Skip to content

কুরআন মজীদ সূরা ইউনুস আয়াত ২৮

Qur'an Surah Yunus Verse 28

ইউনুস [১০]: ২৮ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ

وَيَوْمَ نَحْشُرُهُمْ جَمِيْعًا ثُمَّ نَقُوْلُ لِلَّذِيْنَ اَشْرَكُوْا مَكَانَكُمْ اَنْتُمْ وَشُرَكَاۤؤُكُمْۚ فَزَيَّلْنَا بَيْنَهُمْ وَقَالَ شُرَكَاۤؤُهُمْ مَّا كُنْتُمْ اِيَّانَا تَعْبُدُوْنَ (يونس : ١٠)

wayawma
وَيَوْمَ
And (the) Day
এবং যেদিন
naḥshuruhum
نَحْشُرُهُمْ
We will gather them
একত্র করবো আমরা তাদের
jamīʿan
جَمِيعًا
all together
সকলকে (আমার আদালতে)
thumma
ثُمَّ
then
এরপর
naqūlu
نَقُولُ
We will say
আমরা বলবো
lilladhīna
لِلَّذِينَ
to those who
উদ্দেশ্যে তাদের (যারা)
ashrakū
أَشْرَكُوا۟
associate partners (with Allah)
শিরক করেছিলো
makānakum
مَكَانَكُمْ
"(Remain in) your place
"তোমাদের স্থানে (অবস্হান করো)
antum
أَنتُمْ
you
তোমরা
washurakāukum
وَشُرَكَآؤُكُمْۚ
and your partners"
ও তোমাদের শরীকরা"
fazayyalnā
فَزَيَّلْنَا
Then We will separate
অতঃপর পৃথক করে দিবো আমরা
baynahum
بَيْنَهُمْۖ
[between] them
মাঝে তাদের
waqāla
وَقَالَ
and (will) say
এবং বলবে
shurakāuhum
شُرَكَآؤُهُم
their partners
শরীকেরা তাদের
مَّا
"Not
"না
kuntum
كُنتُمْ
you used (to)
তোমরা ছিলে
iyyānā
إِيَّانَا
worship us"
আমাদেরকে"
taʿbudūna
تَعْبُدُونَ
worship us"
উপাসনা করতে"

Transliteration:

Wa yawma nahshuruhum jamee'an summa naqoolu lillazeena ashrakoo makaanakum antum wa shurakaaa'ukum; fazaiyalnaa bainahum wa qaala shurakaaa'uhum maa kuntum iyyaanaa ta'budoon (QS. al-Yūnus:28)

English Sahih International:

And [mention, O Muhammad], the Day We will gather them all together – then We will say to those who associated others with Allah, "[Remain in] your place, you and your 'partners.'" Then We will separate them, and their "partners" will say, "You did not used to worship us, (QS. Yunus, Ayah ২৮)

তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):

সেদিন আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করে যারা শিরক করেছিল তাদেরকে বলব, ‘‘তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা নিজ নিজ জায়গায় থাক।’’ আমি তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেব আর তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, ‘তোমরা তো আমাদের ‘ইবাদাত করতে না।’ (ইউনুস, আয়াত ২৮)

Tafsir Ahsanul Bayaan

আর স্মরণ কর, যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্রিত করব।[১] অতঃপর অংশীবাদীদেরকে বলব, ‘তোমরা ও তোমাদের নিরূপিত অংশীরা স্ব-স্ব স্থানে অবস্থান কর।’[২] অতঃপর আমি তাদের পরস্পরকে পৃথক করে দেব[৩] এবং তাদের সেই অংশীরা বলবে, ‘তোমরা তো আমাদের উপাসনা করতে না।

[১] جَمِيْعًا(সকল) এর অর্থ হল শুরু থেকে শেষ অবধি পৃথিবীবাসী সমস্ত মানুষ ও জীন, আল্লাহ তাআলা সকলকে একত্রিত করবেন। যেমন অন্য স্থানে বলেছেন (وَحَشَرْنَاهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا) অর্থ "আমি মানুষকে একত্রিত করব অতঃপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।" (সূরা কাহ্ফ ১৮;৪৭ আয়াত)

