Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা হুদ আয়াত ১৬

Qur'an Surah Hud Verse 16

হুদ [১১]: ১৬ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

اُولٰۤىِٕكَ الَّذِيْنَ لَيْسَ لَهُمْ فِى الْاٰخِرَةِ اِلَّا النَّارُ ۖوَحَبِطَ مَا صَنَعُوْا فِيْهَا وَبٰطِلٌ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ (هود : ١١)

ulāika
أُو۟لَٰٓئِكَ
Those
ঐসব লোক
alladhīna
ٱلَّذِينَ
(are) the ones who -
(তারাই) যারা
laysa
لَيْسَ
(is) not
নেই
lahum
لَهُمْ
for them
তাদের জন্যে
فِى
in
মধ্যে
l-ākhirati
ٱلْءَاخِرَةِ
the Hereafter
পরকালের
illā
إِلَّا
except
এছাড়া
l-nāru
ٱلنَّارُۖ
the Fire
(জাহান্নামের) আগুন
waḥabiṭa
وَحَبِطَ
And (has) gone in vain
এবং পন্ড হয়েছে
مَا
what
যা
ṣanaʿū
صَنَعُوا۟
they did
তারা করেছে
fīhā
فِيهَا
therein
তার মধ্যে
wabāṭilun
وَبَٰطِلٌ
and (is) worthless
ও অর্থহীন গণ্য হয়েছে
مَّا
what
যা
kānū
كَانُوا۟
they used (to)
তারা ছিলো
yaʿmalūna
يَعْمَلُونَ
do
কাজকর্ম করে

Transliteration:

Ulaaa'ikal lazeena laisa lahum fil Aakhirati illan Naaru wa habita maa sana'oo feehaa wa baatilum maa kaanoo ya'maloon (QS. Hūd:16)

English Sahih International:

Those are the ones for whom there is not in the Hereafter but the Fire. And lost is what they did therein, and worthless is what they used to do. (QS. Hud, Ayah ১৬)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

কিন্তু আখেরাতে তাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছুই নাই, এখানে যা কিছু তারা করেছে তা নিষ্ফল হয়ে গেছে, আর তাদের যাবতীয় কাজকর্ম ব্যর্থ হয়ে গেছে। (হুদ, আয়াত ১৬)

Tafsir Ahsanul Bayaan

এরা এমন লোক যে, তাদের জন্য পরকালে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই নেই, আর তারা যা কিছু করেছে, তা সবই পরকালে নিষ্ফল হবে এবং যা কিছু করে থাকে, তাও নিরর্থক হবে। [১]

[১] উক্ত আয়াত দু'টি সম্পর্কে অনেকের ধারণা যে, তাতে যাদের কথা বর্ণনা করা হয়েছে, তারা হল রিয়াকারী (লোক দেখানো বা সুনাম নেওয়ার জন্য আমলকারী)। অনেকের নিকট তারা হল ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টান। আবার কেউ কেউ বলেন, এখানে দুনিয়াদারদের কথা বলা হয়েছে। কারণ অনেক দুনিয়াদার, যারা নেক আমল করে, আল্লাহ তাআলা তাদের প্রাপ্য তাদেরকে দুনিয়াতেই দিয়ে দেন, আখেরাতে তাদের জন্য শাস্তি ব্যতীত আর কিছুই থাকবে না। উক্ত বিষয়টি কুরআন মাজীদের সূরা বনী ইস্রাঈলের ১৭;১৮ নং আয়াত ও সূরা শূরার ৪২;২০ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

তাদের জন্য আখিরাতে আগুন ছাড়া অন্য কিছুই নেই এবং তারা যা করেছিল আখিরাতে তা নিস্ফল হবে। আর তারা যা করত তা ছিল নিরর্থক [১]।

