Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা ইব্রাহীম আয়াত ২৭

Qur'an Surah Ibrahim Verse 27

ইব্রাহীম [১৪]: ২৭ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

يُثَبِّتُ اللّٰهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِى الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَفِى الْاٰخِرَةِۚ وَيُضِلُّ اللّٰهُ الظّٰلِمِيْنَۗ وَيَفْعَلُ اللّٰهُ مَا يَشَاۤءُ ࣖ (ابراهيم : ١٤)

yuthabbitu
يُثَبِّتُ
Allah keeps firm
প্রতিষ্ঠিত করেন
l-lahu
ٱللَّهُ
Allah keeps firm
আল্লাহ
alladhīna
ٱلَّذِينَ
those who
(তাদের) যারা
āmanū
ءَامَنُوا۟
believe
ঈমান এনেছে
bil-qawli
بِٱلْقَوْلِ
with the firm word
দিয়ে বাণী
l-thābiti
ٱلثَّابِتِ
with the firm word
সুদৃঢ়
فِى
in
মধ্যে
l-ḥayati
ٱلْحَيَوٰةِ
the life
জীবনের
l-dun'yā
ٱلدُّنْيَا
(of) the world
পার্থিব
wafī
وَفِى
and in
এবং মধ্যে
l-ākhirati
ٱلْءَاخِرَةِۖ
the Hereafter
আখিরাতের
wayuḍillu
وَيُضِلُّ
And Allah lets go astray
এবং পথভ্রষ্ট করেন
l-lahu
ٱللَّهُ
And Allah lets go astray
আল্লাহ
l-ẓālimīna
ٱلظَّٰلِمِينَۚ
the wrongdoers
সীমালঙ্ঘনকারীদের
wayafʿalu
وَيَفْعَلُ
And Allah does
ও করেন
l-lahu
ٱللَّهُ
And Allah does
আল্লাহ
مَا
what
যা
yashāu
يَشَآءُ
He wills
তিনি ইচ্ছে করেন

Transliteration:

Yusabbitul laahul lazeena aamanoo bilqawlis saabiti fil hayaatid dunyaa wa fil Aakhirati wa yudillul laahuz zaalimeen; wa yaf'alul laahu maa yashaaa' (QS. ʾIbrāhīm:27)

English Sahih International:

Allah keeps firm those who believe, with the firm word, in worldly life and in the Hereafter. And Allah sends astray the wrongdoers. And Allah does what He wills. (QS. Ibrahim, Ayah ২৭)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে আল্লাহ সুপ্রতিষ্ঠিত বাণীর অবলম্বনে দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে প্রতিষ্ঠিত রাখবেন আর যালিমদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করে দেবেন। তিনি যা ইচ্ছে করেন তাই করেন। (ইব্রাহীম, আয়াত ২৭)

Tafsir Ahsanul Bayaan

যারা বিশ্বাসী তাদেরকে আল্লাহ শাশ্বত বাণী দ্বারা ইহজীবনে ও পরজীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখেন[১] এবং যারা সীমালংঘনকারী আল্লাহ তাদেরকে বিভ্রান্ত করেন; আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।

[১] এর ব্যাখ্যা হাদীসে এরূপ এসেছে যে, মৃত্যুর পর কবরে মুসলিমকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন সে উত্তরে এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন (সত্য) মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রসূল। সুতরাং এটাই অর্থ হচ্ছে আল্লাহর এই বাণীর ﴿يُثَبِّتُ اللّهُ الَّذِينَ آمَنُواْ﴾ (বুখারীঃ তাফসীর সূরা ইবরাহীম, মুসলিমঃ কিতাবুল জান্নাতি ওয়া সিফাতি নাঈমিহা) অন্য এক হাদীসে আছে যে, যখন বান্দাকে কবরে রাখা হয় এবং তার সঙ্গীরা চলে আসে, তখন সে তাদের জুতার আওয়াজ শোনে। অতঃপর তার নিকট দু'জন ফিরিশতা আসেন এবং তাকে উঠিয়ে (নবী (সাঃ)-এর প্রতি ইঙ্গিত করে) জিজ্ঞেস করেন যে, 'এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার মত কি?' সে মু'মিন হলে উত্তর দেয় যে, তিনি আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রসূল। ফিরিশতাগণ তাকে জাহান্নামের ঠিকানা দেখিয়ে বলেন যে, আল্লাহ এর পরিবর্তে তোমার জন্য জান্নাতে ঠিকানা বানিয়ে দিয়েছেন। সে উক্ত উভয় ঠিকানা দেখে এবং তার কবর সত্তর হাত প্রশস্ত করে দেওয়া হয় এবং তার কবরকে কিয়ামত অবধি নিয়ামত সম্ভার দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেওয়া হয়। (মুসলিম, উপরোক্ত পরিচ্ছেদ) আরেক হাদীসে আছে, তাকে জিজ্ঞেস করা হয়, 'তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কী? তোমার নবী কে?' সুতরাং আল্লাহ তাআলা অটলতা দান করেন এবং সে উত্তর দেয়, 'আমার রব আল্লাহ, আমার দ্বীন ইসলাম এবং আমার নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)।' (তাফসীর ইবনে কাসীর)

Tafsir Abu Bakr Zakaria

যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ্ তাদেরকে সুদৃঢ় বাক্যের দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে সুপ্রতিষ্ঠিত রাখবেন [১] এবং যারা যালিম আল্লাহ্ তাদেরকে বিভ্রান্তিতে রাখবেন। আর আল্লাহ্ যা ইচ্ছে তা করেন [২]।

