কুরআন মজীদ সূরা রা'দ আয়াত ২
Qur'an Surah Ar-Ra'd Verse 2
রা'দ [১৩]: ২ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
اَللّٰهُ الَّذِيْ رَفَعَ السَّمٰوٰتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَۗ كُلٌّ يَّجْرِيْ لِاَجَلٍ مُّسَمًّىۗ يُدَبِّرُ الْاَمْرَ يُفَصِّلُ الْاٰيٰتِ لَعَلَّكُمْ بِلِقَاۤءِ رَبِّكُمْ تُوْقِنُوْنَ (الرعد : ١٣)
- al-lahu
- ٱللَّهُ
- Allah
- (তিনিই) আল্লাহ
- alladhī
- ٱلَّذِى
- (is) the One Who
- যিনি
- rafaʿa
- رَفَعَ
- raised
- উপরে স্থাপন করেছেন
- l-samāwāti
- ٱلسَّمَٰوَٰتِ
- the heavens
- আকাশমন্ডলী
- bighayri
- بِغَيْرِ
- without
- ছাড়া
- ʿamadin
- عَمَدٍ
- pillars
- কোন খুঁটি
- tarawnahā
- تَرَوْنَهَاۖ
- that you see
- তা তোমরা দেখছো
- thumma
- ثُمَّ
- then
- এরপর
- is'tawā
- ٱسْتَوَىٰ
- He established
- উঠেছেন
- ʿalā
- عَلَى
- on
- উপর
- l-ʿarshi
- ٱلْعَرْشِۖ
- the Throne
- আরশের
- wasakhara
- وَسَخَّرَ
- and subjected
- এবং অধীন করেছেন
- l-shamsa
- ٱلشَّمْسَ
- the sun
- সূর্যকে (নিয়মের)
- wal-qamara
- وَٱلْقَمَرَۖ
- and the moon
- ও চাঁদকে
- kullun
- كُلٌّ
- each
- প্রত্যেকে
- yajrī
- يَجْرِى
- running
- চলছে
- li-ajalin
- لِأَجَلٍ
- for a term
- জন্যে সময়ের
- musamman
- مُّسَمًّىۚ
- appointed
- নির্দিষ্ট
- yudabbiru
- يُدَبِّرُ
- He arranges
- তিনি পরিচালনা করেন
- l-amra
- ٱلْأَمْرَ
- the matter;
- সকল বিষয়
- yufaṣṣilu
- يُفَصِّلُ
- He details
- বিশদ বর্ণনা করেন
- l-āyāti
- ٱلْءَايَٰتِ
- the Signs
- নিদর্শনসমূহ
- laʿallakum
- لَعَلَّكُم
- so that you may
- তোমরা যাতে
- biliqāi
- بِلِقَآءِ
- in the meeting
- সম্পর্কে সাক্ষাত
- rabbikum
- رَبِّكُمْ
- (with) your Lord
- তোমাদের রবের
- tūqinūna
- تُوقِنُونَ
- believe with certainty
- তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস করো
Transliteration:
Allaahul lazee raf'as samaawaati bighairi 'amadin tarawnahaa summas tawaa 'alal 'Arshi wa sakhkharash shamsa walqamara kulluny yajree li ajalim musammaa; yudabbirul amra yufassilil Aayaati la'allakum biliqaaa'i Rabbikum tooqinoon(QS. ar-Raʿd:2)
English Sahih International:
It is Allah who erected the heavens without pillars that you [can] see; then He established Himself above the Throne and made subject the sun and the moon, each running [its course] for a specified term. He arranges [each] matter; He details the signs that you may, of the meeting with your Lord, be certain. (QS. Ar-Ra'd, Ayah ২)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়াই আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে তুলে রেখেছেন, যা তোমরা দেখছ, অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নত হয়েছেন তিনিই সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মের বন্ধনে বশীভূত রেখেছেন, প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য গতিশীল আছে। যাবতীয় বিষয় তিনিই নিয়ন্ত্রণ করেন, তিনি নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী হতে পার। (রা'দ, আয়াত ২)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আল্লাহই স্তম্ভ ছাড়া আকাশমন্ডলীকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন; তোমরা তা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হয়েছেন[১] এবং সূর্য ও চন্দ্রকে বশীভূত করেছেন; প্রত্যেকে নির্দিষ্ট মিয়াদে আবর্তন করে।[২] তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।
