কুরআন মজীদ সূরা হুদ আয়াত ৪৬
Qur'an Surah Hud Verse 46
হুদ [১১]: ৪৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
قَالَ يٰنُوْحُ اِنَّهٗ لَيْسَ مِنْ اَهْلِكَ ۚاِنَّهٗ عَمَلٌ غَيْرُ صَالِحٍ فَلَا تَسْـَٔلْنِ مَا لَيْسَ لَكَ بِهٖ عِلْمٌ ۗاِنِّيْٓ اَعِظُكَ اَنْ تَكُوْنَ مِنَ الْجٰهِلِيْنَ (هود : ١١)
- qāla
- قَالَ
- He said
- (আল্লাহ) বললেন
- yānūḥu
- يَٰنُوحُ
- "O Nuh!
- "হে নূহ
- innahu
- إِنَّهُۥ
- Indeed he
- সে নিশ্চয়ই
- laysa
- لَيْسَ
- (is) not
- নয়
- min
- مِنْ
- of
- অন্তর্ভুক্ত
- ahlika
- أَهْلِكَۖ
- your family;
- তোমার পরিবারের
- innahu
- إِنَّهُۥ
- indeed [he]
- নিশ্চয়ই তা
- ʿamalun
- عَمَلٌ
- (his) deed
- কাজ
- ghayru
- غَيْرُ
- (is) other than
- নয়/অ
- ṣāliḥin
- صَٰلِحٍۖ
- righteous
- সৎ
- falā
- فَلَا
- so (do) not
- অতএব না
- tasalni
- تَسْـَٔلْنِ
- ask Me
- আমার কাছে অনুরোধ করো
- mā
- مَا
- (about) what
- যার
- laysa
- لَيْسَ
- not
- নেই
- laka
- لَكَ
- you have
- তোমার
- bihi
- بِهِۦ
- of it
- সে সম্বন্ধে
- ʿil'mun
- عِلْمٌۖ
- any knowledge
- কোন জ্ঞান
- innī
- إِنِّىٓ
- Indeed I
- নিশ্চয়ই আমি
- aʿiẓuka
- أَعِظُكَ
- admonish you
- তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি
- an
- أَن
- lest
- যে (না)
- takūna
- تَكُونَ
- you be
- তুমি হয়ো
- mina
- مِنَ
- among
- অন্তর্ভুক্ত
- l-jāhilīna
- ٱلْجَٰهِلِينَ
- the ignorant"
- মূর্খদের"
Transliteration:
Qaala yaa Noohu innahoo laisa min ahlika innahoo 'amalun ghairu saalihin falaa tas'alni mmaa laisa laka bihee 'ilmun inneee a'izuka an takoona minal jaahileen(QS. Hūd:46)
English Sahih International:
He said, "O Noah, indeed he is not of your family; indeed, he is [one whose] work was other than righteous, so ask Me not for that about which you have no knowledge. Indeed, I advise you, lest you be among the ignorant." (QS. Hud, Ayah ৪৬)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
তিনি বললেন, ‘ওহে নূহ! সে তো তোমার পরিবারের লোক নয়, তার আচার আচরণ অসৎ, কাজেই যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমার কাছে আবেদন করো না, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, তুমি যেন মূর্খদের মধ্যে শামিল না হও। (হুদ, আয়াত ৪৬)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘হে নূহ! এই ব্যক্তি তোমার পরিবারভুক্ত নয়,[১] সে অসৎকর্মপরায়ণ।[২] অতএব তুমি আমার কাছে সে বিষয়ে আবেদন করো না, যে বিষয়ে তোমার কোনই জ্ঞান নেই।[৩] আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে, তুমি অজ্ঞ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।’[৪]
[১] নূহ (আঃ) বংশীয় সম্পর্ক অনুযায়ী তাকে আপন পুত্র বলেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ঈমানের কারণে দ্বীনী সম্পর্কের দিক থেকে তাঁর সেই কথা নাকচ করে বলেছিলেন যে, সে তোমার পরিবারের অন্তর্ভুক্ত নয়। কারণ একজন নবীর প্রকৃত পরিবারভুক্ত তারা, যারা তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাতে সে যেই হোক না কেন। আর যদি কোন ব্যক্তি তাঁর প্রতি ঈমান না আনে, যদিও সে নবীর পিতা, পুত্র বা স্ত্রীও হয়, তবুও সে নবীর পরিবারভুক্ত নয়।