[১] এ আয়াত থেকে আমরা আরো যে শিক্ষা পাই তা হলো, মু’মিনের ঈমান ও কালেমায়ে তাইয়্যেবার একটি বিশেষ প্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা হলোঃ মু’মিনের কালেমায়ে তাইয়্যেবা মজবুত ও অনড় বৃক্ষের মত একটি প্রতিষ্ঠিত উক্তি। একে আল্লাহ্ তা’আলা চিরকাল কায়েম ও প্রতিষ্ঠিত রাখেন দুনিয়াতেও এবং আখেরাতেও। শর্ত এই যে, এ কালেমা আন্তরিকতার সাথে বলতে হবে এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্-এর মর্ম পূর্ণরূপে বুঝতে হবে এবং সে অনুসারে আমল করতে হবে। এ কালেমায় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে দুনিয়াতে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে শক্তি যোগানো হয়। যখন কোন সন্দেহ আসে তাদেরকে সে সন্দেহ থেকে উত্তরণ করে দৃঢ় বিশ্বাসের প্রতি পথনির্দেশ দেয়া হয়। অনুরূপভাবে প্রবৃত্তির তাড়নায় মানুষ যখন দিশেহারা হয়ে যায়, তখনও তাদেরকে নিজের আত্মার অনিষ্টতা ও খারাপ ইচ্ছাশক্তির বিরুদ্ধে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের ভালবাসাকে সবকিছুর উপর স্থান দেয়ার তাওফীক দেয়া হয়। আখেরাতেও মৃত্যুর পূর্বমূহূর্তে দ্বীনে ইসলামীর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখার মাধ্যমে তাকে উত্তম পরিসমাপ্তির ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়। তারপর কবরে তাকে ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের সঠিক উত্তর প্রদানের সহযোগিতা করা হয়, ফলে সে উত্তর দিতে পারে যে, আমার রব আল্লাহ্, আমার দ্বীন ইসলাম এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার নবী। [সা’দী] অধিকাংশ মুফাসসির ও মুহাদ্দিস বলেন, এ আয়াত কবরের ফিতনা তথা প্রশ্নোত্তরের সাথে সংশ্লিষ্ট। বস্তুত; কবরের শাস্তি ও শান্তি কুরআন ও হাদীসের দ্বারা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, মুসলিমকে যখন কবরে প্রশ্ন করা হবে, তখন সে সাক্ষ্য দিবে যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্, এবং এটাও বলবে যে, মুহাম্মাদ আল্লাহ্‌র রাসূল। আর এটাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র বাণী-

(يُثَبِّتُ اللّٰهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا وَفِي الْاٰخِرَةِ)

-এর উদ্দেশ্য। [বুখারীঃ ৪৬৯৯, মুসলিমঃ ২৮৭১] এছাড়া আরো প্রায় চল্লিশ জন সাহাবী থেকে এ বিষয়ে বহু হাদীস বর্ণিত আছে। ইবনে কাসীর স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে এগুলো উল্লেখ করেছেন। হাদীসগুলো মুতাওয়াতির পর্যায়ের। [সা’দী] সাহাবাগণ তাদের তাফসীরে আলোচ্য আয়াতে আখেরাতের অর্থ কবর এবং আয়াতটিকে কবরের আযাব সওয়াব সম্পর্কিত বলে সাব্যস্ত করেছেন। [বিস্তারিত দেখুন, ইবন কাসীর; আত-তাফসীরুস সহীহ]

[২] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা যা চান, তাই করেন। তিনি চাইলে কাউকে তাওফীক দেন, কাউকে তাওফীক থেকে বঞ্চিত করেন। কাউকে সুদৃঢ় রাখেন। কাউকে পদস্খলিত করেন। [বাগভী] কাউকে আযাব দেন, কাউকে পথভ্রষ্ট করেন। [কুরতুবী] তাঁর ইচ্ছাকে রুখে দাঁড়ায়, এমন কোন শক্তি নেই। উবাই ইবনে কা’ব, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ, হুযাইফা ইবন ইয়ামান প্রমুখ সাহাবী বলেনঃ মু’মিনের এরূপ বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, তার যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তা আল্লাহ্‌র ইচ্ছায়ই অর্জিত হয়েছে। এটা অর্জিত না হওয়া অসম্ভব ছিল। এমনিভাবে যে বস্তু অর্জিত হয়নি, তা অর্জিত হওয়া সম্ভব ছিল না।

তারা আরো বলেনঃ যদি তুমি এরূপ বিশ্বাস না রাখ, তবে তোমার আবাস হবে জাহান্নাম। কারণ, এটাই মূলতঃ তাকদীরের উপর ঈমান। আর যে কেউ তাকদীরের ভাল বা মন্দ হওয়ার উপর ঈমান আনবে না তার ঈমানই শুদ্ধ হবে না। তার আবাস জাহান্নাম হবেই। [ইবনুল কাইয়্যেম, তরীকুল হিজরাতাইনঃ ১/৮২ ]

Tafsir Bayaan Foundation

আল্লাহ অবিচল রাখেন ঈমানদারদেরকে সুদৃঢ় বাণী দ্বারা দুনিয়ার জীবনে ও আখিরাতে। আর আল্লাহ যালিমদের পথভ্রষ্ট করেন এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন।

Muhiuddin Khan

আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালেমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।

Zohurul Hoque

যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্ তাদের প্রতিষ্ঠিত করেন শাশ্বত বাণীর দ্বারা এই দুনিয়ার জীবনে ও পরকালে, আর আল্লাহ্ পথহারা করেন অন্যায়কারীদের, আর আল্লাহ্ যা ইচ্ছে করেন তাই করেন।