[২] তাদের বিপরীত মু'মিনদেরকে অন্য দিকে স্থান দেওয়া হবে, অর্থাৎ মু'মিন এবং কাফের ও মুশরিকদেরকে আলাদা আলাদা করে এক অপর থেকে পৃথক করে দেওয়া হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, (وَامْتَازُوا الْيَوْمَ أَيُّهَا الْمُجْرِمُونَ)"(বলা হবে) হে অপরাধীগণ! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও।" (সূরা ইয়াসীন ৩৬;৫৯ আয়াত) (يَوْمَئِذٍ يَصَّدَّعُونَ) "সেই দিন মানুষ দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।" (সূরা রূম ৩০;৪৩ আয়াত) অর্থাৎ দুই দলে। (ইবনে কাসীর)

[৩] অর্থাৎ, পৃথিবীতে তাদের পরস্পর যে বিশেষ সম্পর্ক ছিল, তা শেষ করে দেওয়া হবে, এরা এক অপরের শত্রু হয়ে যাবে এবং তাদের তথাকথিত উপাস্য তাদের ইবাদতের কথা, তাদেরকে সাহায্যের জন্য ডাকার কথা, তাদের নামে নযর-নিয়ায পেশ করার কথা অস্বীকার করবে।

Tafsir Abu Bakr Zakaria

আর যেদিন আমরা তাদের সবাইকে একত্র করে যারা মুশরিক তাদেরকে বলব, ‘ তোমরা এবং তোমরা যাদেরকে শরীক করেছিলে তারা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান কর [১];’ অতঃপর আমরা তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেব [২] এবং তারা যাদেরকে শরীক করেছিল তারা বলবে, তোমরা তো আমাদের ‘ইবাদাত করতে না [৩]।’

[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা হাশরের মাঠে সবাইকে একত্রিত করবেন। কুরআনের অন্যত্রও আল্লাহ্‌ এ ঘোষণা দিয়েছেন। কোথাও কোথাও বলেছেন যে, তিনি কাউকেই ছাড়বেন না। যেমন, “আর আমরা তাদের সকলকে একত্র করব; তারপর তাদের কাউকে ছাড়ব না।" [সূরা আল-কাহাফ; ৪৭] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আমরা মানুষদের উপরে একটি উচু জায়গায় থাকব। তখন প্রত্যেক জাতিকে তাদের দেব-দেবীসহ ধারাবাহিকভাবে একের পর এক ডাকা হবে। তারপর আমাদের মহান রব আসবেন এবং বলবেন, তোমরা কিসের অপেক্ষায় আছ? তখন তারা বলবে, আমরা আমাদের মহান রবের অপেক্ষায় আছি। তখন তিনি বলবেন, আমি তোমাদের রব। তারা বলবে, আমরা তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখব। তখন তিনি তাদের জন্য তাজাল্লি দিবেন এমতাবস্থায় যে, তিনি হাসছেন। আর তখন মুমিন ও মুনাফিক প্রত্যেককে নুর দিবেন। যার উপরে অন্ধকার চাপা থাকবে। তারপর তারা তার অনুসরণ করবে পুল-সিরাতের দিকে। তাদের সাথে মুনাফিকরাও থাকবে। সে পুল-সিরাতে থাকবে লোহার হুক ও বর্শি। এগুলো যাকে ইচ্ছা পাকড়াও করবে। তারপর মুনাফিকদের নুর নিভিয়ে দেয়া হবে। আর মুমিনরা নাজাত পাবে। তখন প্রথম দল যারা নাজাত পাবে তাদের চেহারা হবে চৌদ্দ তারিখের রাত্রির চাঁদের মত। সত্তর হাজার লোক, তাদের কোন হিসাব হবে না। তারপর যারা তাদের কাছাকাছি হবে তারা হবে আকাশের সবচেয়ে উজ্জল তারকাটির মত। তারপর অন্যরা। শেষ পর্যন্ত শাফা’আত আপতিত হবে। ফলে তারা শাফা’আত করবে, এমনকি যে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বলেছে, যার অন্তরে যব পরিমাণ তা থাকবে তাকেও বের করা হবে। তাকে জান্নাতের আঙ্গিনায় রাখা হবে। আর জান্নাতিরা তাদের গায়ে পানি ফেলতে থাকবে, ফলে তারা বন্যার উদ্ভিদ যেভাবে উৎপন্ন হয় সেভাবে উদ্‌গত হবে। আর তাদের পোড়া চলে যাবে। তারপর তারা আল্লাহর কাছে চাইবে, শেষ পর্যন্ত তাদের জন্য থাকবে দুনিয়া ও তার মত দশগুণ। [মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৪৫-৩৪৬]