[১] অর্থাৎ প্রতিটি সৎকার্য গ্রহণযোগ্য ও আখেরাতের মুক্তির কারণ হওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে, সেটা একমাত্র আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য করতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্য তা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরীকা মোতাবেক হতে হবে। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমানই রাখে না, তার যাবতীয় কার্যকলাপ গুণ গরিমা, নীতি নৈতিকতা প্রাণহীন দেহের ন্যায়। যার বাহ্যিক আকৃতি অতি সুন্দর হলেও আখেরাতে তার কানাকড়িরও মূল্য নেই। তবে দৃশ্যতঃ সেটা যেহেতু পূণ্যকার্য ছিল এবং তা দ্বারা বহু লোক উপকৃত হয়েছে, তাই আল্লাহ তা'আলা এহেন তথাকথিত সৎকার্যকে সম্পূর্ণ বিফল ও বিনষ্ট করেন না, বরং এসব লোকের যা মূখ্য উদ্দেশ্য ও কাম্য ছিল যেমন তার সুনাম ও সম্মান বৃদ্ধি হবে, লোকে তাকে দানশীল, মহান ব্যক্তিরূপে স্মরণ করবে, নেতারূপে তাকে বরণ করবে ইত্যাদি আল্লাহ তা'আলা স্বীয় ইনসাফ ও ন্যায়নীতির ভিত্তিতে দুনিয়ার জীবনেই তাকে দান করেন। অপরদিকে আখেরাতে মুক্তিলাভ করা যেহেতু তাদের কাম্য ছিল না এবং তাদের প্রাণহীন সৎকার্য আখেরাতের অপূর্ব ও অনন্ত নেয়ামতসমূহের মূল্য হওয়ার যোগ্য ছিল না, কাজেই আখেরাতে তার কোন প্রতিদানও লাভ করবে না। বরং নিজেদের কুফরী, শেরেকী ও গোনাহের কারণে জাহান্নামের আগুনে চিরকাল তাদের জ্বলতে হবে। আয়াতে বলা হয়েছে যে, “আখেরাতে তাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছু নেই।" এতে করে বোঝা যায় যে, এ আয়াত কাফেরদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে। কেননা, একজন মুসলিম যত বড় পাপীই হোক না কেন, তার গোনাহের শাস্তি ভোগ করার পর অবশেষে আল্লাহ্ তা'আলার ইচ্ছায় জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আরাম আয়েশ ও নেয়ামত লাভ করবে।

কোন কোন মুফাসসিরের মতে এ আয়াতে ঐসব মুসলিমদের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে যারা কার্যের বিনিময়ে শুধু পার্থিব জীবনে সুখ শান্তি যশ খ্যাতি প্রত্যাশা করে। লোক দেখানো মনোভাব নিয়ে কাজ করে। এমতাবস্থায় অত্র আয়াতের মর্ম হবে এই যে, তারা নিজেদের পাপের শাস্তি ভোগ না করা পর্যন্ত জাহান্নামের আগুন ছাড়া অন্য কিছু পাবে না। পরিশেষে পাপের শাস্তি ভোগান্তে তারাও অবশ্য সৎকাজের প্রতিদান লাভ করবে। [কুরতুবী] সত্যনিষ্ঠ আলেমদের কারও কারও মতে, অত্র আয়াতে ঐসব লোকের অবস্থা বর্ণিত হয়েছে, যারা তাদের যাবতীয় সৎকার্য শুধু পার্থিব ফায়দা হাসিলের জন্য করে থাকে, চাই সে আখেরাতের প্রতি অবিশ্বাসী কাফের হোক অথবা নামধারী মুসলিম হোক। তাই যদি কোন মুসলিম শুধুমাত্র লোকদেখানোর উদ্দেশ্যে সৎকাজ করে অথবা শুধু দুনিয়া অর্জনের জন্য করে, তবে এ সব দুনিয়াকামী লোক ইচ্ছা ও বাসনায় আল্লাহর সাথে শির্ককারী বলে বিবেচিত হবে। আর যে আল্লাহর সাথে শির্ক করে তার যাবতীয় আমলই বিনষ্ট হয়ে যায়। সে হিসেবে ঐসব নামধারী মুসলিমও এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং তাদের পরিণাম হবে জাহান্নাম। শির্ক করার কারণে তারা কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। মু'আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু, মাইমুন ইবনে মেহরান ও মুজাহিদ রাহিমাহুমুল্লাহ এ ব্যাখ্যা গ্রহণ করেছেন। [কুরতুবী]

Tafsir Bayaan Foundation

এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল।

Muhiuddin Khan

এরাই হল সেসব লোক আখেরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।

Zohurul Hoque

এরাই তারা যাদের জন্য পরকালে আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই, আর তারা যা করেছে তা সেখানে বৃথা যাবে, আর তারা যা করে যাচ্ছিল সে-সবই নিরর্থক।