কুরআন মজীদ সূরা ইউনুস আয়াত ১১
Qur'an Surah Yunus Verse 11
ইউনুস [১০]: ১১ ~ শব্দ অনুবাদ দ্বারা শব্দ
۞ وَلَوْ يُعَجِّلُ اللّٰهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ اِلَيْهِمْ اَجَلُهُمْۗ فَنَذَرُ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَاۤءَنَا فِيْ طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُوْنَ (يونس : ١٠)
- walaw
- وَلَوْ
- And if
- এবং যদি
- yuʿajjilu
- يُعَجِّلُ
- hastens
- তাড়াতাড়ি করতেন
- l-lahu
- ٱللَّهُ
- (by) Allah
- আল্লাহ
- lilnnāsi
- لِلنَّاسِ
- for the mankind
- জন্যে মানুষের
- l-shara
- ٱلشَّرَّ
- the evil
- অকল্যাণ
- is'tiʿ'jālahum
- ٱسْتِعْجَالَهُم
- (as) He hastens for them
- (যেমন) তারা তাড়াতাড়ি চায়
- bil-khayri
- بِٱلْخَيْرِ
- the good
- ব্যাপারে (দুনিয়ার) কল্যাণের
- laquḍiya
- لَقُضِىَ
- surely, would have been decreed
- অবশ্যই পুরা হয়ে যেতো
- ilayhim
- إِلَيْهِمْ
- for them
- প্রতি তাদের
- ajaluhum
- أَجَلُهُمْۖ
- their term
- মেয়াদ তাদের
- fanadharu
- فَنَذَرُ
- But We leave
- অতএব আমরা ছেড়ে দিয়েছি
- alladhīna
- ٱلَّذِينَ
- those who
- (তাদেরকে) যারা
- lā
- لَا
- (do) not
- না
- yarjūna
- يَرْجُونَ
- expect
- আশা রাখে
- liqāanā
- لِقَآءَنَا
- the meeting with Us
- সাক্ষাতের আমাদের
- fī
- فِى
- in
- মধ্যে
- ṭugh'yānihim
- طُغْيَٰنِهِمْ
- their transgression
- অবাধ্যতার তাদের
- yaʿmahūna
- يَعْمَهُونَ
- wandering blindly
- উদ্ভ্রান্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায়
Transliteration:
Wa law yu'aijilul laahu linnaasish sharras ti'jaalahum bilkhairi laqudiya ilaihim ajaluhum fanazarul lazeena laa yarjoona liqaaa'anna fee tughyaanihim ya'mahoon(QS. al-Yūnus:11)
English Sahih International:
And if Allah was to hasten for the people the evil [they invoke] as He hastens for them the good, their term would have been ended for them. But We leave the ones who do not expect the meeting with Us, in their transgression, wandering blindly. (QS. Yunus, Ayah ১১)
তাফসীর তাইসীরুল কুরআন (Taisirul Quran):
মানুষের অপকর্মের শাস্তি হিসেবে আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ করার ব্যাপারে দ্রুততা অবলম্বন করতেন যতটা দ্রুততার সঙ্গে তারা (দুনিয়ার) কল্যাণ পেতে চায়, তবে তাদের কাজ করার অবকাশ কবেই না খতম করে দেয়া হত, (কিন্তু আল্লাহ তা করেন না)। কাজেই যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, তাদেরকে আমি তাদের অবাধ্যতায় দিশেহারা হয়ে ঘুরে বেড়ানোর অবকাশ দেই। (ইউনুস, আয়াত ১১)
Tafsir Ahsanul Bayaan
যদি আল্লাহ মানুষের অকল্যাণ তরান্বিত করতেন যেভাবে তারা তাদের কল্যাণ তরান্বিত করতে আগ্রহী, তাহলে অবশ্যই তারা ধ্বংস হয়ে যেত।[১] সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতার মধ্যে ঘুরপাক খেতে ছেড়ে দিই।
