Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা হিজর আয়াত ৩

Qur'an Surah Al-Hijr Verse 3

হিজর [১৫]: ৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

ذَرْهُمْ يَأْكُلُوْا وَيَتَمَتَّعُوْا وَيُلْهِهِمُ الْاَمَلُ فَسَوْفَ يَعْلَمُوْنَ (الحجر : ١٥)

dharhum
ذَرْهُمْ
Leave them
তাদেরকে ছেড়ে দাও
yakulū
يَأْكُلُوا۟
(to) eat
তারা খেতে থাকুক
wayatamattaʿū
وَيَتَمَتَّعُوا۟
and enjoy
ও তারা ভোগ করুক
wayul'hihimu
وَيُلْهِهِمُ
and diverted them
এবং তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক
l-amalu
ٱلْأَمَلُۖ
the hope
আশা আকাঙ্ক্ষা
fasawfa
فَسَوْفَ
then soon
অতঃপর শীঘ্রই
yaʿlamūna
يَعْلَمُونَ
they will come to know
তারা জানবে

Transliteration:

Zarhum yaakuloo wa tatamatta'oo wa yulhihimul amalu fasawfa ya'lamoon (QS. al-Ḥijr:3)

English Sahih International:

Let them eat and enjoy themselves and be diverted by [false] hope, for they are going to know. (QS. Al-Hijr, Ayah ৩)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

ছেড়ে দাও ওদেরকে, ওরা খেতে থাক আর ভোগ করতে থাক, আর (মিথ্যে) আশা ওদেরকে উদাসীনতায় ডুবিয়ে রাখুক, শীঘ্রই ওরা (ওদের ‘আমালের পরিণতি) জানতে পারবে। (হিজর, আয়াত ৩)

Tafsir Ahsanul Bayaan

তাদেরকে ছেড়ে দাও তারা খেতে থাকুক, ভোগ করতে থাকুক এবং আশা ওদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখুক, পরিণামে তারা বুঝবে। [১]

[১] এটি তিরঙ্কার ও ধমক, যদি কাফের ও মুশরিকরা কুফরী ও শিরক থেকে ফিরে না আসে, তাহলে তাদেরকে ছেড়ে দাও। তারা ভোগ বিলাসে ডুবে থাকুক, আশা করতে থাকুক, অচিরেই তারা তাদের কুফরী ও শিরকের পরিণাম বুঝতে পারবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তাদেরকে ছাড়ুন, তারা খেতে থাকুক [১], ভোগ করতে থাকুক এবং আশা তাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখুক [২], অতঃপর অচিরেই তারা জানতে পারবে [৩]।

[১] এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, পানাহারকে লক্ষ্য ও আসল বৃত্তি সাব্যস্ত করে নেয়া এবং সাংসারিক বিলাস-ব্যসনের উপকরণ সংগ্রহে মৃত্যুকে ভুলে গিয়ে দীর্ঘ পরিকল্পনা প্রণয়নে মেতে থাকা কাফেরদের দ্বারাই হতে পারে, যারা আখেরাত ও তার হিসাব-কিতাবে এবং পুরস্কার ও শাস্তিতে বিশ্বাস করে না। মুমিনও পানাহার করে, জীবিকার প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবস্থা করে এবং ভবিষ্যৎ কাজ-কারবারের পরিকল্পনাও তৈরী করে; কিন্তু মুত্যু ও আখেরাতকে ভুলে এ কাজ করে না। তাই প্রত্যেক কাজে হালাল ও হারামের চিন্তা করে এবং অনর্থক পরিকল্পনা প্রণয়নকে বৃত্তি হিসেবে গ্রহণ করে না। এখানে দীর্ঘ আশা পোষণ করার অর্থ হচ্ছে, ঈমান ও আনুগত্য ত্যাগ করে, দুনিয়ার মহব্বত ও লোভে মগ্ন হওয়া, তাওবাহ ও আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন পরিত্যাগ করা এবং মৃত্যু ও আখেরাত থেকে নিশ্চিন্ত দীর্ঘ পরিকল্পনায় মত্ত হওয়া। [বাগভী; কুরতুবী; ইবন কাসীর]

