কুরআন মজীদ সূরা ইউনুস আয়াত ৫৮
Qur'an Surah Yunus Verse 58
ইউনুস [১০]: ৫৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
قُلْ بِفَضْلِ اللّٰهِ وَبِرَحْمَتِهٖ فَبِذٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوْاۗ هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ (يونس : ١٠)
- qul
- قُلْ
- Say
- বলো
- bifaḍli
- بِفَضْلِ
- "In the Bounty
- "মাধ্যমে অনুগ্রহের
- l-lahi
- ٱللَّهِ
- "(of) Allah
- "আল্লাহর
- wabiraḥmatihi
- وَبِرَحْمَتِهِۦ
- and in His Mercy
- ও মাধ্যমে দয়ার তাঁর (এটা পাঠিয়েছেন)
- fabidhālika
- فَبِذَٰلِكَ
- so in that
- সুতরা এজন্যে
- falyafraḥū
- فَلْيَفْرَحُوا۟
- let them rejoice"
- অতএব তাদের আনন্দ করা উচিত"
- huwa
- هُوَ
- It
- এটা
- khayrun
- خَيْرٌ
- (is) better
- উত্তম
- mimmā
- مِّمَّا
- than what
- তা হতে যা
- yajmaʿūna
- يَجْمَعُونَ
- they accumulate
- তারা জমা করছে
Transliteration:
Qul bifadlil laahi wa birahmatihii fabizaalika falyaf rahoo huwa khairum mimmaa yajma'oon(QS. al-Yūnus:58)
English Sahih International:
Say, "In the bounty of Allah and in His mercy – in that let them rejoice; it is better than what they accumulate." (QS. Yunus, Ayah ৫৮)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়ার বদৌলতে (তা এসেছে), এজন্য তারা আনন্দিত হোক। তারা যা স্তুপীকৃত করছে তার চেয়ে তা (অর্থাৎ হিদায়াত ও রহমাতপূর্ণ কুরআন) উত্তম। (ইউনুস, আয়াত ৫৮)
Tafsir Ahsanul Bayaan
তুমি বলে দাও, ‘এ হল তাঁরই অনুগ্রহ ও করুণায়; সুতরাং এ নিয়েই তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত;[১] এটা তারা যা (পার্থিব সম্পদ) সঞ্চয় করছে তা হতে অধিক উত্তম।’
[১] 'আনন্দ' বা 'খুশি' বলা হয় ঐ অবস্থাকে যা কোন আকাঙ্ক্ষিত বস্তু অর্জনের ফলে মানুষ নিজ মনে অনুভব করে। মু'মিনগণকে বলা হচ্ছে যে, এই কুরআন আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও তাঁর রহমত, এ অনুগ্রহ লাভ করে মু'মিনগণের আনন্দিত হওয়া উচিত। এর অর্থ এই নয় যে, আনন্দ প্রকাশ করার জন্য জালসা-জলুস করে, আলোকসজ্জা বা অন্য কোনরূপ অপচয়ের অনুষ্ঠান উদ্যাপন করবে। যেমন বর্তমানের বিদআতীরা উক্ত আয়াত দ্বারা 'নবীদিবস' ইত্যাদি অভিনব বিদআতী অনুষ্ঠান বৈধ হওয়ার কথা প্রমাণ করতে চায়।
Tafsir Abu Bakr Zakaria
বলুন, ‘এটা আল্লাহ্র অনুগ্রহে ও তাঁর দয়ায়; কাজেই এতে তারা যেন আনন্দিত হয়।’ তারা যা পুঞ্জীভুত করে তার চেয়ে এটা উত্তম [১]।
[১] অর্থাৎ মানুষের কর্তব্য হলো আল্লাহ তা'আলার রহমত ও অনুগ্রহকেই প্রকৃত আনন্দের বিষয় মনে করা এবং একমাত্র তাতেই আনন্দিত হওয়া দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ধন-সম্পদ, আরাম-আয়েশ ও মান-সন্ত্রম কোনটাই প্রকৃতপক্ষে আনন্দের বিষয় নয়। কারণ, একে তো কেউ যত অধিক পরিমাণেই তা অর্জন করুক না কেন, সবই অসম্পূর্ণ হয়ে থাকে; পরিপূর্ণ হয় না। দ্বিতীয়তঃ সর্বদাই তার পতনাশঙ্কা লেগেই থাকে। তাই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে-
(هُوَ خَیۡرٌ مِّمَّا یَجۡمَعُوۡنَ)
অর্থাৎ আল্লাহর করুণা-অনুগ্রহ সে সমস্ত ধন-সম্পদ ও সম্মান-সাম্রাজ্য অপেক্ষা উত্তম, যেগুলোকে মানুষ নিজেদের সমগ্র জীবনের ভরসা বিবেচনা করে সংগ্রহ করে। এ আয়াতে দুটি বিষয়কে আনন্দ-হর্ষের বিষয় সাব্যস্ত করা হয়েছে। একটি হলো (فضل) ‘ফদল’, অপরটি হলো –( رحمة) ‘রহমত’। আবু সাঈদ খুদরী ও ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাসহ অনেক মুফাসসির বলেছেন যে, ‘ফদল’ অর্থ কুরআন; আর রহমত অর্থ ইসলাম। [কুরতুবী] অন্য বর্ণনায় ইবন আব্বাস বলেন, ‘ফদল’ হচ্ছে, কুরআন, আর তার রহমত হচ্ছে এই যে, তিনি আমাদেরকে কুরআনের অনুসারী করেছেন। হাসান, দাহহাক, মুজাহিদ, কাতাদা বলেন, এখানে ‘ফদল’ হচ্ছে ঈমান, আর তার রহমত হচ্ছে, কুরআন। [তাবারী; কুরতুবী] বস্তুতঃ রহমতের মর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে কুরআনের শিক্ষা দান করেছেন এবং এর উপর আমল করার সামর্থ্য দিয়েছেন। কারণ, ইসলামও এ তথ্যেরই শিরোনাম। যখন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট ইরাকের খারাজ নিয়ে আসা হলো তখন তিনি তা গুনছিলেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছিলেন। তখন তার এক কর্মচারী বললঃ এগুলো আল্লাহর দান ও রহমত। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ তোমার উদ্দেশ্য সঠিক নয়। আল্লাহর কুরআনে যে কথা বলা হয়েছে যে, “বল তোমরা আল্লাহর দান ও রহমত পেয়ে খুশী হও যা তোমরা যা জমা করছ তার থেকে উত্তম” এ আয়াত দ্বারা দুনিয়ার কোন ধন-সম্পদ বুঝানো হয়নি। কারণ আল্লাহ তা'আলা জমা করা যায় এমন সম্পদ থেকে অন্য বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে তা উত্তম বলে ঘোষণা করেছেন। দুনিয়ার যাবতীয় সম্পদই জমা করা যায়। সুতরাং আয়াত দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ বুঝানো উদ্দেশ্য নয়। [ইবনে আবী হাতিম] বরং ঈমান, ইসলাম ও কুরআনই এখানে উদ্দেশ্য। আয়াতের পূর্বাপর সম্পর্ক দ্বারাও এ অর্থ স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। সুতরাং এ জাতীয় দ্বীনী কোন সুসংবাদ যদি কারো হাসিল হয় তিনিও এ আয়াতের নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত হবেন। আব্দুর রহমান ইবনে আবযা তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি উবাই ইবনে কা'ব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছেনঃ “আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে এবং আমাকে তা তোমাকে পড়াতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে"। তিনি বললেন, আমি বললামঃ আমার নাম নেয়া হয়েছে? রাসূল বললেনঃ হ্যা। বর্ণনাকারী বলেনঃ আমি আমার পিতা (উবাই রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে বললামঃ হে আবুল মুনযির! আপনি কি তাতে খুশী হয়েছেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ আমাকে খুশী হতে কিসে নিষেধ করল অথচ আল্লাহ তা'আলা বলছেনঃ “বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তারই রহমতের উপর তোমরা খুশী হও” [মুস্তাদরাকে হাকেমঃ ৩/৩০৪, আবুদাউদঃ ৩৯৮০]
Tafsir Bayaan Foundation
বল, ‘আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়’। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম।
Muhiuddin Khan
বল, আল্লাহর দয়া ও মেহেরবাণীতে। সুতরাং এরই প্রতি তাদের সন্তুষ্ট থাকা উচিৎ। এটিই উত্তম সে সমুদয় থেকে যা সঞ্চয় করছ।
Zohurul Hoque
বলো -- ''আল্লাহ্র বদান্যতায় ও তাঁর করুণায়’’ -- অতএব এতে তারা তবে আনন্দ প্রকাশ করুক। তারা যা পুঞ্জীভূত করে তার চাইতে এ অধিকতর শ্রেয়।