[১] এর এক অর্থ এই যে, যেমন মানুষ কোন উত্তম বস্তু অন্বেষণে তাড়াতাড়ি করে, অনুরূপ তারা শাস্তি অন্বেষণেও তাড়াতাড়ি করে, তারা পয়গম্বরদেরকে বলে যে, 'যদি তোমরা সত্যই পয়গম্বর হও, তাহলে সেই শাস্তি আনয়ন কর, যা থেকে তোমরা আমাদেরকে ভীতিপ্রদর্শন করছ।' আল্লাহ তাআলা বলেন যে, আমি যদি তাদের চাওয়া অনুযায়ী শীঘ্র শাস্তি প্রেরণ করতাম, তবে তারা অনেক পূর্বে মৃত্যু ও ধ্বংস কবলিত হয়ে যেত। কিন্তু আমি ঢিল দিয়ে তাদেরকে পূর্ণ সুযোগ দিই। দ্বিতীয় অর্থ এই যে, মানুষ যেমন নিজের জন্য ভালাই ও মঙ্গলের দু'আ করে, যা আমি মঞ্জুর করি। অনুরপ মানুষ যখন রাগান্বিত অবস্থায় বা কষ্টে থাকে, তখন নিজের জন্য ও আপন সন্তান-সন্ততি ইত্যাদির জন্য বদ্দুআ করে, তা আমি এই জন্য ছেড়ে দিই যে, সে তো মুখে ধ্বংস চাচ্ছে, কিন্তু তার অন্তরে সে ইচ্ছা নেই। কিন্তু যদি আমি মানুষের বদ্দুআ অনুযায়ী তাদেরকে সাথে সাথে ধ্বংস করতে আরম্ভ করতাম, তবে অতি সতত্ত্বর এরা মৃত্যু ও ধ্বংস কবলিত হয়ে যেত। এই জন্য হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, "তোমরা নিজেদের উপর, নিজেদের সন্তানের উপর এবং নিজেদের সম্পদ ও কারবারের উপর বদ্দুআ করো না। এমন না হয়ে যায় যে, তোমাদের বদ্দুআ এমন সময়ে হয়ে যায়, যে সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে দু'আ কবুল করা হয়, অতঃপর তিনি তোমাদের সে বদ্দুআ কবুল করে নেন।" (মুসলিম, আবু দাউদ)
Tafsir Abu Bakr Zakaria
আর আল্লাহ্ যদি মানুষের অকল্যাণে (সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করেন, যেভাবে তিনি তাদের কল্যাণে (সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করেন, তবে অবশ্যই তাদের মৃত্যুর সময় এসে যেত [১]। কাজেই যারা আমাদের সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না তাদেরকে আমরা তাদের অবাধ্যতায় উদভ্রান্তের মত ঘুরতে ছেড়ে দেই।
[১] এ আয়াতে (الشر) বা খারাপ বস্তু কি? এ নিয়ে মতভেদ আছে। এক. কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এখানে খারাপ বস্তু বলতে নদর ইবনে হারেস নামীয় কাফেরের বদদোআ বোঝানো হয়েছে। যাতে সে বলেছিলঃ হে আল্লাহ! যদি মুহাম্মাদের দ্বন সত্য হয়, তবে আমার উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করে আমাকে ধ্বংস করে দিন [বাগভী] এর উত্তরে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ সর্ববিষয়েই ক্ষমতাশীল, প্রতিশ্রুত এ আযাব এক্ষণেই নাযিল করতে পারেন। কিন্তু তিনি তার মহান হেকমত ও দয়াকরুণার দরুন এ মূৰ্খরা নিজেদের জন্য যে বদদোআ করে এবং বিপদ ও অকল্যাণ কামনা করে তা নাযিল করেন না। যদি আল্লাহ তা'আলা তাদের বদদোআগুলোও তেমনিভাবে যথাশীঘ্ৰ কবুল করে নিতেন, যেভাবে তাদের ভাল দো'আগুলো কবুল করেন, তাহলে এরা সবাই ধ্বংস হয়ে যেত। দুই. অধিকাংশ মুফাসসিরীনের