Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা ইউনুস আয়াত ৯৩

Qur'an Surah Yunus Verse 93

ইউনুস [১০]: ৯৩ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِيْٓ اِسْرَاۤءِيْلَ مُبَوَّاَ صِدْقٍ وَّرَزَقْنٰهُمْ مِّنَ الطَّيِّبٰتِ ۚفَمَا اخْتَلَفُوْا حَتّٰى جَاۤءَهُمُ الْعِلْمُ ۗاِنَّ رَبَّكَ يَقْضِيْ بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ فِيْمَا كَانُوْا فِيْهِ يَخْتَلِفُوْنَ (يونس : ١٠)

walaqad
وَلَقَدْ
And verily
এবং নিশ্চয়ই
bawwanā
بَوَّأْنَا
We settled
আমরা বসবাস করিয়েছি
banī
بَنِىٓ
(the) Children
সন্তানদেরকে
is'rāīla
إِسْرَٰٓءِيلَ
(of) Israel
ইসরাঈলের
mubawwa-a
مُبَوَّأَ
(in) a settlement
আবাসভূমিতে
ṣid'qin
صِدْقٍ
honorable
উত্তম
warazaqnāhum
وَرَزَقْنَٰهُم
and We provided them
ও জীবিকা দিয়েছি আমরা তাদের
mina
مِّنَ
with
থেকে
l-ṭayibāti
ٱلطَّيِّبَٰتِ
the good things
পবিত্র জিনিসগুলো
famā
فَمَا
and not
অতঃপর না
ikh'talafū
ٱخْتَلَفُوا۟
they differ
তারা বিভেদ করেছে
ḥattā
حَتَّىٰ
until
যতক্ষণ না
jāahumu
جَآءَهُمُ
came to them
কাছে এসেছে তাদের
l-ʿil'mu
ٱلْعِلْمُۚ
the knowledge
(সত্যিকার) জ্ঞান
inna
إِنَّ
Indeed
নিশ্চয়ই
rabbaka
رَبَّكَ
your Lord
তোমার রব
yaqḍī
يَقْضِى
will judge
মীমাংসা করে দিবেন
baynahum
بَيْنَهُمْ
between them
মাঝে তাদের
yawma
يَوْمَ
(on) the Day
দিনে
l-qiyāmati
ٱلْقِيَٰمَةِ
(of) the Resurrection
ক্বিয়ামাতের
fīmā
فِيمَا
concerning what
সে বিষয়ে যা
kānū
كَانُوا۟
they used (to)
তারা ছিলো
fīhi
فِيهِ
[in it]
মধ্যে তার
yakhtalifūna
يَخْتَلِفُونَ
differ
বিভেদ করতো

Transliteration:

Wa laqad bawwaanaa Baneee Israaa'eela mubawwa-a sidqinw wa razaqnaahum minnat taiyibaati famakh talafoo hattaa jaaa'ahmul 'ilm; inna Rabbaka yaqdee bainahum Yawmal Qiyaamati feemaa kaanoo feehi yakhtalifoon (QS. al-Yūnus:93)

English Sahih International:

And We had certainly settled the Children of Israel in an agreeable settlement and provided them with good things. And they did not differ until [after] knowledge had come to them. Indeed, your Lord will judge between them on the Day of Resurrection concerning that over which they used to differ. (QS. Yunus, Ayah ৯৩)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

আমি বানী ইসরাঈলকে মর্যাদাপূর্ণ আবাসস্থলে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম আর তাদেরকে উত্তম রিযক দিয়েছিলাম। অতঃপর তাদের কাছে (আল্লাহর প্রেরিত) সঠিক জ্ঞান আসার পূর্ব পর্যন্ত তারা মতভেদ করেনি। তারা যে বিষয়ে মতভেদ করেছিল কিয়ামাত দিবসে তোমার প্রতিপালক অবশ্যই তা মীমাংসা করে দিবেন। (ইউনুস, আয়াত ৯৩)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আমি বানী ইস্রাঈলকে বসবাস করার জন্য অতি উত্তম বাসস্থান প্রদান করলাম, আর আমি তাদেরকে আহার করবার জন্য উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করলাম। অতঃপর তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই তারা মতভেদ করল।[১] যাতে তারা মতভেদ করত নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক কিয়ামত দিবসে তাদের মধ্যে তার ফায়সালা করবেন।