আবুদ্দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার দামেশকের জামে মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেনঃ ‘হে দামেশকবাসীগণ! তোমরা কি একজন সহানুভূতিশীল, হিতাকাঙ্খী ভাইয়ের কথা শুনবে? শুনে নাও, তোমাদের পূর্বে অনেক বিশিষ্ট লোক অতিক্রান্ত হয়েছে। তারা প্রচুর ধন-সম্পদ একত্রিত করেছিল, সুউচ্চ দালান-কোঠা নির্মাণ করেছিল এবং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা তৈরী করেছিল, আজ তারা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের গৃহগুলোই তাদের কবর হয়েছে এবং তাদের দীর্ঘ আশা ধোঁকা ও প্রতারণায় পর্যবসিত হয়েছে। ‘আদ জাতি তোমাদের নিকটেই ছিল। তারা ধন, জন, অস্ত্রশস্ত্র ও অশ্বাদি দ্বারা দেশকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছিল। আজ এমন কেউ আছে কি, যে তাদের উত্তরাধিকার আমার কাছ থেকে দু’দিরহামের বিনিময়ে ক্রয় করতে সম্মত হবে?’ [ইবনুল মুবারক আয-যুহদ ৮৪৭; কুরতুবী] হাসান বসরী রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ ‘যে ব্যক্তি জীবদ্দশায় দীর্ঘ আকাঙ্খার জাল তৈরী করে, তার আমল অবশ্যই খারাপ হয়ে যায়।‘ [কুরতুবী]

[২] অর্থাৎ মানুষের আশা-আকাংখা, লোভ-লালসা এতবেশী যে, সে তার পিছনে এতই মগ্ন থাকে যে, তার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে অথচ তার আশা পুরোয় না। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্দর উদাহরণ পেশ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার কোন বিশিষ্ট একটি ঘর আঁকলেন। তারপর তার মধ্যভাগ থেকে একটি রেখা এঁকে তা বৃত্তের বাইরে নিয়ে গেলেন। তারপর এ রেখার বাইরের অংশে ছোট ছোট কতগুলো রেখা আড়াআড়ি ভাবে মাঝ বরাবর আঁকলেন এবং বললেনঃ “এটা (মধ্যবিন্দু) হলো মানুষ, আর এর চারপাশে যে রেখা তাকে ঘিরে আছে দেখা যাচ্ছে সেটা তার আয়ু। আর যে রেখা বাইরের দিকে চলে গেছে সেটা তার আশা-আকাংখা। আর এই যে, ছোট ছোট রেখাগুলো আছে সেগুলো তার বিপদাপদ বালা-মুসিবত। যদি কোন একটি থেকে বেঁচে যায় অপরটি তাকে জাপটে ধরে। তারপর এটা থেকে বেঁচে গেলেও অপরটি তাকে ঠিকই ধরে ফেলে। [বুখারীঃ ৬৪১৭]

[৩] অচিরেই তারা জানতে পারবে তাদের ও তাদের কর্মকাণ্ডের পরিণাম কি হবে। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতে সে পরিণামটি বলা হয়েছে, “বলুন, ‘ভোগ করে নাও, পরিণামে আগুনই তোমাদের ফিরে যাওয়ার স্থান।" [সূরা ইবরাহীম; ৩০] আরও এসেছে, “তোমরা খাও এবং ভোগ করে নাও অল্প কিছুদিন, তোমরা তো অপরাধী, সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।" [সূরা আল-মুরসালাত; ৪৬-৪৭]

Tafsir Bayaan Foundation

তাদেরকে ছেড়ে দাও, আহারে ও ভোগে তারা মত্ত থাকুক এবং আশা তাদেরকে গাফেল করে রাখুক, আর অচিরেই তারা জানতে পারবে।

Muhiuddin Khan

আপনি ছেড়ে দিন তাদেরকে, খেয়ে নিক এবং ভোগ করে নিক এবং আশায় ব্যাপৃত থাকুক। অতি সত্বর তারা জেনে নেবে।

Zohurul Hoque

ছেড়ে দাও তাদের খানাপিনা করতে ও আমোদ-আাদ করতে, আর আশা-আকাঙ্খা তাদের ভুলিয়ে রাখুক, যেহেতু শীগগিরই তারা বুঝতে পারবে!