[২] এই কথা দ্বারা পরিবারভুক্ত না হওয়ার কারণ বর্ণনা করে দিয়েছেন। এতে জানা গেল যে, যার ঈমান ও নেক আমল নেই, তাকে আল্লাহর শাস্তি থেকে আল্লাহর নবীগণও বাঁচাতে পারবেন না। বর্তমানে মানুষ পীর-ফকীর ও বুযুর্গদের সাথে সম্পর্ককেই পরিত্রাণের জন্য যথেষ্ট মনে করে এবং (সহীহ আকীদাহ ও) নেক আমলের কোন প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করে না। অথচ (সহীহ আকীদাহ ও) নেক আমল ছাড়া নবীর সাথে বংশীয় আত্মীয়তাও কোন কাজে আসবে না। তাহলে অনবীদের সাথে এরূপ সম্পর্ক আর কি কাজে আসবে?
[৩] এর দ্বারা বুঝা যায় যে, নবী 'আ-লিমুল গায়ব' হন না। তাঁরা ততটুকু জানেন যতটুকু অহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে ইলম দান করেন। নূহ (আঃ) যদি পূর্ব থেকে জানতেন যে, তাঁর আবেদন গ্রহণযোগ্য হবে না, তাহলে অবশ্যই তিনি তা থেকে বিরত থাকতেন।
[৪] এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নূহ (আঃ)-কে কৃত নসীহত। যার উদ্দেশ্য হল, তাঁকে সেই উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন করা, যা আমলকারী বিজ্ঞ লোকদের জন্য আল্লাহর নিকট রয়েছে।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আল্লাহ্ বললেন, ‘হে নূহ্ ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎকর্মপরায়ণ [২]। কাজেই যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে আমাকে অনুরোধ করবেন না [৩]। আমি আপনাকে উপদেশ দিচ্ছি, আপনি যেন অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত না হন।‘
[১] এ আয়াতাংশের তাফসীরে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেনঃ এখানে সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়’ বলে বুঝানো হয়েছে যে, যাদেরকে নাজাত দেয়ার ওয়াদা আমি করেছিলাম সে তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। [ইবন কাসীর] এর কারণ হলো, সে কাফের ছিল। আর মুক্তি বা নাজাতের ব্যাপারে কাফেরের সাথে ঈমানদারের কোন সম্পর্ক থাকতে পারে না। তাছাড়া পূর্ব আয়াতে এসেছে যে, “আপনার পরিবারকেও (তাতে উঠান) কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে পূর্ব সিদ্ধান্ত হয়েছে তাদের ছাড়া”। সে পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসারে কুফরি ও তার পিতার অবাধ্যতার কারণে ডুবে মরন।‘ [ইবন কাসীর]
[২] এটি হচ্ছে কুফরী ও ঈমানের বিরোধের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবার ব্যাপার। এখানে শুধুমাত্র যারা সৎ তাদেরকে রক্ষা করা হবে এবং যারা অসৎ ও নষ্ট হয়ে গেছে তাদেরকে খতম করে দেয়া হবে। তার আমল যেহেতু খারাপ সুতরাং রক্ষা করা যাবে না। সে নিয়্যত ও আমলে আপনার বিপরীত কাজ করেছে। [তাবারী] তাছাড়া এ আয়াতের আরেকটি অর্থও ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে, তা হলো, এখানে (إنه) বলে নূহ আলাইহিসসালামের দোআকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ হে নূহ আপনি যে আপনার কাফের সন্তানের জন্য আমার শরনাপন্ন হয়েছেন এ কাজটা সৎ কাজ নয়। আপনার যে বিষয়ে জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কিছু চাওয়া ভাল কাজ নয়। [তাবারী; সা’দী]