[১] অর্থাৎ, প্রথমতঃ আল্লাহর কৃতজ্ঞতা না করে নিজেদের মাঝে মতভেদ শুরু করে দেয়, আর এই মতভেদ মূর্খতা ও অজ্ঞতার কারণে ছিল না; বরং জ্ঞানলাভ করার পর করেছিল। যাতে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে যে, এই মতভেদ শুধুমাত্র শত্রুতা ও অহংকারবশতঃ ছিল।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর অবশ্যই আমরা বনী ইসরাইলকে উৎকৃষ্ট আবাসভূমিতে বসবাস করালাম [১] এবং আমরা তাদেরকে উত্তম রিযক দিলাম, অতঃপর তাদের কাছে জ্ঞান আসলে তারা বিভেদ সৃষ্টি করল [২]। নিশ্চয় তারা যে বিষয়ে বিভেদ সৃষ্টি করত [৩] আপনার রব তাদের মধ্যে কিয়ামতের দিনে সেটার ফয়সালা করে দেবেন।

[১] এ আয়াতে ফিরআউনের করুণ পরিণতির মোকাবেলায় সে জাতির ভবিষ্যৎ দেখানো হয়েছে, যাদেরকে ফির’আউন হীন ও পদদলিত করে রেখেছিল। বলা হয়েছে, আমি বনী-ইসরাঈলকে উত্তম আবাস দান করেছি। আর এ উত্তম আবাসকে কুরআনুল কারীমে (مُبَوَّاَ صِدۡقٍ) শব্দে ব্যক্ত করেছে। এখানে (صِدْقٍ) অর্থ উপযোগী। [মুয়াসসার] অর্থাৎ এমন আবাসভূমি তাদেরকে দান করা হয়েছে যা তাদের জন্য সর্বদিক দিয়েই কল্যাণকর ও উপযোগী ছিল। অধিকাংশ মুফাসসির ‘উত্তম আবাসভূমি’ বলে সূরা আল-ইসরায় বর্ণিত (اَلَّذِيْ بٰرَكْنَا حَوْلَهٗ) বলে যা বুঝানো হয়েছে তা সবই উদ্দেশ্য নিয়েছেন। [ইবন কাসীর; আদওয়াউল বায়ান] তখন এ স্থানটি অত্যন্ত ব্যাপক এলাকাকে শামিল করবে। অর্থাৎ বায়তুল মাকদিস সংলগ্ন এলাকা, যা বর্তমান ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন ও জর্দানের বেশ কিছু এলাকাকে শামিল করে। এ ছাড়া সাধারণভাবে মিশরও তাদের পদানত হওয়ার কথা। কারণ, ফিরআউন ধ্বংস হওয়ার পর মিশর রাজত্ব যতটুকু ছিল ততটুকু সবটাই মূসা আলাইহিস সালামের আয়ত্বে চলে আসে। [ইবন কাসীর] কিন্তু ইতিহাসে এটা প্রমাণিত হয়নি যে, তারা আবার মিশরে ফিরে গিয়েছিল।