[১] استَوَى عَلَى العَرش এর ভাবার্থ ইতিপূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এর অর্থ মহান আল্লাহর আরশে অবস্থান করা। হাদীস বিশারদদের তরীকা এটাই যে, তাঁরা আল্লাহর কোন গুণের তা'বীল (অপব্যাখ্যা) করেন না, যেমন অন্যরা মহান আল্লাহর উক্ত গুণের এবং তাঁর অন্যান্য গুণের অপব্যাখ্যা করে থাকে। হাদীস বিশারদগণ এও বলেছেন যে, তাঁর গুণাবলীর কেমনত্বও বর্ণনা করা যাবে না এবং কোন কিছুর সাথে তুলনাও করা যাবে না। তিনি বলেন; ﴿لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَهُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ﴾ অর্থ, কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা ৪২;১১)
[২] এর একটি অর্থ এই যে, 'প্রত্যেকে নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করবে।' অর্থাৎ কিয়ামত অবধি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক চলতে থাকবে। মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য তার স্থির হওয়ার সময় পর্যন্ত চলছে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। (সূরা ইয়াসীন ৩৬;৩৮) দ্বিতীয় অর্থ এই যে, চন্দ্র এবং সূর্য উভয়েই নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করছে। সূর্য নিজের চক্র এক বছরে এবং চন্দ্র এক মাসে পূর্ণ করে নেয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ﴿وَالْقَمَرَ قَدَّرْنَاهُ مَنَازِلَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্রের জন্যে আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিনণ কক্ষপথ। (সূরা ইয়াসীন ৩৬;৩৯) সাতটি বৃহৎ বৃহৎ গ্রহ রয়েছে, ওদের মধ্যে দু'টি হলো সূর্য এবং চন্দ্র। এখানে শুধু উক্ত দু'টি গ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন, কেননা এ দুটিই (মানুষের চক্ষুদৃষ্টিতে) সর্বাধিক বিশাল এবং মহত্বপূর্ণ। এ দুটিও যখন আল্লাহর নির্দেশাধীন, তাহলে অন্যগুলো নিশ্চিতরূপে তাঁর নির্দেশাধীন হবে। আর যখন এরা আল্লাহর হুকুমের অধীনে, তখন এরা মা'বূদ (উপাস্য) হতে পারে না। মা'বূদ তো তিনিই, যিনি এদেরকে অধীনস্থ করে রেখেছেন। তাই তিনি বলেন,﴿لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِله الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِن كُنتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ﴾ অর্থাৎ, চন্দ্র-সূর্যকে সিজদা করো না, সেই আল্লাহকে সিজদা কর, যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করতে চাও। (সূরা ফুসস্বিলাত ৪১;৩৭) অন্যত্র বলেন, ﴿وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ﴾ অর্থাৎ, সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি সবই তাঁর হুকুমের অনুগত। (সূরা আ'রাফ ৭;৫৪)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আল্লাহ্, যিনি আসমানসমূহ উপরে স্থাপন করেছেন খুঁটি ছাড়া [১], তোমরা তা দেখছ [২]। তারপর তিনি ‘আরশের উপর উঠেছেন [৩] এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়মাধীন করেছেন [৪]; প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে [৫]। তিনি সব বিষয় পরিচালনা করেন, আয়াতসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন [৬], যাতে তোমরা তোমাদের রবের সঙ্গে সাক্ষাত সম্পর্কে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার [৭]।
[১] আয়াতের এক অনুবাদ উপরে করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা আসমানসমূহকে কোন খুঁটি ব্যতীত উপরে উঠিয়েছেন, তোমরা সে আসমানসমূহকে দেখতে পাচ্ছ। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] অর্থাৎ আল্লাহ্ এমন এক সত্তা, যিনি আসমানসমূহকে সুবিস্তৃত ও বিশাল গম্বুজাকার খুঁটি ব্যতীত উচ্চে উন্নীত রেখেছেন যেমন তোমরা আসমানসমূহকে এ অবস্থায়ই দেখ। এ অর্থের স্বপক্ষে আমরা পবিত্র কুরআনের অন্যত্র দেখতে পাই সেখানে বলা হয়েছে, “আর তিনিই আকাশকে স্থির রাখেন যাতে তা পড়ে না যায় পৃথিবীর উপর তাঁর অনুমতি ছাড়া।” [সূরা আল-হাজ্জঃ ৬৫] তবে আয়াতের অন্য এক অনুবাদ হলো, আল্লাহ্ তা'আলা আসমানসমূহকে অদৃশ্য ও অননুভূত স্তম্ভসমূহের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ অনুবাদটি ইবনে আব্বাস, মুজাহিদ, হাসান ও কাতাদা রাহেমাহুমুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে। [তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর] তবে ইবন কাসীর প্রথম তাফসীরকে প্রাধান্য দিয়েছেন।
