কুরআন মজীদ সূরা হুদ আয়াত ৬
Qur'an Surah Hud Verse 6
হুদ [১১]: ৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
۞ وَمَا مِنْ دَاۤبَّةٍ فِى الْاَرْضِ اِلَّا عَلَى اللّٰهِ رِزْقُهَا وَيَعْلَمُ مُسْتَقَرَّهَا وَمُسْتَوْدَعَهَا ۗ كُلٌّ فِيْ كِتٰبٍ مُّبِيْنٍ (هود : ١١)
- wamā
- وَمَا
- And not
- এবং নেই
- min
- مِن
- any
- (এমন) কোন
- dābbatin
- دَآبَّةٍ
- moving creature
- বিচরণশীল জীব
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- l-arḍi
- ٱلْأَرْضِ
- the earth
- পৃথিবীর
- illā
- إِلَّا
- but
- এছাড়া
- ʿalā
- عَلَى
- on
- উপর
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- Allah
- আল্লাহরই
- riz'quhā
- رِزْقُهَا
- (is) its provision
- তার জীবিকার (দায়িত্ব)
- wayaʿlamu
- وَيَعْلَمُ
- And He knows
- এবং তিনি জানেন
- mus'taqarrahā
- مُسْتَقَرَّهَا
- its dwelling place
- তার স্থায়ী অবস্থান
- wamus'tawdaʿahā
- وَمُسْتَوْدَعَهَاۚ
- and its place of storage
- ও তার অস্থায়ী অবস্থান
- kullun
- كُلٌّ
- All
- সবই
- fī
- فِى
- (is) in
- মধ্যে (আছে)
- kitābin
- كِتَٰبٍ
- a Record
- এক কিতাবের
- mubīnin
- مُّبِينٍ
- clear
- সুস্পষ্ট (লিখিত)
Transliteration:
Wa maa min daaabbatin fil ardi illaa 'alal laahi rizquhaa wa ya'lamu mustaqarrahaa wa mustawda'ahaa; kullun fee Kitaabim Mubeen(QS. Hūd:6)
English Sahih International:
And there is no creature on earth but that upon Allah is its provision, and He knows its place of dwelling and place of storage. All is in a clear register. (QS. Hud, Ayah ৬)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
যমীনে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর উপর নেই, তিনি জানেন তাদের থাকার জায়গা কোথায় আর কোথায় তাদেরকে (মৃত্যুর পর) রাখা হয়, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট লিপিকায়। (হুদ, আয়াত ৬)
Tafsir Ahsanul Bayaan
আর ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী কোন এমন প্রাণী নেই যে, তার রুযী আল্লাহর দায়িত্বে নেই।[১] আর তিনি প্রত্যেকের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র সম্বন্ধে জ্ঞান রাখেন;[২] সবই সুস্পষ্ট গ্রন্থে (লাওহে মাহ্ফুযে লিপিবদ্ধ) রয়েছে।
[১] অর্থাৎ, তিনি রুযীর যিম্মাদার ও দায়িতত্ত্বশীল। ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী সকল সৃষ্টিজীব, মানুষ হোক বা জীন, পশু হোক বা পক্ষীকুল, ছোট হোক বা বড়, জলচর হোক বা স্থলচর; মোটকথা, তিনি সমুদয় প্রাণীকে তার প্রয়োজন মত রুযী দান করেন।
[২] مستقر ومستودع (স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র)এর ব্যাখ্যার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। অনেকের নিকট مستقر হল চলা ফেরা করতে করতে যেখানে থেমে যায় সেই জায়গা এবং যেখানে অবস্থান করে তা হল مستودع । কেউ কেউ বলেন, মায়ের গর্ভাশয় হল مستقر আর পিতার পিঠ হল مستودع। আবার অনেকের নিকট মানুষ বা পশু জীবিত অবস্থায় যেখানে অবস্থান করে তা হল তার مستقر এবং মৃত্যুর পর যেখানে দাফন করা হবে তা হল তার مستودع। (তাফসীর ইবনে কাসীর) ইমাম শওকানী (রঃ) বলেন, مستقر হল মায়ের গর্ভাশয় এবং مستودع হল পৃথিবীর সেই অংশ যেখানে মানুষ দাফন হয়। ইমাম হাকেমের এক বর্ণনা অনুযায়ী এই অর্থকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সুতরাং অর্থ যাই হোক, আয়াতের অর্থ পরিষ্কার যে, আল্লাহ তাআলা সকলের (স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র) সম্পর্কে অবগত। তিনি সকলকে রুযী দানের ক্ষমতা রাখেন এবং তিনি রুযীর দায়িতত্ত্বশীল। আর তিনি আপন দায়িতত্ত্ব পূর্ণ করে থাকেন।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর যমীনে বিচরণকারী সবার জীবিকার [১] দায়িত্ব আল্লাহ্রই [২] এবং তিনি সেসবের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি [৩] সম্বন্ধে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে আছে [৪]।
[১] রিযিকের আভিধানিক অর্থ এমন বস্তু যা কোন প্রাণী আহার্যরূপে গ্রহণ করে, যার দ্বারা সে দৈহিক শক্তি সঞ্চয়, প্রবৃদ্ধি সাধন এবং জীবন রক্ষা করে থাকে। রিযিকের জন্য মালিকানা স্বত্ব শর্ত নয়। সকল জীব জন্তু রিযিক ভোগ করে থাকে কিন্তু তারা তার মালিক হয় না। কারণ, মালিক হওয়ার যোগ্যতাই ওদের নেই। অনুরূপভাবে ছোট শিশুরাও মালিক নয়, কিন্তু ওদের রিযিক অব্যাহতভাবে তাদের কাছে পৌছতে থাকে। [কুরতুবী]