[২] অর্থাৎ তারা এরপর যে সমস্ত বিষয়ে মতভেদ করেছিল তা অজ্ঞতার কারণে নয়। তাদেরকে জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। যার অর্থ হচ্ছে বিভেদ ও মতপার্থক্য না করা। কারণ, জ্ঞান দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাদের থেকে সন্দেহ, সংশয় দূর করেছিলেন। কিন্তু তারা মতভেদই করেছিল।[ইবন কাসীর] কোন কোন মুফাসসির বলেন এ আয়াতাংশের অর্থ হচ্ছে, পরবতী পর্যায়ে তারা নিজেদের দ্বীনের মধ্যে যে দলাদলি শুরু করে এবং নতুন নতুন মাযহাব তথা ধমীয় চিন্তাগোষ্ঠির উদ্ভব ঘটায় তার কারণ এ ছিল না যে, তারা প্রকৃত সত্য জানতো না এবং এ না জানার কারণে তারা বাধ্য হয়ে এমনটি করে। বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে সুস্পষ্টভাবে সত্য দ্বীন, তার মূলনীতি, তার দাবী ও চাহিদা, কুফর ও ইসলামের পার্থক্য সীমা, আনুগত্য ইত্যাদির জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে গোনাহ, আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতা সম্পর্কেও জ্ঞান দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সুস্পষ্ট হেদায়াত সত্ত্বেও তারা একটি দ্বীনকে অসংখ্য দ্বীনে পরিণত করে এবং আল্লাহর দেয়া বুনিয়াদগুলো বাদ দিয়ে অন্য বুনিয়াদের ওপর নিজেদের ধমীয় ফেরকার প্রাসাদ নির্মাণ করে। তাদের এ সমস্ত কর্মকাণ্ডের কারণে বায়তুল মুকাদ্দাস ও ফিলিস্তিন এলাকায় অবস্থান কালে বারবার বিভিন্ন বিপর্যয়ে পতিত হয়। মূসা ও হারূন আলাইহিমাসসালামের মৃত্যুর পর ইউসা’ বনি নূন তাদেরকে নিয়ে বায়তুল মুকাদ্দাস এলাকা জয় করেন। তারপর বুখতনসর তাদেরকে সেখান থেকে উৎখাত করে। কন্তিু তারা আবার আল্লাহর দিকে ফিরে আসলে আবার তাদের হাতে বায়তুল মুকাদ্দাস ফিরে আসে। এরপর তারা আবার পথভ্রষ্ট হয়ে পড়লে তারা গ্রীকদের অধীন হয়। ইত্যবসরে আল্লাহ্ তা'আলা তাদের মাঝে ঈসা আলাইহিসসালামকে পাঠালেন। কিন্তু তারা গ্রীক রাজাদেরকে ঈসা আলাইহিসসালামের উপর এই বলে ক্ষেপিয়ে তুলল যে, তিনি প্রজাদের মধ্যে বিদ্রোহ সৃষ্টির পঁয়তারা চালাচ্ছেন। গ্রীকগণ তখন ঈসা আলাইহিসসালামকে ধরার জন্য লোক পাঠাল। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের একজনকে আল্লাহ্ তা'আলা ঈসা আলাইহিসসালামের আকৃতি দিয়ে ঈসা আলাইহিসসালামকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন। এর ৩০০ বছর পরে গ্রীক সম্রাট কস্টান্টিন নাসারা ধর্মে প্রবেশ করে। সে তখন বিভিন্ন ভিন্নমতাবলম্বী এবং নিজের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়ে নতুন অনেকগুলো আকীদা-বিশ্বাস ও শরীআত প্রবর্তন করল এবং রাষ্ট্রিয় ক্ষমতাবলে সেগুলোকে বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত করল। যারা ঈসা আলাইহিসসালাম আনীত দ্বীনের উপর ছিল তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করল। তারা বিভিন্নস্থানে পালিয়ে গেল। সে সবস্থানে তার মনমত লোক সেট করল। এবং দেশে দেশে তার মতের লোকদের দ্বারা উপাসনালয় প্রতিষ্ঠা করল। তাদের সে সমস্ত নতুন আকীদার মধ্যে ছিল, ঈসা আলাইহিসসালাম নবী নন। তিনি তিন ইলাহর একজন। তার মধ্যে ঐশ্বরিক এবং মানবিক দু'ধরণের গুণের সমাহার ছিল। তখন থেকে তারা ক্রুশকে পবিত্র চিহ্ন বলে বিবেচনা করল। শুকরের গোস্ত হালাল করল। বিভিন্ন গীর্জায় ঈসা ও মারইয়াম আলাইহিমাসসালামের কল্পিত ছবি স্থাপন করল। এভাবে তারা তাদের দ্বীনকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তন করে ফেলল। পরিণতিতে আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে এ পবিত্র ভূমির উত্তরাধিকার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে সেখানে সুস্থ সঠিক আকীদার উপর প্রতিষ্ঠিত মুসলিমদের প্রতিষ্ঠা করেন। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ে সাহাবাগণ বায়তুল মুকাদ্দাসের অধিকারী হন। [ইবন কাসীর, সংক্ষেপিত]

[৩] তাদের বিভেদ সৃষ্টি সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন যে, ইয়াহুদীগণ একাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর নাসারাগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর এ উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ৬২৪৭, ৬৭৩১]

Tafsir Bayaan Foundation

আর অবশ্যই আমি বনী ইসরাঈলকে উত্তম বাসভূমিতে আবাস দিলাম এবং তাদেরকে উত্তম রিয্ক দিলাম। অতঃপর তারা মতবিরোধ করেনি, যতক্ষণ না তাদের নিকট জ্ঞান এল। নিশ্চয় তোমার রব কিয়ামতের দিন সে বিষয়ে ফয়সালা করবেন যা নিয়ে তারা মতবিরোধ করত।

Muhiuddin Khan

আর আমি বনী-ইসরাঈলদিগকে দান করেছি উত্তম স্থান এবং তাদেরকে আহার্য দিয়েছি পবিত্র-পরিচ্ছন্ন বস্তু-সামগ্রী। বস্তুতঃ তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়নি যতক্ষণ না তাদের কাছে এসে পৌছেছে সংবাদ। নিঃসন্দেহে তোমার পরওয়ারদেগার তাদের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন কেয়ামতের দিন; যে ব্যাপারে তাদের মাঝে মতবিরোধ হয়েছিল

Zohurul Hoque

আর ইসরাইলের বংশধরদের আমরা অবশ্যই উত্তম আবাসভূমিতে বসবাস করালাম, আর তাদের আমরা উত্তম বিষয়বস্তু দিয়ে জীবিকাদান করলাম, আর তারা বিভেদ সৃষ্টি করে নি যে পর্যন্ত না তাদের কাছে জ্ঞান এল। নিঃসন্দেহ তোমার প্রভু কিয়ামতের দিনে তাদের মধ্যে বিচার করবেন সে-সন্বন্ধে যাতে তারা মতভেদ করেছিল।