কুরআন মজীদ সূরা হিজর আয়াত ৯
Qur'an Surah Al-Hijr Verse 9
হিজর [১৫]: ৯ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ (الحجر : ١٥)
- innā
- إِنَّا
- Indeed We
- নিশ্চয়ই
- naḥnu
- نَحْنُ
- We
- আমরা
- nazzalnā
- نَزَّلْنَا
- have sent down
- আমরা অবতীর্ণ করেছি
- l-dhik'ra
- ٱلذِّكْرَ
- the Reminder
- উপদেশ বাণী (কুরআন)
- wa-innā
- وَإِنَّا
- and indeed We
- এবং নিশ্চয়ই আমরা
- lahu
- لَهُۥ
- of it
- জন্যে তার
- laḥāfiẓūna
- لَحَٰفِظُونَ
- (are) surely Guardians
- অবশ্যই সংরক্ষক
Transliteration:
Innaa Nahnu nazalnaz Zikra wa Innaa lahoo lahaa fizoon(QS. al-Ḥijr:9)
English Sahih International:
Indeed, it is We who sent down the message [i.e., the Quran], and indeed, We will be its guardian. (QS. Al-Hijr, Ayah ৯)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক। (হিজর, আয়াত ৯)
Tafsir Ahsanul Bayaan
নিশ্চয় আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই ওর সংরক্ষক।[১]
[১] অর্থাৎ কুরআনে অবৈধ হস্তক্ষেপ, বিকৃতি সাধন ও পরিবর্তন-পরিবর্ধন হতে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। অতএব কুরআন সেইভাবেই আজও সুরক্ষিত আছে, যেভাবে তা অবতীর্ণ হয়েছিল। ভ্রষ্ট ফির্কাগুলো নিজ নিজ আকীদার সর্মথনে কুরআনের আয়াতের আর্থিক বিকৃতি ঘটিয়েছে এবং আজও ঘটাচ্ছে। তবে শাব্দিক বিকৃতি ও পরিবর্তন হতে তা এখনও সুরক্ষিত। এ ছাড়াও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি দল আর্থিক বিকৃতির পর্দা ছিঁড়ে ফেলার জন্য সর্বকালেই বিদ্যমান, যারা তাদের আকীদার ও তাদের ভুল দলীল-প্রমাণাদির অসারতা প্রমাণ করেছেন এবং আজও তাঁরা সেই কাজে সচেষ্ট। তাছাড়া কুরআনকে এখানে যিকর (উপদেশ) বলে ব্যক্ত করা হয়েছে, যাতে বুঝা যায় যে, নবী (সাঃ)-এর স্বর্ণোজ্জ্বল জীবনাদর্শ ও তাঁর অমিয় বাণীকে সুরক্ষিত করে কুরআন কারীমের বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ হওয়ার দিকটাকে কিয়ামত পর্যন্ত সুরক্ষিত করা হয়েছে। অতএব কুরআন কারীম ও নবী (সাঃ)-এর জীবনাদর্শ দ্বারা বিশ্ববাসীকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার পথ সর্বকালের জন্য খোলা রয়েছে। উক্ত মর্যাদা ও সুরক্ষার বৈশিষ্ট্য পূর্বের কোন নবী বা কিতাবকে দেওয়া হয়নি।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক [১]।
[১] অর্থাৎ এই বাণী, যার বাহক সম্পর্কে তোমরা খারাপ মন্তব্য করছ, আল্লাহ নিজেই তা অবতীর্ণ করেছেন। তিনি একে কোন প্রকার বাড়তি বা কমতি, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন হওয়া থেকে হেফাযত করবেন। অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, “বাতিল এতে অনুপ্রবেশ করতে পারে না---সামনে থেকেও না, পিছন থেকেও না। এটা প্রজ্ঞাময়, স্বপ্রশংসিতের কাছ থেকে নাযিলকৃত ।" [সূরা ফুসসিলাত; ৪২]
আরও বলেছেন, “নিশ্চয় এর সংরক্ষণ ও পাঠ করাবার দায়িত্ব আমাদেরই। কাজেই যখন আমরা তা পাঠ করি আপনি সে পাঠের অনুসরণ করুন, তারপর তার বর্ণনার দায়িত্ব নিশ্চিতভাবে আমাদেরই” [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ১৭-১৯]।
সুতরাং একে বিকৃত বা এর মধ্যে পরিবর্তন সাধন করার সুযোগ ও তোমরা কেউ কোনদিন পাবে না। আল্লাহ্ তাআলা স্বয়ং এর হেফাযত করার কারণে শক্ররা হাজারো চেষ্টা সত্বেও এর মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি। রিসালাত আমলের পর আজ চৌদশ’ বছর অতীত হয়ে গেছে। দ্বীনি ব্যাপারাদীতে মুসলিমদের ক্রটি ও অমনোযোগিতা সত্বেও কুরআনুল কারীম মুখস্ত করার ধারা বিশ্বের সর্বত্র পূর্ববৎ অব্যাহত রয়েছে। প্রতি যুগেই লাখো লাখো বরং কোটি কোটি মুসলিম যুবক-বৃদ্ধ এবং বালক ও বালিকা এমন বিদ্যমান থাকা, যাদের বক্ষ-পাঁজরে আগাগোড়া কুরআন সংরক্ষিত রয়েছে। কোন বড় থেকে বড় আলেমের সাধ্য নেই যে, এক অক্ষর ভুল পাঠ করে। তৎক্ষনাৎ বালক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে অনেক লোক তার ভুল ধরে ফেলবে।
প্রখ্যাত আলেম সুফিয়ান ইবন ওয়াইনা এর কারণ বর্ণনা করে বলেন, কুরআনুল কারীম যেখানে তাওরাত ও ইঞ্জীলের আলোচনা করেছে, সেখানে বলেছেঃ
(بِمَا اسْتُحْفِظُوْا مِنْ كِتٰبِ اللّٰهِ)
[সূরা আল-মায়েদাঃ ৪৪] অর্থাৎ ইয়াহুদী ও নাসারাদেরকে আল্লাহর গ্রন্থ তাওরাত ও ইঞ্জীলের হেফাযতের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। এ কারণেই যখন ইয়াহুদী ও নাসারাগণ হেফাযতের কর্তব্য পালন করেনি, তখন এ গ্রন্থদ্বয় বিকৃত ও পরিবর্তিত হয়ে বিনষ্ট হয়ে গেল। পক্ষান্তরে কুরআনুল কারীম সম্পর্কে আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ
(وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ)
অর্থাৎ “আমিই এর সংরক্ষক" [সূরা আল-হিজরঃ৯]।
সুতরাং এটি কখনও অসংরক্ষিত হওয়ার সুযোগ নেই। [কুরতুবী]
Tafsir Bayaan Foundation
নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী।
* الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।
Muhiuddin Khan
আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতারণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।
Zohurul Hoque
নিঃসন্দেহ আমরা নিজেই স্মারকগ্রন্থ অবতারণ করেছি, আর আমরাই তো এর সংরক্ষণকারী।