[২] এমন সব প্রাণীকে (دابة) বলে যা ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করে। [কুরতুবী] পক্ষীকুলও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, খাদ্য গ্রহনের জন্য তারা ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করে থাকে এবং তাদের বাসস্থান ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন হয়ে থাকে। সামুদ্রিক প্রাণীসমূহ ও পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল। কেননা, সাগর-মহাসাগরের তলদেশেও মাটির অস্তিত্ব রয়েছে। মোটকথা, সমুদয় প্রাণীকুলের রিযিকের দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহন করছেন। এবং একথা এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন যা দ্বারা দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দেশ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে, “তাদের রিযিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত”। একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তা'আলার উপর এহেন গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দেয়ার মত কোন ব্যক্তি বা শক্তি নেই, বরং তিনি নিজেই অনুগ্রহ করে গ্রহন করে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। আর এক পরম সত্য, দাতা ও সর্বশক্তিমান সত্তার ওয়াদা যাতে নড়চড় হওয়ার অবকাশ নেই। সুতরাং নিশ্চয়তা বিধান করণার্থে এখানে (على) শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যা ফরয বা অবশ্যকরণীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অথচ আল্লাহ্র উপর কোন কাজ ফরয বা ওয়াজিব হতে পারে না, তিনি কারো হুকুমের তোয়াক্কা করেন না। বরং এটি সম্পূর্ণ তার অনুগ্রহ। [কুরতুবী] কোন কোন মুফাসসির অবশ্য বলেছেন যে, এখানে (على) বা উপরে বলে (من) বা হতে বলা উদ্দেশ্য। অর্থাৎ সবার রিযক আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আসে। [কুরতুবী]
[৩] আয়াতে উল্লেখিত (مستقر) এবং (مستودع) এর অর্থ, (مستقر) শব্দটির কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে, ১. যমীনের বুকে অবস্থান স্থল। বা পিতার পিঠে অবস্থানকে। ২. দিন বা রাতে আশ্রয় নেয়ার স্থান। আর (مستودع) শব্দটিরও কয়েকটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে, ১. মায়ের রেহেমে অবস্থান বা ডিমের মধ্যে অবস্থানকে। ২. মৃত্যু হওয়ার স্থানকে। [দেখুন, তাবারী; কুরতুবী; ইবন কাসীর; সাদী] এ ব্যাপারে এক হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “যখন কারো মৃত্যু কোন যমীনে লিখা থাকে তখন সে সেখানে যাওয়ার জন্য কোন না কোন প্রয়োজন অনুভব করবে। তারপর সে যখন সেখানে পৌছবে তখন তাকে মৃত্যু দেয়া হয়। আর কিয়ামতের দিন যমীন তাকে বের করে দিয়ে বলবে, (هٰذَا ما اسْتَوْدَعْتَنِيْ) অর্থাৎ এটা আমার কাছে আপনি আমানত রেখেছিলেন। [মুস্তাদরাকে হাকিমঃ ১/৪২, সুনানুল কুবরা লিল বাইহাকীঃ ৯৮৮৯] কালেমাদ্বয়ের আরো বিস্তারিত তাফসীর সূরা আলআন’আমের ৯৮ নং আয়াতে করা হয়েছে।
[৪] আয়াতে বর্ণিত সুস্পষ্ট কিতাব বলতে লাওহে মাহফুজকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা বান্দার সমস্ত কর্মকাণ্ড সুস্পষ্ট কিতাবে লিখে নিয়েছেন এবং তার জ্ঞান থেকে এর সামান্যও গোপন থাকে না, এটা তিনি পবিত্র কুরআনে বারবার ঘোষণা করেছেন। [দেখুন, সূরা আল-আনআমঃ৩৮, ৫৯, সূরা ইউনুসঃ ৬১]
Tafsir Bayaan Foundation
আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল* । সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে**।
* এখানে مستقر বা আবাসস্থল বলতে মাতৃগর্ভে অবস্থান মতান্তরে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ায় অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে। আর مستودع দ্বারা কবরস্থ করার স্থান মতান্তরে জন্মের পূর্বে পিতৃমেরুদন্ডে অবস্থান কিংবা মৃত্যুর সময় বা স্থান বুঝানো হয়েছে।
Muhiuddin Khan
আর পৃথিবীতে কোন বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।
Zohurul Hoque
আর পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী নেই যার জীবিকার ভার আল্লাহ্র উপরে নয়, আর তিনিই জানেন তার বাসস্থান ও তার বিশ্রামস্থল। সবই আছে এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে।