে গিয়েছিল বলেই অতীতকালের ক্রিয়াপদ দ্বারা একথা বলা হয়েছে। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[৩] কাফের মুশরিকগণের চিরাচরিত নিয়ম ছিল যে, তারা আল্লাহর আযাবকে কামনা করত, তারা ভাবত যে আল্লাহর আযাব যদি আসবে তবে আসে না কেন? কিন্তু আল্লাহর নিয়ম হলো, তিনি কোন জাতিকে ধ্বংস করার পূর্বে তাকে প্রচুর সময় দেন। এ ব্যাপারটি আল্লাহ তা'আলা অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখ করেছেন। দেখুন, [সূরা আল-আনকাবূতঃ ৫৩,৫৪] [ইবন কাসীর]
[৪] এখানে তাদের শির্ক বলতে, তারা যে আযাব তাড়াতাড়ি চাচ্ছিল, অথবা কিয়ামত তাড়াতাড়ি চাচ্ছিল তা-ই বোঝানো হয়েছে। কেননা এর দ্বারা তারা মূলত; আল্লাহর ওয়াদাকে ভ্রান্ত সাব্যস্ত করেছে, এটা কুফরী ও শির্ক। তারা মনে করছে যে, আল্লাহ এটা করতে সম্ভব নন। তিনি সেটা করতে পারবে না। আর অপারগতা মূলত; বান্দাদের গুণ। বান্দাদের গুণকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা শির্ক। এ হিসেবে তারা শির্কে লিপ্ত হয়েছিল। [ফাতহুল কাদীর] নতুবা আল্লাহর সাথে কারো শরীক হবার প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর সত্তা এর অনেক উধের্ব এবং এ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। মোট কথাঃ তারা যে শির্ক করছে আল্লাহ তা'আলা তা থেকে পবিত্র। একটি কঠোর সতর্কবাণীর মাধ্যমে তাওহীদের দাওয়াত দেয়া এই আয়াতের সারমর্ম।
Tafsir Bayaan Foundation
আল্লাহর আদেশ এসে গেছে, সুতরাং তার জন্য তাড়াহুড়া করো না। তিনি পবিত্র এবং তারা যা শিরক করে, তা থেকে ঊর্ধ্বে।
Muhiuddin Khan
আল্লাহর নির্দেশ এসে গেছে। অতএব এর জন্যে তাড়াহুড়া করো না। ওরা যেসব শরীক সাব্যস্ত করছে সেসব থেকে তিনি পবিত্র ও বহু উর্ধ্বে।
Zohurul Hoque
আল্লাহ্র হুকুম এসেই গেছে, সুতরাং তা ত্বরান্বিত করতে চেয়ো না। সমস্ত মহিমা তাঁরই, আর তারা যা অংশী করে তিনি তার বহু ঊর্ধ্বে।