[২] আয়াতে বলা হয়েছে, (فَزَیَّلۡنَا بَیۡنَهُمۡ) কোন কোন তাফসীরকার এর অর্থ করেছেনঃ আমরা তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ছিন্ন করবো [বাগভী] আবার কোন কোন তাফসীরকারের মতে এর অর্থ হচ্ছে, আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করে দেবো অথবা তাদেরকে পরস্পর থেকে পৃথক করে দেবো। [তাবারী; সাদী] অথবা অর্থ হবে, তাদের মধ্যে এবং মুমিনদের মধ্যে আমরা পার্থক্য করে দেবো। [জালালাইন] যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আর 'হে অপরাধিরা! তোমরা আজ পৃথক হয়ে যাও" [সূরা ইয়াসীন ৫৯]

[৩] অর্থাৎ যাদেরকে দুনিয়ায় দেবদেবী বানিয়ে পূজা করা হয়েছে, তারা সেখানে নিজেদের পূজারীদেরকে পরিষ্কার বলে দেবে, তোমরা যে আমাদের পূজা করতে তা তো আমরা জানতামই না। আমরা তোমাদেরকে আমাদের ইবাদাত করার জন্য কোন নির্দেশই দেইনি। আল্লাহ সাক্ষী যে, আমরা তোমাদের ইবাদতে সন্তুষ্ট ছিলাম না। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] আর যদি মা’বুদ বলে এখানে শয়তানদের উদ্দেশ্য নেয়া হয়ে থাকে, তখন অর্থ হবে, তারা এ কথাগুলো ভীত হয়ে কিংবা বাঁচার জন্য মিথ্যা বলবে। [কুরতুবী]

Tafsir Bayaan Foundation

আর যেদিন আমি তাদের সকলকে একত্র করব, অতঃপর যারা শিরক করেছে, তাদেরকে বলব, ‘থাম, তোমরা ও তোমাদের শরীকরা’। অতঃপর আমি তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটাব। আর তাদের শরীকরা’ বলবে, ‘তোমরা তো আমাদের ইবাদাত করতে না’।

Muhiuddin Khan

আর যেদিন আমি তাদের সবাইকে সমবেত করব; আর যারা শেরক করত তাদেরকে বলবঃ তোমরা এবং তোমাদের শরীকরা নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে যাও-অতঃপর তাদেরকে পারস্পরিক বিচ্ছিন্ন করে দেব, তখন তাদের শরীকরা বলবে, তোমরা তো আমাদের উপাসনা-বন্দেগী করনি।

Zohurul Hoque

আর যেদিন আমরা ওদের সবাইকে সমবেত করবো, তারপর যারা অংশী দাঁড় করেছিল তাদের বলবো -- ''তোমরা ও তোমাদের অংশীরা নিজ নিজ স্থানে অবস্থান করো।’’ তারপর আমরা তাদের একে অন্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেবো, আর তাদের অংশীরা বলবে -- ''তোমরা তো আমাদের উপাসনা করতে না।