মতে এক্ষেত্রে বদদো-আর মর্ম এই যে, কোন কোন সময় কেউ কেউ রাগের বশবর্তী হয়ে নিজের সন্তান-সন্ততির কিংবা অর্থ-সম্পদ ধ্বংসের বদদো'আ করে বসে কিংবা বস্তুসামগ্রীর প্রতি অভিসম্পাত করতে আরম্ভ করে- আল্লাহ তা'আলা স্বীয় করুণা ও মহানুভবতাবশতঃ সহসাই এসব দোআ কবুল করেন না। [তাবারী; কুরতুবী; বাগভী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] এতে প্রতীয়মান হয় যে, কল্যাণ ও মঙ্গলের শুভ দোআ-প্রার্থনার ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলার রীতি হচ্ছে যে, অধিকাংশ সময় তিনি সেগুলো শীঘ্ৰ কবুল করে নেন। অবশ্য কখনো কখনো হেকমত ও কল্যাণের কারণে কবুল না হওয়া এর পরিপন্থী নয়। কিন্তু মানুষ যে কখনো নিজেদের অজান্তে এবং কোন দুঃখ-কষ্ট ও রাগের বশে নিজের কিংবা নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য বদদোআ করে বসে, অথবা আখেরাতের প্রতি অস্বীকৃতির দরুন আযাবকে প্রহসন মনে করে নিজের জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানাতে থাকে সেগুলো তিনি সঙ্গে সঙ্গে কবুল করেন না; বরং অবকাশ দেন, যাতে অস্বীকারকারীরা বিষয়টি চিন্তা-ভাবনা করে নিজেদের অস্বীকৃতি থেকে ফিরে আসার সুযোগ পায় এবং কোন সাময়িক দুঃখকষ্ট, রাগ-রোষ কিংবা যদি মনোবেদনার কারণে বদদোআ করে বসে, তাহলে সে যেন নিজের কল্যাণ-অকল্যাণ, ভাল-মন্দ লক্ষ্য করে, তার পরিণতি বিবেচনা করে তা থেকে বিরত হবার অবকাশ পেতে পারে। তারপরও কোন কোন সময় এমন কবৃলিয়ত বা মঞ্জুরীর সময় আসে, যখন মানুষের মুখ থেকে যে কোন কথা বের হয়, তা সঙ্গে সঙ্গে কবুল হয়ে যায়। সেজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “নিজের সন্তান-সন্ততি ও অর্থ-সম্পদের জন্য কখনো বদদো'আ করো না। এমন যেন না হয় যে, সে সময়টি হয় মঞ্জুরীর সময় এবং দোআ সাথে সাথে কবুল হয়ে যায়’ ! [আবু দাউদঃ ১৫৩২, মুসলিমঃ ৩০০৯]
Tafsir Bayaan Foundation
আর আল্লাহ যদি মানুষের অকল্যাণ (প্রার্থনায় সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করতেন যেভাবে তিনি তাদের কল্যাণ (প্রার্থনায় সাড়া দিতে) তাড়াতাড়ি করেন, তাহলে অবশ্যই তাদের সময় ফুরিয়ে যেত। সুতরাং যারা আমার সাক্ষাতের আশা রাখে না, আমি তাদেরকে তাদের অবাধ্যতায় দিশেহারা হয়ে ঘুরতে ছেড়ে দেই।
Muhiuddin Khan
আর যদি আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যথাশীঘ্র অকল্যাণ পৌঁছে দেন যতশীঘ্র তার কামনা করে, তাহলে তাদের আশাই শেষ করে দিতে হত। সুতরাং যাদের মনে আমার সাক্ষাতের আশা নেই, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টুমিতে ব্যতিব্যস্ত ছেড়ে দিয়ে রাখি।
Zohurul Hoque
আল্লাহ্ যদি মানুষের জন্য অকল্যাণ ত্বরান্বিত করতেন যেমন তারা তাদের জন্য কল্যাণ ত্বরান্বিত করতে চায়, তাহলে তাদের শেষ- পরিণতি তাদের উপরে ঘটে যেত। কিন্তু যারা আমাদের সাথে মুলাকাত করা পছন্দ করে না -- তাদের আমরা অন্ধভাবে ঘুরে বেড়াতে দিই তাদের অবাধ্যতার মধ্যে।