[২] কুরআনুল কারীমের কতিপয় আয়াতে আকাশ দৃষ্টিগোচর হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে; যেমন এ আয়াতে (تَرَوْنَهَا) বলা হয়েছে এবং অন্য এক আয়াতে
(وَاِلَى السَّمَاۗءِ كَيْفَ رُفِعَتْ)
[সূরা আল-গাশিয়াহঃ ১৮] বলা হয়েছে। বিভিন্ন বর্ণনায় এটা এসেছে যে, যমীনের আশেপাশে যা আছে যেমনঃ বাতাস, পানি ইত্যাদি প্রথম আসমান এ সবগুলোকে সবদিক থেকে সমভাবে বেষ্টন করে আছে। যে কোন দিক থেকেই প্রথম আসমানের দিকে যাত্রা করা হউক না কেন তা পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বে রয়েছে। আবার প্রথম আসমান বা নিকটতম আসমানের পুরূত্বও পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বের মত। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় আসমানও প্রথম আসমানকে চতুর্দিক থেকে বেষ্টন করে আছে। এ দু’টোর দূরত্ব পাঁচশত বছরের পথের দূরত্বের মত। আবার দ্বিতীয় আসমানের পুরূত্বও পাঁচশত বছরের রাস্তার মত। তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম আসমানও তদ্রুপ দূরত্ব ও পুরত্ব বিশিষ্ট। এ আসমানসমূহকে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নিজস্ব ক্ষমতাবলে কোন প্রকার বাহ্যিক খুঁটি ব্যতীতই ধারন করে রেখেছেন। সেগুলো একটির উপর আরেকটি পড়ে যাচ্ছেনা এটা একদিকে যেমন তাঁর মহা শক্তিধর ও ক্ষমতাবান হওয়া নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে অন্যদিকে আসমান ও যমীন যে কত প্রকাণ্ড সৃষ্টি তার এক প্রচ্ছন্ন ধারণা আমাদেরকে দেয়। [ইবন কাসীর] মহান আল্লাহ্ বলেন, “মানুষকে সৃষ্টি করা অপেক্ষা আসমানসমূহ ও যমীন সৃষ্টি তো কঠিনতর, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।" [সূরা গাফেরঃ ৫৭] অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহ্ই সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং তাদের মত পৃথিবীও, তাদের মধ্যে নেমে আসে তাঁর নির্দেশ; যাতে তোমরা বুঝতে পার যে, আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান এবং জ্ঞানে আল্লাহ্ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। [সূরা আত-ত্বালাকঃ ১২] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাত আসমান ও এর ভিতরে যা আছে এবং এর মাঝখানে যা আছে তা সবই কুরসীর মধ্যে যেন বিস্তীর্ণ যমীনের মধ্যে একটি আংটি আর কুরসী হলো মহান আরশের মধ্যে তদ্রুপ একটি আংটি স্বরূপ যা এক বিস্তীর্ণ যমীনে পড়ে আছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, আর আরশ তার পরিমাণ তো মহান আল্লাহ্ ছাড়া কেউ নির্ধারণ করে বলতে পারবে না। [তাবারী]
[৩] এর ব্যাখ্যা সূরা বাকারাহ এবং সূরা আল-আ’রাফে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে সংক্ষেপে এখানে এতটুকু বলাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ্ আরশের উপর উঠার ব্যাপারটি তাঁর একটি বিশেষ গুণ। তিনি আরশের উপর উঠেছেন বলে আমরা স্বীকৃতি দেব। কিন্তু কিভাবে তিনি তা করেছেন তা আমাদের জ্ঞানের বাইরের বিষয়।
[৪] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সূর্য ও চন্দ্রকে আজ্ঞাধীন করেছেন। প্রত্যেকটিই একটি নির্দিষ্ট গতিতে চলে। আজ্ঞাধীন করার অর্থ এই যে, উভয়কে তিনি সৃষ্টিকুলের উপকারের জন্য, তাঁর বান্দাদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য নিয়োজিত করেছেন, মূলত; প্রতিটি সৃষ্টিই স্রষ্টার আজ্ঞাধীন। [কুরতুবী] যে কাজে তাদেরকে আল্লাহ্ নিয়োজিত করেছেন তারা অহৰ্নিশ তা করে যাচ্ছে। হাজারো বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে; কিন্তু কোন সময় তাদের গতি চুল পরিমাণও কম-বেশী হয়নি। তারা ক্লান্ত হয় না এবং কোন সময় নিজের নির্দিষ্ট কাজ ছেড়ে অন্য কাজে লিপ্ত হয় না। [কুরতুবী]