[৩] অর্থাৎ যে জিনিসের পরিণাম আপনার জানা নেই যে এটা ভাল-কি মন্দ বয়ে নিয়ে আসবে এমন কাজে আপনি এগিয়ে যাবেন না। এমন কিছু আমার কাছে চাইবেন না। আমি আপনাকে নসীহত করছি এমন এক নসীহত যা দ্বারা আপনি পূর্ণতা লাভ করবেন এবং জাহেলদের কর্মকাণ্ড থেকে নাজাত পাবেন। তখন নূহ আলাইহিস সালাম যা করেছেন সে জন্য ভীষণ লজ্জিত হলেন এবং বললেন, ‘হে আমার রব! যে বিষয়ে আমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে যাতে আপনাকে অনুরোধ না করি, এ জন্য আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন এবং আমাকে দয়া না করেন, তবে আমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব। সুতরাং ক্ষমা ও রহমতের দ্বারাই কেউ নাজাত পেতে পারে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে মুক্তি পেতে পারে [সা'দী] আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, নূহ আলাইহিস সালাম তার সন্তানের নাজাতের জন্য যে ডাক দিয়েছিলেন সেটা যে হারাম ছিল তা তার জানা ছিল না। তিনি মনে করেননি যে, পূর্ববর্তী আয়াতে বর্ণিত “যারা যুলুম করেছে তাদের সম্পর্কে আপনি আমাকে কোন আবেদন করবেন না; তারা তো নিমজ্জিত হবে" সেটা দ্বারা তাকে তার সন্তানের ব্যাপারে দোআ করতে নিষেধ করা হয়েছে। বিশেষ করে তার কাছে দুটি নির্দেশের মধ্যে বিরোধ লেগে গিয়েছিল। তিনি মনে করেছিলেন, তার সন্তানের জন্য নাজাতের আহবান পূর্বোক্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে "আর আপনার পরিবারকে" নৌকাতে উঠিয়ে নিন, সে ঘোষণায় তার সন্তান অন্তর্ভুক্ত হবে। সে হিসেবে তিনি নাজাতের আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, সে যালেমদের অন্তর্ভুক্ত, তার জন্য কোন প্রকার দোআ করা যাবে না। তখন তিনি সে অনুসারে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান এবং তার দয়া তলব করেন। [ফাতহুল কাদীর; সা’দী] এতে স্পষ্ট হলো যে, একজন মহান মর্যাদাশালী নবী নিজের চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে ডুবে যেতে দেখছেন এবং অস্থির হয়ে সন্তানের গোনাহ মাফ করার জন্য আল্লাহর কাছে আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু আল্লাহর দরবার থেকে জবাবে তাকে ধমক দেয়া হচ্ছে। কারণ একটিই, সে ছেলের মধ্যে রয়েছে শির্ক ও কুফর। সুতরাং যার কাছে থাকবে শির্ক ও কুফর তার জন্য কেউ কোন সুপারিশ করতেও সক্ষম হবে না। [দেখুন, ইবন তাইমিয়্যা; মাজমু ফাতাওয়া ১/১৩১]
Tafsir Bayaan Foundation
তিনি বললেন, ‘হে নূহ, সে নিশ্চয় তোমার পরিবারভুক্ত নয়। সে অবশ্যই অসৎ কর্মপরায়ণ। সুতরাং যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, আমার কাছে তা চেয়ো না। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, যেন মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত না হও’।
Muhiuddin Khan
আল্লাহ বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না।
Zohurul Hoque
তিনি বললেন -- ''হে নূহ! নিঃসন্দেহ সে তোমার পরিবারভুক্ত নয়। নিঃসন্দেহ তার কাজকর্ম সৎকর্মের বর্হিভূত, কাজেই আমার কাছে সওয়াল কর না যে-সন্বন্ধে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। আমি অবশ্যই তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি -- পাছে তুমি অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়।’’