কুরআন মজীদ সূরা হুদ আয়াত ৮
Qur'an Surah Hud Verse 8
হুদ [১১]: ৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
وَلَىِٕنْ اَخَّرْنَا عَنْهُمُ الْعَذَابَ اِلٰٓى اُمَّةٍ مَّعْدُوْدَةٍ لَّيَقُوْلُنَّ مَا يَحْبِسُهٗ ۗ اَلَا يَوْمَ يَأْتِيْهِمْ لَيْسَ مَصْرُوْفًا عَنْهُمْ وَحَاقَ بِهِمْ مَّا كَانُوْا بِهٖ يَسْتَهْزِءُوْنَ ࣖ (هود : ١١)
- wala-in
- وَلَئِنْ
- And if
- এবং অবশ্যই যদি
- akharnā
- أَخَّرْنَا
- We delay
- আমরা স্হগিত রাখি
- ʿanhumu
- عَنْهُمُ
- from them
- তাদের থেকে
- l-ʿadhāba
- ٱلْعَذَابَ
- the punishment
- শাস্তি
- ilā
- إِلَىٰٓ
- for
- পর্যন্ত
- ummatin
- أُمَّةٍ
- a time
- একটি সময়
- maʿdūdatin
- مَّعْدُودَةٍ
- determined
- নির্দিষ্ট
- layaqūlunna
- لَّيَقُولُنَّ
- they will surely say
- (তবে) অবশ্যই তারা বলবে
- mā
- مَا
- "What
- "কিসে
- yaḥbisuhu
- يَحْبِسُهُۥٓۗ
- detains it?"
- তা আটকে রেখেছে"
- alā
- أَلَا
- No doubt!
- সাবধান
- yawma
- يَوْمَ
- (On) the Day
- যেদিন
- yatīhim
- يَأْتِيهِمْ
- it comes to them
- তাদের কাছে আসবে (তা)
- laysa
- لَيْسَ
- not
- না
- maṣrūfan
- مَصْرُوفًا
- (will be) averted
- ফিরানো যায়
- ʿanhum
- عَنْهُمْ
- from them
- থেকে তাদের (সেই শাস্তি)
- waḥāqa
- وَحَاقَ
- and will surround
- এবং ঘিরে রাখবে
- bihim
- بِهِم
- them
- তাদেরকে
- mā
- مَّا
- what
- যা
- kānū
- كَانُوا۟
- they used (to)
- তারা ছিলো
- bihi
- بِهِۦ
- mock at [it]
- সম্বন্ধে সে
- yastahziūna
- يَسْتَهْزِءُونَ
- mock at [it]
- ঠাট্টা তামাশা করতো
Transliteration:
Wala'in akhkharnaa 'anhumul 'azaaba ilaaa ummatim ma'doodatil la yaqoolunna maa yahbisuh; alaa yawma yaateehim laisa masroofan 'anhum wa haaqa bihim maa kaanoo bihee yastahzi'oon(QS. Hūd:8)
English Sahih International:
And if We hold back from them the punishment for a limited time, they will surely say, "What detains it?" Unquestionably, on the Day it comes to them, it will not be averted from them, and they will be enveloped by what they used to ridicule. (QS. Hud, Ayah ৮)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
আমি যদি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের থেকে শাস্তি বিলম্বিত করি, তাহলে তারা অবশ্য অবশ্যই বলবে যে, ‘কিসে ওটাকে আটকে রাখল? সাবধান! এমন দিন তাদের কাছে আসবে যা তাদের থেকে কেউ ফিরিয়ে দিতে পারবে না, আর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা বিদ্রূপ করছিল তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলবে। (হুদ, আয়াত ৮)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর যদি আমি নির্দিষ্ট কিছু দিনের জন্য[১] তাদের শাস্তিকে বিলম্বিত করি, তাহলে তারা অবশ্যই বলবে, ‘সেই শাস্তিকে কিসে আটক রাখছে?’ স্মরণ রেখ, যেদিন ওটা তাদের উপর এসে পড়বে, তখন তা ফিরাবার কেউ থাকবে না, আর যা নিয়ে তারা উপহাস করছিল, তা এসে তাদেরকে ঘিরে নেবে। [২]
[১] أُمَّةٌ (উম্মাহ বা উম্মত) শব্দটি কুরআন শরীফের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হয়েছে। শব্দটি أم থেকে উৎপত্তি, যার অর্থ হল উদ্দেশ্য। এখানে এর অর্থ হল সেই মেয়াদ ও সময়, যা সময় আযাব অবতীর্ণ করার জন্য উদ্দিষ্ট। (ফাতহুল কাদীর) সূরা ইউসুফের ১২;৪৫নং (وَادَّكَرَ بَعْدَ أُمَّةٍ) আয়াতেও একই অর্থ পাওয়া যায়। এ ছাড়া আরো যে অর্থে শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, তার মধ্যে একটি অর্থ হল, ইমাম বা নেতাঃ যেমন (إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً) অর্থাৎ, নিশ্চয় ইবরাহীম ছিল একজন ইমাম। (সূরা নাহল ১৬;১২০) মিল্লাত, দ্বীন বা মতাদর্শঃ যেমন (إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَى أُمَّةٍ) অর্থাৎ, আমরা তো আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এক মতাদর্শের অনুসারী পেয়েছি। (সূরা যুখরুফ ৪৩;২৩) জামাআত বা দলঃ যেমন (وَلَمَّا وَرَدَ مَاءَ مَدْيَنَ وَجَدَ عَلَيْهِ أُمَّةً مِنَ النَّاسِ) অর্থাৎ, যখন সে মাদয়্যানের কূপের নিকট পৌঁছল, দেখল একদল লোক তাদের পশুগুলিকে পানি পান করাচ্ছে। (সূরা ক্বাস্বাস ২৮;২৩) (وَمِن قَوْمِ مُوسَى أُمَّةٌ) অর্থাৎ, মূসার সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একদল রয়েছে যারা (অন্যকে) ন্যায় পথ দেখায় ও ন্যায় বিচার করে। (সূরা আ'রাফ ৭;১৫৯) ইত্যাদি। আরো একটি অর্থ হল সেই বিশেষ সম্প্রদায় বা জাতি যাদের নিকট কোন রসূল প্রেরিত হয়েছিলেনঃ (وَلِكُلِّ أُمَّةٍ رَسُولٌ) অর্থাৎ, প্রত্যেক জাতির জন্য এক একজন রসূল ছিল। (সূরা ইউনুস ১০;৪৭) একে উম্মতে দাওয়াতও বলা হয়। অনুরূপ নবীদের প্রতি ঈমান আনয়নকারী জাতিকে উম্মত বা উম্মতে ইত্তিবা' বা উম্মতে ইজাবাহ বলা হয়। (ইবনে কাসীর)
[২] এখানে তাড়াতাড়ি চাওয়াকে ঠাট্টা-উপহাস করা বলা হয়েছে। কারণ তাদের সেই তাড়াতাড়ি ঠাট্টা-উপহাস স্বরূপই হত। সুতরাং উদ্দেশ্য তাদেরকে এই কথা বুঝানো যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আযাবে দেরী হওয়াতে মানুষের উদাসীন হওয়া উচিত নয়। যেহেতু তাঁর আযাব যে কোন সময় আসতে পারে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
নির্দিষ্ট কালের জন্য [১] আমরা যদি তাদের থেকে শাস্তি স্থগিত রাখি তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘কিসে সেটা নিবারণ করেছ?’ সাবধান ! যেদিন তাদের কাছে এটা আসবে সেদিন তাদের কাছে থেকে সেটাকে নিবৃত্ত করা হবে না এবং যা নিয়ে তারা ঠাট্টা- বিদ্রূপ করে তা তাদেরকে পরিবেষ্টন করবে।
[১] এখানে আল্লাহ তা'আলা (امة) শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এ শব্দটি স্থানভেদে বিভিন্ন অর্থ প্রদান করে থাকে [দ্র; কুরতুবী]
ক) সময় বা সুনির্দিষ্ট কাল, যেমন আলোচ্য আয়াত ও সূরা ইউসুফের ৪৫ নং আয়াত। ইবন আব্বাস থেকে এখানে এ অর্থই বর্ণিত হয়েছে। [তাবারী]
খ) অনুসরণযোগ্য ইমাম, যেমন সূরা আন-নাহলের ১২০ নং আয়াতে ইবরাহীম আলাইহিসসালামের ব্যাপারে বলা হয়েছে।
গ) ধর্ম ও রীতিনীতি অর্থে, যেমন সূরা আয-যুখরুফের ২৩ নং আয়াত।
ঘ) দল বা বড় শ্রেণী বা জামা'আত তথা অনেক লোককে বুঝানোর অর্থে, যেমন সূরা আল-কাসাসের ২৩ নং আয়াত।
ঙ) জাতি অর্থে, যাতে মুমিন কাফির সবাই অন্তর্ভুক্ত। যেমন সূরা আন-নাহলঃ ৩৬, ইউনুসঃ ৪৭।
চ) শুধু ঈমানদার জাতি বুঝানোর জন্য। যেমন সুরা আলে-ইমরানঃ ১১০ ৷ অনুরূপভাবে হাদীসে এসেছে, হাশরের মাঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেনঃ “উম্মতি, উম্মতি” আমার উম্মত, আমার উম্মত। এখানে শুধু মুসলিম জাতিকে বুঝানো হয়েছে।
ছ) এ ছাড়া এ শব্দ দ্বারা কোন গোষ্ঠী বা অংশ বুঝানোর অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন, সূরা আল-আরাফঃ ১৫৯, সূরা আলে ইমরানঃ ১১৩]
Tafsir Bayaan Foundation
আর যদি আমি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের থেকে আযাব বিলম্বিত করি, তবে তারা অবশ্যই বলবে, ‘কোন্ বস্তু তাকে ঠেকিয়ে রাখল’? সাবধান ! যেদিন তাদের উপর তা নেমে আসবে, সেদিন তাদের থেকে তা ফেরানো হবে না এবং তারা যা নিয়ে উপহাস করত, তাদেরকে তা ঘিরে ফেলবে।
Muhiuddin Khan
আর যদি আমি এক নির্ধারিত মেয়াদ পর্যন্ত তাদের আযাব স্থগিত রাখি, তাহলে তারা নিশ্চয়ই বলবে কোন জিনিসে আযাব ঠেকিয়ে রাখছে? শুনে রাখ, যেদিন তাদের উপর আযাব এসে পড়বে, সেদিন কিন্তু তা ফিরে যাওয়ার নয়; তারা যে ব্যাপারে উপহাস করত তাই তাদেরকে ঘিরে ফেলবে।
Zohurul Hoque
আর যদি তাদের থেকে নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আমরা শাস্তি স্থগিত রাখি তবে তারা নিশ্চয়ই বলবে -- ''কিসে একে বাধা দিচ্ছে?’’ এটি কি নয় যে যেদিন তাদের নিকটে এ আসবে সেদিন তাদের থেকে এটি প্রতিহত হবে না, আর যা নিয়ে তারা ঠাট্টা-বিদ্রূপ করছিল তাই তাদের ঘেরাও করবে?