[৫] আয়াতে উল্লেখিত (أجل) শব্দটির মূল অর্থঃ সময়। তবে অন্যান্য অর্থেও এর ব্যবহার আছে। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ বর্ণনায় কয়েকটি মত রয়েছেঃ
এক, এখানে (اَجَلٍ مُّسَمًّى) বা সুনির্দিষ্ট মেয়াদ বলতে বুঝানো হয়েছে যে, চাঁদ ও সূর্য কিয়ামত পর্যন্ত তাদের সুনির্দিষ্ট কক্ষপথে চলতে থাকবে। যখন সূর্যকে গুটিয়ে নেয়া হবে, চাঁদকে নিষ্প্রভ করা হবে, তারকাসমূহ আলোহীন হয়ে পড়বে আর গ্রহ নক্ষত্রগুলো খসে পড়বে, তখন পর্যন্ত এগুলো চলবে। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ” [সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮] এখানে গন্তব্য বলে সুনির্দিষ্ট সময়ও উদ্দেশ্য হতে পারে। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
দুই, কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতের অর্থ, আল্লাহ্ তা'আলা প্রত্যেক গ্রহের জন্যে একটি বিশেষ গতি ও বিশেষ কক্ষপথ নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। তারা সব সময় নিজ নিজ কক্ষপথে নির্ধারিত গতিতে চলমান থাকে। চন্দ্র নিজ কক্ষপথ এক মাসে এবং সূর্য এক বছরে অতিক্রম করে। [কুরতুবী]
তিন, অথবা আয়াতের অর্থ, আল্লাহ্ সেগুলোকে সুনির্দিষ্ট গন্তব্যস্থানের প্রতি ধাবিত করান। আর সে গন্তব্যস্থান হলো আরশের নীচে। এ ব্যাপারে সহীহ হাদীসে বিস্তারিত এসেছে সূরা ইয়াসীনে যার বর্ণনা আসবে। [ইবন কাসীর]
[৬] অর্থাৎ তিনি আয়াতসমূহকে বিস্তারিত বর্ণনা করেন। এর মানে, আল্লাহ্ তা’আলা অপার শক্তির নিদর্শনাবলী তিনি বর্ণনা করছেন। [বাগভী; ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ তিনি বিস্তারিত প্রমাণ পেশ করছেন যে, যিনি পূর্ব বর্ণিত কাজগুলো করতে পারেন তিনি অবশ্যই মানুষকে মৃত্যুর পর পুনরায় আনতে সক্ষম। [কুরতুবী] এগুলো আরও প্রমাণ করছে যে, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ্ নেই। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই তাঁর সৃষ্টিকে পুনরায় সৃষ্টি করবেন। [ইবন কাসীর]
(৭) অর্থাৎ সমগ্র সৃষ্টজগৎ ও তার বিস্ময়কর পরিচালন-ব্যবস্থা আল্লাহ্ তা'আলা এজন্য কায়েম করেছেন, যাতে তোমরা চিন্তা-ভাবনা করে আখেরাত ও কেয়ামতে বিশ্বাসী হও এবং সত্য বলে মেনে নাও। [বাগভী] কেননা, এ বিস্ময়কর ব্যবস্থা ও সৃষ্টির প্রতি লক্ষ্য করার পর আখেরাতে মানুষকে পুনর্বার সৃষ্টি করাকে আল্লাহ্র শক্তি বহির্ভূত মনে করা সম্ভব হবে না।
Tafsir Bayaan Foundation
আল্লাহ, যিনি খুঁটি ছাড়া আসমানসমূহ উঁচু করেছেন যা তোমরা দেখছ। অতঃপর তিনি আরশে উঠেছেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়োজিত করেছেন। এর প্রত্যেকটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলবে। তিনি সবকিছু পরিচালনা করেন। আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করেন, যাতে তোমাদের রবের সাক্ষাতের ব্যাপারে তোমরা দৃঢ়বিশ্বাসী হতে পার।
Muhiuddin Khan
আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো দেখ। অতঃপর তিনি আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। এবং সূর্য ও চন্দ্রকে কর্মে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকে নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক আবর্তন করে। তিনি সকল বিষয় পরিচালনা করেন, নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা স্বীয় পালনকর্তার সাথে সাক্ষাত সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
Zohurul Hoque
আল্লাহ্ই তিনি যিনি মহাকাশমন্ডলকে ঊর্ধ্বে স্থাপন করেছেন কোনো স্তম্ভ ছাড়া -- তোমরা তো এ দেখছ, আর তিনি আরশে সমাসীন হলেন, আর তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে অনুগত করলেন। প্রত্যেকে আবর্তন করছে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে। তিনিই ব্যাপার নিয়ন্ত্রণ করেন, বিশদভাবে বর্ণনা করেন নির্দেশাবলী, যেন তোমরা তোমাদের প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাৎকার সন্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।